১৯৫৯

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

১৯৫৯-[৪] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আদম সন্তানের প্রত্যেকটি নেক ’আমল দশ থেকে সাতশত গুণ পর্যন্ত বাড়ানো হয়। আল্লাহ তা’আলা বলেন, কিন্তু এর ব্যতিক্রম হলো সওম। কেননা, সওম আমার জন্যে রাখা হয় এবং আমিই এর প্রতিদান দিব। কারণ সায়িম (রোযাদার) ব্যক্তি নিজের প্রবৃত্তির তাড়না ও খাবার-দাবার শুধু আমার জন্য পরিহার করে। সায়িমের জন্য দু’টি খুশী রয়েছে। একটি ইফতার করার সময় আর অপরটি আল্লাহর সাথে সাক্ষাতের সময়। সায়িমের মুখের গন্ধ আল্লাহর কাছে মিশকের সুগন্ধির চেয়েও বেশী পবিত্র ও পছন্দনীয় এবং সিয়াম ঢাল স্বরূপ (জাহান্নামের আগুন হতে রক্ষা কবচ)। তাই তোমাদের যে কেউ যেদিন সায়িম হবে সে যেন অশ্লীল কথাবার্তা না বলে আর শোরগোল বা উচ্চবাচ্য না করে। তাকে কেউ যদি গালি দেয় বা কটু কথা বলে অথবা তার সাথে ঝগড়া করতে চায়, সে যেন বলে দেয়, ’আমি একজন সায়িম’। (বুখারী, মুসলিম)[1]

اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: كُلُّ عَمَلِ ابْنِ آدَمَ يُضَاعَفُ الْحَسَنَةُ بِعَشْرِ أَمْثَالِهَا إِلَى سَبْعِمِائَةِ ضِعْفٍ قَالَ اللَّهُ تَعَالَى: إِلَّا الصَّوْمَ فَإِنَّهُ لِي وَأَنَا أَجْزِي بِهِ يَدَعُ شَهْوَتَهُ وَطَعَامَهُ مِنْ أَجْلِي لِلصَّائِمِ فَرْحَتَانِ: فَرْحَةٌ عِنْدَ فِطْرِهِ وَفَرْحَةٌ عِنْدَ لِقَاءِ رَبِّهِ وَلَخُلُوفِ فَمِ الصَّائِمِ أَطْيَبُ عِنْدَ اللَّهِ مِنْ رِيحِ الْمِسْكِ وَالصِّيَامُ جُنَّةٌ وَإِذَا كَانَ يَوْمُ صَوْمِ أَحَدِكُمْ فَلَا يَرْفُثْ وَلَا يصخب وفإن سَابَّهُ أَحَدٌ أَوْ قَاتَلَهُ فَلْيَقُلْ إِنِّي امْرُؤٌ صَائِم

وعن ابي هريرة رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: كل عمل ابن ادم يضاعف الحسنة بعشر امثالها الى سبعماىة ضعف قال الله تعالى: الا الصوم فانه لي وانا اجزي به يدع شهوته وطعامه من اجلي للصاىم فرحتان: فرحة عند فطره وفرحة عند لقاء ربه ولخلوف فم الصاىم اطيب عند الله من ريح المسك والصيام جنة واذا كان يوم صوم احدكم فلا يرفث ولا يصخب وفان سابه احد او قاتله فليقل اني امرو صاىم

ব্যাখ্যা: (إِلَّا الصَّوْمَ) ‘‘তবে সওমের প্রতিদান, অর্থাৎ- যে কোন সৎকাজের প্রতিদান দশ থেকে সাতশত গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। সিয়াম এর ব্যতিক্রম তা শুধুমাত্র সাতশত গুণ পর্যন্তই বৃদ্ধি করা হয় না। এর প্রতিদানের কোন সীমারেখা নেই। বরং তার প্রতিদান কি পরিমাণ দেয়া হবে তা একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা জানেন।

(فَإِنَّهٗ لِي وَأَنَا أَجْزِي بِه) ‘‘তা (সিয়াম) আমারই জন্য এবং তার প্রতিদান আমিই দিব।’’ অর্থাৎ- সিয়াম আল্লাহর তা‘আলা ও তার বান্দার মাঝে একটি গোপনীয় বিষয়। যা বান্দা শুধুমাত্র আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যই পালন করে থাকে। যা কোন বান্দা অবহিত হতে পারে না। কেননা এ সিয়ামের বাহ্যিক কোন রূপ নেই যেমনটি অন্যান্য ‘ইবাদাতের বাহ্যিক রূপ রয়েছে। যা বান্দা দেখতে পায়। যেহেতু এ সিয়ামের বিষয়টি আমি ব্যতীত অন্য কেউ অবহিত হতে পারে না তাই এর প্রতিদানও আমিই দিব। এর প্রতিদানের বিষয়টি অন্য কারো উপর ন্যস্ত করব না। এতে এ ইঙ্গিত রয়েছে যে, সিয়ামের পুরস্কার খুবই বড় আর তা হিসাববিহীন।

একটি প্রশ্নঃ সকল ‘ইবাদাতই একমাত্র আল্লাহর জন্য এবং তার প্রতিদানও একমাত্র আল্লাহ তা‘আলাই দিয়ে থাকেন। তাহলে ‘সওম শুধুমাত্র আমার জন্য এবং আমিই এর প্রতিদান দিব’ এর উদ্দেশ্য কি?

জওয়াবঃ সিয়ামের মধ্যে রিয়া তথা লোকজনকে দেখানো সম্ভব নয় যা অন্যান্য ‘ইবাদাতের প্রযোজ্য। কেননা সিয়ামের কোন বাহ্যিক আকার আকৃতি নেই যা লোকজন দেখতে পাবে যা অন্যত্র ‘ইবাদাতের মধ্যে আছে। যেমন সালাত তার রুকূ' সিজদা্ রয়েছে। সালাত আদায়কারীর এ কাজ অন্যান্য লোকেরা দেখতে পায়। কিন্তু সিয়ামের মধ্যে এমন কিছু নেই। যা লোকেরা দেখবে বরং তা শুধু নিয়্যাতের সাথে সম্পৃক্ত যা মানুষের দৃষ্টির অগোচরে। তাই এটা বলা যুক্তিযুক্ত যে, সিয়াম শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য। আর এ ‘ইবাদাত যেহেতু শুধু আল্লাহর জন্য, তাই এর পুরস্কারও আল্লাহ স্বয়ং নিজ হাতে প্রদান করবেন। কিন্তু অন্যান্য কাজের পুরস্কার মালায়িকাহ্ (ফেরেশতা) (ফেরেশতাগণ) লিখে থাকেন।

(يَدَعُ شَهْوَتَه) ‘‘স্বীয় প্রবৃত্তির চাহিদাকে পরিত্যাগ করে’’ অর্থাৎ- সে প্রবৃত্তির এমন চাহিদাকে পরিত্যাগ করে যা সিয়াম ভঙ্গের কারণ হয়। شَهْوَتَه এর পরে طَعَامَ এর উল্লেখ দ্বারা বুঝা যায় যে, شَهْوَتَه দ্বারা উদ্দেশ্য স্ত্রী সঙ্গম এবং طَعَامَ দ্বারা সিয়াম ভঙ্গের অন্যান্য কারণ উদ্দেশ্য।

(مِنْ أَجْلِيْ) ‘‘আমার কারণে’’ অর্থাৎ- আমার নির্দেশ পালনার্থে এবং সন্তুষ্টি অর্জনের নিমিত্তে।

(فَرْحَةٌ عِنْدَ فِطْرِه) একটি খুশী তার ইফতার করার সময়। কুরতুবী বলেন, এর অর্থ হলো ইফতারের মাধ্যমে তার ক্ষুধা তৃষ্ণা দূর হওয়ার কারণে খুশী হয়। অনুরূপভাবে খুশী হওয়ার আরেকটি কারণ এই যে, সে একটি গুরুত্বপূর্ণ ‘ইবাদাত সম্পন্ন করতে পেরেছে যার পুরস্কার অসীম।

(وَفَرْحَةٌ عِنْدَ لِقَاءِ رَبِّه) ‘‘আরেকটি খুশী তার রবের সাথে সাক্ষাতের সময়’’, অর্থাৎ- পুরস্কার প্রাপ্তির খুশী অথবা স্বীয় প্রভুর সাক্ষাত লাভের খুশী।

সিয়াম পালনকারীর মুখের দুর্গন্ধ আল্লাহ তা‘আলার নিকট মিস্কের সুগন্ধির চেয়েও প্রিয়, এতে একটি প্রশ্ন উত্থাপিত হয় যে, সুগন্ধির মাধ্যমে সন্তুষ্ট হওয়া এবং দুর্গন্ধের কারণে অসন্তুষ্ট হওয়া থেকে আল্লাহর তা‘আলা পবিত্র। কেননা এটি বান্দার গুণ।

উত্তরঃ এটি একটি তুলনা মাত্র মানুষের অভ্যাস এই যে, সে সুগন্ধিকে ভালবাসে এবং তা তার নিকটবর্তী করে নেয়। অনুরূপ আল্লাহ তা‘আলা সিয়াম পালনকারীকে তার নিকটবর্তী করে নেয়।

অথবা এর অর্থ এই যে, মিসকের সুগন্ধ তোমাদের নিকট যে রকম পছন্দনীয় আল্লাহর নিকট সিয়াম পালনকারীর মুখের দুর্গন্ধ তার চেয়ে অধিক পছন্দনীয়।

(وَالصِّيَامُ جُنَّةٌ) ‘‘সিয়াম ঢালস্বরূপ’’ অর্থাৎ- ঢাল যেমন মানুষকে তরবারির আঘাত থেকে রক্ষা করে, অনুরূপ সিয়াম মানুষকে অপরাধে লিপ্ত হওয়া থেকে রক্ষা করে।

(فَلَا يَرْفُثْ) ‘‘অশ্লীল কাজ করবে না’’ الرفث শব্দ দ্বারা বিভিন্ন অর্থ উদ্দেশ্য হয়। যেমন যৌনসঙ্গম, সঙ্গমের আবেদনমূলক কথাবার্তা। অধিকাংশ ‘আলিমদের মতে অত্র হাদীসে الرفث শব্দ দ্বারা অশ্লীল ও খারাপ কথাবার্তা উদ্দেশ্য। لَا يَصْخَبْ চিৎকার করবে না, অর্থাৎ- মূর্খদের মতো আচরণ করবে না। যেমন চিৎকার করা, ঠাট্টা-বিদ্রূপ করা, বোকার মতো আচরণ করা, ঝগড়া-বিবাদ করা- এ সকল কাজ থেকে বিরত থাকবে।

(فَإِنْ سَابَّه أَحَدٌ أَوْ قَاتَلَه) ‘‘যদি কেউ তাকে গালি দেয় অথবা তার সাথে ঝগড়া করতে চায়।’’ এখানে প্রশ্ন উত্থাপন হয় যে, قاتل শব্দটি বাবে مُفَاعَلَةٌ থেকে এসেছে যার অর্থ হল উভয় পক্ষ কোন কাজে শারীক হওয়া। অথচ সিয়াম পালনকারীকে এমন কাজ থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। অতএব তার পক্ষ থেকে এমন কিছু সংঘটিত হবে না যা দ্বারা বুঝা যায় যে, সে এ কাজে অংশগ্রহণ করেছে।

জওয়াবঃ এখানে مُفَاعَلَةٌ দ্বারা উদ্দেশ্য এ কাজের জন্য প্রস্ত্তত হওয়া। অর্থাৎ- একপক্ষ যখন গালি দিবে অথবা অভিসম্পাত করবে তখন সায়িম বলবে, ‘আমি সায়িম’।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৭: সওম (রোযা) (كتاب الصوم)