১১৬০

পরিচ্ছেদঃ ৩০. প্রথম অনুচ্ছেদ - সুন্নাত ও এর ফযীলত

১১৬০-[২] ইবনু ’উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে যুহরের ফারযের (ফরযের/ফরজের) পূর্বে দু’ রাক্’আত ও মাগরিবের ফারযের পরে দু’ রাক্’আত সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) তাঁর বাড়িতে এবং ’ইশার সালাতের ফারযের (ফরযের/ফরজের) পর দু’ রাক্’আত সালাত তার বাড়িতে আদায় করেছি। ইবনু ’উমার (রাঃ) আরো বলেছেন, হাফসাহ্ (রাঃ)(ইবনু ’উমারের বোন) আমার নিকট বলেছেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হালকা দু’ রাক্’আত সালাত ফাজ্‌রের (ফজরের) সালাতের সময় আরম্ভ হবার সঙ্গে সঙ্গে আদায় করতেন। (বুখারী, মুসলিম)[1]

بَابُ السُّنَنِ وَقَضَائِلِهَا

وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: صَلَّيْتُ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَكْعَتَيْنِ قَبْلَ الظُّهْرِ وَرَكْعَتَيْنِ بَعْدَهَا وَرَكْعَتَيْنِ بَعْدَ الْمَغْرِبِ فِي بَيْتِهِ وَرَكْعَتَيْنِ بَعْدَ الْعِشَاءِ فِي بَيْتِهِ قَالَ: وَحَدَّثَتْنِي حَفْصَةُ: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يُصَلِّي رَكْعَتَيْنِ خَفِيفَتَيْنِ حِينَ يَطْلُعُ الْفَجْرُ

وعن ابن عمر قال: صليت مع رسول الله صلى الله عليه وسلم ركعتين قبل الظهر وركعتين بعدها وركعتين بعد المغرب في بيته وركعتين بعد العشاء في بيته قال: وحدثتني حفصة: ان رسول الله صلى الله عليه وسلم كان يصلي ركعتين خفيفتين حين يطلع الفجر

ব্যাখ্যা: (رَكْعَتَيْنِ قَبْلَ الظُّهْرِ) ‘যুহরের পূর্বে দুই রাক্‘আত’ হাদীসের এ অংশটি ইমাম শাফি‘ঈর এ মতের সপক্ষে দলীল যে, যুহরের পূর্বের সুন্নাত দুই রাক্‘আত। তার অনুসারীদের অনেকের অভিমত এটার। আবার শাফি‘ঈদের একটি জামা‘আতের অভিমত এই যে, যুহরের পূর্বের সুন্নাত চার রাক্‘আত।

ইমাম বুখারী ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুহরের পূর্বের চার রাক্‘আত এবং ফাজরের (ফজরের) পূর্বের দুই রাক্‘আত সালাত কখনো পরিত্যাগ করতেন না। ইবনু ‘উমার (রাঃ) ও ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর এ দু’ হাদীসের মধ্যে সমন্বয় বিভিন্নভাবে হতে পারে।

১। যখন তিনি স্বীয় ঘরে সালাত আদায় করতেন তখন দুই রাক্‘আত আদায় করতেন।

২। কখনো তিনি দুই রাক্‘আত, আবার কখনো চার রাক্‘আতের আদায় করতেন।

৩। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘরে চার রাক্‘আত আদায় করার পর মসজিদে এসে দুই রাক্‘আত তাহিয়্যাতুল মাসজিদ আদায় করেছেন। ইবনু ‘উমার (রাঃ) এটাকেই যুহরের সুন্নাত মনে করেছেন। আর ঘরের চার রাক্‘আতকে তিনি সূর্য ঢলে যাওয়ার পর পৃথক চার রাক্‘আত সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) মনে করেছেন।

(وَرَكْعَتَيْنِ بَعْدَ الْعِشَاءِ فِي بَيْتِه) ‘ইশার পর স্বীয় ঘরে দুই রাক্‘আত সালাত আদায় করতেন। হাদীসের এ অংশ দ্বারা হাফিয ইবনু হাজার (রহঃ) দলীল পেশ করেছেন যে, রাতের নফল সালাত মসজিদে আদায় করার চাইতে ঘরে আদায় করা উত্তম। ইবনু ‘আবদুল বার (রহঃ) বলেন, মসজিদে নফল সালাত আদায়ের ব্যাপারে ‘আলিমদের মাঝে মতভেদ রয়েছে। কারো মতে তা মাকরূহ। তবে অধিকাংশ ‘আলিমদের মতে কারো ইচ্ছা হলে মসজিদে নফল সালাত আদায় করতে পারে। এতে কোন ক্ষতি বা সমস্যা নেই। তবে তারা এ বিষয়ে একমত যে, নফল সালাত ঘরে আদায় করাই উত্তম। কেননা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ফরয সালাত ব্যতীত অন্যান্য সালাত আমার এ মসজিদে আদায় করার চাইতে ঘরে আদায় করাই উত্তম। এতে কোন সন্দেহ নেই যে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অনুসরণ করাই উত্তম।

তবে কোন কোন ক্ষেত্রে উত্তম বিষয়ও পরিত্যাগ করতে হয় এর চাইতে কোন বড় সমস্যার আশঙ্কায়। অতএব আমার (মুবারকপূরী) দৃষ্টিতে বর্তমান সময়ে নিয়মিত সুন্নাতগুলো মসজিদে আদায় করাই উত্তম বিশেষ করে ‘আলিমদের জন্য। কেননা লোকজন কোন কিছু গ্রহণ করা ও বর্জন করার ক্ষেত্রে ‘আলিমদের অনুসরণ করে থাকে। তাই তারা প্রথমঃ ‘আলিমদের অনুসরণে মসজিদে সুন্নাত আদায় করা পরিত্যাগ করে। অতঃপর ধর্মীয় বিষয়ে গাফিলতি এবং দুনিয়াবী ব্যস্ততার কারণে ধীরে ধীরে সুন্নাত সালাত ত্যাগ করে। সাধারণত তা দেখা যায় তারাবীহ সালাতের ক্ষেত্রে। সাধারণ লোক যখন জানতে পারলো যে, তা শেষ রাতে ঘরে আদায় করাই উত্তম এবং কিছু ‘আলিমদেরও দেখতে পেল যে, তারা প্রথম রাতে তা আদায় করে না। ফলে সাধারণ লোকেরা তাদের অনুসরণে প্রথম রাতে আদায় করা পরিত্যাগ করলো এ কথা বলে যে, আমরা তা শেষ রাতে আদায় করবো। কিন্তু তারা তা একেবারেই ছেড়ে দেয়। প্রথম রাতেও আদায় করে না শেষ রাতেও না, অথচ তা একটি গুরুত্বপূর্ণ ‘ইবাদাত।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৪: সালাত (كتاب الصلاة)