৯১৯

পরিচ্ছেদঃ ১৬. প্রথম অনুচ্ছেদ - নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওপর দরূদ পাঠ ও তার মর্যাদা

রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওপর দরূদ পাঠের হুকুম, বৈশিষ্ট্য ও তার স্থান।

صَلَاةْ এর অর্থঃ মাজদ ফিরুয আবাদী বলেনঃ আল্লাহর পক্ষ থেকে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওপর সালাত হলো দু’আ, রহমত, ক্ষমা এবং চমৎকার প্রশংসা অর্থ হবে। হাফিয ইবনু হাজার আবুল আলিয়া থেকে বলেন, আল্লাহর সালাত রসূলের ওপর, এর অর্থ হলো তাঁর প্রশংসা ও মর্যাদা বর্ণনা করা

মালাক (ফেরেশতা) ও অন্যান্যদের পক্ষ থেকে রসূলের ওপর সালাত হলে করে অর্থ আল্লাহর নিকট তাঁর জন্য উচ্চ মর্যাদা ও প্রশংসা কামনা করা।

কারো মতেঃ আল্লাহর সালাত তার সৃষ্টির উপর দু’ভাবেঃ খাস ও ’আম্।

আল্লাহর সালাত নবীগণের ওপর অর্থ প্রশংসা ও মর্যাদা আর বাকী অন্যদের ওপর হলে অর্থ রহমত যা প্রত্যেক বস্তুকে বেষ্টন করে রেখেছে।

হালীমী বলেনঃ রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওপর সালাতের অর্থ হলো তার মর্যাদা সম্মান। সুতরাং আমাদের কথা

اَللّهُمَّ صَلِّ عَلى مُحَمَّدٍ.....

অর্থাৎ- ’’হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সম্মানিত করো’’। আর এ সম্মান হলোঃ তাঁর নাম, যশ, খ্যাতি পৃথিবীতে সুউচ্চ করা, তার আনীত দীনকে বিজয়ী করা, তাঁর শারী’আত সমাজে যেন অনন্তকাল ধরে থাকে। আর আখিরাতে উত্তম প্রতিদান করা, তাঁর উম্মাতের জন্য সুপারিশকে কবূল করা আর মাকামে মাহমূদ (বেহেশতের সর্বোচ্চ স্থান) দিয়ে অনুগ্রহ শুরু করা।

ياَيُّهَا الَّذِيْنَ امَنُوْا صَلُّوْا عَلَيْهِ وَسَلِّمُوْا تَسْلِيْمًا

’’হে মু’মিনগণ! তোমরা নবীর জন্য দরূদ ও সালাম প্রেরণ করো’’- (সূরাহ্ আল আহযাব ৩৩: ৫৬)।

রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওপর দরূদ পাঠ করা কি, মানদুব বা ভালো না, ওয়াজিব? না ফারযে আইন, না ফারযে কিফায়াহ্?

পুনরাবৃত্তি করতে হবে যখনই তার নাম শুনবে না পুনরাবৃত্তি করতে হবে না

আর পুনরাবৃত্তি কোন বৈঠক ও সভায় প্রযোজ্য কি না ইত্যাদি মাস্আলাহ্ বিষয়ে ওলামাদের মাঝে মতপার্থক্য রয়েছে

* জারীর ত্ববারী বলেছেনঃ মুসতাহাব তথা ভালো।

* কারো মতেঃ জীবনে একবার তার প্রতি দরূদ পাঠ করা ওয়াজিব চাই সালাতে হোক আর সালাতের বাইরে হোক যেমন কালিমাহ্ তাওহীদের মত (জীবনে একবার স্বীকৃতি দিলে হবে)।

* আবূ বকর আর্ রাযী হানাফী, ইবনু হাযম উভয় ছাড়া আরো অনেকের নিকট সামষ্টিকভাবে একবার ফরয আর তা কোন সালাত বা যে কোন নির্ধারিত সময়ের সাথে খাস বা জীবনে একবার পড়লে ফরয আদায়ের দায়িত্ব পালন হবে।

তার সামর্থ্যনুযায়ী অতিরিক্ত পড়লে তা মানদুব বা ভালো, এর থেকে বুঝা গেল দ্বিতীয় বৈঠকে দরূদ পাঠ করা সুন্নাত আবূ হানীফাহ্, মালিক এবং সাওরীর এটাই অভিমত।

* ইমাম ত্বহাবীর মতে যখনই কোন ব্যক্তি রসূলের নাম শুনবে বা পড়বে তখনই দরূদ পড়বে যদি কোন বৈঠক ও সমাবেশে একত্রিত হয় তথা পুনরাবৃত্তি করা ওয়াজিব। তবে ফাতাওয়া হলো পুনরাবৃত্তি করা মুসতাহাব। কারণ হাদীসে দরূদ না পড়লে শাস্তি, দুর্ভাগ্য, নাক ধূলায় ধূসরিত হোক, কৃপণতা ইত্যাদি কথা এসেছে।

* যে সকল স্থানে পড়া ওয়াজিব- এ বিষয়ে মতভেদ রয়েছে।

প্রথম তাশাহুদে, জুমু’আর খুতবাহ্, জুমু’আর খুতবাহ্ ছাড়াও সকল খুত্বায়, জানাযার সালাতে পড়া সহীহ সানাদে প্রমাণিত।

আযানের জবাবের পরে, দু’আর শুরুতে মাঝখানে, শেষে, কুনূতের শেষে তাহাজ্জুদ সালাতে দাঁড়ানোর সময় কুরআনুল কারীম পাঠ শেষ করলে বিপদ মুসীবাতের সময় গুনাহ থেকে তাওবার সময়, হাদীস পড়ার সময়।

ঈদের তাকবীর পাঠ করার সময়ে মাসজিদ প্রবেশের ও বের হওয়ার সময়, একত্রিত হওয়ার সময়, সফরের সময় দরূদ পাঠ করার কথা এসেছে সবগুলো দুর্বল হাদীস।

বিশেষ করে জুমু’আর দিনে বেশী বেশি দরূদ পড়ার কথা সহীহ হাদীসে এসেছে।

দরূদের নিয়ম-কানুন হলো সবচেয়ে উত্তম দরূদ যা সালাতে পড়া হয় এটি কা’ব ইবনু ’উজরাহ্-এর হাদীস এবং সবচেয়ে সহীহ হাদীস।


৯১৯-[১] ’আবদুর রহমান ইবনু আবূ লায়লা (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, কা’ব ইবনু ’উজরাহ্ (রাঃ)-এর সাথে আমার দেখা হলে তিনি বললেন, হে ’আবদুর রহমান! আমি কি তোমাকে একটি কথা উপহার দিব যা আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে শুনেছি? উত্তরে আমি বললাম, হাঁ আমাকে তা উপহার দিন। তিনি বললেন, আমরা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করে বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আপনার প্রতি আমরা ’সালাম’ কিভাবে পাঠ করবো তা আল্লাহ তা’আলা আমাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন। আমরা আপানার ও আপনার পরিবারে প্রতি ’সালাত’ কিভাবে পাঠ করবো? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তোমরা বলো,

’’আল্লা-হুম্মা সল্লি ’আলা- মুহাম্মাদিও ওয়া ’আলা- আ-লি মুহাম্মাদিন কামা- সল্লায়তা ’আলা- ইবরা-হীমা ওয়া ’আল- আ-লি ইবরা-হীমা ইননাকা হামীদুম মাজীদ। আল্লা-হুম্মা বা-রিক ’আলা- মুহাম্মাদিওঁ ওয়া ’আলা- আ-লি মুহাম্মাদিন কামা- বা-রাকতা ’আলা- ইবরা-হীমা ওয়া ’আলা- আ-লি ইবরা-হীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ’’-

(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মাদ ও মুহাম্মাদের পরিবার-পরিজনের প্রতি রহমত বর্ষণ কর, যেভাবে তুমি রহমত বর্ষণ করেছো ইবরাহীম ও ইবরাহীমের পরিবার-পরিজনের প্রতি। নিশ্চয় তুমি প্রশংসিত ও সম্মানিত। হে আল্লাহ! তুমি বারাকাত নাযিল কর মুহাম্মাদ ও মুহাম্মাদের পরিবার-পরিজনের প্রতি, যেভাবে তুমি বারাকাত নাযিল করেছো ইব্রাহীম ও ইব্রাহীমের পরিবার-পরিজনের প্রতি। তুমি বড় প্রশংসিত ও সম্মানিত।)। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

কিন্তু ইমাম মুসলিম-এর বর্ণনায় ’আলা- ইবরা-হীম’ শব্দ দু’ স্থানে উল্লিখিত হয়নি।

بَابُ الصَّلَوةِ عَلَى النَّبِىِّ ﷺ وَفَضْلِهَا

وَعَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ أَبِي لَيْلَى قَالَ: لَقِيَنِي كَعْبُ بْنُ عُجْرَةَ فَقَالَ أَلَا أُهْدِي لَكَ هَدِيَّةً سَمِعْتُهَا مِنَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقُلْتُ بَلَى فَأَهْدِهَا لِي فَقَالَ سَأَلْنَا رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقُلْنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ كَيْفَ الصَّلَاةُ عَلَيْكُمْ أَهْلَ الْبَيْتِ فَإِنَّ اللَّهَ قَدْ عَلَّمَنَا كَيْفَ نُسَلِّمُ عَلَيْكُم قَالَ: «قُولُوا اللَّهُمَّ صل عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حُمَيْدٌ مجيد اللَّهُمَّ بَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّك حميد مجيد» . إِلَّا أَنَّ مُسْلِمًا لَمْ يَذْكُرْ عَلَى إِبْرَاهِيمَ فِي الْمَوْضِعَيْنِ

وعن عبد الرحمن بن ابي ليلى قال: لقيني كعب بن عجرة فقال الا اهدي لك هدية سمعتها من النبي صلى الله عليه وسلم فقلت بلى فاهدها لي فقال سالنا رسول الله صلى الله عليه وسلم فقلنا يا رسول الله كيف الصلاة عليكم اهل البيت فان الله قد علمنا كيف نسلم عليكم قال: «قولوا اللهم صل على محمد وعلى ال محمد كما صليت على ابراهيم وعلى ال ابراهيم انك حميد مجيد اللهم بارك على محمد وعلى ال محمد كما باركت على ابراهيم وعلى ال ابراهيم انك حميد مجيد» . الا ان مسلما لم يذكر على ابراهيم في الموضعين

ব্যাখ্যা: বায়হাক্বীতে কা‘ব ইবনু ‘উজরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত যখন কুরআনের আয়াত নাযিল হলো-

 اِنَّ اللّهَ وَمَلَائِكَتَهٗ يُصَلُّونَ عَلَى النَّبِيِّ

‘‘নিশ্চয় আল্লাহ ও মালায়িকাহ্ (ফেরেশতারা) নাবীর ওপর দরূদ বা রহমাত প্রেরণ করেন।’’ (সূরাহ্ আহযাব ৩৩ : ৫৬)

তখন সাহাবীরা বলেনঃ হে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  দরূদটি কিরূপ তথা সালাতে তাশাহুদের পরে দরূদের শব্দ কিরূপ?

(كَيْفَ الصَّلَاةُ عَلَيْكُمْ أَهْلَ الْبَيْتِ) : আমরা কিভাবে আপনার ও পরিবারের ওপর দরূদ পাঠ করবো?

শাইখ ‘আবদুল হক দেহলবী বলেনঃ প্রশ্নকারীর উদ্দেশ্য রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওপর দরূদ পাঠের পাশাপাশি তার পরিবারের প্রসঙ্গকে টেনে তাদের ওপরও দরূদ কিরূপ হবে।

(فَإِنَّ اللّهَ قَدْ عَلَّمَنَا كَيْفَ نُسَلِّمُ عَلَيْكَ) : আল্লাহ আমাদেরকে শিখিয়েছে কিভাবে আপনাকে সালাম দিব, আর এটা সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায়কারী তাশাহুদে বলে- হে নাবী!  আপনার প্রতি সালাম।

আমরা কিভাবে দরূদ প্রেরণ করবো আপনার প্রতি?

অন্য রিওয়ায়াতে আছে, আপনার ওপর সালাম আমরা জেনেছি, সুতরাং আপনার ওপর দরূদ কিরূপ হবে অথচ আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে দরূদ ও সালাম প্রেরণের আদেশ দিয়েছেন যেমন আল্লাহ বলেন, ‘‘তোমরা তার ওপর দরূদ ও সালাম প্রেরণ কর’’- (সূরাহ্ আল আহযাব ৩৩ : ৫৬)। আমরা সালামের পদ্ধতি জেনেছি যেমনটি আপনি আমাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন আত্তাহিয়্যাতু সেখানে আমরা বলি, হে নাবী!  আপনার ওপর সালাম বর্ষিত হোক।

সুতরাং আপনি আমাদের দরূদের শব্দ শিক্ষা দিন।

কুসতুলানী বলেছেনঃ قُوْلُوْ ‘‘তোমরা বল’’ এ বাক্যে প্রমাণ করে পড়াটা ওয়াজিব সবাই ঐকমত্য পোষণ করেছেন।

আর শাওকানী বলেনঃ নায়লুল আওত্বারে হাদীসের বাক্য قُوْلُوْ ‘‘তোমরা বল’’ তাশাহুদের পরে দরূদ পাঠ করা ওয়াজিব।

এ মতের স্বপক্ষে বলেছেন, ‘উমার (রাঃ), ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ), ইবনু মাস্‘ঊদ, জাবির (রাঃ) ইবনু যায়দ, শা‘বী মুহাম্মাদ ইবনু কা‘ব আল কুরযী আবূ জা‘ফার বাকির আর শাফি‘ঈ আহমাদ ইবনু হাম্বাল ইসহাক ইবনুল মাওয়াজ আর কাজী আবূ বাকর ইবনু ‘আরাবী।

রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) দ্বারা উদ্দেশ্য আল্লাহর আদেশ বাস্তবায়নের মাধ্যমে তাঁর নৈকট্য অর্জন করা, অনুরূপ রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অধিকার আমাদের ওপর তা আদায় করা।

ইবনু ‘আবদুস্ সালাম বলেন, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওপর দরূদ প্রেরণ তার জন্য শাফা‘আত স্বরূপ না যেমনি তাঁর শাফা‘আত আমাদের ওপর। বরং রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের প্রতি যে ইহসান করেছেন (শারী‘আতের বিধান আনার মাধ্যমে) তার প্রতিদানে আল্লাহ আমাদের অপারগতা জেনে তাঁর ওপর দরূদ পাঠের মাধ্যমে প্রতিদানের ব্যবস্থা করেছেন।

ইবনুল ‘আরাবী বলেন, দরূদ পাঠের উপকার পাঠকারীর ওপর ‘আক্বীদার খাঁটিত্ব, নিয়্যাতের বিশুদ্ধতা, ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ আর আনুগত্যের উপর অবিচল প্রমাণ করে।

মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পূর্বে سَيِّدْ (সাইয়্যিদ) যার অর্থ ‘নেতা’ এ শব্দটি প্রয়োগের ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে। ইবনু ‘আবদুস সালাম বলেন, এটা বলাই শিষ্টাচারের বৈশিষ্ট্য। আর ইমাম শাওকানী নায়লুল ‘আওত্বার’-এ বলেন ‘‘উত্তম’’। আসনাবী বলেন سَيِّدَنَا (সাইয়্যিদিনা) শব্দটি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পূর্বে অধিকাংশ সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায়কারীর নিকট ব্যাপক প্রসিদ্ধ পেয়েছে। তবে এ উত্তমের বিষয়টি চিন্তাসাপেক্ষ।

আমি (ভাষ্যকার) বলি, সালাত অবস্থায় যে ‘‘সাইয়্যিদিনা’’ শব্দটি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আদেশ বাস্তবায়নে ও হুবহু দু‘আ মাসূরার শব্দ আদায়ে পরিত্যাগ করা উত্তম।

সালাত ব্যতিরেকে অন্য স্থানে ‘সাইয়্যিদিনা’ শব্দটি বলা কোন সমস্যা না তথা বৈধ।

সুয়ূত্বী দুর্‌রে মানসূরে বলেনঃ ‘আবদুর রাযযাক্ব, ‘আবদ ইবনু হুমায়দ ও ইবনু মাজাহ্ তাঁরা ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস্‘ঊদ থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেনঃ যখন তোমরা রসূলের ওপর দরূদ পাঠ করবে তা সুন্দর, ভালোভাবে পাঠ করবে। তখন তারা বললেন, আপনি আমাদেরকে শিক্ষা দিন। তখন তিনি বললেন তোমরা বলো, হে আল্লাহ! তোমার সম্মান, রহমাত, বারাকাত সকল রসূলের নেতা ও মুত্তাক্বীদের ইমামের ওপর ধার্য করুন।

ইমাম যাহাবী বলেন, প্রচুর সংখ্যক মানুষ বলেনঃ ‘‘হে আল্লাহ! তুমি রহমাত বর্ষণ করো আমাদের নেতা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওপর’’- এ বিষয়ে দীর্ঘ আলোচনা রয়েছে তবে উত্তম হলো অবিকল শব্দ অনুসরণে ‘সাইয়্যিদান’ শব্দ না বলা। আর সালাত ব্যতিরেকে সরাসরি এ সম্বোধন করাকে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অপছন্দ করেছেন যা প্রসিদ্ধ হাদীস হতে প্রমাণিত।

এ হাদীসটি প্রমাণ করে দরূদের ক্ষেত্রে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাহাবীগণকে যে শব্দ শিক্ষা দিয়েছেন অবিকল সেই শব্দ বলতে হবে তাঁর আদেশ বাস্তবায়নে। চাই তা খাসভাবে ওয়াজিব বলি আর সালাতে নির্ধারণ করি।

ইমাম আহমাদ-এর নিকট সালাতে দরূদের শব্দ অবিকল বলতে হবে তবে সহীহ কথা তার অনুসারীদের নিকট ওয়াজিব বা আবশ্যক না।

আর ইমাম শাফি‘ঈ বলেছেন, اللّهُمَّ صَلِّ عَلى مُحَمَّدٍ ‘‘হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওপর রহমাত বর্ষণ করুন।’’ এতটুকু বলাই যথেষ্ট হবে।

হাফিয ইবনু হাজার বলেনঃ আমাদের সাথীরা ঐকমত্য হয়েছেন اَلصَّلَاةُ عَلى مُحَمَّدٍ এর ওপর সংক্ষিপ্ত করা যাবে না আর এ ব্যাপারে সহীহ সানাদ নেই তবে গুণের উপর তথা ﷺ اَلصَّلَاةُ عَلَى النَّبِيِّ -এর উপর সংক্ষিপ্ত করা যাবে আর জমহূরের নিকট, যে কোন শব্দ দিয়ে যা দরূদ বুঝায় তাই বৈধ।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৪: সালাত (كتاب الصلاة)