৮৮৭

পরিচ্ছেদঃ ১৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - সিজদা্ ও তার মর্যাদা

সাজদার অধ্যায়, অর্থাৎ- সাজদার পদ্ধতি বর্ণনার অধ্যায় এবং এ ব্যাপারে যে ফাযীলাত বর্ণিত হয়েছে সেই সংক্রান্ত আলোচনা। কেননা সিজদা্ একটি বিশেষ ধরনের ’ইবাদাত। সাজদার আভিধানিক অর্থ হলো, নত হওয়া বা ঝুঁকে পড়া। আর শারী’আতের পরিভাষায় বিশেষ পদ্ধতিতে ললাটকে মাটির উপরে রাখাকে সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) বলে। কেউ কেউ বলেছেন, ’ইবাদাতের উদ্দেশে মাটির উপর ললাট রাখাকে সিজদা্ বলে।


৮৮৭-[১] ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমাকে শরীরের সাতটি হাড়; যথা কপাল, দু’ হাত, দু’ হাঁটু, দু’ পায়ের পাতার অগ্রভাগের সাহায্যে সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আর কাপড়, দাড়ি ও চুল একত্রিত করে বেঁধে রাখতে নিষেধ করা হয়েছে। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ الْسُّجُوْدِ وَفَضْلِه

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أُمِرْتُ أَنْ أَسْجُدَ عَلَى سَبْعَةِ أَعْظُمٍ عَلَى الْجَبْهَةِ وَالْيَدَيْنِ وَالرُّكْبَتَيْنِ وَأَطْرَافِ الْقَدَمَيْنِ وَلَا نَكْفِتَ الثِّيَاب وَلَا الشّعْر»

عن ابن عباس قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «امرت ان اسجد على سبعة اعظم على الجبهة واليدين والركبتين واطراف القدمين ولا نكفت الثياب ولا الشعر»

ব্যাখ্যা: (عَلَـى الْجَبْهَةِ) জাবহাহ্ তথা কপাল দ্বারা উদ্দেশ্য দুই চোখের ভুরু থেকে মাথার চুলের ঝুঁটি পর্যন্ত। আবার কারো মতে, কপালের দু’ অংশ।

আবার কারো মতেঃ নাক কপালের অংশ যেমন- মুসলিম, নাসায়ীর বর্ণনায় এসেছে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, অর্থাৎ- আমি আদিষ্ট হয়েছি সাতটি অঙ্গের উপর সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করতে। আর চুল ও কাপড় যেন না গোছাই। ইমাম সিন্দী বলেন, কপাল ও নাক চেহারার অংশ। সুতরাং সে দু’টিকে মিলে একটি অঙ্গ সাতটি অঙ্গের মধ্যে (সাত অঙ্গ বলতে) কপাল, নাক। বুখারী মুসলিমের রিওয়ায়াত বর্ণনায় রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কপাল বলে নাকের দিকে ইশারা করেছেন।

‘‘রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করতেন আঙ্গুলসমূহ পরস্পর লাগাতেন এবং দু’ হাত দু’ ঘাড়ের কাছাকাছি রাখতেন এবং দু’ কনুই উঁচু করতেন আর হাতের তালুর উপর ভর দিতেন।’’

(وَأَطْرَافِ الْقَدَمَيْنِ) দু’ পায়ের আঙ্গুলসমূহের পেটের উপর দু’ পাকে খাড়া করবে এবং পায়ের পিছনদ্বয়কে উঁচু করবে আর পায়ের পিঠকে ক্বিবলার দিকে করবে।

উল্লিখিত হাদীসটি সাত অঙ্গের উপর সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করা ওয়াজিব হিসেবে প্রমাণ করে।

আমার নিকট (ভাষ্যকার) প্রথম মতটিই বেশী শক্তিশালী এবং এটা বেশী শুদ্ধ ইমাম শাফি‘ঈ এ অধ্যায়ের হাদীস দ্বারা এবং ‘আব্বাস (রাঃ)-এর হাদীস দ্বারা দলীল পেশ করেছেন যাতে এসেছে,

‘আব্বাস (রাঃ) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে শ্রবণ করেছেন। তিনি বলেন, যখন বান্দা সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করবে সে যেন সাতটি অঙ্গের উপর সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করে। (মুসলিম, আবূ দাঊদ, তিরমিযী, নাসায়ী, ইবনু মাজাহ্)

মারফূ' সূত্রে হাদীস ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন,

‘‘নিঃসন্দেহে হাত সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করে যেমন- চেহারা সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করে আর যখন তার চেহারাকে রাখবে হাত যেন রাখে আর যখন উঠাবে হাত যেন উঠায়।’’ (আহমাদ, আবূ দাঊদ, নাসায়ী)

ইবনু দাক্বীক্ব বলেছেনঃ হাদীস অন্যতম সুস্পষ্টতর হলো এ অঙ্গগুলোর কোন কিছু সাজদার সময় খোলা রাখাটা আবশ্যক না।

সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) বলতে বুঝায় অঙ্গসমূহ মাটিতে রাখা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ঢেকে রাখা বা না রাখা প্রসঙ্গ না।

দু’ হাঁটু ঢেকে রাখাটা আবশ্যক, কেননা ঢেকে না রাখলে লজ্জাস্থান প্রকাশের সম্ভাবনা আছে।

আর দু’ পা খোলার রাখার বিষয়টি অপরিহার্য নয়। এ ব্যাপারে সূক্ষ্ম দলীল রয়েছে। আর মোজা মাসাহর সময়ে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করা হয় মোজা পরিহিত অবস্থায়। আর মোজা খুললে উযূ (ওযু/ওজু/অজু) নষ্ট হয়ে যাবে উযূ নষ্ট হলে সালাতও বাতিল হবে (সুতরাং পা খোলার বিষয়টি অপরিহার্য না)।

উত্তম হলো হাতের তালুদ্বয় ও কপালকে খোলা রাখা কেননা উভয় দ্বারা সরাসরি সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করবে। বাকী অঙ্গগুলোর ক্ষেত্রে এমনটি না। আর কপাল ও নাককে একত্রিত করে সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করা ওয়াজিব।

আর আবূ হানীফাহ্ বলেন, শুধুমাত্র নাকের উপর সীমাবদ্ধ করা বৈধ।

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-এর বর্ণনায় এসেছে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ‘‘আমি আদিষ্ট হয়েছি সাত অঙ্গের উপর সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করতে তন্মধ্যে কপাল এবং তিনি হাত দিয়ে ইশারা করেন নাকের উপর।’’ তাঁর এ ইশারা প্রমাণ করে যে, তিনি নাককেও অন্তর্ভুক্ত করেছেন।

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-এর হাদীস রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যে ব্যক্তি সাজদার সময় কপালের সাথে নাককে জমিনে মিলায় না তার সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) হয় না।

আর আহমাদে বর্ণিত ওয়ায়িল-এর হাদীস। তিনি বলেনঃ আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জমিনের উপর কপাল ও নাককে রেখে সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করতে দেখেছি।

আর আবূ হুমায়দ হতে বর্ণিত হাদীসে এসেছে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সিজদা্ করতেন তখন নাক ও কপালকে জমিনে লাগাতেন।’’ তিরমিযী আবূ দাঊদ ইবনু খুযায়মাহ্ বর্ণনা করেছেন এবং তিরমিযী সহীহ বলেছেন।

যখন তোমাদের কেউ সিজদা্ করবে সে যেন তার নাককে জমিনের উপর রাখে কারণ এ ব্যাপারে তোমরা আদেশপ্রাপ্ত।

ইমাম আবূ হানীফার মতের সপক্ষে দলীল পেশ করা হয়েছে যা বুখারী মুসলিমের হাদীসে এসেছে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি সাতটি অঙ্গের উপর সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করতে আদিষ্ট হয়েছে। এর মধ্যে কপাল এবং তাঁর হাত দিয়ে ইশারা করেছেন নাককে কপাল বলতে নাককেই বুঝানো হয়েছে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৪: সালাত (كتاب الصلاة)