পরিচ্ছেদঃ ১১. প্রথম অনুচ্ছেদ - তাকবীরে তাহরীমার পর যা পড়তে হয়
৮১৩-[২] ’আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করার জন্য দাঁড়াতেন, আর এক বর্ণনায় আছে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) শুরু করার সময়, সর্বপ্রথম তাকবীরে তাহরীমা বলতেন। তারপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এই দু’আ পাঠ করতেনঃ
’’ওয়াজ্জাহতু ওয়াজহিয়া লিল্লাজী ফাত্বারাস্ সামাওয়া-তি ওয়াল আরযা হানীফাওঁ ওয়ামা- আনা- মিনাল মুশরিকীন, ইন্না সলা-তী ওয়ানুসুকী ওয়া মাহ্ইয়া-ইয়া ওয়ামামা-তী লিল্লা-হি রব্বিল ’আ-লামীন - লা- শারীকা লাহূ, ওয়াবিযা-লিকা উমিরতু, ওয়াআনা- মিনাল মুসলিমীন, আল্লা-হুম্মা আনতাল মালিকু, লা- ইলা-হা ইল্লা- আন্তা রব্বী, ওয়াআনা- ’আবদুকা যলামতু নাফসী ওয়া’তারাফতু, বিযাম্বী, ফাগফিরলী যুনূবী জামী’আ-, ইন্নাহূ লা- ইয়াগফিরুয্ যুনূবা ইল্লা- আন্তা, ওয়াহদিনী লিআহসানিল আখলা-ক্বি লা- ইয়াহদী লিআহসানিহা- ইল্লা- আন্তা, ওয়াসরিফ ’আন্নী সায়ইউয়াহা- লা- ইয়াসরিফু ’আন্নী সায়য়্যিয়াহা- ইল্লা- আন্তা লাব্বায়কা ওয়া সা’দায়কা, ওয়াল খয়রা কুল্লুহূ ফী ইয়াদায়কা, ওয়াশ্ শাররু লায়সা ইলায়কা, আনা- বিকা ওয়া ইলায়কা, তাবা-রাকতা ওয়াতা’আ-লায়তা, আস্তাগফিরুকা ওয়াআতূবু ইলায়কা’’ -
(অর্থাৎ- ’’আমি একনিষ্ঠভাবে আমার মুখ ফিরিয়েছি তাঁর দিকে, যিনি আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন। আমি মুশরিকদের মধ্যে শামিল নই। নিশ্চয়ই আমার সালাত (সালাত/নামায/নামাজ), আমার কুরবানী, আমার জীবন, আমার মৃত্যু আল্লাহ রব্বুল ’আলামীনের জন্য। তাঁর কোন শরীক নেই। আর এজন্যই আমি আদিষ্ট হয়েছি। আমি মুসলিমের অন্তর্ভুক্ত। হে আল্লাহ! তুমিই বাদশাহ, তুমি ছাড়া প্রকৃত আর কোন মা’বূদ নেই। তুমি আমার রব। আমি তোমার গোলাম। আমি আমার নিজের ওপর যুলম (অত্যাচার) করেছি। আমি স্বীকার করছি আমার অপরাধ। তুমি আমার সব অপরাধ ক্ষমা কর। তুমি ছাড়া নিশ্চয়ই আর কেউ অপরাধ ক্ষমা করতে পারে না। আমাকে পরিচালিত করতে পারে না। তুমি দূরে রাখো আমার নিকট হতে মন্দ কাজ। তুমি ছাড়া মন্দ কাজ থেকে আর কেউ দূরে রাখতে পারে না। হে আল্লাহ! আমি তোমার দরবারে তোমার আদেশ পালনে উপস্থিত। সকল কল্যাণই তোমার হাতে। কোন অকল্যাণই তোমার প্রতি আরোপিত হয় না। আমি তোমার সাহায্যেই টিকে আছি। তোমার দিকেই ফিরে আছি। তুমি কল্যাণের আধার। আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাই। তোমার দিকেই আমি প্রত্যাবর্তন করছি।’’)
এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন রুকূ’ করতেন, তখন বলতেন, ’’আল্লা-হুম্মা লাকা রকা’তু ওয়াবিকা আ-মানতু, ওয়ালাকা আসলামতু, খশা’আ লাকা সাম্’ঈ ওয়া বাসারী ওয়া মুখখী ওয়া ’আযমী ওয়া ’আসাবী’’-
(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমি তোমারই জন্য রুকূ’ করলাম। তোমাকেই বিশ্বাস করলাম। তোমার কাছেই নিজেকে সমর্পণ করলাম। তোমার ভয়ে ভীত আমার শ্রবণশক্তি, আমার দৃষ্টিশক্তি, আমার মজ্জা, মগজ আমার অস্থি ও আমার শিরা-উপশিরা।)।
এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন রুকূ’ হতে মাথা উঠাতেন, বলতেনঃ ’’আল্লা-হুম্মা রব্বানা- লাকাল হামদু, মিলয়াস সামা-ওয়া-তি ওয়াল আরযি ওয়ামা- বায়নাহুমা- ওয়ামিলয়া মা- শি’তা মিন শাইয়্যিন বা’দু’’-
(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! হে আমাদের প্রতিপালক! আসমান ও জমিন ও এতদুভয়ের ভিতর যা কিছু আছে, সবই তোমার প্রশংসা করছে। এরপরে যা তুমি সৃষ্টি করবে তারাও তোমারই প্রশংসা করবে।)।
এরপর তিনি সাজদায় গিয়ে পড়তেন, ’’আল্লা-হুম্মা লাকা সাজাততু ওয়াবিকা আ-মানতু ওয়ালাকা আসলামতু, সাজাদা ওয়াজহিয়া লিল্লাযী খলাক্বাহূ ওয়াসাও্ ওয়ারাহূ ওয়াশাক্কা সাম্’আহূ ওয়া বাসারাহূ, তাবা-রকাল্ল-হু আহসানুল খ-লিক্বীন’’-
(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমি তোমার জন্য সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করছি। তোমার ওপর ঈমান এনেছি। তোমার জন্য ইসলাম গ্রহণ করেছি। আমার মুখমণ্ডল তার জন্য সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করছে যিনি তাকে সৃষ্টি করেছেন। তাকে আকার আকৃতি দিয়েছেন। তার কান ও চোখ খুলে দিয়েছেন। আল্লাহ খুবই বারাকাতপূর্ণ উত্তম সৃষ্টিকারী।’’)।
এরপর সর্বশেষ দু’আ যা ’আত্তাহিয়্যাতু’র পর ও সালাম ফিরাবার আগে পড়তেন তা হলো, ’’আল্লা-হুম্মাগফিরলী মা- ক্বদ্দামতু ওয়ামা- আখখারতু ওয়ামা- আসরারতু ওয়ামা- আ’লানতু ওয়ামা- আসরাফতু ওয়ামা- আন্তা আ’লামু বিহী মিন্নী, আনতাল মুক্বদ্দিমু ওয়া আন্তাল মুআখখিরু, লা- ইলা-হা ইল্লা- আনতা’’-
(অর্থাৎ- ’’হে আল্লাহ! তুমি ক্ষমা করে দাও যা আমি করেছি। আমার সেসব গুনাহও তুমি ক্ষমা করে দাও যা আমি পূর্বে করেছি এবং যা আমি পরে করেছি। আমার ঐসব বাড়াবাড়িও ক্ষমা করে দাও যা আমি ’আমলে ও সম্পদ খরচে করেছি। আমার ঐসব গুনাহও তুমি ক্ষমা করে দাও যা আমার চেয়ে তুমি ভালো জানো। তুমি তোমার বান্দাদের যাকে চাও মান-সম্মানে এগিয়ে নাও। আর যাকে চাও পিছে হটিয়ে দাও। তুমি ছাড়া প্রকৃত কোন মা’বূদ নেই।)। (মুসলিম)[1]
ইমাম শাফি’ঈর এক বর্ণনায় প্রথম দু’আয় ’ফী ইয়াদায়কা’-এর পরে আছে, ’’ওয়াশ্ শাররু লায়সা ইলায়কা ওয়াল মাহদীয়্যু মান হাদায়তা, আনা- বিকা ওয়া ইলায়কা, লা- মানজা-আ মিনকা ওয়ালা- মালজা-আ ইল্লা- ইলায়কা তাবা-রাকতা’’-
(অর্থাৎ- মন্দ তোমার জন্য নয়। সে-ই পথ পেয়েছে যাকে তুমি পথ দেখিয়েছো। আমি তোমার সাহায্যে টিকে আছি। তোমার দিকেই প্রত্যাবর্তন করছি। তোমার পাকড়াও হতে বাঁচার কোন জায়গা নেই। তুমি ছাড়া আশ্রয়ের কোন স্থল নেই। তুমি বারাকাতময়।)।
ইমাম শাফি’ঈ (রহঃ)-এর এ রিওয়ায়াতটিও সহীহ।
بَابُ مَا يُقْرَاُ بَعْدَ التَّكْبِيْرِ
وَعَنْ عَلِيَّ بْنَ أَبِي طَالِبٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا قَامَ إِلَى الصَّلَاةِ وَفِي رِوَايَةً: كَانَ إِذَا افْتَتَحَ الصَّلَاةَ كَبَّرَ ثُمَّ قَالَ: «وَجَّهْتُ وَجْهِيَ لِلَّذِي فَطَرَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ حَنِيفًا وَمَا أَنَا مِنَ الْمُشْرِكِينَ إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ لَا شَرِيكَ لَهُ وَبِذَلِكَ أَمَرْتُ وَأَنَا مِنَ الْمُسْلِمِينَ اللَّهُمَّ أَنْتَ الْمَلِكُ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ أَنْتَ رَبِّي وَأَنَا عَبْدُكَ ظَلَمْتُ نَفْسِي وَاعْتَرَفْتُ بِذَنْبِي فَاغْفِرْ لِي ذُنُوبِي جَمِيعًا إِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ وَاهْدِنِي لِأَحْسَنِ الْأَخْلَاقِ لَا يَهْدِي لِأَحْسَنِهَا إِلَّا أَنْتَ وَاصْرِفْ عَنِّي سَيِّئَهَا لَا يَصْرِفُ عَنِّي سَيِّئَهَا إِلَّا أَنْتَ لَبَّيْكَ وَسَعْدَيْكَ وَالْخَيْرُ كُلُّهُ فِي يَدَيْكَ وَالشَّرُّ لَيْسَ إِلَيْكَ أَنَا بِكَ وَإِلَيْكَ تَبَارَكْتَ وَتَعَالَيْتَ أَسْتَغْفِرُكَ وَأَتُوبُ إِلَيْكَ» وَإِذَا رَكَعَ قَالَ: «اللَّهُمَّ لَكَ رَكَعْتُ وَبِكَ آمَنْتُ وَلَكَ أَسْلَمْتُ خَشَعَ لَكَ سَمْعِي وبصري ومخي وعظمي وعصبي» فَإِذا رفع قَالَ: «اللَّهُمَّ رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ مِلْءَ السَّمَاوَاتِ وملء الأَرْض وملء مَا بَيْنَهُمَا وَمِلْءَ مَا شِئْتَ مِنْ شَيْءٍ بَعْدُ»
وَإِذَا سَجَدَ قَالَ: «اللَّهُمَّ لَكَ سَجَدْتُ وَبِكَ آمَنْتُ وَلَكَ أَسْلَمْتُ سَجَدَ وَجْهِي لِلَّذِي خَلَقَهُ وَصُوَّرَهُ وَشَقَّ سَمْعَهُ وَبَصَرَهُ تَبَارَكَ اللَّهُ أَحْسَنُ الْخَالِقِينَ»
ثُمَّ يَكُونُ مِنْ آخِرِ مَا يَقُولُ بَيْنَ التَّشَهُّدِ وَالتَّسْلِيمِ: «اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي مَا قَدَّمْتُ وَمَا أَخَّرْتُ وَمَا أَسْرَرْتُ وَمَا أَعْلَنْتُ وَمَا أَسْرَفْتُ وَمَا أَنْتَ أَعْلَمُ بِهِ مِنِّي أَنْتَ الْمُقَدِّمُ وَأَنْتَ الْمُؤَخِّرُ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ» . رَوَاهُ مُسْلِمٌ
وَفِي رِوَايَةٍ لِلشَّافِعِيِّ: «وَالشَّرُّ لَيْسَ إِلَيْكَ وَالْمَهْدِيُّ مَنْ هَدَيْتَ أَنَا بِكَ وَإِلَيْك لَا مَنْجَى مِنْكَ وَلَا مَلْجَأَ إِلَّا إِلَيْكَ تَبَارَكْتَ»
ব্যাখ্যা: যেহেতু রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন সালাতকে নির্দিষ্ট করেননি সেহেতু সকল সালাতে দু‘আ-যিকরগুলো পড়া সুন্নাত রীতি হিসেবে পরিগণিত হবে। সহীহ মুসলিমের সহীহ হাদীসটি রাতের সালাতের ব্যাপারে নাযিল হয়েছে। তবে তা এ নির্দেশ করে না যে, দু‘আ-আযকারগুলো রাতের তাহাজ্জুদ সালাতের জন্যে নির্দিষ্ট। ফারযের (ফরযের/ফরজের) ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য নয়। মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাহ্-এর হাদীসটা নাসায়ীতে বর্ণিত আছে এর মাঝেও কোন প্রমাণ নেই যে, রাতের সালাতের জন্যেই এটা খাস।
বুঝা গেল রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকবীরে তাহরীমার পর দু‘আ পড়তেন। হাদীসের মধ্যে যিকর ও দু‘আ পড়ার প্রমাণ রয়েছে তাহরীমার পরে। তাহরীমার পূর্বে নয়। এটাই স্পষ্ট, বিশুদ্ধ। সুতরাং অনর্থক বাতিল মন্তব্য করে সুন্নাতের ‘আমল থেকে দূরে থাকা সমীচীন হবে না। এ হাদীস শুরু দু‘আকে শার‘ঈ রীতিনীতি হওয়ার উপর নির্দেশ করছে।