পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - যে কারণে উযূ করা ওয়াজিব হয়
৩০৪-[৫] উক্ত রাবী [ইবনু ’আব্বাস (রাঃ)] বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বকরীর রানের (পাকানো) মাংস (মাংস/মাংস/গোসত) খেয়ে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করলেন কিন্তু উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করেননি। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ مَا يُوْجِبُ الْوَضُوْءَ
قَالَ: إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَكَلَ كَتِفَ شَاةٍ ثُمَّ صلى وَلم يتَوَضَّأ
ব্যাখ্যা: قَوْلُهٗ ( تَوَضُؤا وَمِمَّا مَسَّتِ النَّارُ) (তোমরা আগুনে পাকানো খাবার খেয়ে উযূ করবে) পাকানো, ভাজা বা আগুন যাতে প্রভাব বিস্তার করে এমন খাদ্য হলো আগুনে পাকানো খাদ্য। উযূ (ওযু/ওজু/অজু) দ্বারা উদ্দেশ্য সালাতের উযূ। এ হাদীস দ্বারা প্রতীয়মান হয়, আগুনে পাকানো খাবার খাওয়া উযূ ভঙ্গের একটি অন্যতম কারণ। তবে এ মাসআলাতে ‘উলামার মতভেদ রয়েছে।
* পূর্ব ও পরবর্তী অধিকাংশ ‘উলামার মতে এটি উযূ ভঙ্গের কোন কারণ নয়।
* আর একদলের মতে আগুনে পাকানো খাবার খেলে শার‘ঈ উযূ করা আবশ্যক। তাদের দলীল আবূ - হুরায়রার এ হাদীসসহ এ বিষয়ে বর্ণিত আরো কতিপয় হাদীস। তবে প্রথম মতাবলম্বীরা বিভিন্নভাবে এ হাদীসের ব্যাখ্যা বা উত্তর দিয়েছেন। যথাঃ
(১) হাদীসে উযূ দ্বারা উদ্দেশ্য মুখমণ্ডল ও হাতের কব্জি ধোয়া। তবে তাদের এ কথাটি প্রত্যাখ্যাত। কেননা প্রতিটি শব্দের শার‘ঈ অর্থ অন্য অর্থের উপর প্রাধান্যযোগ্য।
(২) এ হাদীসে ‘আমরটি মুসতাহাব অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে, ওয়াজিব অর্থে নয়। তাদের এ দাবীও প্রত্যাখ্যাত। কেননা ‘আমর-এর আসল অর্থ হলো وجوب বা কোন কিছু আবশ্যক হওয়া।
যখন এ বিষয়ে বর্ণিত পরস্পর বিপরীত হাদীসগুলোর অগ্রাধিকার যোগ্যতা সুস্পষ্ট নয় তখন আমরা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পরবর্তী খুলাফায়ি রাশিদীনের ‘আমলের মাধ্যমে একটি দিককে প্রাধান্য দিব। ‘আল্লামা ইমাম নাবাবী (রহঃ) (شرح المهذب) গ্রন্থে এটিকে সন্তোষজনক অভিমত হিসেবে ব্যক্ত করেছেন। এর মাধ্যমে ইমাম বুখারীর ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-এর হাদীসের ভূমিকায় তিন খলীফাহ্ হতে বর্ণিত আসার নিয়ে আমার রহস্যও উন্মোচিত হয়। ইমাম নাবাবী (রহঃ) বলেনঃ এ বিষয়ে সাহাবী তাবি‘ঈদের মাঝের মতবিরোধটা অতি সুপরিচিত। অতঃপর আগুনে পাকানো খাবার খেয়ে উযূ ভঙ্গ না হওয়ার বিষয়ে ঐকমত্য সাব্যস্ত হয়েছে।
(৩) এ হাদীসটি আগুনে পাকানো খাবার খেয়ে উযূ ভঙ্গ না হওয়ার বিষয়ে ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) ও উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত হাদীস দ্বারা রহিত হয়ে গেছে।
ভাষ্যকার বলেনঃ আমার নিকট তৃতীয় উত্তরটি অধিক শক্তিশালী। কারণ নাসখের দাবীর চেয়ে ঢের উত্তম। আর ইসলামের প্রাথমিক যুগে আগুনে পাকানো খাদ্যের ব্যাপারে উযূ করার আদেশ প্রদানের রহস্য হলো তারা (মুসলিমরা) অজ্ঞতার যুগে অল্পই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকত। অতঃপর ইসলামে যখন পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার বিষয়টি স্বীকৃতি ও ব্যাপক প্রচার-প্রসার লাভ করলো, তখন মু’মিনদের প্রতি সহজকরণার্থে সে আদেশ রহিত করা হয়।
আগুনে পাকানো খাদ্য খেয়ে শার‘ঈ উযূ আবশ্যক হওয়ার বর্ণনাটি ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-এর হাদীস দ্বারা রহিতকরণের উপর এ বলে প্রশ্ন তোলা হয়েছে যে, রহিতকরণের দাবি তখনই সঠিক হবে যখন একটি আরেকটির পূর্বে ঘটেছে বলে ইতিহাস থেকে জানা যাবে। এর উত্তরে বলা হয়েছেঃ বায়হাক্বী থেকে ইমাম শাফি‘ঈ (রহঃ)-এর বর্ণনামতে ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) মক্কা বিজয়ের পর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহচর্যে এসেছেন যা মুহাম্মাদ বিন ‘আমর বিন ‘আত্বা হতে মুসনাদে আহমাদে বর্ণিত হাদীস দ্বারা প্রতীয়মান হয়। অতএব ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-এর হাদীসটি পরের।
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)-এর হাদীস রহিত হওয়ার ক্ষেত্রে আবূ দাঊদ ও নাসায়ীতে জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত সহীহ হাদীসটি অধিক সুস্পষ্ট যেখানে বলা হয়েছে كاَنَ أَخِرُ الْاَمْرَيْنِ مِنْ رَّسُوْله وَسَلَّمَِ (অর্থাৎ- রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সর্বশেষ ‘আমল ছিল আগুনে পাকানো খাদ্য খেয়ে উযূ না করা)। হাদীসটি সহীহ হলেও কেউ কেউ এটির একটি ত্রুটি বর্ণনা করার চেষ্টা করেছেন, যে চেষ্টাকে মুসনাদে আহমাদে জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত দীর্ঘ হাদীসটি বাতিল করে দেয়, যেখানে বলা হয়েছে ‘‘রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীগণকে সাথে নিয়ে খাওয়া শেষে প্রস্রাব করার পর উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করে যুহর সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করলেন। অতঃপর আবার সাহাবীগণকে সাথে নিয়ে খেয়ে বিনা উযূতে ‘আসর সালাত আদায় করলেন।’’ এ হাদীস থেকে সুস্পষ্ট যে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বশেষ আগুনে পাকানো খাদ্য খেয়ে উযূ করেননি।