৮২

পরিচ্ছেদঃ ৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - তাকদীরের প্রতি ঈমান

৮২-[৪] ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, সত্যবাদী ও সত্যবাদী বলে স্বীকৃত আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের প্রত্যেকেরই জন্ম হয় এভাবে যে, তার মায়ের পেটে (প্রথমে তার মূল উপাদান) শুক্ররূপে চল্লিশ দিন পর্যন্ত থাকে। অতঃপর তা চল্লিশ দিন পর্যন্ত লাল জমাট রক্তপিন্ডরূপ ধারণ করে। তারপর পরবর্তী চল্লিশ দিনে মাংসপিন্ডর রূপ ধারণ করে। অতঃপর আল্লাহ তা’আলা একজন মালাককে চারটি বিষয় লিখে দেয়ার জন্য পাঠন। সে মালাক লিখেন তার- (১) ’আমল [সে কি কি ’আমল করবে], (২) তার মৃত্যু, (৩) তার রিয্‌ক্ব (রিজিক/রিযিক) ও (৪) তার নেককার বা দুর্ভাগা হওয়ার বিষয় আল্লাহর হুকুমে তার তাক্বদীরে লিখে দেন, তারপর তন্মধ্যে রূহ্ প্রবেশ করান। অতঃপর সে সত্তার কসম, যিনি ব্যতীত প্রকৃত আর কোন ইলাহ নেই! তোমাদের মধ্যে কেউ জান্নাতবাসীদের ’আমল করতে থাকে, এমনকি তার ও জান্নাতের মধ্যে মাত্র এক হাত দূরত্ব থাকে, এমন সময় তার প্রতি তাক্বদীরের লিখা তার সামনে আসে। আর তখন সে জাহান্নামীদের কাজ করতে থাকে এবং জাহান্নামে প্রবেশ করে। তোমাদের কোন ব্যক্তি জাহান্নামীদের মতো ’আমল করতে শুরু করে, এমনকি তার ও জাহান্নামের মধ্যে এক হাত দূরত্ব অবশিষ্ট থাকে। এমন সময় তার প্রতি সে লেখা (তাক্বদীর) সামনে আসে, তখন সে জান্নাতীদের কাজ করতে শুরু করে, ফলে সে জান্নাতে প্রবেশ করে। (বুখারী, মুসলিম)[1]

بَابُ الْإِيْمَانِ بِالْقَدْرِ

عَن عبد الله بن مَسْعُود قَالَ: حَدَّثَنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ الصَّادِق المصدوق: «إِن أحدكُم يجمع خلقه فِي بطن أمه أَرْبَعِينَ يَوْمًا ثمَّ يكون فِي ذَلِك علقَة مثل ذَلِك ثمَّ يكون فِي ذَلِك مُضْغَة مثل ذَلِك ثمَّ يُرْسل الْملك فينفخ فِيهِ الرّوح وَيُؤمر بِأَرْبَع كَلِمَات بكتب رزقه وأجله وَعَمله وشقي أَو سعيد فوالذي لَا إِلَه غَيره إِن أحدكُم لَيَعْمَلُ بِعَمَلِ أَهْلِ الْجَنَّةِ حَتَّى مَا يَكُونُ بَيْنَهُ وَبَيْنَهَا إِلَّا ذِرَاعٌ فَيَسْبِقُ عَلَيْهِ الْكِتَابُ فَيَعْمَلُ بِعَمَلِ أَهْلِ النَّارِ فَيَدْخُلُهَا وَإِنَّ أَحَدَكُمْ لَيَعْمَلُ بِعَمَلِ أَهْلِ النَّارِ حَتَّى مَا يَكُونُ بَيْنَهُ وَبَيْنَهَا إِلَّا ذِرَاعٌ فَيَسْبِقُ عَلَيْهِ الْكِتَابُ فَيَعْمَلُ بِعَمَلِ أَهْلِ الْجَنَّةِ فَيَدْخُلُهَا»

عن عبد الله بن مسعود قال: حدثنا رسول الله صلى الله عليه وسلم وهو الصادق المصدوق: «ان احدكم يجمع خلقه في بطن امه اربعين يوما ثم يكون في ذلك علقة مثل ذلك ثم يكون في ذلك مضغة مثل ذلك ثم يرسل الملك فينفخ فيه الروح ويومر باربع كلمات بكتب رزقه واجله وعمله وشقي او سعيد فوالذي لا اله غيره ان احدكم ليعمل بعمل اهل الجنة حتى ما يكون بينه وبينها الا ذراع فيسبق عليه الكتاب فيعمل بعمل اهل النار فيدخلها وان احدكم ليعمل بعمل اهل النار حتى ما يكون بينه وبينها الا ذراع فيسبق عليه الكتاب فيعمل بعمل اهل الجنة فيدخلها»

Chapter: Belief in the Divine Decree - Section 1


Ibn Mas'ud said that God’s messenger who spoke the truth and whose word was believed told them the following:
The constituents of one of you are collected for forty days in his mother’s womb in the form of a drop, then they become a piece of congealed blood for a similar period, then they become a lump of flesh for a similar period. Then God sends to him an angel with four words who records his deeds, the period of his life, his provision, and whether he will be miserable or blessed: thereafter He breathes the spirit into him. By Him other than whom there is no god, one of you will do the deeds of those who go to paradise so that there will be only a cubit between him and it, then what is decreed will overcome him so that he will do the deeds of those who go to hell and will enter it; and one of you will do the deeds of those who go to hell so that there will be only a cubit between him and it, then what is decreed will overcome him so that he will do the deeds of those who go to paradise and will enter it.

(Bukhari and Muslim.)

ব্যাখ্যা: আল্লাহ তা‘আলা চোখের পলকে মানুষ সৃষ্টি করতে সক্ষম। তা’ সত্ত্বেও এই রূপান্তরের প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মানুষ সৃষ্টিতে অনেক উপকার ও উপদেশ বিদ্যমান। তন্মধ্যে-

(১) যদি চোখের পলকে মাতৃগর্ভে একজন শিশু সৃষ্টি করতেন তাহলে তা মায়ের জন্য কষ্টকর হত অনভ্যস্ততার কারণে। হয়তবা মায়ের মনে আশঙ্কা দেখা দিত যে, তিনি রুগ্ন। ফলে আল্লাহ তা‘আলা প্রথমে মানব ভ্রূণকে কিছুদিন মায়ের পেটে নুত্বফাহ্ (বীর্য) অবস্থায় রেখেছেন, অতঃপর ‘আলাকায় (রক্তপিন্ড-) রূপান্তর করেছেন। এভাবে ক্রমান্বয়ে ভ্রূণকে পরিপূর্ণ করেছেন যাতে মা অভ্যস্ত হয়ে উঠে।

(২) আল্লাহর ক্ষমতা ও তার নি‘আমাত প্রকাশ করা যাতে বান্দা তাঁর ‘ইবাদাত করে ও তাঁরই শুকরিয়া আদায় করে।

(৩) মানবজাতিকে এ বিষয়ে সতর্ক করা যে, মহান আল্লাহ পুনরুত্থানে পরিপূর্ণ ক্ষমতার অধিকারী। কেননা যে আল্লাহ পানি থেকে রক্ত, অতঃপর মাংস সৃষ্টি করেছেন, তাতে রূহ দিয়েছেন, তিনি তাকে পুনরুত্থান করতে ও তাতে আবার রূহ দিতেও পরিপূর্ণভাবে সক্ষম।

(৪) বান্দাকে কোন কাজে তাড়াহুড়া না করে ধিরস্থিরতার সাথে করতে শিক্ষা দেয়া। মানবজাতি কোন কাজে ধিরস্থিরতা অবলম্বন করলে এটা তার জন্য আরো বেশী উপযোগী হবে।

(৫) মানবকে সতর্ক করা এবং এটা বুঝানো যে আসলে তারা কি? অতএব তারা যেন শারীরিক শক্তি ও অঙ্গ প্রত্যঙ্গের শক্তিমত্তার কারণে ধোঁকায় পতিত না হয়। তারা যেন মনে করে এসব কিছুই আল্লাহর দান। বরং এটা তাদের প্রতি অনুগ্রহ।

হাদীসের শিক্ষাঃ

১। তাক্বদীর সুস্পষ্টভাবেই সাব্যস্ত আছে।

২। তাওবাহ্ গুনাহকে মুছে ফেলে।

৩। যার মৃত্যু যেভাবে হয় তার জন্য তাই সাব্যস্ত থাকে। যে ভালো কাজের উপর মৃত্যুবরণ করে তার জন্য ভালো এবং যার মৃত্যু খারাপ কাজের উপর তার জন্য খারাপই সাব্যস্ত।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১: ঈমান (বিশ্বাস) (كتاب الإيمان)