পরিচ্ছেদঃ ৪/২৬. (শৌচকার্যের জন্য) বিজোড় সংখ্যক ঢিলা ব্যবহার করা।
১৬২. আবূ হুরাইরাহ (রাযি.) হতে বর্ণিত যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে কেউ যখন উযূ করে তখন সে যেন তার নাকে পানি দিয়ে ঝাড়ে। আর যে শৌচকার্য করে সে যেন বিজোড় সংখ্যায় ঢিলা ব্যবহার করে। আর তোমাদের কেউ যখন ঘুম থেকে জাগে তখন সে যেন উযূর পানিতে হাত ঢুকানোর পূর্বে তা ধুয়ে নেয়; কারণ তোমাদের কেউ জানে না যে, ঘুমন্ত অবস্থায় তার হাত কোথায় থাকে। (১৬১) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ১৫৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৬৩)
بَاب الِاسْتِجْمَارِ وِتْرًا
حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ يُوسُفَ، قَالَ أَخْبَرَنَا مَالِكٌ، عَنْ أَبِي الزِّنَادِ، عَنِ الأَعْرَجِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ " إِذَا تَوَضَّأَ أَحَدُكُمْ فَلْيَجْعَلْ فِي أَنْفِهِ ثُمَّ لِيَنْثُرْ، وَمَنِ اسْتَجْمَرَ فَلْيُوتِرْ، وَإِذَا اسْتَيْقَظَ أَحَدُكُمْ مِنْ نَوْمِهِ فَلْيَغْسِلْ يَدَهُ قَبْلَ أَنْ يُدْخِلَهَا فِي وَضُوئِهِ، فَإِنَّ أَحَدَكُمْ لاَ يَدْرِي أَيْنَ بَاتَتْ يَدُهُ ".
প্রাসঙ্গিক আলোচনা
অযুর শর্ত দশটি। সেগুলো হলো- (১) ইসলাম (২) জ্ঞান বা বিবেক। (৩) ভালো-মন্দ পার্থক্যকারী তথা প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া। (৪) নিয়ত করা এবং পবিত্রতা অর্জন শেষ না হওয়া পর্যন্ত নিয়ত অবশিষ্ট থাকা। (৫) যেসব কারণে অযু ফরয হয় সেসব কারণ দূর হওয়া। (৬) ইস্তিঞ্জা করা (পেশাব ও পায়খানার রাস্তা থেকে নির্গত অপবিত্রতা পানি দ্বারা দূর করা) ও ইস্তিজমার করা (পেশাব ও পায়খানার রাস্তা থেকে নির্গত অপবিত্রতা পাথর বা পাতা বা অনুরূপ জিনিস দ্বারা দূর করা)। (৭) পানি পবিত্র হওয়া (৮) পানি বৈধ হওয়া। (৯) চামড়ায় পানি পৌঁছতে বাধা থাকলে তা দূর করা। (১০) যে ব্যক্তির সর্বদা অপবিত্র হওয়ার সমস্যা থাকে তার ক্ষেত্রে ফরয সালাতের ওয়াক্ত হওয়া।
ইস্তিঞ্জার উপকরণের সংখ্যা
এর সংখ্যা বেজোড় হওয়া সুন্নাত। ইমাম মাজদুদ্দীন ইবন তাইমিয়্যাহ বলেন, তিনের অধিক বারের ক্ষেত্রে বেজোড় সংখ্যার ঢিলা-কুলুখ ব্যবহার করা সুন্নাত।
পাত্রের প্রকারভেদ ও হুকুম
সত্ত্বাগত দিক থেকে পাত্র কয়েক প্রকার। যথা (১) সোনা ও রূপার পাত্র, (২) রৌপ্যের প্রলেপযুক্ত পাত্র, (৩) কাঁচের পাত্র, (৪) মূল্যবান ধাতুর পাত্র, (৫) চামড়ার পাত্র, (৬) হাড়ের পাত্র, (৭) উপরে বর্ণিত পাত্র ব্যতীত অন্যান্য পাত্র। যেমন, চীনামাটির পাত্র, কাঠের পাত্র, পিতলের পাত্র ও সাধারণ পাত্র।
সোনা, রূপা ও রৌপ্যের প্রলেপযুক্ত পাত্র ব্যতীত অন্যান্য সব পাত্র ব্যবহার করা বৈধ; চাই তা মূল্যবান হোক বা অল্প মূল্যের হোক। কেননা হুযায়ফা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “তোমরা সোনা ও রূপার পাত্রে পান করবে না। আর এসব পাত্রে খানা খাবে না। এগুলো দুনিয়াতে তাদের (অমুসলিমের জন্য আর আমাদের জন্য রয়েছে আখেরাতে।” [বুখারী: ৫৬৩৩]
যেসব পাত্র ব্যবহার করা হারাম তা অন্যান্য উদ্দেশ্যে গ্রহণ করাও হারাম। যেমন, গানের উপকরণ তথা বাদ্যযন্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা নিষেধাজ্ঞার ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ সবাই সমান। কেননা হাদীসটি সবার জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য।
তবে এটা জানা আবশ্যক যে, সন্দেহের কারণে কোনো পাত্র অপবিত্র হবে না; যতক্ষণ নিশ্চিতভাবে অপবিত্র হওয়া জানা না যাবে। কেননা মূল হলো পবিত্র হওয়া। অমুসলিমদের পাত্র বলতে বুঝানো হচ্ছে- (১) আহলে কিতাবীদের পাত্র, (২) মুশরিকদের পাত্র।
হাদিস থেকে শিক্ষা
১. এগুলো অপবিত্র হওয়া নিশ্চিত না হলে তা ব্যবহার করা জায়েয। কেননা মূল হলো পবিত্র হওয়া।
২. অমুসলিমের জামা কাপড় পবিত্র, যতক্ষণ তা অপবিত্র হওয়া নিশ্চিত না হয়।
৩. যেসব প্রাণীর গোশত খাওয়া বৈধ সেসব মারা গেলে সেসবের মৃত চামড়া দাবাগাত (প্রক্রিয়াজাত করে ব্যবহার উপযোগী) করলে তা পবিত্র বলে গণ্য হবে।
৪. আর যেসব প্রাণীর জীবিত অবস্থায় কোনো অংশ বিচ্ছেদ করা হয়েছে তা মৃত প্রাণীর মতোই অপবিত্র। তবে জীবিত অবস্থায় পশম, পালক, চুল ও লোম নেয়া হলে তা পবিত্র।
৫. খাবার ও পানীয় পাত্র ঢেকে রাখা সুন্নাত। জাবির রাদ্বিয়াল্লাহু 'আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “তোমার পানি রাখার পাত্রের মুখ বন্ধ রাখো এবং আল্লাহর নাম স্মরণ করো। তোমার বাসনপত্র ঢেকে রাখো এবং আল্লাহর নাম স্মরণ করো। সামান্য কিছু দিয়ে হলেও তার উপর দিয়ে রেখে দাও।"
৬. ঘুমিয়ে গেলে অযু ভঙ্গ হয়।
৭. ঘুমানোর পরে হাত ধোয়ার বিধিবদ্ধ নিয়ম। তবে এ মাসআলাটিতে মতভেদ রয়েছে ইমাম মালিক ও শাফে'য়ী রাহিমাহুমাল্লাহ বলেন, এটি সুন্নাত। যদিও হাত পরিষ্কার থাকা সম্পর্কে দৃঢ়তা থাকে। ইমাম মালিক রাহিমাহুল্লাহ'র অপর মতে, যখন হাত পরিষ্কার কি না সন্দেহ থাকবে তখন ঘুম থেকে উঠে হাত ধোয়া মুস্তাহাব। ইমাম দাউদ আয-যাহেরীর মতে, পানির পাত্রের বাইরে হাত ধোয়া কেবল ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার পরে ওয়াজিব। ইমাম আহমাদ ইবন হাম্বল রাহিমাহুল্লাহ বলেন, কেউ রাতের ঘুম থেকে জাগ্রত হলে তাকে পানির পাত্রের বাইরে হাত ধোয়া ওয়াজিব।
৮. নাক মুখের অংশ; সুতরাং অযুর সময় তা ধুতে হবে।
৯. যিনি পাথর বা মাটি দিয়ে পবিত্র হবেন তার জন্য তা বেজোড় সংখ্যক নেয়া সুন্নাত।
১০. ইবন হাজার রাহিমাহুল্লাহ বলেন, এ হাদীস থেকে একদল আলেম মাসআলা দিয়েছেন যে, পায়খানার রাস্তার মত জায়গাতে অপবিত্রতার কিছু অংশ থাকলেও তা ছাড়ের মধ্যে থাকবে।
১১. পানির পাত্রে হাত ঢুকিয়ে দেয়া নিষিদ্ধ হওয়ার বিষয়টি হারাম হিসেবে অথবা মাকরূহ হিসেবে।
১২. হাত পানির পাত্রের বাইরে ধোয়ার বাহ্যিক কারণ হচ্ছে পরিচ্ছন্ন রাখা। এ বিধান অধিকাংশের ওপর নির্ভর করে। তাই যদি কেউ নিজের হাত কোনো পলিথিন দিয়ে বেঁধেও রাখে তারপরও তা পানপাত্রের বাইরে ধোয়া সুন্নাত বা মতান্তরে ওয়াজিব।
১৩. অত্র হাদীসে ইমাম মুসলিমের শেষোক্ত দু'টি বর্ণনা দ্বারা তারা দলীল গ্রহণ করেছেন যারা বলেন, নাকে পানি নেয়া ফরয। অন্যান্যরা বলেন, এ হাদীসের নির্দেশসূচক বাক্য মুস্তাহাব বুঝাবে। তারা বলেন, এটি খবরে ওয়াহেদ; সুতরাং তা দিয়ে আল্লাহর কুরআনে বর্ণিত বিধানের ওপর বর্ধিত করা যাবে না। কিন্তু প্রথম মতটি বেশি শক্তিশালী।
Narrated Abu Huraira:
Allah's Messenger (sallallahu ‘alaihi wa sallam) said, "If anyone of you performs ablution he should put water in his nose and then blow it out and whoever cleans his private parts with stones should do so with odd numbers. And whoever wakes up from his sleep should wash his hands before putting them in the water for ablution, because nobody knows where his hands were during sleep."