৩৩৭৭

পরিচ্ছেদঃ ১৮. প্রথম অনুচ্ছেদ - শিশুর বালেগ হওয়া ও ছোট বেলায় তাদের প্রতিপালন প্রসঙ্গে

৩৩৭৭-[২] বারা ইবনু ’আযিব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হুদায়বিয়ার সন্ধিতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কার কুরায়শদের সাথে তিনটি বিষয়ে চুক্তিবদ্ধ হন। (প্রথমত) মুশরিকদের মধ্য হতে কেউ মুসলিমদের নিকট উপস্থিত হলে তাকে ফিরিয়ে দিতে হবে; কিন্তু মুসলিমদের কেউ কাফিরদের নিকট ধৃত হলে তারা ফেরত পাঠাবে না। (দ্বিতীয়ত) তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এ বছর চলে যাবেন, পরবর্তী বছর ’উমরার উদ্দেশে মক্কায় প্রবেশ ও তিনদিন সেখানে অবস্থান করতে পারবেন। [তৃতীয়ত ’আরবের যে কোনো গোত্র যে কোনো পক্ষের সাথে সন্ধির সাথে যুক্ত হতে পারবে।] সন্ধির শর্তানুযায়ী যখন পরবর্তী বছর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মক্কায় প্রবেশ করলেন ও সেখানে অবস্থানের সময়সীমা শেষ হলো, তখন তিনি মক্কা হতে রওয়ানা হলেন। তখন হামযাহ্ (রাঃ)-এর শিশুকন্যা ’হে চাচা’ ’হে চাচা’ বলে তাঁর অনুসরণ করে ডাকতে লাগল। ’আলী তাকে হাত ধরে তুলে নিলেন।

অতঃপর ঐ কন্যার লালন-পালনে ’আলী , যায়দ ও জা’ফার - এই তিনজনের মধ্যে বিরোধ দেখা দিল। ’আলী বললেন, আমিই তাকে প্রথম উঠিয়েছি এবং সে আমার চাচাত বোন। জা’ফার বললেন, সে তো আমারও চাচাত বোন এবং তার খালা আমার সহধর্মিণী। যায়দ বললেন, সে তো আমার ভাতিজি। এমতাবস্থায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খালার পক্ষে রায় দিয়ে বললেন, খালা মাতৃসম। অতঃপর ’আলীকে বললেন, তুমি আমার, আমি তোমার (আপনজন)। জা’ফারকে বললেন, তুমি আমার শারীরিক গঠন ও চারিত্রিক গুণের সাদৃশ্যের অধিকারী। আর যায়দকে বললেন, তুমি আমারই ভাই, আমাদের প্রিয়তম। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ بُلُوْغِ الصَّغِيْرِ وَحَضَانَتِه فِى الصِّغَرِ

وَعَنِ الْبَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ قَالَ: صَالَحَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ الْحُدَيْبِيَةِ عَلَى ثَلَاثَةِ أَشْيَاءَ: عَلَى أَنَّ مَنْ أَتَاهُ مِنَ الْمُشْرِكِينَ رَدَّهُ إِلَيْهِمْ وَمَنْ أَتَاهُمْ مِنَ الْمُسْلِمِينَ لَمْ يَرُدُّوهُ وَعَلَى أَنْ يَدْخُلَهَا مِنْ قَابِلٍ وَيُقِيمَ بِهَا ثَلَاثَةَ أَيَّامٍ فَلَمَّا دَخَلَهَا وَمَضَى الْأَجَلُ خَرَجَ فَتَبِعَتْهُ ابْنَةُ حَمْزَةَ تُنَادِي: يَا عَمِّ يَا عَمِّ فَتَنَاوَلَهَا عَلِيٌّ فَأَخَذَ بِيَدِهَا فَاخْتَصَمَ فِيهَا عَلِيٌّ وَزَيْدٌ وَجَعْفَرٌ قَالَ عَلِيٌّ: أَنَا أَخَذْتُهَا وَهِيَ بِنْتُ عَمِّي. وَقَالَ جَعْفَرٌ: بِنْتُ عَمِّي وَخَالَتُهَا تَحْتِي وَقَالَ زَيْدٌ: بِنْتُ أَخِي فَقَضَى بِهَا النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِخَالَتِهَا وَقَالَ: «الْخَالَةُ بِمَنْزِلَةِ الْأُمِّ» . وَقَالَ لَعَلِيٍّ: «أَنْتَ مِنِّي وَأَنَا مِنْكَ» وَقَالَ لِجَعْفَرٍ: «أَشْبَهْتَ خَلْقِي وَخُلُقِي» . وَقَالَ لزيد: «أَنْت أخونا ومولانا»

وعن البراء بن عازب قال: صالح النبي صلى الله عليه وسلم يوم الحديبية على ثلاثة اشياء: على ان من اتاه من المشركين رده اليهم ومن اتاهم من المسلمين لم يردوه وعلى ان يدخلها من قابل ويقيم بها ثلاثة ايام فلما دخلها ومضى الاجل خرج فتبعته ابنة حمزة تنادي: يا عم يا عم فتناولها علي فاخذ بيدها فاختصم فيها علي وزيد وجعفر قال علي: انا اخذتها وهي بنت عمي. وقال جعفر: بنت عمي وخالتها تحتي وقال زيد: بنت اخي فقضى بها النبي صلى الله عليه وسلم لخالتها وقال: «الخالة بمنزلة الام» . وقال لعلي: «انت مني وانا منك» وقال لجعفر: «اشبهت خلقي وخلقي» . وقال لزيد: «انت اخونا ومولانا»

ব্যাখ্যা: (فَلَمَّا دَخَلَهَا وَمَضَى الْأَجَلُ خَرَجَ) অর্থাৎ হুদায়বিয়ার সন্ধি চুক্তি মোতাবেক মক্কায় প্রবেশ করে তিন দিন সময় অতিবাহিত করে যখন মক্কা ত্যাগের সময় এসে গেল রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেরিয়ে পড়লেন।

(يَا عَمِّ يَا عَمِّ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেরিয়ে আসার সময় হামযাহ্ -এর মেয়ে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে ‘চাচা’ ‘চাচা’ বলে ডাক দিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর চাচা হামযাহ্ উহুদের যুদ্ধে শাহাদাত বরণ করলে হামযাহ্ -এর এই মেয়ে ইয়াতীম হয়ে যায়। হামযাহ্ রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর চাচা বিধায় ইয়াতীম মেয়েটি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর চাচাতো বোন। এরপরও সে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে ভাই না ডেকে চাচা ডাকার কারণ হলো রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হামযাহ্ এবং যায়দ দুধ সম্পর্কের ভাই ছিলেন। এই হিসেবে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হামযাহ্ -এর মেয়ের দুধ সম্পর্কের চাচা।

(فَقَضٰى بِهَا النَّبِىُّ ﷺ لِخَالَتِهَا) অর্থাৎ হামযাহ্ -এর ইয়াতীম মেয়েকে লালনের দায়িত্ব নিয়ে ‘আলী , জা‘ফার এবং যায়দ -এর মাঝে টানাটানি শুরু হয়। প্রত্যেকেই অধিকারের দাবী করেন এবং সবাই যার যার যুক্তি উপস্থাপন করেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মেয়ের লালনের দায়িত্ব তাদের কাউকে না দিয়ে তাঁর খালা যায়নাব-এর হাতে ন্যস্ত করেন।

এ হাদীস থেকেই ‘উলামায়ে কিরামের অনেকে যেমন ইমাম মালিক, ইমাম যুফার মায়ের অনুপস্থিতিতে ইয়াতীম সন্তানের লালনের দায়িত্ব পালনে খালার অগ্রাধিকার দিয়ে থাকেন। অর্থাৎ লালন পালনের দায়িত্বে মায়ের পরেই খালার স্থান। কেননা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই হাদীসে খালার কাছে দায়িত্ব ন্যস্ত করার সাথে সাথে খালাকে মায়ের সমতুল্য গণ্য করে বলেন, (الْخَالَةُ بِمَنْزِلَةِ الْأُمِّ) অর্থাৎ খালা মায়ের সমতুল্য। যদিও অনেকে সেণহের দিক বিবেচনায় মায়ের অনুপস্থিতিতে নানী লালনের যোগ্য থাকলে নানীকে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকেন; কেননা নানীর স্নেহ খালার চেয়ে বেশি এবং মায়ের মা হিসেবে তার অগ্রাধিকার বেশি। তাদের এই মতকে বর্ণিত হাদীসের ঘটনা দিয়ে খন্ডন করার যুক্তি নেই। কেননা নানী না থাকায় বা নানী পালনের যোগ্য বা আগ্রহী না থাকার কারণে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই ফায়সালা দিয়ে থাকার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।

(وَقَالَ لَعَلِىٍّ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আলী, জা‘ফার, যায়দ  -এর কারো জন্য ফায়সালা না করে খালার জন্য ফায়সালা করায় তাদের মনে মানবীয় কিছুটা কষ্ট আসা অস্বাভাবিক নয়। তাই প্রত্যেকে সান্তবনা দেয়ার জন্য তিনি একেক জনকে সম্বোধন করে একে সান্তবনার বাণী শুনান। তাই ‘আলী -কে বলেন, ‘‘তুমি আমার আমি তোমার’’। জা‘ফার (রাঃ)-কে বলেন, ‘‘তুমি অবয়বে ও চরিত্রে আমার সাদৃশ্য’’। যায়দ (রাঃ)-কে বলেন, ‘‘তুমি আমার ভাই ও বন্ধু’’। এই হৃদয় কাড়া কথাগুলো এবং সুসংবাদগুলো ছিল তাদের হৃদয়ে সান্তবনা দেয়ার জন্য এবং তাদের মনের কষ্ট দূর করার জন্য। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৩: বিবাহ (كتاب النكاح)