পরিচ্ছেদঃ

এক. রমযান কাছে এলে আমরা অনেকে নিম্নের দোয়াটি পড়ি, তবে এমন লোক খুব কম আছি যারা এর শুদ্ধতা ও অশুদ্ধতা সম্পর্কে অবগত:

"اللهم بارك لنا في رجب وشعبان وبلغنا رمضان"

“হে আল্লাহ, আপনি রজব ও শাবান মাসে আমাদের জন্য বরকত রাখুন এবং আমাদেরকে রমযান পর্যন্ত পৌঁছার তাওফিক দিন”।

হাদিসের সনদ:

ইমাম আহমদ তার “মুসনাদ” গ্রন্থে বলেন: আমাদেরকে বলেছে আব্দুল্লাহ, তিনি বলেন আমাদেরকে বলেছে উবাইদুল্লাহ ইবনু ওমর, যায়েদা ইবনু আবির রাকাদ থেকে, তিনি যিয়াদ আন-নুমাইরি থেকে, তিনি সাহাবি আনাস ইবনু মালেক থেকে, তিনি বলেন: রজব আগমন করলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেন:... ...

ইবনুস সুন্নি ফিল “আমলিল ইয়াওম ওয়াল লাইলাহ”: (৬৫৯), তিনি এ হাদিস ইবনু মুনি সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন আমাদেরকে বলেছে উবাইদুল্লাহ ইবনু ওমর আল-কাওয়ারিরি।

বায়হাকি ফি “শুআবিল ঈমান”: (৩/৩৭৫), তিনি বর্ণনা করেন আবূ আব্দুল্লাহ আল-হাফেয সূত্রে, তিনি বলেন আমাদেরকে বলেছে আবূ বকর মুহাম্দ ইবনু মুয়াম্মাল, তিনি বলেন আমাদেরকে বলেছে মুহাম্মদ ইবনু শারানি, আল-কাওয়ারিনি থেকে।

আবূ নু’আইম ফিল “হিলইয়াহ”: (৬/২৬৯), তিনি এ হাদিস বর্ণনা করেন হাবিব ইবনু হাসান ও আলি ইবনু হারুন সূত্রে, তারা উভয়ে বলেছেন আমাদেরকে বলেছে ইউসূফ আল-কাদি, তিনি বলেন আমাদেরকে বলেছে মুহাম্মদ ইবনু আবূ বকর, তিনি বলেন আমাদেরকে বলেছে যায়েদা ইবনু আবির রাকাদ।

এ হাদিস বাযযার তার “মুসনাদ” গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন আহমদ ইবনু মালেক আল-কুশাইরি থেকে, সে যায়েদা থেকে।

এ হাদিসের সনদে দু’টি দোষ বা সমস্যা রয়েছে, হাদিস বিশারদগণের নিকট যার পরিভাষিক নাম হচ্ছে ইল্লত, অর্থাৎ হাদিসে দু’টি ইল্লত রয়েছে:

প্রথম ইল্লতঃ এ হাদিসের একজন বর্ণনাকারী হচ্ছেন যায়েদা ইবনু আবির রাকাদ, তার সম্পর্কে হাদিস বিশারদগণের মূল্যায়ন দেখুন:

আবূ হাতেম বলেছেন: যায়েদা ইবনু আবির রাকাদ যিয়াদ ইবনু নুমাইরি থেকে মারফূ সনদে মুনকার হাদিস বর্ণনা করে, জানি না এ সমস্যা তার থেকে না তার উস্তাদ যিয়াদ থেকে। সে যিয়াদ ব্যতীত অন্য কারো থেকে হাদিস বর্ণনা করেছে কিনা তাও জানি না, যার সূত্র ধরে তার হাদিস যাচাই করব।

বুখারি বলেছেন: তার হাদিস মুনকার।

আবূ দাউদ বলেছেন: তার হাদিস সম্পর্কে কিছু জানি না।

নাসায়ি বলেছেন: তাকে চিনি না।

যাহাবি “দেওয়ানে দুয়াফাতে” বলেছেন: সে কোন দলিল নয়।

ইবনু হাজার বলেছেন: তার হাদিস মুনকার।

“মুনকার” হাদিস:

হাদিস বিশারদদের একটি পরিভাষা হচ্ছে “মুনকার”, এর অর্থ সম্পর্কে ইমাম আহমদ বলেন:

(الحديث عن الضعفاء قد يُحْتاج إليه في وقتٍ، والمنكر أبدًا منكر)

“দুর্বল বর্ণনকারীদের হাদিস কখনো প্রয়োজন হয়, কিন্তু মুনকার সর্বদা মুনকার”। দেখুন: “ইলালুল মারওয়াযী”: হাদিস নং: (২৮৭), “মাসায়েল ইবনু হানি”: (১৯২৫-১৯২৬), ইবনু রজব “শারহুল ইলাল”: (১/৩৮৫) গ্রন্থে ইবনু হানি থেকে তা বর্ণনা করেছেন।

ইমাম আহমদের কথার অর্থ হচ্ছে: মুনকার সর্বদা পরিত্যক্ত, এর বিপরীতে দুর্বল হাদিসের প্রয়োজন হলেও মুনকার কখনো গ্রহণ করা যাবে না।

দ্বিতীয় ইল্লতঃ এ হাদিসের অপর বর্ণনাকারী যিয়াদ ইবনু আব্দুল্লাহ নুমাইরি আল-বিসরি, (যায়েদা ইবনু আবির রাকাদের উস্তাদ): তার সম্পর্কে হাদিস বিশারদদের বক্তব্য শুনুন:

ইয়াহ ইয়া ইবনু মায়িন বলেছেন: তার হাদিস দুর্বল।

আবূ হাতেম বলেছেন: তার হাদিস লেখা যাবে, কিন্তু দলিল হিসেবে পেশ করা যাবে না।

আবূ উবাইদ আজুররি বলেছেন: আমি আবূ দাউদকে তার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছি, তিনি তাকে দুর্বল বলেছেন।

ইবনু হিব্বান ’মাজরুহ’ বা দোষী ব্যক্তিদের আলোচনায় বলেন: তার হাদিস মুনকার। আনাস থেকে সে এমন কিছু বর্ণনা করে, যা নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারীদের সাথে মিলে না, তার হাদিস দ্বারা দলিল পেশ করা বৈধ নয়।

দারা কুতনি বলেছেন: সে দলিল নয়।

ইবনু হাজার বলেছেন: সে দুর্বল।


হাদিস সম্পর্কে আলেমদের মতামত:

বায়হাকি তার “শুআবূল ঈমান”: (৩/৩৭৫) গ্রন্থে বলেন: এ হাদিস শুধু যিয়াদ ইবনু নুমাইরি এবং তার থেকে শুধু যায়েদা ইবনু আবির রাকাদ বর্ণনা করেছেন।

বুখারি বলেছেন: যিয়াদ ইবনু নুমাইরি থেকে যায়েদা ইবনু আবির রাকাদ বর্ণিত হাদিস মুনকার।

ইমাম নববী তার “আযকার”: (পৃ.২৫৪) গ্রন্থে বলেন: “হিলইয়াতুল আউলিয়া” গ্রন্থে এ হাদিস আমরা দুর্বল সনদে বর্ণনা করেছি।

ইমাম যাহাবি “মিযানুল ইতিদাল”: (৩/৯৬) গ্রন্থে যায়েদার জীবনী আলোচনায় এ হাদিস উল্লেখ করে বলেন: এ হাদিসও দুর্বল।

হায়সামি তার “মাজমাউয যাওয়ায়িদ”: (২/১৬৫) গ্রন্থে বলেন: “বাযযার এ হাদিস বর্ণনা করেছেন, এর সনদে যায়েদা ইবনু আবির রাকাদ আছে, ইমাম বুখারি তাকে মুনকারুল হাদিস বলেছেন, আলেমদের একটি জামাত তাকে অপরিচিত বলেছেন”।

তিনি আরো বলেন: “বাযযার ও তাবরানি আওসাত গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন, এর সনদে যায়েদা ইবনু আবির রাকাদ আছে, যার ব্যাপারে বিতর্ক রয়েছে, কেউ তাকে নির্ভরযোগ্যও বলেছেন”। “মাজমাউয যাওয়ায়িদ”: (৩/১৪০)

ইবনু আলান ফি “ফুতুহাতির রাব্বানিয়াহ”: (৪/৩৩৫) গ্রন্থে ইবনু হাজার থেকে নকল করে বলেন: ইবনু হাজার বলেছেন এ হাদিস গরিব, ইমাম বাযযার ও আবূ নুআইম তা বর্ণনা করেছেন।

আহমদ আল-বান্না “বুলুগুল আমানি”: (৯/২৩১) গ্রন্থে বলেন: অধ্যায়ের এ হাদিসে যিয়াদ নুমাইরি রয়েছে, সে দুর্বল।

ইমাম সুয়ূতি এ হাদিস তার “জামে সগির” গ্রন্থে বায়হাকি ফি “শুআবিল ইমান” ও ইবনু আসাকের সূত্রে উল্লেখ করে তার দুর্বলতার দিকে ঈঙ্গিত করেছেন, এর অন্যান্য সনদও রয়েছে, যার একটি অপরটি দ্বারা শক্তিশালী হয়”। কিন্তু তিনি সেসব সনদ উল্লেখ করেন নি!? বস্তুত এ হাদিসের সনদ একটি।

আহমদ শাকের “মুসনাদের তাখরিজ”: (৪/১০০-১০১) গ্রন্থে হাদিস নং: (২৩৪৬) এ বলেন: এর সনদ দুর্বল।

শায়খ শুআইব আরনাউত মুসনাদে আহমদের “তাখরিজ”: (৪/১৮০), গ্রন্থে হাদিস নং: (২৩৪৬) এ বলেন: এর সনদ দুর্বল।

আলবানি “মিশকাতের তাখরিজ”: (১/৪৩২), গ্রন্থে হাদিস নং: (১৩৬৯) এ বলেন: “জামেউস সাগির” গ্রন্থে আল্লামা সুয়ূতি বলেন বায়হাকি তার “শুআবূল ইমান” গ্রন্থে এ হাদিস উল্লেখ করেছেন। মুনাভি তার পশ্চাতে বলেন: লেখকের অবস্থা দৃষ্টে মনে হয় বায়হাকি হাদিস বর্ণনা করে তার প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। অথচ বাস্তবতা এমন নয়, বরং বায়হাকি তার পিছু নিয়েছেন, যেমন তিনি বলেছেন: ... অতঃপর বায়হাকির উল্লেখিত কথা নকল করেন। (অর্থাৎ বায়হাকি বলেন: ইমাম বুখারি বলেছেন: যিয়াদ ইবনু নুমাইরি থেকে যায়েদা ইবনু আবির রাকাদ বর্ণিত হাদিস মুনকার।)

ড. আমের হাসান সাবরি বলেন: এর সনদ দুর্বল। দেখুন: “জাওয়ায়েদ আব্দুল্লাহ ইবনু আহমদ ইবনু হাম্বল ফিল মুসনাদ”: (পৃ.১৯৮)

-


হাদিসের মানঃ মুনকার (সহীহ হাদীসের বিপরীত)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ

দুই.

( شهر رمضان أوله رحمه و أوسطه مغفرة و آخره عتق من النار )

“রমযান মাসের প্রথম অংশ রহমত, মধ্যম অংশ মাগফেরাত ও শেষ অংশ জাহান্নাম থেকে মুক্তির”। এ হাদিস মুনকার।

দেখুন: “কিতাবুদ দুয়াফা” লিল উকাইলি: (২/১৬২), “আল-কামেল ফি দুয়াফায়ির রিজাল” লি ইবনু আদি: (১/১৬৫), “কিতাবু ইলালিল হাদিস” লি ইবনু আবি হাতেম: (১/২৪৯), “সিলসিলাতিল আহাদিসুস দায়িফা ওয়াল মাওদুয়াহ” লিল আলবানি: (২/২৬২) ও (৪/৭০)


হাদিসের মানঃ মুনকার (সহীহ হাদীসের বিপরীত)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ

তিন.

مَنْ أَفْطَرَ يَوْمًا مِنْ رَمَضَانَ مِنْ غَيْرِ عُذْرٍ وَلَا مَرَضٍ لَمْ يَقْضِهِ صِيَامُ الدَّهْرِ وَإِنْ صَامَهُ . حديث ضعيف .

“যে ব্যক্তি কোন কারণ ছাড়া রমযানের একদিন সওম ভঙ্গ করল অথবা অসুস্থতা ব্যতীত, পুরো বছরেও তার কাযা হবে না, যদিও সে পুরো বছর সওম পালন করে”। হাদিসটি দুর্বল।

ইমাম বুখারি তার সহিহ গ্রন্থে হাদিসটি টিকা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। রমযান অধ্যায়: (৪/১৯৪), হাদিসটি তিনি দুর্বল ক্রিয়া দ্বারা উল্লেখ করে বলেন: এ হাদিস আবূ হুরায়রা থেকে মারফূ হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

ইমাম আবূ দাউদ: (২৩৯৬), তিরমিযি: (৭২৩), ইবনু মাজাহ: (১৬৭২), ইবনু খুযাইমাহ: (৩/২৩৮), হাদিস নং: (১৯৮৮), আহমদ: (২/৩৭৬) প্রমুখগণ সাওরি ও শুবা থেকে, তারা উভয়ে হাবিব ইবনু আবি সাবেত থেকে, সে উমারা ইবনু উমাইর থেকে, সে আবূল মিতওয়াস থেকে, সে তার পিতা থেকে, সে আবূ হুরায়রা থেকে মুত্তাসিল সনদে উল্লেখ করেছেন।

তিরমিযি বলেন: এ সনদ ব্যতীত অন্য কোনভাবে আবূ হুরায়রার হাদিস জানতে পারেনি, আমি মুহাম্মদ (অর্থাৎ বুখারী) কে বলতে শুনেছি: আবূল মিতওয়াসের নাম ইয়াজিদ ইবনু মিতওয়াস, এ হাদিস ব্যতীত তার সনদে বর্ণিত অন্য কোন হাদিস সম্পর্কে জানি না।

ইবনু খুযাইমাহ তার সহিহ: (৩/২৩৮), গ্রন্থে হাদিস নং: (১৯৮৮)-তে বলেন: যদি হাদিসটি সহিহ হয়, তবুও আমি ইবনু মিতওয়াস ও তার পিতার পরিচয় জানি না।

ইবনু আব্দুল বার “তামহিদ”: (৭/১৭৩) গ্রন্থে বলেন: এ হাদিস দুর্বল, এ ধরণের হাদিস দ্বারা দলিল দেয়া যায় না।

আবূল মিতওয়াস সম্পর্কে তিনটি বক্তব্য পাওয়া যায়: আবূল মিতওয়াস, ইবনুল মিতওয়াস ও মিতওয়াস, সে একা এ হাদিস বর্ণনা করেছে। ইবনু হিব্বান বলেছেন: তার একার বর্ণনাকৃত হাদিস দ্বারা দলিল পেশ করা জায়েজ হবে না।

হাফেজ ইবনু হাজার “তাগলিক”: (৩/১৭১) ও “ফাতহুল বারি”: (৪/১৯১) গ্রন্থে বলেন: বুখারি তার “তারিখে” বলেছেন: আবূল মিতওয়াস একা এ হাদিস বর্ণনা করেছে, তার পিতা আবূ হুরায়রা থেকে শুনেছে কি-না বলতে পারি না।

আমার বক্তব্য, (অর্থাৎ ইবনু হাজার): এ হাদিসের আরেক বর্ণনাকারী হাবিব ইবনু আবি সাবেত (সাওরি ও শুবার উস্তাদ) সম্পর্কেও বিতর্ক রয়েছে, অতএব এ হাদিসে তিনটি দোষ বিদ্যমান: ইজতেরাব, আবূল মিতওয়াস সম্পর্কে অজ্ঞতা এবং তার পিতার আবূ হুরায়রা থেকে শ্রবণ করার ব্যাপারে সন্দেহ। ইমাম বুখারির নিকট হাদিস শুদ্ধ হওয়ার জন্য তৃতীয় শর্তটি জরুরী।

আলবানি “তামামুল মিন্নাহ”: (পৃ.৩৯৬) গ্রন্থে বলেন: এ হাদিস দুর্বল, এ দুর্বলতার দিকে ঈঙ্গিত করে ইমাম বুখারি ويذكر বলেছেন। ইবনু খুযাইমাহ তার সহিহ গ্রন্থে এ হাদিস দুর্বল বলেছেন। ইমাম মুনাভির বর্ণনা মতে মুনযিরি, বগভি, কুরতুবি, যাহাবি ও দিমাইরি প্রমুখগণ হাদিসটি দুর্বল বলেছেন।

আলবানি তার “দায়িফাহ”: (২/২৮৩) গ্রন্থে বলেন: আবূল মিতওয়াস অপরিচিত বলে বুখারি প্রমুখগণ হাদিসটি দুর্বল বলেছেন।

হাদিস বিশারদদের উক্ত মতামত থেকে প্রমাণিত হয় যে, হাদিসটি দুর্বল, বরং অনেক আলেম বলেছেন: রমযানের দিনে যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত ইফতার করবে, সে তার বদলে একদিন কাযা করবে। এ হাদিসের ভিত্তিতে কেউ বলেননি রমযানের এক সওমের পরিবর্তে পুরো বছর সওম পালন করলেও আদায় হবে না, একমাত্র ইবনু মাসউদ ব্যতীত, যেমন বুখারি বলেছেন আবূ হুরায়রা বাদে শুধু ইবনু মাসউদ এ কথা বলেছেন।

ইমাম বুখারি তাদেরও উল্লেখ করেছেন, যারা বলে যে রমযানের এক সওমের পরিবর্তে এক দিন সওম পালন করবে। তিনি বলেন: সায়িদ ইবনুল মুসাইয়িব, শা’বি, ইবনু জুবাইর, ইবরাহিম, কাতাদাহ ও হাম্মাদ বলেছেন: তার পরিবর্তে এক দিন কাযা করবে।

ইমাম বুখারি যাদের কথা উল্লেখ করেছেন, তাদের বিস্তারিত সনদ যারা বর্ণনা করেছে, হাফেজ ইবনু হাজার তাদের সব সনদ উল্লেখ করেছেন। তাদের প্রত্যেকের প্রায় অভিন্ন অভিমত যে, ইস্তেগফারসহ একদিনের পরিবর্তে এক দিন সওম কাযা করবে। বরং ইমাম বগভি “শারহুস সুন্নাহ”: (৬/২৯০) গ্রন্থে বলেন: আলেমগণ এ ব্যাপারে একমত যে, তার স্থানে এক দিন কাযা করবে।

আজিম আবাদি “আউনুল মাবুদ”: (৭/২৯) গ্রন্থে বলেন: অধিকাংশ আলেমদের অভিমত হচ্ছে যে, রমযানের এক সওমের পরিবর্তে এক সওম যথেষ্ট, যদিও তার সওম ভঙ্গের দিনগুলো বড় ও কঠিন গরমের হয়, আর কাযা করার দিনগুলো হয় ছোট ও ঠাণ্ডা মৌসুমের।

মাসআলা: যদি কোন সওম পালনকারী রমযানের দিনে শরয়ী কোন কারণ ছাড়া ইচ্ছাকৃতভাবে সহবাস ব্যতীত সওম ভঙ্গ করে, যেমন পানাহার, অথবা ধুমপান, অথবা যৌনাঙ্গ ব্যতীত স্ত্রীর সাথে মেলা-মেশার কারণে বীর্য বের হল, অথবা স্ত্রীকে উপভোগ করার সময় বীর্য বের হল ইত্যাদি। তার উপর কাযা ওয়াজিব। ইমাম আহমদ ও ইমাম শাফীর এক ফতোয়া অনুযায়ী তাকে এক সওমের পরিবর্তে একটি সওম কাযা করতে হবে। কারণ ওযর থাকা সত্বেও আল্লাহ তা’আলা অসুস্থ ও মুসাফির ব্যক্তির উপর কাযা ওয়াজিব করেছেন, তাই ওযরহীন এর উপর অবশ্যই কাযা ওয়াজিব হবে। অবশিষ্ট দিন তাকে পানাহার থেকে বিরত থাকতে হবে, যেহেতু সে কারণ ছাড়া সওম ভঙ্গ করেছে। তার উপর কাফ্ফারা ওয়াজিব হবে না। ইমাম আবূ হানিফা, মালেক ও ইমাম শাফীর এক ফতোয়া মোতাবেক তার উপর কাযাসহ কাফ্ফারা ওয়াযিব হবে। তবে কেউ যদি দিনের শুরু থেকে সওম না রাখে তার উপর কাফ্ফারা ওয়াজিব হবে না। সওমের কাফ্ফারা সূরা মুজাদালায় বর্ণিত জিহারের কাফ্ফারার অনুরূপ। অর্থাৎ একটি গোলাম আযাদ করা, অথবা লাগাতার ষাটটি সওম পালন করা, অথবা ষাটজন মিসকিনকে খাদ্য প্রদান করা। (দেখুন: সূরা মুজাদালা:৩-৪)

-


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ

চার.

( صوموا تصحوا ) حديث ضعيف .

“সওম পালন কর সুস্থ থাক” হাদিসটি দুর্বল”।

দেখুন: “তাখরিজুল ইহইয়া” লিল ইরাকি: (৩/৭৫), “আল-কামেল ফি দুয়াফায়ির রিজাল” লি ইবনু আদি: (২/৩৫৭), “কিতাবুশ সাজারাহ ফিল আহাদিসিল মুশতাহেরাহ” লি ইবনু তুলুন: (১/৪৭৯), “আল-ফাওয়েদুল মাজমুআহ ফিল আহাদিসিল মাওদুয়াহ” লিশ শাওকানি: (১/২৫৯), “মাকাসিদুল হাসানাহ” লিস সাখাভি: (১/৫৪৯), “কাশফুল খাফা” লিল আজুলুনি: (২/৫৩৯), “সিলসিলাতিল আহাদিসুস দায়িফা ওয়াল মাওদুয়াহ” লিল আলবানি: (১/৪২০)

-


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ

পাঁচ.

( إن لله عند كل فطر عتقاء من النار ) حديث ضعيف .

“প্রত্যেক ইফতারের সময় জাহান্নাম থেকে আল্লাহর কিছু মুক্তি প্রাপ্ত বান্দা থাকে”। হাদিসটি দুর্বল।

দেখুন: “তানজিহুশ শারিয়াহ” লিল কিনানি: (২/১৫৫), “আল-ফাওয়াদুল মাজমুআহ ফিল আহাদিসিল মাওদুয়াহ” লিশ শাওকানি: (১/২৫৭), “কাশফুল ইলাহি আন শাদিদিদ দায়িফ ওয়াল মাওদু ওয়াল ওয়াহি” লিত তারাবুলসি: (১২/২৩০), “জাখিরাতুল হিফাজ” লিল কায়সারানি: (২/৯৫৬), “শুআবূল ঈমান” লিল বায়হাকি: (৩/৩০৪), “আল-কামেল ফি দুয়াফায়ির রিজাল” লি ইবনু আদি: (২/৪৫৫)

-


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ

ছয়.

( لو يعلم العباد مافي رمضان لتمنت أمتي أن يكون رمضان السنة كلها ، إن الجنة لتتزين لرمضان من رأس الحول إلى الحول......الخ )

বান্দারা যদি জানত যে, রমযানে কি রয়েছে, তাহলে তারা আশা করত পুরো বছর যেন রমযান হয়, নিশ্চয় জান্নাতকে বছরের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত রমযানের জন্য সুসজ্জিত করা হয়...”। হাদিসটি দুর্বল।

দেখুন: “আল-মাওদুয়াত” লি ইবনু জাওজি: (২/১৮৮), “তানজিহুশ শারিয়াহ” লিল কিনানি: (২/১৫৩) “আল-ফাওয়াদুল মাজমুআহ ফিল আহাদিসিল মাওদুয়াহ” লিশ শাওকানি: (১/২৫৪), “মাজমাউজ জাওয়ায়েদ” লিল হায়সামি: (৩/১৪১)

অনুরূপ আরেকটি হাদিস:

( إن الجنة لتزخرف وتنجد من الحول إلى الحول لدخول رمضان فتقول الحور العين : يا رب ، اجعل لنا في هذا الشهر من عبادك أزواجًا )

নিশ্চয় জান্নাত এক বছরের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত রমযান আগমনের জন্য সজ্জিত ও পরিপাটি করা হয়। জান্নাতী হুররা বলে: হে আল্লাহ এ মাসে তোমার বান্দাদের থেকে আমাদের জন্য স্বামী নির্বাচন কর”। তাবরানি “আওসাত” ও “কাবির” গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, এ হাদিসের সনদে ওলিদ ইবনুল ওলিদ আল-কালানাসি বিদ্যমান, সে দুর্বল।

-


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ

সাত.

أن النبي صلى الله عليه و سلم كان يقول عند الإفطار : ( اللهم لك صمت و على رزقك أفطرت ) حديث ضعيف

“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যেক ইফতারের সময় বলত: হে আল্লাহ আপনার জন্য সওম পালন করছি এবং আপনার রিযকের দ্বারাই ইফতার করছি”। হাদিসটি দুর্বল।

দেখুন: “খুলাসাতুল বাদরুল মুনির” লি ইবনুল মুলাক্কিন: (১/৩২৭), হাদিস নং: (১১২৬), “তালখিসুল হাবির” লিল হাফেজ ইবনু হাজার: (২/২০২), হাদিস নং: (৯১১), “আল-আযকার” লিন নববী: (পৃ.১৭২), “মাজমাউজ জাওয়ায়েদ” লিল হায়সামি: (৩/১৫৬), “দায়িফুল জামে” লিল আলবানি, হাদিস নং: (৪৩৪৯)

-


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ

আট.

‏جَاءَ أَعْرَابِيٌّ إِلَى النَّبِيِّ ‏‏صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ‏‏فَقَالَ : إِنِّي رَأَيْتُ الْهِلَال ،َ قَالَ :‏ ‏أَتَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ أَتَشْهَدُ أَنَّ ‏‏مُحَمَّدًا ‏‏رَسُولُ اللَّهِ ، قَالَ : نَعَمْ ، قَالَ : يَا ‏‏بِلَالُ ‏‏أَذِّنْ ‏‏فِي النَّاسِ أَنْ يَصُومُوا غَدًا .

এক বেদুঈন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে বলে: আমি চাঁদ দেখেছি, তিনি বললেন: তুমি কি সাক্ষ্য দাও যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই, মুহাম্মদ আল্লাহর রাসূল? সে বলল: হ্যাঁ, তিনি বললেন: হে বেলাল মানুষকে জানিয়ে দাও, তারা যেন আগামী কাল সওম পালন করে”।

আবূ দাউদ: (২৩৪০), তিরমিযী: (৬৯১), নাসায়ি ফিল কুবরা: (২৪৩৩), (২৪৩৪), (২৪৩৫) (২৪৩৬), ইবনু মাজাহ: (১৬৫২), তারা হাদিসটি বর্ণনা করেন সাম্মাক ইবনু হারব সূত্রে, সে ইকরিমা থেকে, সে ইবনু আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে।

সাম্মাক ইবনু হারব সূত্রে বর্ণিত ইকরিমার হাদিসে ইজতেরাব রয়েছে, কখনো সে ইত্তেসাল সনদে বর্ণনা করে, কখনো মুরসাল সনদে।

যারা মুরসাল বর্ণনাকে গ্রহণ করেছেন তাদের মধ্যে ইমাম তিরমিযি অন্যতম, তিনি বলেন: ইবনু আব্বাসের হাদিসে ইখতিলাফ রয়েছে, সুফইয়ান সাওরি প্রমুখগণ সাম্মাক সূত্রে ইকরিমা থেকে, সে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে মুরসাল সনদে বর্ণনা করেছেন। সাম্মাকের অধিকাংশ ছাত্র সাম্মাকের সনদে ইকরিমা থেকে, সে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে মুরসাল বর্ণনা করেন।

নাসায়ি তার কুবরা: (২৪৩৫) ও (২৪৩৬) গ্রন্থে বলেন: হাদিসটি মুরসাল।

হাফেজ ইবনু হাজার “তালখিস” গ্রন্থে বলেছেন: মূল বর্ণনাকারী থেকে সাম্মাক যখন একা বর্ণনা করবে, সেটা দলিল হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়।

শায়খ আলবানি “ইরওয়াউল গালিল”: (৯০৭) গ্রন্থে হাদিসটি দুর্বল বলেছেন।

মুরসাল: তাবেয়ি ও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মধ্যকার সূত্র, অর্থাৎ সাহাবি যে সনদে উল্লেখ থাকে না, হাদিস বিশারদদের নিকট তা মুরসাল হিসেবে পরিচিত। মুরসাল দুর্বল হাদিসের এক প্রকার। ইমাম তিরিমিযি বলেন: মুরসাল হাদিস অধিকাংশ আলেমের নিকট বিশুদ্ধ নয়, অর্থাৎ দলিল হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়।

মাসআলা: নেককার, সত্যবাদী ও মুসলিম একজন ব্যক্তির সাক্ষীর ভিত্তিতে ইমাম বা সরকার সওমের ঘোষণা দিতে পারবে, কিন্তু সওম ভঙ্গ বা শাওয়ালের চাঁদ দেখার ক্ষেত্রে দুইজন ব্যক্তির সাক্ষী অপরিহার্য। ইমাম আবূ হানিফা, আহমদ ও শাফেঈর এক ফতোয়া অনুরূপ। ইমাম মালেক বলেছেন রমযানের চাঁদের জন্যও দুইজন সাক্ষী জরুরী। দেখুন: তুহফাতুল আহওয়াজি: (পৃ.৩০৪), হাদিস নং: (৬৯১), হাদিস যদিও দুর্বল, কিন্তু আহলে ইলমদের আমল অনুরূপই।

-


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ

নয়.

عَنْ عَامِرِ بْنِ مَسْعُودٍ عَنْ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ : "الْغَنِيمَةُ الْبَارِدَةُ الصَّوْمُ فِي الشِّتَاءِ " .

আমের ইবনু মাসউদ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন: “শীতকালীন সওম হচ্ছে ঠাণ্ডা গনিমত”। অর্থাৎ কষ্টহীন পূণ্য। হাদিসটি দুর্বল।

১. এ হাদিস ইবনু মাসউদ থেকে আহমদ: (৪/৩৩৫), তিরমিযি: (৭৯৪), ইবনু মাজাহ: (৩/৩০৯) প্রমুখগণ বর্ণনা করেছেন। এ সনদে দু’টি ইল্লত: নুমাইর ইবনু আরিব অপরিচিত। দ্বিতীয়ত হাদিসটি মুরসাল।

২. আনাস থেকে তাবরানি ফিল কাবির: (৭১৬), শাজারি তার আমলি গ্রন্থে: (২/১১১) এবং ইবনু আদি: (৩/১২১০) বর্ণনা করেছেন। এ সনদে তিনটি ইল্লত: সায়িদ ইবনু বাশীর আযদি দুর্বল। ওলিদ ইবনু মুসলিম ’আনআনা’ দ্বারা বর্ণনা করেছে, এবং হাদিসটি মওকুফ।

৩. জাবের থেকেও ইবনু আদি বর্ণনা করেছেন: (৩/১০৭৫), এ সনদে চারটি ইল্লত: আব্দুল ওয়াহহাব বালখি, সে হাদিসের ক্ষেত্রে পরিত্যক্ত, বরং আবি হাতেম তাকে মিথ্যুক বলেছেন। ওলিদ ইবনু মুসলিমের ’আনাআনা’। শামিদের থেকে বর্ণনার ক্ষেত্রে জুহাইর ইবনু মুহাম্মদ তামিমির দুর্বলতা, আর এটা সে শামিদের থেকেই। সনদের বৈপরিত্ব। দেখুন: যাখিরাতুল হুফ্‌ফাজ: (৩৪৩৭), আসনাল মাতালেব: (৮৩৬), তাবইদুস সাহিফা: (২৮),


অনুরূপ আরেকটি হাদিস:

 ( الشتاء ربيع المؤمن).

“শীতকাল হচ্ছে মুমিনের বসন্তকাল”। হাদিসটি দুর্বল, কিন্তু তার অর্থ সঠিক।

-


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ

দশ.

قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ‏صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ‏: ‏قَالَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ :‏ ‏أَحَبُّ عِبَادِي إِلَيَّ أَعْجَلُهُمْ فِطْرًا .

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: আল্লাহ তা’আলা বলেছেন: “আমার নিকট প্রিয় বান্দা তারাই যারা দ্রুত ইফতার করে”।

তিরমিযি: (৭০০), আহমদ: (২/৩২৯), তিরমিযি বলেছেন: এ হাদিস হাসান, গরিব। শায়খ আহমদ শাকের “আল-মুসনাদ”: (১২/২৩১) গ্রন্থে হাদিসটি সহিহ বলেছেন, হাদিস নং: (৭২৪০) এ হাদিসের সনদে কুররা ইবনু আব্দুর রহমান ইবনু হাইউল নামে একজন বর্ণনাকারী রয়েছেন, যিনি বিতর্কিত:

ইমাম আহমদ বলেন: তার হাদিস খুব মুনকার।

ইমাম ইয়াহ ইবনু মায়িন বলেন: তার হাদিস দুর্বল।

ইমাম আবূ জুরআহ বলেন: সে মুনকার হাদিস বর্ণনা করে।

ইমাম আবূ হাতেম ও নাসায়ি বলেছেন: সে নির্ভরযোগ্য নয়।

ইমাম আবূ দাউদ বলেছেন: তার হাদিসগুলো মুনকার।

ইমাম মুসলিম অন্যদের সাথে তার হাদিস বর্ণনা করেছেন, এককভাবে তার কোন হাদিস বর্ণনা করেননি।

বিশেষ জ্ঞাতব্য:

বিভিন্ন সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত দ্রুত ইফতার করা সুন্নত, তাতে রয়েছে উম্মতের কল্যাণ। অতএব আমাদের উচিত এসব দুর্বল হাদিসের দিকে না তাকিয়ে সহিহ হাদিস গ্রহণ করা, যেমন:

عَنْ ‏‏سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ ‏صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ‏‏قَالَ :‏ ‏لَا يَزَالُ النَّاسُ بِخَيْرٍ مَا عَجَّلُوا الْفِطْرَ . أخرجه البخاري (1957) ، ومسلم (1098) .

সাহাল ইবনু সাদ বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “লোকেরা যত দিন পর্যন্ত দ্রুত ইফতার করবে, তারা কল্যাণের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে”। বুখারি: (১৯৫৭), মুসলিম: (১০৯৮)

ইবনু হাজার “ফাতহুল বারি”: (৪/১৯৮) গ্রন্থে বলেন: কতক জায়গায় নব সৃষ্ট ঘৃণিত কিছু বিদআত হচ্ছে রমযান মাসে ফজরের আধা ঘণ্টা বা পৌনে এক ঘণ্টা আগে আযান দেয়া, বাতি নিভিয়ে দেয়া ইত্যাদি, যা তাদের নিকট পানাহার নিষিদ্ধ হওয়ার আলামত, তারা এভাবে ইবাদতের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করে, অথচ এটা যে তাদের নিকট পানাহার বন্ধ করার আলামত অনেকে তা জানে। বস্তুত এভাবে তারা নিশ্চিত সময়ের আশায় দেরিতে আযান দেয়, ফলে তাদের ইফতার হয় দেরিতে, আর সেহরি হয় দ্রুত। তারা এভাবে সুন্নতের বরকত ও কল্যাণ থেকে মাহরুম হয়। এ জন্য তাদের মধ্যে কল্যাণের সংখ্যা খুব কম, অনিষ্ট খুব বেশী। আল্লাহ সাহায্যকারী।

-


হাদিসের মানঃ মুনকার (সহীহ হাদীসের বিপরীত)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ

এগার.

‏عَنْ النَّبِيِّ ‏صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ‏ ‏أَنَّهُ أَمَرَ ‏بِالْإِثْمِدِ ‏الْمُرَوَّحِ ‏عِنْدَ النَّوْمِ وَقَالَ : لِيَتَّقِهِ الصَّائِمُ ‏.

“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি ঘুমের সময় সুগন্ধি যুক্ত সুরমার নির্দেশ দিয়েছেন এবং বলেছেন সওম পালনকারীর এর থেকে বেঁচে করা জরুরী”।

আবূ দাউদ: (২৩৭৭), বুখারি ফিত তারিখিল কাবির: (৭/৩৯৮) আবূ দাউদ বলেছেন: আমাকে ইয়াহ ইবনু মায়িন বলেছেন: এটা মুনকার হাদিস, অথাৎ সুরমার হাদিস।

জায়লায়ি লিখেছেন: “তানকিহ”: এর লেখক বলেছেন: মা’বাদ ও তার ছেলে উভয় অপরিচিত, আর আব্দুর রহমানকে ইবনু মায়িন দুর্বল বলেছেন, আবূ হাতেম আমাকে বলেছে সে সাদুক”। জায়লায়ি: (২/৪৫৭)

ইমাম তিরমিযি সুরমা বিষয়ে বলেন: এ অধ্যায়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে কোন হাদিস প্রমাণিত নয়।

আরেকটি হাদিস:

( لا تكتحل بالنهار وأنت صائم )

“সওব অবস্থায় দিনে সুরমা ব্যবহার কর না”। আবূ দাউদ: (২৩৭৭), ইবনু মায়িন বলেছেন: এটা মুনকার হাদিস।

সওম অবস্থায় সুরমা ব্যবহার প্রসঙ্গে একাধিক হাদিস:

‏عَنْ ‏‏أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ ‏قَالَ :‏ جَاءَ رَجُلٌ إِلَى النَّبِيِّ ‏صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ‏فَقَالَ ‏: ‏اشْتَكَتْ عَيْنِي أَفَأَكْتَحِلُ وَأَنَا صَائِمٌ ؟ قَالَ : نَعَمْ .

আনাস ইবনু মালেক বলেন: “এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে বলে: আমার চোখে সমস্যা আমি সওম অবস্থায় সুরমা লাগাতে পারব? তিনি বললেন: হ্যাঁ”। তিরমিযি: (৭২৬), তিনি বলেন: আনাসের হাদিসের সনদ শক্তিশালী নয়, এ অধ্যায়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বিশুদ্ধ কোন বর্ণনা নেই, আবূ আতেকাকে দুর্বল বলা হয়। আবূ আতেকার মূল নাম হচ্ছে তারিফ ইবনু সালমান, তাকে সালমান ইবনু তারিফও বলা হয়।

আবূ হাতেম বলেছেন: সে হাদিস ভুলে যায়।

বুখারি বলেছেন: তার হাদিস মুনকার।

নাসায়ি বলেছেন: সে নির্ভরযোগ্য নয়।

দারা কুতনি বলেছেন: দুর্বল।

ইবনু হিব্বান বলেছেন: তার হাদিস খুব মুনকার। সে আনাস থেকে এমন হাদিস বর্ণনা করে, যা তার হাদিসের অনুরূপ নয়, আবার কখনো তার থেকে এমন হাদিস নকল করে, যা তার হাদিস নয়।

সুরমা সংক্রান্ত আরেকটি হাদিস:

عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ عُبَيْدِ اللَّهِ بْنِ أَبِي رَافِعٍ عَنْ أَبِيهِ عَنْ جَدِّهِ : أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَكْتَحِلُ وَهُوَ صَائِمٌ .

মুহাম্মদ ইবনু উবাইদুল্লাহ নিজ পিতা থেকে, সে তার দাদা থেকে বর্ণনা করেন: “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সওম অবস্থায় সুরমা ব্যবহার করতেন”। ইবনু খুযাইমা: (২০০৮), হাদিসটি এভাবে বর্ণনা করেছেন:

نزل رسول الله صلى الله عليه وسلم خيبر ، ونزلت معه ، فدعاني بكحل إثمد ، فاكتحل في رمضان وهو صائم إثمد غير ممسك .

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়বারে অবতরণ করেন, আমিও তার সাথে অবতরণ করি। তিনি আমাকে ইসমিদের সুরমা আনতে বললেন, অতঃপর তিনি সওম অবস্থায় সুরমা ব্যবহার করলেন। এ ইসমিদ শরীরের সাথ আঠার ন্যায় লেগে থাকা ইসমিদ নয়।

ইবনু খুযাইমা বর্ণনা করে বলেন: আমি কোন দায়ভার নিচ্ছি না যে, এ সনদ মা’মার থেকে। অর্থাৎ এটা মা’মার বর্ণনা করেছেন এর নিশ্চয়তা আমি দিতে পারব না।

হাফেজ ইবনু হাজার “তালখিস” গ্রন্থে বলেন: ইবনু আবি হাতেম তার পিতা থেকে বলেছেন: এটা মুনকার হাদিস, তিনি মুহাম্মদের ব্যাপারে বলেছেন: তার হাদিস মুনকার, বুখারি অনুরূপ বলেছেন।

আমাদের উপরের সিদ্ধান্ত মোতাবেক সওম পালনকারীদের সুরমা থেকে বিরত রাখার হাদিসগুলো সঠিক নয়।

মাসআলা: সওম অবস্থায় সুরমা ব্যবহার করা বৈধ। জুমহুর আলেমদের নিকট নারী-পুরুষ সকলে সুরমা ব্যবহার করতে পারবে সওম অবস্থায়।

-


হাদিসের মানঃ মুনকার (সহীহ হাদীসের বিপরীত)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ

বারো.

‏عَنْ ‏‏كَعْبِ بْنِ عَاصِمٍ الْأَشْعَرِيِّ -‏ ‏وَكَانَ مِنْ ‏أَصْحَابِ السَّقِيفَةِ ‏- ‏قَالَ ‏: ‏سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ ‏‏صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ‏‏يَقُولُ ‏: لَيْسَ مِنْ ‏امْبِرِّ ‏امْصِيَامُ فِي ‏امْسَفَرِ .

কাব ইবনু আসেম আশআরি বলেন: আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি: “সফরে সওম পালন করা নেকির কাজ নয়”। আহমদ: (৫/৪৩৪), তাবরানি ফিল “কাবির”: (১৯/১৭২), হাদিস নং: (৩৮৭), তাবরানি ইমাম আহমদের ছেলে আব্দুল্লাহ সূত্রে ইমাম আহমদ থেকে বর্ণনা করেন এ শব্দে:

 ليس من ام بر ام صيام في ام سفر .

হাদিসটি বায়হাকি তার “সুনান”: (৪/২২), গ্রন্থে আব্দুর রাজ্জাক সূত্রে বর্ণনা করেন।

হাফেজ ইবনু হাজার “তালখিসুল হাবির” গ্রন্থে বলেছেন: “ইমাম আহমদ কাব ইবনু আসেম আশআরি থেকে এ হাদিসটি এভাবে বর্ণনা করেন:

" لَيْسَ مِنْ ‏امْبِرِّ ‏امْصِيَامُ فِي ‏امْسَفَرِ " .

এটা ইয়ামানের এক এলাকার ভাষা, তারা “মারেফার লাম” (নির্দিষ্ট করণের লাম) “মিম” দ্বারা পরিবর্তণ করে বলে। এমনও হতে পারে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে এভাবে সম্বোধন করেছেন, যেহেতু এটা তার আঞ্চলিক ভাষা। আবার এমনও হতে পারে আশআরি তা নিচের আঞ্চলিক ভাষায় পরিবর্তণ করে ব্যক্ত করেছেন। আর বর্ণনাকারীরা আশআরি থেকে তার শব্দ বর্ণনা করেছে। দ্বিতীয় অভিমতটি আমার নিকট অধিক যুক্তিযুক্ত। আল্লাহ ভাল জানেন”। “তালখিসুল হাবির”: (২/২০৫)

আলবানি রাহিমাহুল্লাহ “সিলসিলাতুল আহাদিসিস দায়িফা” গ্রন্থে বলেছেন: হাদিসটি এভাবে শাজ... এ হাদিসের সনদ বাহ্যত বিশুদ্ধ, এর প্রেত্যেক বর্ণনাকারী মুসলিমের বর্ণনাকারী। তবে এ হাদিসের মূল সমস্যা হচ্ছে এটা শায্ ও অধিকাংশ মুহাদ্দিসের বর্ণিত হাদিসের বিপরীত। ইমাম আহমদ বলেন: সুফিয়ান এ হাদিসটি যুহরি থেকে আমাদেরকে বলেছেন এভাবে:

" ليس من البر الصيام في السفر " .

ইমাম যুহরি থেকে ইবনু জুরাইজ, ইউনুস, মুহাম্মদ ইবনু আবি হাফসা ও জুবাইদি সকলে সুফিয়ানের অনুরূপ হাদিস বর্ণনা করেছেন। মা’মার নিজেও বায়হাকির বর্ণনাতে সুফিয়ানের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন যুহরি থেকে। আর এ বর্ণনাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে সংরক্ষিত।

কোন আলেম সন্দেহ করেন না যে, মা’মার বর্ণিত যে শব্দ অন্যান্য নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারীদের সাথে মিলে যায়, তার থেকে সেটা গ্রহণ করতে হবে, তার দিকে ধাবিত হবে, কিন্তু মা’মার বর্ণিত যে শব্দ নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারীদের বিপরীত হয়, তা গ্রহণ করা যাবে না, কারণ সে বর্ণনা দুর্বল, তার উপর নির্ভর করা যাবে না, বিশেষ করে মা’মার এর ক্ষেত্রে। মা’মার যদিও নির্ভরযোগ্য এবং হাদিসের বড় ইমামদের একজন, তবুও তার ব্যাপারে ইমাম যাহাবি বলেছেন: “তার থেকে সন্দেহমূলক প্রসিদ্ধ কিছু হাদিস রয়েছে, তার স্মরণ শক্তির দৃঢ়তা সত্বেও এসব সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে। আবূ হাতেম বলেছেন: তার হাদিসগুলো ভাল, কিন্তু বসরাতে তিনি যেসব হাদিস বলেছেন তাতে ভুল আছে”।

হাদিসের এ শব্দে মা’মার এর ভুলের বিষয়টি আরো নিশ্চিত হয় যে, সে অন্যান্য বর্ণনাকারীর বিপরীত বর্ণনা করেছেন। কারণ এ হাদিস কাব ইবনু আসেম আশআরি ব্যতীত অন্যান্য সাহাবি এ হাদিস বর্ণনা করেছেন, যেমন জাবের ইবনু আব্দুল্লাহ, আব্দুল্লাহ ইবনু আবি বারজাতাল আসলামি, আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস, আব্দুল্লাহ ইবনু আমর, আম্মার ইবনু ইয়াসার, আবূদ দারদা প্রমুখগণ, তাদের থেকে বিভিন্ন সনদে এ হাদিস বর্ণিত আছে, তাদের সকলের বর্ণনাকৃত শব্দ হচ্ছে:

 " ليس من البر الصيام في السفر " .

তাদের সকলের হাদিস আমি “ইরওয়াউল গালিল” গ্রন্থে উল্লেখ করেছি, যার ইচ্ছা সেখানে দেখে নিতে পারেন। এখানে শুধু হাদিসের দুর্বলতা বলে দেয়াই উদ্দেশ্য। কারণ এ হাদিসটি ভাষাবিদ ও সাহিত্যিকদের নিকট খুব প্রসিদ্ধ, বিশেষ করে যেহেতু ইবনু হাজার তালখিসুল হাবির গ্রন্থে বলেছেন: “এটা ইয়ামানের কতক জনপদের ভাষা, তারা ’মারেফা’র লামকে মিম দ্বারা পরিবর্তণ করে বলে, আবার এও সম্ভাবনা রয়েছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আশআরিকে অনুরূপ শব্দেই সম্বোধন করেছেন, কারণ সেটা তার ভাষা, আবার এমনও হতে আশআরি তা নিজস্ব ভাষায় পরিবর্তণ করেছে, আর বর্ণনাকারীরা তার শব্দ বর্ণনা করেছে। দ্বিতীয় কারণটি আমার নিকট বেশী যুক্তিযুক্ত। আল্লাহ ভাল জানেন”।

আমার আশঙ্কা: হাফেজ ইবনু হাজার যেহেতু এর দু’টি কারণ উল্লেখ করেছেন, তাই অনেকের ধারণা হতে পারে যে, হাদিসটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহ ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত, শুধু সন্দেহ এখানে যে এ শব্দ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে না আশআরি থেকে, তিনি দ্বিতীয় মতটি অগ্রাধিকার দিয়েছেন। তার এ অগ্রাধিকারের কোন কারণ নেই, যেহেতু আমরা প্রমাণ করেছি এ শব্দ হচ্ছে মা’মার কর্তৃক ওহাম, ধারণা বা ভুল। এভাবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বা আশআরি কেউ বলেননি। বরং সাফওয়ান ইবনু আব্দুল্লাহ কিংবা যুহরি তাদের কেউ এভাবে বলেননি। এ কথাগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ, ভাল করে জেনে রাখুন”। “সিলসিলাতুল আহাদিসিস দায়িফা”: (১১৩০)

আলবানি এ হাদিস প্রসঙ্গে “ইরওয়াউল গালিল” গ্রন্থের এক জায়গায় বলেন: “আশআরি থেকে বর্ণনাকারীগণ যদি আশআরি থেকে শ্রবণকৃত শব্দ বর্ণনা করতে পারে, তাহলে আশআরির অধিক উচিত ছিল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শ্রবণকৃত শব্দ হুবহু বর্ণনা করা”। ইরওয়াউল গালিল”: (৪/৫৮-৫৯), হাদিস নং: (৯২৫)

 

সারকথা:

ইমাম আহমদ মা’মার এর সনদে যুহরি থেকে বর্ণনা করেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

لَيْسَ مِنْ ‏امْبِرِّ ‏امْصِيَامُ فِي ‏امْسَفَرِ .

আবার মা’মার এর সাথী সুফিয়ানের সনদে যুহরি থেকে বর্ণনা করেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

" ليس من البر الصيام في السفر " .

এখানে দেখা যাচ্ছে ইমাম যুহরির ছাত্র সুফিয়ান ও মা’মার এক হাদিস দুইভাবে বর্ণনা করেছেন।

ইমাম যুহরির অন্যান্য ছাত্র যেমন ইবনু জুরাইজ, ইউনূস, মুহাম্মদ ইবনু আবি হাফসা ও জুবাইদি প্রমুখগণ সুফিয়ানের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। এমনকি খোদ মা’মার থেকে একটি বর্ণনা ইমাম বায়হাকি বর্ণনা করেছেন যা সুফিয়ানের বর্ণনার অনুরূপ। অতঃপর ইমাম বায়হাকি বলেছেন: এটাই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে সংরক্ষিত হাদিস।

অতএব এটা স্পষ্ট যে, এখানে ভুল হয়েছে মা’মার থেকে, কারণ ইমাম যুহরির অন্যান্য ছাত্র তার অনুরূপ বর্ণনা করেনি, দ্বিতীয়ত সে নিজেও তার এ হাদিসের বিপরীত বিশুদ্ধ শব্দ বর্ণনা করেছেন বায়হাকির নিকট, যার সাথে কারো দ্বিমত নেই।

ইমাম জাহাবি ও আবূ হাতেম বলেছেন: মা’মার একজন বড় মাপের ও নির্ভরযোগ্য মুহাদ্দিস হওয়া সত্বেও তার থেকে এ ধরণের ভুল হয়েছে। মূলত:

لَيْسَ مِنْ ‏امْبِرِّ ‏امْصِيَامُ فِي ‏امْسَفَرِ .

না যুহরি বলেছেন, না আশআরি, আর না নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, বরং এটা মা’মার এর ভুল।

শায়খ আলি ইবনু হুসাইন হালবি (১৪৩০হি.) “ফিকহুস সিয়াম” শিরোনামে ১২-নং দরসে বলেন: “সফরে সিয়াম সংক্রান্ত একটি হাদিস আছে: "ليس مِن البِرِّ الصِّيامُ في السَّفَر".

ইমাম বুখারি ও মুসলিম বর্ণনা করেছেন, কিন্তু কতক ফেকার কিতাবে দেখা যায়, এ হাদিসটি অন্যভাবে বর্ণনা করা হয়েছে, যা ইয়ামানের হিমইয়ার বংশের আঞ্চলিক ভাষা, যারা লামকে মিম দ্বারা পরিবর্তণ করে পড়ে, যেমন:

" ليس مِن امْبِر امْصِيامُ في امْسَفر ".

এটাকে তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত বলেন। হাদিস এক, শুধু লামকে মিম দ্বারা পরিবর্তন করা হয়েছে। কিন্তু এ বর্ণনাটি বিশুদ্ধ নয়, এটা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত নয়, বরং প্রমাণিত হচ্ছে জাবের থেকে বর্ণিত বুখারি ও মুসলিমের বর্ণনা: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

" ليس مِن البِرِّ الصِّيامُ في السَّفَر ".

জ্ঞাতব্য: এখানে এ হাদিস উল্লেখ করার উদ্দেশ্য হাদিসের বিশুদ্ধ শব্দ চিহ্নিত করা। হাদিস দুর্বল হিসেবে উল্লেখ করা হয়নি, কারণ এ হাদিস সহিহ। ইমাম বুখারি ও মুসলিম তাদের সহিহ কিতাবে এর উল্লেখ করেছেন।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ

তের.

( إني رأيت البارحة عجبًا .. رأيت رجلاً من أمتي يلهث عطشًا كلما ورد حوضًا مُنع وطُرد . فجاءه صيامه فسقاه وأرواه )

আব্দুর রহমান ইবনু সামুরা আত-তাওয়িল এর হাদিস: “আমি গত রাতে এক আশ্চর্য স্বপ্ন দেখেছি... আমার উম্মতের এক ব্যক্তিকে দেখলাম পিপাসায় কাতরাচ্ছে, যখনই সে আমার হাওজের কাছে আসে তাকে নিষেধ করা হয় ও তাড়িয়ে দেয়া হয়, অতঃপর তার সওম এসে তাকে পান করায় ও তার তৃষ্ণা নিবারণ করে”। তাবরানি দু’টি সনদে এ হাদিসটি বর্ণনা করেছেন, তার একটি সনদে রয়েছে সুলাইমান ইবনু আহমদ আল-ওয়াসেতি, আর অপরটি আছে খালেদ ইবনু আব্দুর রহমান আল-মাখজুমি, তারা উভয়ে দুর্বল। দেখুন: “ইতহাফুস সাদাতুল মুত্তাকিন”: (৮/১১৯), ইবনু রজব হাদিসটি দুর্বল বলেছেন।

-


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ

চৌদ্দ.

( الصائمون ينفخ من أفواههم ريح المسك ، ويوضع لهم مائدة تحت العرش

“সওম পালনকারীদের মুখ থেকে মিসকের সুগন্ধি বের হবে এবং আরশের নিচে তাদের জন্য দস্তরখান বিছানো হবে”। “সুয়ূতি দুররুল মানসুর”: (১/১৮২) গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, ইবনু রজব প্রমুখগণ হাদিসটি দুর্বল বলেছেন।

-


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ

পনের.

( الصائم إذا أُكل عنده صلت عليه الملائكة )

“সওম পালনকারীর নিকট যখন ভক্ষণ করা হয়, তার জন্য ফেরেশতাগণ তখন ইস্তেগফার করে”। ইবনু খুজাইম, তিরমিযি: (৭৮৪), ইবনু মাজাহ: (১৭৪৮), তায়ালিসি: (১৬৬৬), এ হাদিসটি দুর্বল। দেখুন: “সিলসিলাতুল আহাদিসুস দায়িফাহ”: (১৩৩২)

-


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ

ষোল.

( نوم الصائم عبادة )

“সওম পালনকারীর ঘুম ইবাদত”। হাদিসটি ইমাম সুয়ূতি “জামে সাগির”: (৯২৯৩) গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। তিনি বায়হাকির বরাতে উল্লেখ করে, বর্ণনাকারী আব্দুল্লাহ ইবনু আবূ আওফার কারণে হাদিসটি দুর্বল বলেন। জায়নুদ্দিন ইরাকি, বায়হাকি ও সুয়ূতি প্রমুখগণ হাদিসটি দুর্বল বলেছেন। দেখুন: “আল-ফিরদাউস”: (৪/২৪৮), “ইতহাফুস সাদাত”: (৪/৩২২)

-


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ

সতের.

( رب صائم حظه من صيامه الجوع والعطش ، ورب قائم حظه من قيامه السهر)

“অনেক সওম পালনকারী আছে, যাদের সওম হচ্ছে ক্ষুধা ও পিপাসা। অনেক রাত জাগরণকারী আছে, যাদের রাত জাগা হচ্ছে শুধু বিনিন্দ্রা রাত কাটানো”। ইবনু মাজাহ: (১৬৯০), এর সনদে উসামা বিন যায়েদ আদাভি রয়েছে সে দুর্বল। তবে হাদিসের অর্থ সঠিক।

-


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ

আঠার.

( من صلى العشاء الآخرة في جماعة في رمضان فقد أدرك ليلة القدر )

“রযমানে এশার সালাত যে জামাতের সাথে পড়ল, সে লাইলাতুল কদর লাভ করল”। ইস্পাহানি ও আবূ মুসা মাদিনি হাদিসটি উল্লেখ করেছেন। ইমাম মালেক তার “মুয়াত্তা”: (১/৩২১) গ্রন্থে হাদিসটি বালাগানি বলে উল্লেখ করেছেন, এটা মূলত ইবনুল মুসাইয়্যিব এর বাণী। ইবনু খুযাইমাহ: (২১৯৫), ইবনুল মাদিনি বলেছেন এর সনদে বিদ্যমান উকবা ইবনু আবিল হাসনা অপরিচিত, সে দুর্বল।

-


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ

উনিশ.

( كان إذا دخلت العشر اجتنب النساء واغتسل بين الأذانين ، وجعل العشاء سحورًا )

“রমযানের শেষ দিন প্রবেশ করলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নারীদের থেকে পৃথক থাকতেন ও দুই আযানের মধ্যবর্তী গোসল করতেন এবং রাতের খাবারকে সেহরি হিসেবে খেতেন”। হাদিসটি বাতিল, এ সনদে হাফস ইবনু ওয়াকেদ রয়েছে। ইবনু আদি বলেছেন: এ হাদিসটি আমাদের দেখা সব চেয়ে বেশী মুনকার। আরো কয়েকটি সনদে এ হাদিস বর্ণনা করা হয়েছে, তার প্রত্যেকটি দুর্বল।

-


হাদিসের মানঃ মুনকার (সহীহ হাদীসের বিপরীত)
পুনঃনিরীক্ষণঃ

পরিচ্ছেদঃ

বিশ.

( من صام بعد الفطر يومًا فكأنما صام السنة ) ، وحديث : ( الصائم بعد رمضان كالكار بعد الفار )

“ঈদুল ফিতরের পর যে ব্যক্তি একদিন সওম রাখল, সে যেন পুরো বছর সওম পালন করল”। হাদিস: “রমযানের পর সওম পালনকারী পালায়নের পর ফিরে আসা ব্যক্তির ন্যায়”। দেখুন: “কানজুল উম্মাল”: (২৪১৪২) মূলত: এটি কোন সহীহ সনদে বর্ণিত হয়নি।

-


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ২০ পর্যন্ত, সর্বমোট ৩৪ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ 1 2 পরের পাতা »