পরিচ্ছেদঃ ৪২. আরাফাত দিবসে মিনা থেকে আরাফাতে যাওয়ার পথে তালবিয়া ও তাকবীর পাঠ করার বর্ণনা
২৯৬৬। মুহাম্মদ ইবনু হাতিম, হারুন ইবনু আবদুল্লাহ ও ইয়াকুব আদ-দাওরাকী (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবন সালামা (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবন আবদুল্লাহ ইবন উমর (রহঃ) থেকে এবং তিনি নিজ পিতা আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, আমরা আরাফাত দিবসের সকালবেলা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে ছিলাম। আমাদের মধ্যে কতক তাকবীর ধ্বনি উচ্চারণ করছিল আর কতক তালবিয়া পাঠ করেছিল। আমরা তাকবীর ধ্বনি করেছি। পরবর্তী রাবী (আবদুল্লাহ ইবনু আবূ সালামা) বলেন, আমি (আবদুল্লাহ ইবনু আবদুল্লাহকে) বললাম, কি আশ্চর্য! আপনি তাকে (আবদুল্লাহ ইবনু উমর) কেন জিজ্ঞাসা করলেন না যে, আপনি এই ক্ষেত্রে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে কি করতে দেখেছেন?
باب التَّلْبِيَةِ وَالتَّكْبِيرِ فِي الذِّهَابِ مِنْ مِنًى إِلَى عَرَفَاتٍ فِي يَوْمِ عَرَفَةَ
وَحَدَّثَنِي مُحَمَّدُ بْنُ حَاتِمٍ، وَهَارُونُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ، وَيَعْقُوبُ الدَّوْرَقِيُّ، قَالُوا أَخْبَرَنَا يَزِيدُ بْنُ هَارُونَ، أَخْبَرَنَا عَبْدُ الْعَزِيزِ بْنُ أَبِي سَلَمَةَ، عَنْ عُمَرَ بْنِ حُسَيْنٍ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ، أَبِي سَلَمَةَ عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ كُنَّا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فِي غَدَاةِ عَرَفَةَ فَمِنَّا الْمُكَبِّرُ وَمِنَّا الْمُهَلِّلُ فَأَمَّا نَحْنُ فَنُكَبِّرُ قَالَ قُلْتُ وَاللَّهِ لَعَجَبًا مِنْكُمْ كَيْفَ لَمْ تَقُولُوا لَهُ مَاذَا رَأَيْتَ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَصْنَعُ.
Abdullah b. 'Umar reported on the authority of his father (Allah be pleased with them):
We were along with Allah's Messenger (way peace he upon him) in the morning of 'Arafa (9th of Dhu'l-Hijja). Some of us pronounced Takbir and some of us Tahlil La ilaha ill-Allah). And to those of us who pronounced Takbir, I said: By Allah, how strange it is that you did not care to ask him: What did you see Allah's Messenger (ﷺ) doing (on this occasion)?
পরিচ্ছেদঃ ৯১. অপবিত্র অবস্থায় কুরআন তিলাওয়াত সম্পর্কে।
২২৯. হাফস ইবনু উমার .... আবদুল্লাহ্ ইবনু সালামা (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি এবং অপর দুই ব্যক্তি একজন আমার স্বগোত্রীয় এবং অপরজন সম্ভবতঃ বানূ আসা’দ গোত্রের- আলী (রাঃ) এর নিকট যাই। আলী (রাঃ) উক্ত ব্যক্তিদ্বয়কে কোন কাজে পাঠিয়ে দেয়ার সময় বলেন, তোমরা উভয়েই সক্ষম ব্যক্তি। কাজেই তোমরা তোমাদের দ্বীনকে নিরোগ করে প্রতিষ্ঠিত করবার জন্য সচেষ্ট হও। অতঃপর তিনি (আলী) পায়াখানায় যান এবং সেখান থেকে প্রত্যাবর্তন করে পানি চেয়ে নিয়ে (হাত) ধৌত করলেন। অতঃপর তিনি কুরআন তিলাওয়াত শুরু করেন। সমবেত লোকেরা তা অপছন্দ করলে তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পায়খানা হতে বের হয়ে আমাদেরকে কুরআন শিক্ষা দিতেন এবং আমাদের সাথে মাংসও-খেতেন। স্ত্রী-সহবাস জনিত অপবিত্রতা ছাড়া অন্য কোন অপবিত্রতা তাকে কুরআন তিলাওয়াত থেকে বিরত রাখতে পারত না। (তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, নাসাঈ)।
باب فِي الْجُنُبِ يَقْرَأُ الْقُرْآنَ
حَدَّثَنَا حَفْصُ بْنُ عُمَرَ، حَدَّثَنَا شُعْبَةُ، عَنْ عَمْرِو بْنِ مُرَّةَ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ سَلِمَةَ، قَالَ دَخَلْتُ عَلَى عَلِيٍّ - رضى الله عنه - أَنَا وَرَجُلاَنِ رَجُلٌ مِنَّا وَرَجُلٌ مِنْ بَنِي أَسَدٍ - أَحْسِبُ فَبَعَثَهُمَا عَلِيٌّ - رضى الله عنه - وَجْهًا وَقَالَ إِنَّكُمَا عِلْجَانِ فَعَالِجَا عَنْ دِينِكُمَا . ثُمَّ قَامَ فَدَخَلَ الْمَخْرَجَ ثُمَّ خَرَجَ فَدَعَا بِمَاءٍ فَأَخَذَ مِنْهُ حَفْنَةً فَتَمَسَّحَ بِهَا ثُمَّ جَعَلَ يَقْرَأُ الْقُرْآنَ فَأَنْكَرُوا ذَلِكَ فَقَالَ إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم كَانَ يَخْرُجُ مِنَ الْخَلاَءِ فَيُقْرِئُنَا الْقُرْآنَ وَيَأْكُلُ مَعَنَا اللَّحْمَ وَلَمْ يَكُنْ يَحْجُبُهُ - أَوْ قَالَ يَحْجُزُهُ - عَنِ الْقُرْآنِ شَىْءٌ لَيْسَ الْجَنَابَةَ .
حكم : ضعيف (الألباني
Narrated Ali ibn AbuTalib:
Abdullah ibn Salamah said: I, accompanied by other two persons, one from us and the other from Banu Asad, called upon Ali. He sent them to a certain territory (on some mission) saying: You are sturdy and vigorous people; hence display your power for religion. He then stood and entered the toilet. He then came out and called for water and took a handful of it. Then he wiped (his hands) with it and began to recite the Qur'an. They were surprised at this (action).
Thereupon he said: The Messenger of Allah (ﷺ) came out from the privy and taught us the Qur'an and took meat with us. Nothing prevented him; or the narrator said: Nothing prevented him from (reciting) the Qur'an except sexual defilement.
Grade : Da'if (Al-Albani)
পরিচ্ছেদঃ ১২. ‘উমার (রাঃ)-এর সম্মান
৫/১০৬। আবদুল্লাহ ইবনু সালামাহ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আলী (রাঃ) কে বলতে শুনেছি: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পরে সর্বোৎকৃষ্ট মানুষ হলেন আবূ বকর (রাঃ) এবং আবূ বকর (রাঃ) এর পরে উত্তম লোক হলেন উমার (রাঃ)।
بَاب فَضْلِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ
حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ مُحَمَّدٍ، حَدَّثَنَا وَكِيعٌ، حَدَّثَنَا شُعْبَةُ، عَنْ عَمْرِو بْنِ مُرَّةَ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ سَلَمَةَ، قَالَ سَمِعْتُ عَلِيًّا، يَقُولُ خَيْرُ النَّاسِ بَعْدَ رَسُولِ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ أَبُو بَكْرٍ وَخَيْرُ النَّاسِ بَعْدَ أَبِي بَكْرٍ عُمَرُ .
It was narrated that 'Abdullah bin Salimah said:
"I heard 'Ali say: 'The best of people after the Messenger of Allah is Abu Bakr, and the best of people after Abu Bakr is 'Umar.'"
পরিচ্ছেদঃ ১/১০৫. বিনা উযূতে কুরআন তিলাওয়াত করা।
১/৫৯৪। আবদুল্লাহ ইবনু সালামাহ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ) এর নিকট গেলাম। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পায়খানায় গিয়ে তাঁর প্রাকৃতিক প্রয়োজন সেরে বের হয়ে এসে আমাদের সাথে রুটি ও মাংস খেতেন, কুরআন তিলাওয়াত করতেন এবং তাঁকে কোন জিনিস এ থেকে বিরত রাখতো না। রাবী কখনো বলতেন, গোসলের প্রয়োজন হয় এরূপ নাপাক অবস্থা ব্যতীত কোন জিনিস তাঁকে কুরআন তিলাওয়াত থেকে বিরত রাখতো না।
তাহক্বীক্ব আলবানী: যঈফ। তাখরীজ আলবানী: মিশকাত ৪৬০, যঈফ আবূ দাউদ ৩১, ইরওয়াহ ১৯২, ৪৮৫। উক্ত হাদিসের রাবী আবদুল্লাহ বিন সালামাহ সম্পর্কে ইমাম বুখারী বলেন, তার হাদিসের অনুসরণ করা যাবে না। ইবনু আদী বলেন, আমি আশা রাখি তার মাঝে কোন সমস্যা নেই।
بَاب مَا جَاءَ فِي قِرَاءَةِ الْقُرْآنِ عَلَى غَيْرِ طَهَارَةٍ
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ، حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ جَعْفَرٍ، حَدَّثَنَا شُعْبَةُ، عَنْ عَمْرِو بْنِ مُرَّةَ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ سَلِمَةَ، قَالَ دَخَلْتُ عَلَى عَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ فَقَالَ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ يَأْتِي الْخَلاَءَ فَيَقْضِي الْحَاجَةَ ثُمَّ يَخْرُجُ فَيَأْكُلُ مَعَنَا الْخُبْزَ وَاللَّحْمَ وَيَقْرَأُ الْقُرْآنَ وَلاَ يَحْجُبُهُ - وَرُبَّمَا قَالَ وَلاَ يَحْجُزُهُ - عَنِ الْقُرْآنِ شَىْءٌ إِلاَّ الْجَنَابَةُ .
It was narrated that 'Abdullah bin Salamah said:
"I entered upon 'Ali bin Abu Talib and he said: 'The Messenger of Allah used to go to the lavatory and relieve himself, then come out, and he would eat bread and meat with us and recite Qur'an, nothing stopped him' or perhaps he said: 'prevented him from doing so except sexual impurity.'"
পরিচ্ছেদঃ ২৩/১. অপরকে আহার করানো
১/৩২৫১। আবদুল্লাহ ইবনে সালাম (রাঃ) বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন (হিজরত করে মক্কা থেকে) মদীনায় এলেন তখন লোকেরা তাঁর নিকট যেতে লাগলো এবং বলাবলি হতে লাগলোঃ আল্লাহর রাসূল এসেছেন, আল্লাহর রাসূল এসেছেন,আল্লাহর রাসূল এসেছেন (তিনবার)। আমিও লোকজনের সাথে (তাঁকে) দেখতে গেলাম। আমি তাঁর মুখমণ্ডল উত্তমরূপে দেখার পর বুঝতে পারলাম যে, এই চেহারা মিথ্যাবাদীর নয়। সর্বপ্রথম তাঁর মুখে আমার শোনা কথা এই যে, তিনি বললেনঃ হে লোকসকল! তোমরা সালামের ব্যাপক প্রচলন করো, আহার করাও, আত্মীয়তার সম্পর্ক বহাল রাখো এবং লোকজন যখন ঘুমিয়ে থাকে, তখন রাতের বেলা নামায পড়ো। শান্তিতে জান্নাতে প্রবেশ করো।
তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।
بَاب إِطْعَامِ الطَّعَامِ
حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، حَدَّثَنَا أَبُو أُسَامَةَ، عَنْ عَوْفٍ، عَنْ زُرَارَةَ بْنِ أَوْفَى، حَدَّثَنِي عَبْدُ اللَّهِ بْنُ سَلاَمٍ، قَالَ لَمَّا قَدِمَ النَّبِيُّ ـ صلى الله عليه وسلم ـ الْمَدِينَةَ انْجَفَلَ النَّاسُ قِبَلَهُ وَقِيلَ قَدْ قَدِمَ رَسُولُ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ قَدْ قَدِمَ رَسُولُ اللَّهِ قَدْ قَدِمَ رَسُولُ اللَّهِ . ثَلاَثًا فَجِئْتُ فِي النَّاسِ لأَنْظُرَ فَلَمَّا تَبَيَّنْتُ وَجْهَهُ عَرَفْتُ أَنَّ وَجْهَهُ لَيْسَ بِوَجْهِ كَذَّابٍ فَكَانَ أَوَّلَ شَىْءٍ سَمِعْتُهُ تَكَلَّمَ بِهِ أَنْ قَالَ " يَا أَيُّهَا النَّاسُ أَفْشُوا السَّلاَمَ وَأَطْعِمُوا الطَّعَامَ وَصِلُوا الأَرْحَامَ وَصَلُّوا بِاللَّيْلِ وَالنَّاسُ نِيَامٌ تَدْخُلُوا الْجَنَّةَ بِسَلاَمٍ " .
‘Abdullah bin Salam said:
“When the Prophet (ﷺ) came to Al-Madinah, the people rushed to meet him, and it was said: ‘The Messenger of Allah (ﷺ) has come! The Messenger of Allah (ﷺ) has come! The Messenger of Allah (ﷺ) has come!’ Three times. I came with the people to see him, and when I saw his face clearly, I knew that his face was not the face of a liar. The first thing I heard him say was when he said: ‘O people! Spread (the greeting of) Salam, feed others, uphold the ties of kinship, and pray during the night when people are sleeping, and you will enter Paradise with Salam.”
পরিচ্ছেদঃ ১৩. দাদার (মীরাস) সম্পর্কে আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু এর বক্তব্য
২৯৫৮. আব্দুল্লাহ ইবনু সালামাহ (রহঃ) হতে বর্ণিত, আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু দাদাকে ভাইয়ের স্থলবর্তী করতেন, এক ষষ্ঠাংশ পর্যন্ত।[1]
তাথরীজ: ইবনু আবী শাইবা ১১/২৯৩ নং ১১২৬৯; বাইহাকী, ফারাইয ৬/২৪৯; ইবনু হাযম, আল মুহাল্লা ৯/২৮৪।
باب قَوْلِ عَلِيٍّ فِي الْجَدِّ
حَدَّثَنَا سُلَيْمَانُ بْنُ حَرْبٍ حَدَّثَنَا شُعْبَةُ عَنْ عَمْرِو بْنِ مُرَّةَ عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ سَلَمَةَ أَنَّ عَلِيًّا كَانَ يَجْعَلُ الْجَدَّ أَخًا حَتَّى يَكُونَ سَادِسًا
পরিচ্ছেদঃ ১৩. দাদার (মীরাস) সম্পর্কে আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু এর বক্তব্য
২৯৬০. আব্দুল্লাহ ইবনু সালামাহ (রহঃ) হতে বর্ণিত, আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু দাদাকে ভাইয়ের স্থলবর্তী করতেন এক ষষ্ঠাংশ পর্যন্ত।[1]
তাথরীজ: এটি গত হয়েছে ২৯৫৫ নং এ।
باب قَوْلِ عَلِيٍّ فِي الْجَدِّ
حَدَّثَنَا هَاشِمُ بْنُ الْقَاسِمِ حَدَّثَنَا شُعْبَةُ عَنْ عَمْرِو بْنِ مُرَّةَ عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ سَلَمَةَ قَالَ كَانَ عَلِيٌّ يُشَرِّكُ بَيْنَ الْجَدِّ وَالْإِخْوَةِ حَتَّى يَكُونَ سَادِسًا
পরিচ্ছেদঃ ৯১. নাপাক অবস্থায় কুরআন পড়া প্রসঙ্গে
২২৯। ’আবদুল্লাহ ইবনু সালামাহ (রহঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি এবং আমার সাথে আরো দু’জন লোক ’আলী (রাঃ)-এর নিকট গেলাম। তাদের একজন আমাদের গোত্রের আর অন্যজন সম্ভবত বানু আসাদ গোত্রের। ’আলী (রাঃ) তাদের দু’জনকে কোন কাজে পাঠালেন এবং প্রেরণের সময় বললেন, তোমরা দু’জনই শক্তিশালী। কাজেই তোমরা তোমাদের শক্তি দীনের ক্ষেত্রে ব্যয় করবে। অতঃপর তিনি পায়খানায় গেলেন এবং সেখান থেকে বের হয়ে পানি চাইলেন। তিনি এক অঞ্জলি পানি হাতে নিয়ে (মুখ) মুছে কুরআন তিলাওয়াত করতে লাগলেন। লোকেরা বিষয়টি আপত্তিকর মনে করলে তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পায়খানা থেকে বেরিয়ে এসে আমাদের কুরআন পড়াতেন এবং আমাদের সঙ্গে মাংসও খেতেন। একমাত্র জানাবাত (গোসল ফরয হওয়ার নাপাকি) ব্যাতীত কোন কিছুই তাঁকে কুরআন থেকে বিরত রাখতে পারতো না।[1]
দুর্বল : মিশকাত ৪৬০।
হাদীস থেকে শিক্ষাঃ
১। কেউ কোনো সুন্নাত বিরোধী কাজ হতে দেখলে তার উচিত ঐ কর্ম সম্পাদনকারীকে নিষেধ করা।
২। ছোট অপবিত্র অবস্থায় কুরআন তিলাওয়াত জায়িয।
মাসআলাহঃ হায়িয, নিফাস ও জুনুবী অবস্থায় কুরআন পাঠ প্রসঙ্গেঃ
(১) ‘আলী (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত হাদীসঃ
حديث علي رضي الله عنه ان رسول الله صلي الله عليه وسلم كان يخرج من الخلاء فيقرئنا القران ويأكل معنا اللحم ولم يكن يحجبه او قال يحجزه عن القران شئ ليس الجنابة
(ক) আলী (রাঃ) বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পায়খানা থেকে বেরিয়ে এসে আমাদের কুরআন পড়াতেন এবং আমাদের সঙ্গে গোশতও খেতেন। একমাত্র জানাবাত (গোসল ফারয হওয়ার নাপাকি) ব্যতীত কোনো কিছুই তাঁকে কুরআন থেকে বিরত রাখতে পারতো না।
হাদীসটি দুর্বলঃ এটি বর্ণনা করেছেন আবূ দাঊদ (২২৯), নাসায়ী (১/৫২), তিরমিযী (১/২৭৩-২৭৪), ইবনু মাজাহ (৫৯৪), আহমাদ (১/৮৪, ১২৪), ত্বায়ালিসি (১০১), ত্বাহাবী (১/৫২), ইবনুল জারুদ ‘মুনতাক্বা’ (৫২-৫৩), দারাকুতনী (৪৪ পৃঃ), ইবনু আবূ শায়বাহ (১/৩৬/১), হাকিম (১/৫২, ৪/১০৭), ইবনু ‘আদী ‘কামিল’ (ক্বাফ ২১৪/২) এবং বায়হাক্বী (১/৮৮-৮৯), প্রত্যেকেই ‘আমর ইবনু মুররাহ থেকে ‘আব্দুল্লাহ ইবনু সালামাহ সূত্রে, তিনি বলেনঃ ‘‘আমি এবং আরো দু’ ব্যক্তি আলী (রাঃ)-এর নিকট আসলাম, তখন তিনি বললেন... (হাদীস)।’’ হাদীসটি তিরমিযীতে সংক্ষেপে এ শব্দে বর্ণিত হয়েছেঃ
كان رسول الله صلي الله عليه وسلم كان يقرئنا القران علي كل حال ما لم يكن جنبا
‘‘শরীর অপবিত্র না হলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে সর্বাবস্থায় কুরআন পড়াতেন।’’
এটি ইবনু আবূ শায়বাহ ও অন্যদেরও বর্ণনা। তবে ইবনুল জারুদ বৃদ্ধি করেছেনঃ ‘‘শু‘বাহ এ হাদীস সম্পর্কে বলতেনঃ আমরা হাদীসটি জানি এবং তা প্রত্যাখ্যান করি। অর্থাৎ ‘আব্দুল্লাহ ইবনু সালামাহকে ‘আমর বৃদ্ধ বয়সে পেয়েছেন।’’ এ উদ্ধৃতিতে এ ইঙ্গিতই রয়েছে যে, শেষ বয়সে ইবনু ‘আব্দুল্লাহর স্মরণশক্তি বিকৃত হয়ে যায়। আর ‘আমর ইবনু মুররাহ হাদীসটি তার কাছ থেকে ঐ অবস্থায়ই বর্ণনা করেন। এ তথ্য হাদীসটির ব্যাপারে সন্দেহ জাগায় এবং হাদীসটিকে দুর্বল করে দেয়। হাদীস বিশারদ ইমামগণের একদল বিষয়টি স্পষ্টও করেছেন। আল্লামা মুনযিরী ‘মুখতাসার সুনান’ (১/১৫৬) গ্রন্থে বলেনঃ ‘‘আবূ বাকর আল বাযযার উল্লেখ করেন যে, ‘আলীর হাদীসটি কেবল ‘আব্দুল্লাহ ইবনু সালামাহ থেকে ‘আমর ইবনু মুররাহ সূত্রেই বর্ণিত হয়েছে। ইমাম বুখারী (রহঃ) ‘আমর ইবনু মুররাহ সূত্রে বর্ণনা করেন যে, ‘আব্দুল্লাহ ইবনু সালামাহ আমাদের নিকট হাদীস বর্ণনা করতেন, আমরা তা চিনতাম এবং প্রত্যাখ্যান করতাম। তিনি বৃদ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন, তার হাদীস অনুসরণ করা হতো না।
ইমাম শাফিঈ (রহঃ) এ হাদীস সম্পর্কে বলেনঃ হাদীস বিশারদ ইমামগণ হাদীসটিকে প্রমাণযোগ্য বলেননি। ইমাম বায়হাক্বী বলেনঃ ‘ইমা শাফিঈ এ হাদীসটির প্রামাণ্যতার ব্যাপারে থেমে গেছেন, কেননা এর মূল বিষয় বর্তায় ‘আব্দুল্লাহ ইবনু সালামাহ আল-কূফীর উপর। তিনি বৃদ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। কতিপয় প্রত্যাখ্যানকারী তার হাদীস ও ‘আক্বলকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। আর তিনি এ হাদীসটি বৃদ্ধ হওয়ার পরই বর্ণনা করেছেন। যা শু‘বাহ বলেছেন।’ ইমাম খাত্তাবী উল্লেখ করেন, ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বাল (রহঃ) ‘আলীর এ হাদীসটিকে সন্দেহ করতেন এবং ‘আব্দুল্লাহ ইবনু সালামাহর কারণে দুর্বল বলতেন।’’
কিন্তু এসব ইমামগণের বিপরীত করেছেন অন্যান্য ইমাম। ইমাম তিরমিযী বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান সহীহ। হাকিম ও যাহাবী এর সানাদকে সহীহ বলেছেন। অনুরূপভাবে সহীহ বলেছেন ইবনুস সুকূন, ‘আব্দুল হাক্ব ও বাগাভী ‘শারহু সুন্নাহ’ গ্রন্থে, যেমন রয়েছে হাফিযের ‘আত-তালখীস’ গ্রন্থে। তবে হাফিয মধ্যমপন্থা অবলম্বন করে ‘ফাতহুল বারী’ (১/৩৪৮) গ্রন্থে বলেনঃ ‘‘হাদীসটির সুনান প্রণেতারা বর্ণনা করেছেন। ইমাম তিরমিযী ও ইবনু হিব্বান একে সহীহ বলেছেন এবং কতিপয় ইমাম একে দুর্বল বলেছেন। সঠিক হচ্ছে, এটি হাসান পর্যায়ের, যা দলীলের উপযোগী।’’
হাদীসটির ব্যাপারে এটা হচ্ছে হাফিযের রায়। কিন্তু আমরা তার সাথে একমত নই। কেননা হাফিয নিজেই ‘আত-তাক্বরীব’ গ্রন্থে বর্ণনাকারী ‘আব্দুল্লাহ ইবনু সালামাহর জীবনীতে ইবনু সালামাহ সম্পর্কে বলেনঃ ‘‘তিনি সত্যবাদী, কিন্তু তার স্মরণশক্তি বিকৃত হয়ে যায়।’’ ইতিপূর্বে বলা হয়েছে যে, হাদীসটি তিনি স্মরণশক্তি বিকৃত অবস্থায় বর্ণনা করেছেন। সুতরাং স্পষ্ট যে, হাফিয হাদীসটিকে হাসান বলে হুকুম দেয়ার সময় নাববী (রহঃ) আল-মাজমু’ (২/১৫৯) গ্রন্থে বলেনঃ ‘‘ইমাম তিরমিযী হাদীসটিকে সহীহ বলে অন্যান্য মুহাদ্দিসগণের পরিপন্থি কাজ করেছেন। কেননা মুহাক্কিকীন হাফিযগণ হাদীসটিকে দুর্বল বলেছেন।’’ অতঃপর তিনি ইমাম শাফিঈ ও ইমাম বায়হাক্বীর উদ্ধৃতি দেন যা মুনযিরী তাদের সূত্রে উল্লেখ করেছেন।
অতএব এ সমস্ত মুহাক্কিক ইমামগণ যা বলেছেন সেটাই আমাদের নিকট অগ্রাধিকারযোগ্য। কেননা হাদীসটি ‘আব্দুল্লাহ ইবনু সালামাহর একক বর্ণনা, এবং বিশেষ করে তার স্মরণশক্তি বিকৃত অবস্থায় এটি বর্ণিত।
সমকালীন কতিপয় ‘আলিম দাবী করেন যে, ‘আলী (রাঃ) সূত্রে এ হাদীসটির অর্থগত তাবে’ বর্ণনা আছে, যদ্বারা ভুলের সংশয় দূরীভূত হয়। অতঃপর আহমাদের বর্ণিত নিজের বর্ণনাটি তুলে ধরেনঃ
حدثنا عائد بن حبيب، حدثني عامر بن السمط عن ابي الغريف، قال اتي علي رضي الله عنه بوضوء فمضمض واستنشق ثلاثا وغسل وجهه ثلاثا وغسل يديه وذراعيه ثلاثا ثلاثا ثم مسح برأ سه ثم غسل رجليه ثم قال هكذا رأيت رسول الله صلي الله عليه وسلم توضأ ثم قرأ شيئا من القران ثم قال هذا لمن ليس بجنب فاما الجنب فلا ولا آية
(খ) আবূল গারীফ বলেনঃ ‘আলী (রাঃ)-এর উযুর পানি আনা হলে তিনি তিনবার করে কুলি করলেন ও নাকে পানি দিলেন, তিনবার মুখমণ্ডল
ধুলেন, তিনবার করে উভয় হাত কনুই পর্যন্ত ধুলেন, এরপর মাথা মাসাহ করলেন, অতঃপর দু’ পা ধৌত করে বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এভাবেই উযু করতে দেখেছি। অতঃপর তিনি কুরআন থেকে কিছু পড়লেন। এরপর তিনি বললেনঃ এ হুকুম ঐ ব্যক্তির জন্য, যে জুনুবী নয়। পক্ষান্তরে জুনুবী ব্যক্তি কুরআন পড়বে না, একটি আয়াতও নয়। (আহমাদ)
এরপর বলেনঃ এর সানাদ সহীহ। অতঃপর এর সানাদ সম্পর্কে আলোচনার শেষদিকে বলেন, সকলেই সিক্বাহ।
এর জবাব কয়েকভাবে দেয়া যায়ঃ
প্রথমতঃ আমরা এর সনদের বিশুদ্ধতা মেনে নিতে পারছি না। কেননা সনদের এ আবূল গারীফকে ইবনু হিব্বান ছাড়া কেউ সিক্বাহ বলেননি। আর এর উপর নির্ভর করেই ইঙ্গিতকৃত ব্যক্তি এর সানাদকে সহীহ বলেছেন। আমরা ইতিপূর্বে বহুবার উল্লেখ করেছি যে, ইবনু হিব্বান সিক্বাহ আখ্যা দেয়ার ব্যাপারে শিথিল পন্থী, তার সিক্বাহ বলার উপর নির্ভর করা যায় না। বিশেষ করে তিনি যখন এ ক্ষেত্রে অন্যান্য ইমামগণের বিপরীত করেন। ইমাম আবূ হাতিম রাযী বলেনঃ ‘‘আবুল গারীফ প্রসিদ্ধ নন। বলা হলো, আপনি তাকে পছন্দ করেন নাকি আল-হারিস আল আ‘ওয়াকে? তিনি বলেনঃ হারিস প্রসিদ্ধ ব্যক্তি, আর এ ব্যক্তির ব্যাপারে হাদীস বিশারদগণ সমালোচনা করেছেন। অবশ্য আসবাগ ইবনু নাবাতার দৃষ্টিতে তিনি একজন শায়খ।’’
আমি (আলবানী) বলছিঃ আবূ হাতিমের নিকট আসবাগ হাদীস বর্ণনায় শিথিল (নরমপন্থী), আর অন্যদের নিকট মাতরূক। সুতরাং এ ধরণের উক্তি তার হাদীসকে সহীহ হওয়া তো দূরের কথা হাসানও করে না।
দ্বিতীয়তঃ যদি এটি সহীহ হয় তথাপিও এটি মারফূ হওয়ার ব্যাপারে সুস্পষ্ট নয়। অর্থাৎ তার এ কথাটি শাহিদ নয়ঃ (ثم قرأ شيئا من القران) ‘‘অতঃপর তিনি কুরআন থেকে কিছু পড়লেন...।’’
তৃতীয়তঃ যদি তা মারফূ হিসেবে সুস্পষ্ট হয়, তাহলে তা হবে শায অথবা মুনকার। কেননা সনদের ‘আয়িজ ইবনু হাবীব যদিও সিক্বাহ, কিন্তু তার সম্পর্কে ইবনু ‘আদী বলেনঃ ‘‘তিনি এমন কতগুলো হাদীস বর্ণনা করেন যেগুলো আমি তার উপর ইনকার করি। অর্থাৎ অগ্রহণযোগ্য হিসেবে আখ্যায়িত করি।’’
আমি (আলবানী) বলছিঃ সম্ভবতঃ এটিও সেগুলোর একটি। পক্ষান্তরে তার চেয়ে অধিক নির্ভরযোগ্য ও অধিক হাফিয ব্যক্তি হাদীসটি ‘আলীর মাওকুফ বর্ণনা হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তা হচ্ছে দারাকুতনীতে (৪৪) বর্ণিত হাদীস। যা বর্ণিত হয়েছে ইয়াযীদ ইবনু হারুন থেকে, তিনি বলেন, আমাদেরকে সংবাদ দিয়েছেন ‘আমির ইবনুস সিমতু, তিনি বলেন, আমাদেরকে সংবাদ দিয়েছেন আবুল গারীফ হামাদানী, তিনি বলেনঃ
كنا مع علي في الرحبة فخرج الي اقضي الرحبة فوالله ما ادري ابولاً احدث أو غالطاً ثم جاء فدعا بكوز من ماء فغسل كفيه، ثم قبضهما اليه، ثم قرأ صدراً من القران ثم قال : اقرؤا القران ما لم يصب أحدكم جنابة ، فإن اصابته جنابة فلا ولا حرفا واحدا
(গ) আমরা ‘আলী (রাঃ)-এর সাথে এক খোলা ময়দানে ছিলাম। অতঃপর তিনি খোলা ময়দান থেকে দূরে চলে গেলেন। আল্লাহর শপথ! তিনি পেশাব, হাদাস বা পায়খানার জন্য গেছেন কি না তা আমি জানি না। অতঃপর তিনি ফিরে এসে এক জগ পানি চেয়ে নিলেন এবং তা দিয়ে দু’ হাত (কব্জি পর্যন্ত) ধৌত করলেন, অতঃপর হস্তদ্বয় নিজের দিকে গুটিয়ে নিলেন। অতঃপর কুরআন থেকে পাঠ করলেন। এরপর বললেনঃ ‘‘তোমরা কুরআন তিলাওয়াত করো, যতক্ষণ না তোমরা জুনুবী হও। যদি কেউ জুনুবী হয়ে যায় তবে সে তিলাওয়াত করবে না, এমন কি একটি হরফও নয়।’’ ইমাম দারাকুতনী বলেনঃ ‘‘এটি আলী সূত্রে সহীহ’’ অর্থাৎ মাওকূফভাবে।
আমি (আলবানী) বলছিঃ অনুরূপ এটি মাওকূফ হিসেবে বর্ণনা করেছেন শুরাইক ইবনু আব্দুল্লাহ আল-ক্বাযী ইবনু আবূ শায়বাহর নিকট (১/৩৬/২), ও আল-হাসান ইবনু হাই এবং খালিদ ইবনু আব্দুল্লাহ বায়হাক্বীর নিকট (১/৮৯, ৯০) তারা তিনজন এটি বর্ণনা করেছেন ‘আমির ইবনু সিমত্ব থেকে তার সূত্রে ‘আলীর উপর থেমে গিয়ে মাওকূফভাবে সংক্ষেপে, তিনি জুনুবী সম্পর্কে বলেনঃ (لا يقرأ القران ولا حرفاً) ‘‘জুনুবী কুরআন পড়বে না, একটি হওফও নয়।’’ সুতরাং এ বিশ্লেষণে (তাহক্বীক্বে) স্পষ্ট হয়ে গেলো যে, হাদীসটির ব্যাপারে এ মুতাবে‘টি অগ্রাধিকারযোগ্য। তা হচ্ছে ‘আলী (রাঃ)-এর মাওকূফ বর্ণনা। যদি তার থেকে এটি সহীহও হয় তথাপি এটিকে মারফূ হাদীসের শাহিদ ধরা সঠিক হবে না। বরং যদি বলা হয়, এটি মারফূ হওয়ার ক্ষেত্রে একটি দোষ, তাহলে এটি এরই দলীল হচ্ছে যে, যিনি এটিকে মারফূ করেছেন অর্থাৎ ‘আব্দুল্লাহ ইবনু সালামাহ, তিনি মারফূ করতে গিয়ে ভুল করেছেন, যা সঠিকতা থেকে দূরে নয়। আল্লাহই অধিক জ্ঞাত। (দেখুন, ইরওয়াউল গালীল)
(ঘ) ‘আলী (রাঃ)-কে উদ্দেশ্য করে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উক্তিঃ
(يا علي اني أرضي لك ما أرضي لنفسى، واكره ما اكره لنفسى، لا تقرأ القران وانت جنب ولا انت راقع ولا انت ساجد )
‘‘হে আলী! আমি তোমার জন্য তাই পছন্দ করি, যা আমি আমার জন্য পছন্দ করি, এবং তোমার জন্য তাই অপছন্দ করি, যা আমি নিজের জন্য অপছন্দ করি। তুমি জুনুবী, রুকু‘ ও সিজদা্ অবস্থায় কুরআন পাঠ করবে না...।’’ (দারাকুতনী)
সানাদ দুর্বলঃ এর সনদে হারিস আল-আ‘ওয়ার দুর্বল এবং আবূ ইসহাক সাবীঈ সিক্বাহ ‘আবিদ, তবে শেষ বয়সে তিনি সংমিশ্রণ করতেন। (আত-তাক্বরীব ২/৭৩)
(ঙ) ‘আলী ইবনু আবূ তালিব ও আবূ মূসা (রাঃ) সূত্রে বর্ণিতঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
لا تقرأ القران وانت جنب. قلت لعلى انه صلي الله عليه وسلم كان يقرأ القرأن علي كل حال ليس الجنابة
‘‘তুমি জুনুবী অবস্থায় কুরআন পড়বে না। আমি ‘আলীকে বললাম, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বাবস্থায় কুরআন পড়তেন, জানাবাতের অবস্থা ছাড়া।’’ (বাযযার)
আল্লামা হায়সামী (রহঃ) বলেনঃ উভয়ের সনদে আবূ মালিক নাখায়ী রয়েছে। হাদীস বিশারদগণের ঐক্যমতে তিনি দুর্বল। (দেখুন, হায়সামীর মাজমাউয যাওয়ায়িদ)
(২) ‘উমার (রাঃ)-কে উদ্দেশ্য করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উক্তিঃ
اذا توضأت (وانا جنب) اكلت وشربت ولا اقرأ حتي أغتسل
‘‘আমি জুনুবী অবস্থায় উযু করে পানাহার করি, তবে গোসল না করে কিরাত করি না।’’ (দারাকুতনী)
সানাদ দুর্বলঃ হাদীসটি ত্বাবারানী এবং বায়হাক্বী ও বর্ণনা করেছেন। এর সনদে ইবনু লাহী‘আহ দুর্বল। তার জীবনী রয়েছে আয-যুআফা ওয়াল মাতরুকীন (৬৫), আল-মাজরুহীন (২/১১) ও আয-যুআফা সাগীর (২৯০) গ্রন্থে। বায়হাক্বী বলেন, ‘আব্দুল্লাহ ইবনু সুলায়মান থেকে এটি ওয়াক্বিদীও বর্ণনা করেছেন। আল্লামা শামসুল হাক্ব ‘আযীমাবাদী বলেন, ইবনু লাহী‘আহ দুর্বল এবং ওয়াক্বিদী মাতরূক। (দেখুন, তা‘লীকু মুগনী ‘আলা সুনানে দারাকুতনী (৪২১, ৪৩৩) শায়খ মাজদী হাসানের তাখরীজসহ)
ফায়িদাহ্ (উপকারিতা): আল্লামা শাওকানী (রহঃ) বলেনঃ (নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানাবাতের অবস্থায় কুরআন পড়তেন না বা অপছন্দ করতেন) এ হাদীস জুনুবী ব্যক্তির কুরআন পাঠ হারাম হওয়া প্রমাণ করে না। কেননা এর উদ্দেশ্য হচ্ছে এ কথা বর্ণনা করা যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানাবাতের অবস্থায় কিরাত বর্জন করেছেন। এ ধরণের বর্ণনা দ্বারা তো অপছন্দনীয় বলাও সঠিক হবে না, তাহলে কিভাবে হারাম হওয়ার দলীল দেয়া যাবে? (দেখুন, নায়লুল আওত্বার)
আল্লামা নাসিরুদ্দীন আলবানী (রহঃ) ইরওয়াউল গালীল গ্রন্থে বলেনঃ হাফিয ইবনু হাজার আসকালানী (রহঃ) ‘আত-তাখলীস’ গ্রন্থে (৫১ পৃষ্ঠায়) বলেছেনঃ ‘‘ইমাম ইবনু খুযাইমাহ বলেনঃ ‘যারা জুনুবী ব্যক্তির কুরআন পাঠ নিষেধ করে তাদের জন্য এ হাদীসে কোনো দলীল নেই। কেননা হাদীসে নিষেধাজ্ঞা নেই, আছে কেবল কর্মের উদ্ধৃতি। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানাবাতের কারণে কুরআন পড়তে নিষেধ করেছেন এমন কথা হাদীসটিতে নেই। ইমাম বুখারী (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস সূত্রে উল্লেখ করেছেন যে, তিনি জুনুবী ব্যক্তির কিরাত পাঠকে দোষণীয় মনে করতেন না। এবং বুখারী তাঁর তরজমাতে উল্লেখ করেন, ‘‘নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বাবস্থায় আল্লাহর যিকর করতেন।’’
আমি (আলবানী) বলছিঃ ‘আয়িশাহর হাদীসটি মুসলিমেও অন্যরা সংযুক্ত সনদে বর্ণনা করেছেন। আর ইবনু ‘আব্বাসের আসারটি সংযুক্ত সনদে বর্ণনা করেছেন ইবনুল মুনযির এ শব্দেঃ ‘‘ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) জুনুবী অবস্থায় তার দু‘আগুলো পাঠ করতেন।’’ যেমন ফাতহুল বারীতে রয়েছে। হাফিয (রহঃ) তাতে উল্লেখ করেনঃ ইমাম বুখারী, ইমাম আত-ত্বাবারী ও ইবনুল মুনযির (রহঃ)-এর মতে, জুনুবী ব্যক্তির কুরআন পড়া জায়িয। তাঁরা ‘আয়িশাহ বর্ণিত ব্যাপক অর্থবোধক (‘আম) হাদীসটি দলীল হিসেবে গ্রহণ করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণীঃ ‘‘আমি ত্বাহারাত ছাড়া মহান আল্লাহর যিকর করতে অপছন্দ করি।’’ এটি জুনুবী ব্যক্তির কুরআন পাঠ অপছন্দনীয় হওয়াকে স্পষ্ট করে। কেননা হাদীসটি সালাম সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে আবূ দাঊদ ও অন্যান্য গ্রন্থে সহীহ সনদে। কুরআন তো সালামের আগে অগ্রাধিকার পাবে, না পরিষ্কার বিষয়। কিন্তু অপছন্দনীয় হওয়াটা জায়িয হওয়াকে নাকচ করে না, যা জানা বিষয়। এ সহীহ হাদীসটির ব্যাপারে এ কথাই ওয়াজিব এবং এটিই অধিক ইনসাফপূর্ণ কথা ইনশাআল্লাহ। (দেখুন, ইরওয়াউল গালীল, ২/২৪৪-২৪৫)
(৩) ইবনু ‘উমার (রাঃ) বর্ণিত হাদীসঃ তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
لا تقرأ الحائض ولا الجنب شيئا من القران
‘‘ঋতুবতী নারী ও জুনুবী ব্যক্তি কুরআন থেকে কিছুই পড়বে না।’’
হাদীসটি দুর্বলঃ মূসা ইবনু ‘উক্ববাহ থেকে ইবনু ‘উমার সূত্রের এ হাদীসটির তিনটি সানাদ রয়েছে।
প্রথম সনদঃ ইসমাঈল ইবনু ‘আয়্যাশ থেকে মূসা ইবনু ‘উক্ববাহ...। যা বর্ণনা করেছেন তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, খাতীব ‘তারীখে বাগদাদ’ , উক্বাইলী ‘আয-যুআফা’ ইবনু ‘আদী ‘কামিল’, দারাকুতনী, ইবনু আসাকির ‘তারীখে দামিষ্ক’ এবং বায়হাক্বী। ইমাম বায়হাক্বী বলেনঃ ‘‘এতে আপত্তি আছে। ইমাম বুখারী তার সম্পর্কে বলেন, এটি মূসা ইবনু ‘উক্বাবাহ থেকে ইসমাঈল ইবনু আয়্যাশের বর্ণনা...। তিনি হিজাজ ও ইরাকাবসীদের থেকে প্রত্যাখ্যাত (মুনকার) হাদীসগুলো বর্ণনা করেন।’’ আলবানী বলেনঃ এটি তার হিজাজবাসীদের সূত্রে বর্ণনা, সুতরাং এটি দুর্বল। ‘উক্বাইলী বলেনঃ ‘আব্দুল্লাহ ইবনু আহমাদ বলেন, আমার পিতা বলেছেন, ‘‘এটি বাতিল। তিনি ইবনু ‘আইয়্যাশের উপর ইনকার করেছেন। অর্থাৎ তিনি ইবনু ‘আইয়্যাশকে সন্দেহ করতেন।’’ অনুরূপ আবূ হাতিম ‘আল-‘ইলাল গ্রন্থে হাদীসটি উল্লেখ করে বলেনঃ ‘‘এটি ভুল। বরং এটি ইবনু ‘উমারের উক্তি।’’ ইবনু আদী বলেনঃ ‘‘এটি কেবল ইবনু ‘আয়্যাশ বর্ণনা করেছেন।’’ ইমাম তিরমিযীও তার অনুরূপ উল্লেখ করেছেন এবং ইমাম বুখারীর বক্তব্যও তুলে ধরেছেন। তবে এর মুতাবি‘আত বর্ণনাও রয়েছে, যে সম্পর্কে ইমাম বায়হাক্বী ইঙ্গিত দিয়ে বলেছেনঃ ‘‘ইবনু ‘আয়্যাশ ছাড়া অন্য সনদেও এটি বর্ণিত হয়েছে, কিন্তু তাও সহীহ নয়।’’
দ্বিতীয় সনদঃ ‘আব্দুল মালিক ইবনু মাসআলাহ থেকে, তিনি বলেন, আমাদের নিকট হাদীস বর্ণনা করেছেন মুগীরাহ ইবনু ‘আবদুর রাহমান মূসা ইবনু ‘উক্ববাহ থেকে... ‘‘ঋতুবতী নারী’’ কথাটি বাদে। যা বর্ণনা করেছেন দারাকুতনী। ইমাম দারাকুতনী বলেনঃ ‘‘এ ‘আব্দুল মালিক মিসরী। আর এটি মুগীরাহ ইবনু ‘আব্দুল একক হয়ে গেছেন। ইমাম দারাকুতনীর এ ইবরাত দ্বারা আমরা এটিই বুঝেছি। আর ইমাম দারাকুতনীর ‘‘সিক্বাহ’’ বলার দ্বারা শায়খ আহমাদ শাকির জামি আত-তিরমিযীর তা‘লীক্বে বুঝেছেনঃ তিনি ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামাহকে সিক্বাহ বলেছেন। এর ভিত্তিতে তিনি এর সানাদকে সহীহ বলেছেন। সম্ভবতঃ তিনি ‘দিরায়াহ’ গ্রন্থে ৪৫ পৃষ্ঠায় উদ্ধৃত হাফিযের এ কথার দ্বারা ধোকায় পড়েছেনঃ ‘‘এর বাহ্যিকতা সহীহ। এটা আশ্চর্যজনক ব্যাপার! কেননা এ ইবনু মাসলামাহকে হাফিয ‘লিসান’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন তারই মূল আল-মীযান’ গ্রন্থের অনুসরণে, এবং তাতে বলেছেনঃ ‘‘লাইস ও ইবনু লাহী‘আহ সূত্রে। ইবনু ইউনুস বলেন, তিনি মুনকারূল হাদীস। ইবনু হিব্বান বলেন, তিনি মদীনাহবাসীর সূত্রে বহু মুনকার হাদীসাবলী বর্ণনা করেছেন।’’ সুতরাং যার অবস্থা এরূপ তার সনদের বাহ্যিকতা কিভাবে সহীহ হতে পারে? অতএব এতে সন্দেহ নেই যে, হাফিয ঐরূপ বলার সময় তার জীবনী সম্মুখে রাখেননি বা লক্ষ্য করেননি। অতঃপর আমি এমন কিছু পেয়েছি যা তিনি যেদিকে গিয়েছেন তাকে দৃঢ় করবে। হাফিয ‘আত-তালখীস’ গ্রন্থে বলেছেনঃ ‘‘ইবনু সাইয়্যিদিন নাস মুগীরাহর সূত্রকে সহীহ বলেছেন। কিন্তু তিনি তাতে ভুলে পতিত হয়েছেন। কেননা তাতে ‘আব্দুল মালিক ইবনু মাসলামাহ রয়েছে। তিনি দুর্বল। যদি তার থেকে নিরাপদ হতো তাহলে তার সানাদ সহীহ হতো। যদিও ইবনুল জাওযী মুগীরাহ ইবনু ‘আব্দুর রাহমানকে দুর্বল বলেছেন, তাতে কোনো সমস্যা হতো না। আর ইবনু সাইয়্যিদিন নাস অনুসরণ করেছেন ইবনু আসাকিরের উক্তির, যা তিনি ‘আল-আত্বরাফ’ গ্রন্থে বলেছেনঃ ‘এ ‘আব্দুল্লাহ ইবনু মাসলামাহ হচ্ছে কা‘নাবী। কিন্তু বিষয়টি তেমন নয়, বরং তিনি হচ্ছে অন্যজন।’’
আলবানী বলেনঃ তার নাম হলো ‘আব্দুল্লাহ ইবনু মাসলামাহ ইবনু কা‘নাব আল কা‘নাবী আল বাসরী। আর ইবনু আসাকির যে ভুল করেছেন এটি তার অকাট্য দলীল। কারণ তা ঐ ব্যক্তির জীবনীতে উল্লিখিত তার নাম ও নিসবাতের বিপরীত। যেমনটি দেখলেন। আর ‘‘বিষয়টি তেমন নয়, বরং তিনি হচ্ছেন অন্যজন।’’ এটিই হচ্ছে হাফিযের বক্তব্য, ইবনু মাসলামাহ সম্পর্কে হাফিয ‘আল-মীযান’ গ্রন্থে যে আলোচনা করেছেন এটি তার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ও উপযোগী। ইবনু আবূ হাতিম ‘আল জারাহ ওয়াত তা‘দীল’ গ্রন্থে বলেনঃ ‘‘আমি আমার পিতাকে তার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করেছি, তিনি বলেন, আমি তার থেকে লিখেছি। তিনি হাদীস বর্ণনায় মুযতারিব, শক্তিশালী নন। তিনি আমার কাছে কারম সম্পর্কে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সূত্রে জিবরীল (আঃ) থেকে একটি বানোয়াট হাদীস বর্ণনা করেছেন।’’ আবূ হাতিম বলেনঃ ‘‘আমি তার সম্পর্কে আবূ যুর‘আহকে জিজ্ঞাসা করেছি? তিনি বলেছেনঃ তিনি শক্তিশালী নন, তিনি মুনকারুল হাদীস, তিনি মিসরী।’’ এ ইবনু মাসলামাহ দুর্বল হওয়ার ব্যাপারে ইমামগণের বক্তব্য একত্রিত হয়েছে। অর্থাৎ তাদের ঐক্যমতে তিনি দুর্বল। আর যদি মেনে নেই যে, ইমাম দারাকুতনী তার ‘সিক্বাহ’ উক্তির দ্বারা তাকেই উদ্দেশ্য করেছেন। তাহলেও তাকে সিক্বাহ গণ্য না করাই ওয়াজিব হবে, যেমন মুসত্বালাহতে স্বীকৃতঃ নিশ্চয় জারাহ্ প্রাধান্য পাবে তা‘দীলের উপর। বিশেষ করে যখন দোষের কারণ বা দোষণীয় দিক বর্ণিত হবে, যেমন তা এখানে বিদ্যমান। অতএব এতে প্রতিয়মান হলো যে, এ সানাদটি দুর্বল, এর দ্বারা দলীল প্রতিষ্ঠিত হবে না। ইতিপূর্বে ইমাম বায়হাক্বী ও এদিকে ইঙ্গিত করেছেন এ বলেঃ ‘‘... অন্যরাও এটি বর্ণনা করেছেন কিন্তু তাও সহীহ নয়।’’ কেননা তা এ মুতাবি‘আতকেও শামিল করে এবং এর পরেরটিকেও। তা হচ্ছেঃ
তৃতীয় সনদঃ জনৈক ব্যক্তি থেকে, আবূ মিশ‘আর থেকে, তিনি মূসা ইবনু ‘উক্ববাহ থেকে...। ইমাম দারাকুতনী এটি বর্ণনা করেছেন এবং এর উপর চুপ থেকেছেন এর দোষ স্পষ্ট থাকার কারণে। তা হচ্ছে সনদে বিদ্যমান (নাম উল্লেখহীন) অস্পষ্ট ব্যক্তি। আর সনদের আবূ মিশ‘আর দুর্বল। তার নাম হচ্ছে নাজীহ। হাফিয তাকে দুর্বল বলেছেন।
(৪) জাবির (রাঃ) বর্ণিত হাদীসঃ তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
لا تقرأ الحائض ولا النقساء من القران شيئا
‘‘হায়িয ও নিফাস বিশিষ্ট নারী কুরআন থেকে কিছুই পাঠ করবে না।’’
হাদীসটি বর্ণনা করেছেন ইবনু ‘আদী ‘কামিল’ (২৯৫/১), দারাকুতনী (১৯৭ পৃৎ), আবূ নু‘আইম ‘হিলয়্যা’ (৪/২২)- মুহাম্মাদ ইবনু ফাযল সূত্রে তার পিতা থেকে, তিনি ত্বাউস থেকে জাবির সূত্রে মারফূভাবে। আবূ নু‘আইনের বর্ণনায় ‘নিফাফগ্রস্তা’ কথাটির পরিবর্তে ‘জুনুবী ব্যক্তি’ কথাটি রয়েছে। ইবনু ‘আদী বলেনঃ ‘‘এটি কেবল মুহাম্মাদ ইবনু ফাযল সূত্রেই বর্ণিত হয়েছে।’’ আলবানী বলেনঃ মুহাম্মাদ ইবনু ফাযল মিথ্যুক। ‘আত-তাক্বরীব’ গ্রন্থে রয়েছেঃ হাদীস বিশারদগণ তাকে মিথ্যাবাদী বলেছেন। ‘আত-তালখীস’ গ্রন্থে রয়েছেঃ তিনি মাতরূক। হাদীসটি মাওকূফভাবে বর্ণনা হয়েছে। কিন্তু সেটির সনদে ইয়াহইয়াহ ইবনু আবূ উনাইস রয়েছে। তিনিও মিথ্যুক।’’ ইমাম বায়হাক্বী এ মাওকূফ বর্ণনার প্রতি ইঙ্গিত করে বলেনঃ এটি জাবির ইবনু ‘আব্দুল্লাহর বক্তব্য হিসেবেও বর্ণিত হয়েছে জুনুবী, হায়িয ও নিফাসগ্রস্তার ব্যাপারে, কিন্তু এ আসারটি মজবুত নয়।’’ (দেখুন, ইরওয়াউল গালীলঃ হা/ ১৯২)।
ইমাম দারাকুতনী বলেনঃ ইয়াহইয়া ইবনু আবূ উনাইস দুর্বল। শামসুল হাক্ব ‘আযীমাবাদী বলেনঃ ইয়াহইয়াহ ইবনু আবূ উনাইস মিথ্যুক। মাজদী হাসান বলেনঃ এর সানাদ দুর্বল। ইয়াহইয়া ইবনু আবূ উনাইস সম্পর্কে তাক্বরীব গ্রন্থে রয়েছেঃ তিনি দুর্বল। এছাড়া সনদে তার শায়খ আবূয যুবায়র একজন মুদাল্লিস এবং তিনি এটি আন্ আন্ শব্দে বর্ণনা করেছেন। (দেখুন, তা‘লীকু মুগনী ‘আলা সুনানে দারাকুতনী)
(৫) ‘আব্দুল্লাহ ইবনু রাওয়াহাহ্ (রাঃ) বর্ণিত হাদীসঃ তিনি বলেন,
أن رسول الله صلي الله عليه وسلم نهى أن يقرأ أحدنا القران وهو جنب
‘‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে জুনুবী অবস্থায় কুরআন তিলাওয়াত করতে নিষেধ করেছেন।’’ (দারাকুতনী, তিনি বলেন, এর সানাদ ভালো)
কিন্তু এর সানাদ দুর্বলঃ সনদে ইসমাঈল ইবনু ‘আয়্যাশ রয়েছে। তিনি নিজ শহরের লোকদের সূত্রে হাদীস বর্ণনায় সত্যবাদী। কিন্তু অন্যদের সূত্রে হাদীস বর্ণনায় সংমিশ্রণকারী। এ বর্ণনাটি সেগুলোরই একটি। এছাড়া সনদে তার শায়খ যাম‘আহ ইবনু সালিহ দুর্বল, মুসলিমে তার হাদীসটি মাকরূনান মাত্র, দেখুন, আত-তাক্বরীব (২০৪০)। আর সনদে সালামাহ ইবনু হারামকে ইবনু মাঈন ও আবূ যুর‘আহ সিক্বাহ বলেছেন, কিন্তু আবূ দাঊদ বলেছেন দুর্বল। (দেখুন, শায়খ মাজদী হাসানের তাখরীজসহ তা‘লীকু মুগনী সুনান দারাকুতনী)
* আল্লামা শাওকানী (রহঃ) বলেনঃ এ ধরণের হাদীস দ্বারা দলীল গ্রহণ করা সঠিক ও যথাযথ নয়। বিশুদ্ধ দলীল ছাড়া হারাম সাব্যস্ত করা যায় না। তাই সহীহ দলীল ব্যতিরেকে হারাম কথাটির দিকে ঝুঁকা যাবে না।
* আল্লামা শামসুল হাক্ব ‘আযীমাবাদী (রহঃ) বলেন, জুনুবী অবস্থায় কুরআন পাঠ হারাম হওয়া সম্পর্কে যেসব হাদীস বর্ণিত হয়েছে তার সবগুলোই সমালোচিত। তবে কতিপয় বর্ণনার দ্বারা কতিপয় বর্ণনা শক্তি যোগায়, যেহেতু এর কতক সূত্র কঠিন দুর্বল নয়।
* ইবনু তাইমিয়্যাহ (রহঃ) বলেনঃ চার ইমামের মতে, জুনুবী ব্যক্তির জন্য উযু (বা তায়াম্মুম) না করে কুরআন পাঠ ও মসজিদে অবস্থান জায়িয নয়। তবে তারা মতভেদ করেছেন হায়িযগ্রস্তার কিরাত এবং (হালকা) ক্বিরাআতের পরিমাণ নিয়ে। আহলে যাহিরের মতেঃ জুনুবীর কুরআন পড়া জায়িয। ইবনু হাযম (রহঃ)-এর মতও এটাই। ইবনু হাযম বলেন, জুনুবী, হাদাস ওয়ালা এবং হায়িযগ্রস্তার কুরআনপড়া, তিলাওয়াতে সিজদা্ দেয়া ও মাসহাফ স্পর্শ করা জায়িয। কেননা এসব কাজ কল্যাণকর এবং এগুলোর প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে।
*বায়হাক্বীর ‘খিলাফিয়াত’ গ্রন্থে সহীহ সনদে বর্ণিত আছেঃ ‘‘উমার (রাঃ) জুনুবী অবস্থায় কুরআন পড়া অপছন্দ করতেন।’’
* সহীহুল বুখারীতে বর্ণিত আছেঃ ‘‘ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) জুনুবী ব্যক্তির কুরআন পড়াকে দোষণীয় মনে করতেন না।’’
* ইবনুল মুসায়্যিব ও ‘ইকরিমাহ (রহঃ) সূত্রে বর্ণিত আছে যে, তাঁরা উভয়ে জুনুবী ব্যক্তির কুরআন পড়াকে দোষণীয় মনে করতেন না।
* ইমাম বুখারী, ইমাম আত-ত্বাবারী ও ইবনুল মুনযির (রহঃ)-এর মতে, জুনুবী ব্যক্তির কুরআন পড়া জায়িয।
* ইমাম মালিক (রহঃ) বলেনঃ জুনুবী ব্যক্তি পূর্ণ এক আয়াত বা অনুরূপ পাঠ করবে না। তিনি আরো বলেনঃ হায়িযগ্রস্তা কুরআন পড়বে কিন্তু জুনুবী পড়বে না। কেননা হায়িযগ্রস্তা কুরআন না পড়লে কুরআন ভুলে যাবে। কারণ হায়িযের সময় দীর্ঘদিন কিন্তু জুনুবীর (ফারয গোসল জনিত অপবিত্রতা) সময় দীর্ঘ নয়।
* সউদী আরবের প্রথম সাররের অন্যতম বিশ্ববিখ্যাত ‘আলিম শাইখ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন (রহঃ) বলেনঃ ‘‘প্রয়োজন দেখা দিলে ঋতুবতী নারীর কুরআন পাঠ করা জায়িয। যেমন, সে যদি শিক্ষিকা হয় তবে পাঠ দানের জন্য কুরআন পড়তে পারবে। অথবা ছাত্রী কুরআন শিক্ষা লাভ করার জন্য পাঠ করতে পারবে। অথবা নারী তার শিশু সন্তানদের কুরআন শিক্ষা দেয়ার জন্য পাঠ করবে, শিখানোর জন্য তাদের আগে আগে কুরআন পাঠ করবে। মোটকথা, যখনই ঋতুবতী নারী কুরআন পাঠ করার প্রয়োজন অনুভব করবে, তখনই তার জন্য তা পাঠ করা জায়িয, এতে কোনো অসুবিধা নেই। অনুরূপভাবে কুরআন পাঠ না করার কারণে যদি ভুলে যাওয়ার আশংকা করে, তবে স্মরণ করার জন্য তিলাওয়াত করবে কোনো অসুবিধা নেই। বিদ্বানদের মধ্যে কেউ কেউ বলেন, বিনা প্রয়োজনেও তথা সাধারণ তিলাওয়াতের উদ্দেশ্যে ঋতুবতী নারীর জন্য কুরআন পাঠ করা জায়িয। অবশ্য কোনো কোনো বিদ্বান বলেন, প্রয়োজন থাকলেও ঋতুবতী নারীর কুরআন পাঠ করা হারাম। কিন্তু আমার মতে যে কাটি বলা উচিত তা হচ্ছে, ঋতুবতী নারী যদি কুরআন পাঠ দান বা শিক্ষা গ্রহণের প্রয়োজন অনুভব করে বা ভুলে যাওয়ার আশংকা করে, তবে কুরআন পাঠকরতে কোনো অসুবিধা নেই। (দেখুন, ফাতাওয়াহ আরকানুল ইসলাম, ১৭২ নং প্রশ্নের জবাব)
জুনুবী অবস্থায় কুরআন স্পর্শ করা প্রসঙ্গেঃ
হাদীসঃ لا يمس القران الا طاهر ‘‘পবিত্রতা ছাড়া কুরআন স্পর্শ করবে না।’’ দারাকুতনী, ত্বাবারানী কাবীর, হাকিম, বায়হাক্বী, ইবনু আসাকির)।
হাদীসটি ‘আমর ইবনু হাযম, হুকাইম ইবনু হাযযাম, ইবনু উমার এবং উসমান ইবনু আবুল ‘আস সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। শায়খ আলবানী হাদীসটিকে সহীহ আখ্যায়িত করেছেন। তিনি বলেনঃ হাদীসটির কোনো সূত্রই দুর্বলতা মুক্ত নয়। কিন্তু হালকা দুর্বলতা, যেহেতু এর কোনো বর্ণনাকারী মিথ্যাবাদীতায় সন্দেহভাজন নয়। বরং এর দোষ কেবল মুরসাল হওয়া অথবা স্মরণশক্তি মন্দ হওয়া। আর হাদীস শাস্ত্রের মূলনীতি অনুযায়ী এ কথা স্বীকৃত যে, যদি হাদীসের সনদে সন্দেহভাজন বর্ণনাকারী না থাকে তাহলে এর কতিপয় সূত্র কতিপয় সূত্রকে শক্তিশালী করবে। যা সমর্থন করেছেন ইমাম নাববী ‘আত-তাক্বরীব’ গ্রন্থে এবং ইমাম সুয়ুতী তার শারাহ গ্রন্থে। তাই আমার অন্তর এ হাদীসটির বিশুদ্ধতা মেনে নিয়েছে। বিশেষ করে ইমাম আহমাদ এর দ্বারা দলীল গ্রহণ করেছেন। ইমাম ইসহাক ইবনু রাহাওয়াইহি (রহঃ)-ও এটিকে সহীহ বলেছেন। ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বালকে এ হাদীস সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, আমি আশা করি হাদীসটি সহীহ। (বিস্তারিত দেখুন, ইরওয়াউল গালীল, হা/১২২)।
* ইমাম মালিক, আবূ হানিফা, শাফিঈ, আহমাদ (রহঃ) সহ অধিকাংশ ফাক্বীহের মতেঃ হায়িয, নিফাস ও জুনুবী অবস্থায় কুরআন স্পর্শ করা জায়িয নয়। আর এটাই সঠিক কথা।
* ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ বলেনঃ অপবিত্র অবস্থায় জামার আস্তিন বা কোনো বস্ত্র দ্বারা কুরআন মাজীদ বহন করা ও এক স্থান থেকে অন্য স্থানে রাখা যাবে। চাই তা নারী, পুরুষ বা কোনো শিশুর জামা হোক না কেন। কিন্তু কুরআন মাজীদকে সরাসরি হাত দ্বারা স্পর্শ করবে না। (দেখুন, মাজমু‘আহ ফাতাওয়া লি ইবনু তাইমিয়্যাহ)
উযু ছাড়া কুরআন পাঠ ও স্পর্শ করা প্রসঙ্গেঃ
(ক) ‘আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ ‘‘একদা তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্ত্রী মায়মুনাহ (রাঃ)-এর ঘরে রাত কাটান। তিনি ছিলেন ইবনু ‘আব্বাসের খালা। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ অতঃপর আমি বিছানার প্রশস্ত দিকে শুলাম এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর স্ত্রী বিছানার লম্বা দিকে শুলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুমিয়ে পড়লেন। এমনিভাবে রাত যখন অর্ধেক হয়ে গেলো তার কিছু পূর্বে বা পরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জাগলেন। তিনি বসে হাত দিয়ে তাঁর মুখমণ্ডল
থেকে ঘুমের আবেশ মুছতে লাগলেন। অতঃপর সূরাহ আল-‘ইমরানের শেষ দশটি আয়াত তিলাওয়াত করলেন। অতঃপর দাঁড়িয়ে একটি ঝুলন্ত মশক থেকে সুন্দরভাবে উযু করলেন। অতঃপর সালাতে দাঁড়িয়ে গেলেন। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, আমি উঠে তিনি যেরূপ করেছেন তদ্রূপ করলাম। তারপর গিয়ে তার বাম পাশে দাঁড়ালাম। তিনি তাঁর হাত আমার মাথার রাখলেন এবং আমার ডান কান ধরে একটু নাড়া দিয়ে আমাকে ডান পাশে এনে দাঁড় করালেন...।’’ (সহীহুল বুখারী ও সহীহ মুসলিম)
(খ) বিশ্বস্ত তাবেঈ আবূ সাল্লাম বলেন, আমাকে এমন ব্যক্তি হাদীস বর্ণনা করেছেন যিনি দেখেছেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পেশাব করার পর পানি স্পর্শ করার পূর্বের কুরআন থেকে কয়েকটি আয়াত পড়লেন। হুশাইম (রহঃ)-এর আরেক বর্ণনায় রয়েছেঃ কুরআন থেকে একটি আয়াত পড়লেন। (আহমাদ, হা/১৭৯৯২, আহমাদ মুহাম্মাদ শাকির এর সানাদকে সহীহ বলেছেন। আল্লামা হায়সামী বলেন, এর সকল বর্ণনাকারী নির্ভরযোগ্য)
(গ) ইবরাহীম সূত্রে বর্ণিতঃ ইবনু মাস‘উদ (রাঃ) এক ব্যক্তিকে কুরআন পড়াচ্ছিলেন। অতঃপর লোকটি ফুরাতের তীরে গিয়ে পেশাব করলো এবং কুরআন পাঠ থেকে বিরত থাকলো। ইবনু মাসঊদ বললেন, কী ব্যাপার! লোকটি বললো, আমি অপবিত্র হয়েছি। ইবনু মাসঊদ বললেন, তুমি পাঠ করো। ফলে লোকটি পড়তে লাগলো আর ইবনু মাসঊদ তার লোকমা দিতে লাগলেন (পড়া ঠিক করে দিলেন)। (ত্বাবারানী কাবীর, আল্লামা হায়সামী বলেনঃ এর সনদের ব্যক্তিবর্গ নির্ভরযোগ্য। দেখুন, হায়সামীর মাজমাউযু যাওয়ায়িদ)।
(ঘ) ইবরাহীম (রহঃ) বর্ণনা করেনঃ বিনা উযুতে গোসলখানায় (কুরআন) পড়া এবং পত্র লেখায় কোনো দোষ নেই। (সহীহুল বুখারীর তরজমানুল বার)
* আল্লামা শাসসুল হাক্ব ‘আযীমাবাদী (রহঃ) বলেনঃ উযু ছাড়া কুরআন পড়া জায়িয। এ ব্যাপারে ঐক্যমত্য আছে। কাউকে এ বিষয়ে মতভেদ করতে দেখিনি।
* ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রহঃ) বলেনঃ কেউ তাহারাতের অবস্থায় না থাকলেও স্পর্শ না করে মাসহাফ ও লাওহ থেকে পাঠ করা জায়িয। অনুরূপভাবে উযু ছাড়া লাওহ থেকে লিখাও জায়িয।
* ইমাম মালিক, আবূ হানিফা, শাফিঈ এবং অধিকাংশ ফাক্বীহের মতেঃ কুরআন স্পর্শ করার জন্য উভয় প্রকার হাদাস থেকে পবিত্র হওয়া শর্ত। (কেননা এক দৃষ্টিকোণ থেকৈ ছোট হাদাসও তাহারাত নয়। যেমন হাদীস এসেছে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমি মোজাদ্বয় পবিত্র অবস্থায় (অর্থাৎ উযুর অবস্থায়) পরিধান করেছি)। কিন্তু ‘আব্বাস (রাঃ), ইমাম শা‘বী, ইমাম যাহ্হাক, যায়দ ইবনু ‘আলী ও দাঊদ এবং আসহাবে যাওয়াহিরের মতেঃ উযু ছাড়া কুরআন স্পর্শ করা জায়িয। (বিদায়াতুল মুজতাহিদ থেকে সংক্ষেপিত, নায়লুল আওত্বার)
* অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য ইসলামী পত্রিকা ‘মাসিক আত-তাহরীক’ এর ‘দারুল ইফতা’ এ বিষয়ে ফাতাওয়াহ দিতে গিয়ে বলেনঃ অপবিত্র অবস্থায় কুরআন স্পর্শবিহীন তিলাওয়াত করা ও ওটা দু‘আ হিসাবে পড়া যায়। অনুরূপ বিনা উযুতে কুরআন-হাদীস স্পর্শ করে পড়া যায়। ‘আয়িশাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বাবস্থায় আল্লাহর যিকির করতেন- (সহীহ মুসলিম, সুবুলুস সালাম, ১ম খন্ড, ২১ পৃঃ, হা/ ৭২, ১২)। উক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় আল্লামা সান‘আনী বলেনঃ ‘সর্বাবস্থায় যিকির করার মধ্যে অপবিত্র অবস্থায় কুরআন তিলাওয়াতও অন্তর্ভুক্ত। তিনি আরো বলেনঃ আল্লাহর বাণী لَا يَمَسُّهُ إِلَّا الْمُطَهَّرُونَ অর্থাৎ ‘‘পবিত্রগণ ব্যতীত কেউ ওটা স্পর্শ করে না’’ (সূরাহ ওয়াক্বিয়াহঃ ৭৯) এর দ্বারা বিনা উযু উদ্দেশ্য নয়। বরং বিনা উযুতে কুরআন পড়া জায়িয- (ঐ)। ইমাম আবূহানিফা ও ইমাম শাফিঈ (রহঃ) বলেনঃ অপবিত্র অবস্থায় দু‘আ হিসাবে শিক্ষাদানের উদ্দেশ্যে, যিকির-আযকার হিসাবে, কুরআন তিলাওয়াত করা জায়িয। যেমন সফরের দু‘আয় কুরআনের আয়াত পাঠ করা- (আল-ফিকহুল ইসলামী ১/৩৮৪ পৃঃ)। (দেখুন মাসিক আত-তাহরীক ১১তম বর্ষ ৮ম সংখ্যা, মে ২০০৮, প্রশ্ন নং ৩০/৩১০ঃ উযু ছাড়া কুরআন স্পর্শ করা ও পড়া যাবে কি?)
সারকথাঃ
(১) উযু সহকারে কুরআন পড়া, কুরআন শিক্ষা দেয়া ও স্পর্শ করা অতি উত্তম। এতে কুরআন পাঠ ও শিক্ষাদানের সওয়াবের সাথে উযুর সাওয়াবও যুক্ত হবে।
(২) উযু ছাড়া কুরআন পড়া ও শিক্ষা দেয়া জায়িয। তবে স্পর্শ করার বিষয়ে মতভেদ আছে। কারো মতে স্পর্শ করা যাবে না। কারো মতে, উযু ছাড়া কুরআন স্পর্শ করলে কোনো গুনাহ হবে না।
(৩) জুনুবী (ফারয গোসলজনিত অপবিত্র) অবস্থায় কুরআন পাঠ অপছন্দনীয়। কিন্তু অপছন্দনীয় হওয়াটা জায়িয হওয়াকে নাকচ করে না। তবে মুসলিমদের যেহেতু এক ওয়াক্ত সালাতের পর আরেক ওয়াক্ত সালাতের পূর্বেই পবিত্রতা অর্জন করে নিতে হয়, সেজন্য প্রয়োজন ছাড়া এ অবস্থায় কুরআন পাঠ না করা উত্তম।
(৪) হায়িয ও নিফাস অবস্থায় কুরআন পড়া ও শিক্ষা দেয়া জায়িয নয়। কিন্তু প্রয়োজন দেখা দিলে তা অপছন্দনীয়তার সাথে জায়িয। যেমনটি ইমাম মালিক, শায়খসালিহ আল উসাইমিন ও অন্যরা বলেছেন।
(৪) বড় অপবিত্রতাতা (হায়িয, নিফাস ও ফারয গোসলজনিত অপবিত্রতা) অবস্থায় কুরআন স্পর্শ করা জায়িয নয়। অধিকাংশ ‘আলিম এ মতের পক্ষে। আর এটাই সঠিক। তবে প্রয়োজন দেখা দিলে সরাসরি স্পর্শ না করে কোনো পবিত্র বস্তুর সাহায্য ধরা যেতে পারে। যেমন, গিলাফের উপর দিয়ে ধরা, বহন করা ইত্যাদি, যেমনটি সহীহুল বুখারীতে এসেছেঃ ‘‘আবূ ওয়ায়িল (রহঃ) তার ঋতুবতী দাসীকে আবূ রাযীন (রাঃ)-এর নিকট পাঠাতেন, আর দাসী জুযদানে পেঁচিয়ে কুরআন মাজীদ নিয়ে আসতো।’’ এ হিসেবে ঋতুবতী নারী প্রয়োজন হলে কুরআন পাঠ বা শিক্ষাদানের সময় কুরআন সরাসরি স্পর্শ না করে হাত মোজা পরিধান করে বা কোনো পবিত্র বস্তুর সাহায্যে স্পর্শ করবে।
(৫) হায়িযগ্রস্তা স্ত্রীর কোলে রেখে কুরআন তিলাওয়াত করা জায়িয। ‘আয়িশাহ (রাঃ) বলেন,নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কোলে হেলান দিয়ে কুরআন তিলাওয়াত করতেন। আর আমি তখন হায়িযের অবস্থায় ছিলাম। (সহীহুল বুখারী ও সহীহ মুসলিম)।
(৬) সর্বোপরি কুরআন মাজীদ মহান আল্লাহর কালাম। এর পবিত্রতা ও মর্যাদা অনেক উর্ধ্বে। তাই এমন কিছু করা উচিত হবে না, যাতে এর মর্যাদা ক্ষুন্ন হয়। পক্ষান্তরে সহীহ দলীল ছাড়া এমন কিছুকে অহেতুক প্রশ্রয় ও গুরুত্ব দেয়াও উচিত হবে না, যা কুরআন শিক্ষার পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়।
باب فِي الْجُنُبِ يَقْرَأُ الْقُرْآنَ
حَدَّثَنَا حَفْصُ بْنُ عُمَرَ، حَدَّثَنَا شُعْبَةُ، عَنْ عَمْرِو بْنِ مُرَّةَ، عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ سَلِمَةَ، قَالَ دَخَلْتُ عَلَى عَلِيٍّ أَنَا وَرَجُلَانِ رَجُلٌ مِنَّا وَرَجُلٌ مِنْ بَنِي أَسَدٍ - أَحْسِبُ فَبَعَثَهُمَا عَلِيٌّ وَجْهًا وَقَالَ إِنَّكُمَا عِلْجَانِ فَعَالِجَا عَنْ دِينِكُمَا . ثُمَّ قَامَ فَدَخَلَ الْمَخْرَجَ ثُمَّ خَرَجَ فَدَعَا بِمَاءٍ فَأَخَذَ مِنْهُ حَفْنَةً فَتَمَسَّحَ بِهَا ثُمَّ جَعَلَ يَقْرَأُ الْقُرْآنَ فَأَنْكَرُوا ذَلِكَ فَقَالَ إِنَّ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم كَانَ يَخْرُجُ مِنَ الْخَلَاءِ فَيُقْرِئُنَا الْقُرْآنَ وَيَأْكُلُ مَعَنَا اللَّحْمَ وَلَمْ يَكُنْ يَحْجُبُهُ - أَوْ قَالَ يَحْجُزُهُ - عَنِ الْقُرْآنِ شَىْءٌ لَيْسَ الْجَنَابَةَ .
- ضعيف : المشكاة ٤٦٠
Narrated Ali ibn AbuTalib:
Abdullah ibn Salamah said: I, accompanied by other two persons, one from us and the other from Banu Asad, called upon Ali. He sent them to a certain territory (on some mission) saying: You are sturdy and vigorous people; hence display your power for religion. He then stood and entered the toilet. He then came out and called for water and took a handful of it. Then he wiped (his hands) with it and began to recite the Qur'an. They were surprised at this (action).
Thereupon he said: The Messenger of Allah (ﷺ) came out from the privy and taught us the Qur'an and took meat with us. Nothing prevented him; or the narrator said: Nothing prevented him from (reciting) the Qur'an except sexual defilement.
পরিচ্ছেদঃ ১৭১: অপবিত্র ব্যক্তির কুরআন তিলাওয়াত থেকে বিরত থাকা
২৬৫. ’আলী ইবনু হুজুর (রহ.) ..... ’আবদুল্লাহ ইবনু সালামাহ্ (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি এবং অন্য দু’ব্যক্তি ’আলী (রাঃ)-এর কাছে গেলাম। তখন তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) শৌচাগার হতে বের হয়ে কুরআন পড়তেন এবং আমাদের সঙ্গে মাংস খেতেন। অপবিত্র অবস্থা ছাড়া তাঁকে কোন কিছুই কুরআন পাঠ হতে বিরত রাখত না।
بَاب حَجْبِ الْجُنُبِ مِنْ قِرَاءَةِ الْقُرْآنِ
أَخْبَرَنَا عَلِيُّ بْنُ حُجْرٍ، قال: أَنْبَأَنَا إِسْمَاعِيلُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ، عَنْ شُعْبَةَ، عَنْ عَمْرِو بْنِ مُرَّةَ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ سَلَمَةَ، قال: أَتَيْتُ عَلِيًّا أَنَا وَرَجُلَانِ فَقَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَخْرُجُ مِنَ الْخَلَاءِ فَيَقْرَأُ الْقُرْآنَ وَيَأْكُلُ مَعَنَا اللَّحْمَ وَلَمْ يَكُنْ يَحْجُبُهُ عَنِ الْقُرْآنِ شَيْءٌ لَيْسَ الْجَنَابَةَ .
تخریج دارالدعوہ: سنن ابی داود/الطھارة ۹۱ (۲۲۹) مطولاً، سنن الترمذی/الطھارة ۱۱۱ (۱۴۶)، بلفظ ــ’’یقرء نا القرآن‘‘ مختصرًا، سنن ابن ماجہ/فیہ ۱۰۵ (۵۹۴)، (تحفة الأشراف: ۱۰۱۸۶)، مسند احمد ۱/۸۳، ۸۴، ۱۰۷، ۱۲۴، ۱۳۴ (ضعیف) (اس کے راوی ’’عبد اللہ بن سلمہ ‘‘ مختلط ہو گئے تھے، اور عمرو کی ان سے روایت اختلاط کے بعد کی ہے)
صحيح وضعيف سنن النسائي الألباني: حديث نمبر 266 - ضعيف
171. The Junub Person Being Prevented From Reciting The Qur'an
It was narrated that 'Abdullah bin Salimah said: I came to 'Ali with two other men and he said: 'The Messenger of Allah (ﷺ) used to come out of the toilet and recite Qur'an, and he would eat meat with us and nothing would prevent him from (reciting) Qur'an except Janabah.