লগইন করুন
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - মু'জিযার বর্ণনা
৫৯১৮-[৫১] আবূ মূসা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার [রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর চাচা] আবূ ত্বালিব নবী (সা.) ও কুরায়শ নেতৃবর্গের মধ্যে সিরিয়ার উদ্দেশে ভ্রমণে বের হলেন। যখন তারা (বুহায়রাহ্) পাদ্রির কাছে পৌছে সেখানে যাত্রাবিরতি করলেন, তখন নিজেদের বাহন হতে হাওদা ইত্যাদি সামানপত্র খুললেন। এমন সময় পাদ্রি তাদের কাছে আসলো। কুরায়শদের কাফেলা ইতঃপূর্বে বহুবার এ পথে আসা যাওয়া করেছে, অথচ পাদ্রি কখনো তাদের কাছে আসেনি। বর্ণনাকারী বলেন, কাফেলার লোকেরা নিজেদের হাওদা ইত্যাদি খুলছে, এমন সময় পাদ্রি তাদের মাঝে প্রবেশ করল। অবশেষে সে রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর কাছে এসে তার হাত ধরে বলল, ইনিই তো সমগ্র জগতের নেতা, ইনিই রাব্বূল আলামীনের রাসূল, আল্লাহ তা’আলা তাকে বিশ্ববাসীর জন্য রহমতস্বরূপ প্রেরণ করবেন। তখন কুরায়শ নেতাদের কেউ কেউ প্রশ্ন করল, তুমি তা কিরূপে জান? পাদ্রি বলল, যখন তোমরা পাহাড়ের পশ্চাৎ হতে বের হয়ে সম্মুখে এসেছ, তখন হতে এমন কোন বৃক্ষ ও পাথর বাকি ছিল না যা তাঁকে সিজদাহ্ করেনি। বস্তুত এ দুই জিনিস কেবলমাত্র নবীকেই সিজদাহ্ করে। আর আমি তাকে মোহরে নুবুওয়্যাত দ্বারা চিনতে পেরেছি, যা তার কাঁধের গোড়ায় নিম্নদিকে আপেলের মতো রয়েছে। অতঃপর পাদ্রি ফিরে আসলো এবং কাফেলার লোকেদের জন্য খাবার তৈরি করল। যখন সে খাবার নিয়ে তাদের কাছে আসলো, তখন দেখল যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) কাফেলার লোকেদের উটগুলো নিয়ে এমন অবস্থায় আসলেন, দেখা গেল এক খণ্ড মেঘ তার উপর ছায়া দান করে রয়েছে। আর যখন তিনি কাফেলার লোকেদের কাছে আসলেন, তখন দেখলেন, লোকেরা পূর্ব হতেই ছায়াবিশিষ্ট স্থানগুলো দখল করে ফেলেছে। কিন্তু যখন তিনি বসলেন, তখন বৃক্ষের ছায়া তাঁর দিকে ঝুঁকে পড়ল। (এ অবস্থা দেখে) পাদ্রি কাফেলার লোকেদেরকে বলল, তোমরা তাকিয়ে দেখ গাছের ছায়া তাঁর দিকে ঝুঁকে পড়েছে। (এ সমস্ত অলৌকিক ঘটনা দেখে) পাদ্রি বলে উঠল, আমি তোমাদেরকে আল্লাহর শপথ দিয়ে প্রশ্ন করছি, বল! তোমাদের মধ্যে তার অভিভাবক কে? লোকেরা বলল, আবূ ত্বালিব। অতঃপর পাদ্রি (তাঁকে ফেরত পাঠানোর জন্য) অনেকক্ষণ ধরে আবূ ত্বালিব-কে আল্লাহর শপথ দিয়ে অনুরোধ করতে থাকে। অবশেষে আবূ ত্বালিব তাকে ফেরত পাঠিয়ে দিলেন। আর তার সফরসঙ্গী হিসেবে আবূ বকর (রাঃ) ও বিলাল (রাঃ)-কে সাথে পাঠিয়ে দিলেন। এদিকে পথে খাওয়ার জন্য পাদ্রী তার সাথে কিছু কেক ও যায়তূনের তেল দিল। (তিরমিযী)
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ (بَاب فِي المعجزا)
عَنْ أَبِي مُوسَى قَالَ: خَرَجَ أَبُو طَالِبٍ إِلَى الشَّام وَخرج مَعَه النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي أَشْيَاخٍ مِنْ قُرَيْشٍ فَلَمَّا أَشْرَفُوا عَلَى الرَّاهِبِ هَبَطُوا فَحَلُّوا رِحَالَهُمْ فَخَرَجَ إِلَيْهِمُ الرَّاهِبُ وَكَانُوا قَبْلَ ذَلِكَ يَمُرُّونَ بِهِ فَلَا يَخْرُجُ إِلَيْهِمْ قَالَ فَهُمْ يَحُلُّونَ رِحَالَهُمْ فَجَعَلَ يَتَخَلَّلُهُمُ الرَّاهِبُ حَتَّى جَاءَ فَأَخَذَ بِيَدِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ هَذَا سَيِّدُ الْعَالَمِينَ هَذَا رسولُ ربِّ الْعَالِمِينَ يَبْعَثُهُ اللَّهُ رَحْمَةً لِلْعَالِمِينَ فَقَالَ لَهُ أَشْيَاخٌ مِنْ قُرَيْشٍ مَا عِلْمُكَ فَقَالَ إِنَّكُمْ حِينَ أَشْرَفْتُمْ مِنَ الْعَقَبَةِ لَمْ يَبْقَ شَجَرٌ وَلَا حَجَرٌ إِلَّا خَرَّ سَاجِدًا وَلَا يَسْجُدَانِ إِلَّا لِنَبِيٍّ وَإِنِّي أَعْرِفُهُ بِخَاتَمِ النُّبُوَّةِ أَسْفَلَ مِنْ غُضْرُوفِ كَتِفِهِ مِثْلَ التُّفَّاحَةِ ثُمَّ رَجَعَ فَصَنَعَ لَهُمْ طَعَامًا فَلَمَّا أَتَاهُمْ بِهِ وَكَانَ هُوَ فِي رِعْيَةِ الْإِبِلِ فَقَالَ أَرْسِلُوا إِلَيْهِ فَأَقْبَلَ وَعَلَيْهِ غَمَامَةٌ تُظِلُّهُ فَلَمَّا دَنَا مِنَ الْقَوْم وجدهم قد سَبَقُوهُ إِلَى فَيْء الشَّجَرَة فَلَمَّا جَلَسَ مَالَ فَيْءُ الشَّجَرَةِ عَلَيْهِ فَقَالَ انْظُرُوا إِلَى فَيْءِ الشَّجَرَةِ مَالَ عَلَيْهِ فَقَالَ أنْشدكُمْ بِاللَّه أَيُّكُمْ وَلِيُّهُ قَالُوا أَبُو طَالِبٍ فَلَمْ يَزَلْ يُنَاشِدُهُ حَتَّى رَدَّهُ أَبُو طَالِبٍ وَبَعَثَ مَعَهُ أَبُو بَكْرٍ بِلَالًا وَزَوَّدَهُ الرَّاهِبُ مِنَ الْكَعْكِ وَالزَّيْت. (علق الشَّيْخ أَن ذكر بِلَال فِي الحَدِيث خطأ إِذْ لم يكن خلق بعد) اسنادہ ضعیف ، رواہ الترمذی (3620 وقال : غریب) * یونس بن ابی اسحاق مدلس و عنعن
ব্যাখ্যা: (عَلَى الرَّاهِبِ) তাঁর নাম ছিল বুহায়রাহ্। সে ছিল একজন নাসার বা খ্রিষ্টানদের দুনিয়াবিমুখ ব্যক্তি- এ কথা বলেছেন ব্যাখ্যাকার। আর মুহির (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, তিনি খ্রিষ্টান ধর্মের ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি জ্ঞানী ব্যক্তি ছিলেন। অনুরূপভাবে ইমাম জাযারী (রহিমাহুল্লাহ)-সহ অনেক ‘আলিম বলেছেন।
আলোচ্য হাদীসটিতে নবী (সা.) যে একজন সত্য নবী তার বেশ কিছু নিদর্শনের কথা বলা হয়েছে। খ্রিষ্টানদের ধর্মীয় পণ্ডিত সে বিষয়গুলো আলোচ্য হাদীসটিতে ব্যাখ্যা করেছেন। কুরায়শ বংশের লোক নবী (সা.) ছোট থাকাবস্থায়ই খবর পেয়েছিলেন যে, মুহাম্মাদ একদিন নবী হবে। কিন্তু জিদ ও হঠকারিতার জন্য তাকে অনেকেই মানেনি। তারাও এ হাদীসের ভাষ্য অনুযায়ী নবী (সা.) -এর মু'জিযাহ্ স্বচক্ষে দেখেছিল। যেমনটি ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে- যখন নবী (সা.) বসলেন তখন গাছগুলো ঝুঁকে তাকে ছায়া দেয়ার জন্য ব্যস্ত ছিল। এটা মেঘমালার ছায়ার চেয়ে বেশি ছায়া দেয়ার জন্য তাড়া করছিল। অথবা মেঘমালা সরে যাওয়ার পরে গাছপালা ঝুঁকে পড়ে একটি অলৌকিক ঘটনার জন্ম দেয়। তীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, তাকে ছায়া দেয় অর্থাৎ তার ওপর ঝুকে পড়ে তাকে ছায়া প্রদান করেছিল। (সম্পাদীয়)
তাই পাদ্রী তাদেরকে বলেছিল, (انْظُرُوا إِلَى فَيْءِ الشَّجَرَةِ مَالَ عَلَيْهِ) অর্থাৎ যদি তোমরা আসমানের ছায়া লক্ষ্য করে থাক তবে তোমরা জমিনের ছায়া লক্ষ্য কর। তবে আল্লাহ তা'আলা তাদের অন্তরের চক্ষুকে অন্ধ করে দিয়েছেন। যেমন তিনি বলেন, (وَ تَرٰىهُمۡ یَنۡظُرُوۡنَ اِلَیۡکَ وَ هُمۡ لَا یُبۡصِرُوۡنَ) “আর তুমি তাদেরকে দেখবে তারা তোমার দিকে তাকিয়ে আছে অথচ তারা তোমাকে দেখতে পাচ্ছে না।” (সূরা আল আ'রাফ ৭ : ১৯৮)। আর এ অর্থ প্রকাশ পেয়েছে মহান আল্লাহর বাণীতে – (فَاِنَّهَا لَا تَعۡمَی الۡاَبۡصَارُ وَ لٰکِنۡ تَعۡمَی الۡقُلُوۡبُ الَّتِیۡ فِی الصُّدُوۡرِ) “তাদের চক্ষুই কেবল অন্ধ নয়; তবে অন্ধ হলো তাদের হৃদয় যা তাদের বুকের মধ্যে থাকে”- (সূরাহ আল হাজ্জ ২২ : ৪৬)। (মিরকাতুল মাফাতীহ)।