৪৫৯৬

পরিচ্ছেদঃ ২. প্রথম অনুচ্ছেদ - জ্যোতিষীর গণনা

৪৫৯৬-[৫] যায়দ ইবনু খালিদ আল জুহানী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হুদায়বিয়ায় রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাত্রের বৃষ্টির পর ভোরে আমাদের ফজরের সালাত আদায় করালেন। সালাত শেষ করে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) লোকেদের (মুক্তাদীদের) দিকে ফিরে বললেনঃ তোমরা কি জানো, তোমাদের রব কি বলেছেন? তারা বলল : আল্লাহ ও তাঁর রসূলই অধিক জানেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, রব্ বলেছেনঃ আমার বান্দাগণ আজ এমন অবস্থায় ভোর করেছে যে, তাদের মধ্যে কেউ কেউ আমার প্রতি ঈমান পোষণকারী এবং কেউ কেউ আমাকে অস্বীকারকারী। যে বলেছে, আল্লাহর রহমত ও করুণায় আমরা বৃষ্টি লাভ করেছি, সে আমার প্রতি ঈমান পোষণকারী এবং তারকা বা নক্ষত্রে অস্বীকারকারী। আর যে বলেছে, অমুক অমুক নক্ষত্রের প্রভাবে আমরা বৃষ্টি লাভ করেছি, সে আমার সাথে কুফরী করেছে এবং নক্ষত্রের প্রতি বিশ্বাস করেছে। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ الْكِهَانَةِ

وَعَنْ زَيْدِ بْنِ خَالِدٍ الْجُهَنِيِّ قَالَ: صَلَّى لَنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَلَاةَ الصُّبْحِ بِالْحُدَيْبِيَةِ عَلَى أَثَرِ سَمَاءٍ كَانَتْ مِنَ اللَّيْلِ فَلَمَّا انْصَرَفَ أَقْبَلَ عَلَى النَّاسِ فَقَالَ: «هَلْ تَدْرُونَ مَاذَا قَالَ ربُّكم؟» قَالُوا: الله وَرَسُوله أعلم قَالَ: أَصْبَحَ مِنْ عِبَادِي مُؤْمِنٌ بِي وَكَافِرٌ فَأَمَّا مَنْ قَالَ: مُطِرْنَا بِفَضْلِ اللَّهِ وَرَحْمَتِهِ فَذَلِكَ مُؤْمِنٌ بِي كَافِرٌ بِالْكَوْكَبِ وَأَمَّا مَنْ قَالَ: مُطِرْنَا بِنَوْءِ كَذَا وَكَذَا فَذَلِكَ كَافِرٌ بِي وَمُؤمن بالكوكب

ব্যাখ্যাঃ (عَلٰى أَثَرِ سَمَاءٍ) অর্থাৎ বৃষ্টির পরে।

ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ এখানে আসমান অর্থ বৃষ্টি।

ইমাম খত্ত্বাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ ‘আরবরা বৃষ্টিকে سَمَاءٍ বা আসমান বলেন, কেননা বৃষ্টি আসমান থেকেই বর্ষিত হয়।

(مُطِرْنَا بِنَوْءِ كَذَا وَكَذَا) অর্থাৎ একটি তারকা ডুবে যাওয়া এবং অন্যটি উদিত হওয়ার কারণে।

ইবনুল ‘আসীর (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ একে نَوْءِ নামে নামকরণ করা হয়েছে, কেননা পশ্চিমে একটি ডুবে যায় আর পূর্বে একটি উদিত হয়।

আবূ ‘উবায়দ (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ আমি এ জায়গায় ব্যতীত نَوْءِ-এর ব্যাপারে ডুবে যাওয়ার কথা শুনিনি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম نَوْءِ-এর ব্যাপারে কঠোর হয়েছেন, কারণ ‘আরবরা বৃষ্টি হওয়া না হওয়াকে তার সাথে সম্পৃক্ত করত। আর যারা বৃষ্টিকে আল্লাহর সাথে সম্পৃক্ত করত তারা বলত যে, (مُطِرْنَا بِنَوْءِ كَذَا) অর্থাৎ অমুক সময়ে আমরা বৃষ্টি পাব। আর এর লক্ষণ হলো এই। এটা জায়িয রয়েছে। অর্থাৎ মহান আল্লাহ বিধান জারী করেছেন যে, এই এই সময়ে বৃষ্টি হবে।

ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ কুফরীর ব্যাপারে তারা মতানৈক্য করেছেন, যারা বলে (مُطِرْنَا بِنَوْءِ كَذَا) ‘‘অমুক অমুক নক্ষত্রের প্রভাবে আমরা বৃষ্টি পেয়েছি’’। তারা দু’ভাবে বিভক্ত হয়েছেন। তাদের একদল বলেন, এটি মহান আল্লাহর সাথে কুফরী। এটি ঈমানকে হরণ করে নেয়। এর দু’টি দিক আছে, প্রথমটি হলো যে মনে করে নক্ষত্র বৃষ্টি দিতে পারে। তার কুফরীর ব্যাপারে কোন সন্দেই নেই। এটি ইমাম শাফি‘ঈ (রহিমাহুল্লাহ) ও জামহূরদের মত।

আর দ্বিতীয় হলো আর যে এ বিশ্বাস রাখে যে, এটি মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে তার অনুগ্রহে আসে। আর نَوْءِ হলো তার একটা চিহ্ন। আর বৃষ্টি নামার একটি ধারণা মাত্র। তবে সে কুফরীর মধ্যে পড়বে না। যেন সে এরূপ কথা বলল যে, مُطِرْنَا فِي وَقْتِ كَذَا আমরা অমুক সময়ে বৃষ্টিপ্রাপ্ত হয়েছি। বাহ্যিকভাবে এটিও মাকরূহ। এটি একটি অস্পষ্ট বাক্য যা ঈমান ও কুফ্রের মাঝামাঝি। এরূপ ব্যক্তির সম্পর্কে খারাপ ধারণা জন্মে। আর এটি হলো জাহিলিয়্যাতের চিহ্ন। আর তাদের দ্বিতীয় দলের কথা হলো, মহান আল্লাহর নি‘আমাত অস্বীকার করা হয়। এর কারণ হলো নক্ষত্রের দিকে বৃষ্টিকে সম্পর্কিত করা। অন্য একটি বর্ণনা এ ব্যাখ্যাটিকে শক্তিশালী করে, তা হলো أَصْبَحَ مِنَ النَّاسِ شَاكِرًا وَكَافِرًا কতিপয় মানুষ সকাল করে শুকরিয়া বা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে করতে ও কুফরী করতে করতে।

অন্য বর্ণনায় এসেছে- مَا أَنْعَمْتُ عَلٰى عِبَادِي مِنْ نِعْمَةٍ إِلَّا أَصْبَحَ فَرِيقٌ بِهَا كَافِرِينَ আর আমি আমার বান্দাদের ওপর যে নি‘আমাত দিয়েছি তা পেয়ে একদল সকাল করে কাফির অবস্থায়।

(‘আওনুল মা‘বূদ ৭ম খন্ড, হাঃ ৩৯০২; মিরক্বাতুল মাফাতীহ)