৪৫৫২

পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

৪৫৫২-[৩৯] ’আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ)-এর স্ত্রী যায়নাব (রাঃ) হতে বর্ণিত। (আমার স্বামী) ’আবদুল্লাহ আমার গলায় একখানা তাগা দেখে জিজ্ঞেস করলেন : এটা কী? বললামঃ এটা একটি তাগা, আমার জন্য তাতে মন্ত্র পড়া হয়েছে। যায়নাব বলেনঃ এটা শুনে তিনি তাগাটি টেনে ছিঁড়ে ফেললেন। অতঃপর বললেনঃ তোমরা ’আবদুল্লাহর পরিবারবর্গ! তোমরা শির্কের মুখাপেক্ষী নও, (এতে কলূষিত হবে কেন?) আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ ঝাড়ফুঁক, তা’বীয ও জাদুটোনা শির্কী কাজ। (যায়নাব বলেনঃ) তখন আমি বললামঃ আপনি কেন এরূপ কথা বলছেন? একবার আমার চোখে ব্যথা হচ্ছিল, যেন চোখটি বের হয়ে পড়বে। তখন আমি অমুক ইয়াহূদীর কাছে যাওয়া-আসা করতাম। যখন সে ইয়াহূদী তাতে মন্ত্র পড়ল, তখনই তার ব্যথা চলে গেল।

এ কথা শুনে ’আবদুল্লাহ বললেনঃ এটা তো শয়তানেরই কাজ। সে নিজের হাতের দ্বারা তাতে আঘাত করছিল, আর যখন মন্ত্র পড়া হয়, তখন সে বিরত হয়ে যায়। বস্তুতঃ (এ জাতীয় রোগ) তোমার পক্ষ এরূপ বলাই যথেষ্ট ছিল, যেভাবে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ’’আযহিবিল বা’সা রব্বান্ না-স, ওয়াশফি আনতাশ্ শা-ফী লা- শাফা-আ ইল্লা- শিফা-উকা শিফা-উন লা- ইউগা-দিরু সাকামা-’’ (হে মানুষের রব! আপনি বিপদ দূর করে দিন এবং রোগ হতে নিরাময় দান করুন। আপনিই নিরাময়কারী। আপনার নিরাময় প্রদান ব্যতীত আরোগ্য লাভ করা সম্ভব নয়। এমন নিরাময় দান করুন, যেন কোন রোগই অবশিষ্ট না থাকে।)। (আবূ দাঊদ)[1]

الْفَصْلُ الثَّانِي

وَعَنْ زَيْنَبَ امْرَأَةِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ أَنَّ عَبْدَ اللَّهِ رَأَى فِي عُنُقِي خَيْطًا فَقَالَ: مَا هَذَا؟ فَقُلْتُ: خَيْطٌ رُقِيَ لِي فِيهِ قَالَتْ: فَأَخَذَهُ فَقَطَعَهُ ثُمَّ قَالَ: أَنْتُمْ آلَ عَبْدَ اللَّهِ لَأَغْنِيَاءٌ عَنِ الشِّرْكِ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُول: «إِنَّ الرُّقَى وَالتَّمَائِمَ وَالتِّوَلَةَ شِرْكٌ» فَقُلْتُ: لِمَ تَقُولُ هَكَذَا؟ لَقَدْ كَانَتْ عَيْنِي تُقْذَفُ وَكُنْتُ أَخْتَلِفُ إِلَى فُلَانٍ الْيَهُودِيِّ فَإِذَا رَقَاهَا سَكَنَتْ فَقَالَ عَبْدُ اللَّهِ: إِنَّمَا ذَلِكِ عَمَلُ الشَّيْطَانِ كَانَ يَنْخَسُهَا بِيَدِهِ فَإِذَا رُقِيَ كُفَّ عَنْهَا إِنَّمَا كَانَ يَكْفِيكِ أَنْ تَقُولِي كَمَا كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «أَذْهِبِ الْبَاسَ رَبَّ النَّاسِ وَاشْفِ أَنْتَ الشَّافِي لَا شِفَاءَ إِلَّا شِفَاؤُكَ شِفَاءٌ لَا يُغَادِرُ سقما» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد

ব্যাখ্যাঃ (إِنَّ الرُّقٰى) অর্থাৎ এমন ঝাড়ফুঁক যাতে মূর্তির নাম অথবা শয়তানের নাম অথবা কুফরী কালাম অথবা অন্য কিছু রয়েছে যা শারী‘আতে জায়িয নয়। এরই অন্তর্ভুক্ত হলো এমন মন্ত্র পাঠ করা যার অর্থ স্পষ্টভাবে বুঝে আসে না। অতএব এ রকম ঝাড়ফুঁক বৈধ নয়। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)

ইমাম খত্ত্বাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ আর এমন ঝাড়ফুঁক নিষিদ্ধ যা ‘আরবী ছাড়া অন্য ভাষায় হয় এবং তার অর্থ স্পষ্টভাবে বুঝা যায় না। কখনও তাতে শির্ক ও কুফর যুক্ত হতে পারে। আর যদি তার অর্থ স্পষ্টভাবে বুঝা যায় আর তাতে মহান আল্লাহর নাম থাকে তবে নিঃসন্দেহে তা মুস্তাহাব বরং তা বারাকাত সমৃদ্ধ। (‘আওনুল মা‘বূদ ৭ম খন্ড, হাঃ ৩৮৭৯)

(وَالتَّمَائِمَ) হলো এমন সব তা‘বীয যা বাচ্চাদের ঝুলানো হয়। কিন্তু তা নির্দিষ্ট করা উচিত যাতে আল্লাহর নাম নেই, তিলাওয়াতকৃত কোন আয়াত নেই এবং শারী‘আতসম্মত কোন দু‘আও নেই।

এও বলা হয় যে, তা হলো এমন সব পুঁথি ‘আরবরা তাদের ধারণায় বদনযর থেকে রক্ষা করার জন্য তাদের বাচ্চাদের শরীরে ঝুলিয়ে রাখত। তবে ইসলাম এটিকে বাতিল করেছে। অতঃপর তারা এতে প্রশস্ততা নিয়ে আসলো এমনকি তারা প্রত্যেক তা‘বীযকে এ تميمة (তামীমাহ্) নামে নামকরণ করল। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ; ‘আওনুল মা‘বূদ ৭ম খন্ড, হাঃ ৩৮৭৯)

(التِّوَلَةَ) ইমাম খত্ত্বাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেনঃ বলা হয় যে, এটি যাদুর একটি প্রকার। আসমা‘ঈ (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ তা হলো এমন বিষয় যার মাধ্যমে মহিলাকে তার স্বামীর নিকট প্রিয় করে দেয়া হয়।

মুল্লা ‘আলী কারী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ (التِّوَلَةَ) ‘‘তিওয়ালাহ্’’ বলা হয় যাদুর একটি প্রকারকে। অথবা এমন সুতাকে যাতে যাদু পাঠ করে অথবা স্ত্রী স্বামীর নিকট ভালোভাসা সৃষ্টি বা অন্য কোন কারণে কাগজে যাদু লিখে দেয়া হয়েছে। অথবা কাগজকে যাতে ভালোবাসা বা অন্য কোন কারণে যাদু লিখে দেয়া হয়েছে। (‘আওনুল মা‘বূদ ৭ম খন্ড, হাঃ ৩৮৭৯; মিরক্বাতুল মাফাতীহ)

(شِرْكٌ) অর্থাৎ এগুলোর প্রত্যেকটি শিরকের দিকে ধাবিত করে। হতে পারে তা প্রকাশ্যভাবে অথবা গোপনভাবে। কাযী ‘ইয়ায (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এটিকে শির্ক বলার কারণ হলো জাহিলী যুগে তার যে অভ্যাস ছিল সেটা পুনরায় জেগে উঠার কারণে, যা শির্কের সাথে মিশ্রিত ছিল। অথবা এটা ঝুলানোর কারণে হয়ত তা ‘আক্বীদার উপর প্রভাব ফেলবে, যা শির্কের দিকে ধাবিত করবে। (‘আওনুল মা‘বূদ ৭ম খন্ড, হাঃ ৩৮৭৯)

(عَمَلُ الشَّيْطَانِ) ‘‘শয়তানের কাজ’’ অর্থাৎ তোমার দুই চোখে তুমি যে ব্যথা পাচ্ছ তা প্রকৃত ব্যথা নয় বরং তা হলো শয়তানের আঘাত বা গুতা।

(أَنْتَ الشَّافِي) ‘‘আপন আরোগ্য দানকারী’’। এখান থেকে নেয়া হয়েছে যে, কুরআনুল কারীমে নেই মহান আল্লাহর এমন নাম বলা দু’টা শর্তে জায়িয আছে। প্রথমটি হলো তাতে যেন কোন ধরনের কমতি না বুঝা যায়। তার দ্বিতীয়টি হলো কুরআনুল কারীমে তার মূলভিত্তি থাকতে হবে। এখানে شافى ‘‘শাফী’’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে যার মূলভিত্তি আছে কুরআনে, তা হলো وَإِذَا مَرِضْتُ فَهُوَ يَشْفِينِ ‘‘আর যখন আমি অসুস্থ হই তখন তিনি আমাকে আরোগ্য দান করেন’’- (সূরাহ্ আশ্ শু‘আরা ২৬ : ৮০)। يَشْفِينِ ‘‘ইয়াশফীন’’ থেকে شافى ‘‘শাফী’’ নেয়া হয়েছে। (‘আওনুল মা‘বূদ ৭ম খন্ড, হাঃ ৩৮৭৯)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ যায়নাব (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ