৩৮১৪

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

৩৮১৪-[২৮] আবূ মূসা আল আশ্’আরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, জনৈক লোক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে জিজ্ঞেস করল, এমন কেউ যদি গনীমাতের ধন-মালের লাভের প্রত্যাশায় যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে, কেউ সুনাম সুখ্যাতি (তথা মুজাহিদ নাম) অর্জনের প্রত্যাশায় যুদ্ধ করে, আর কেউ আছে বীরত্ব প্রদর্শনের (তথা যোদ্ধা হওয়ার) অহমিকায় যুদ্ধ করে- এদের মধ্যে কোন্ ব্যক্তি সর্বোত্তম? উত্তরে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, যে ব্যক্তি শুধুমাত্র আল্লাহর বাণী-বিধান (ইসলাম) প্রতিষ্ঠার জন্য যুদ্ধ করে, সে-ই শুধু আল্লাহর পথে জিহাদ করে। (বুখারী, মুসলিম)[1]

اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ

وَعَن أبي مُوسَى قَالَ: جَاءَ رَجُلٌ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: الرَّجُلُ يُقَاتِلُ لِلْمَغْنَمِ وَالرَّجُلُ يُقَاتِلُ لِلذِّكْرِ وَالرَّجُلُ يُقَاتِلُ لِيُرَى مَكَانُهُ فَمَنْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ؟ قَالَ: «مَنْ قَاتَلَ لِتَكُونَ كَلِمَةُ اللَّهِ هِيَ الْعُلْيَا فَهُوَ فِي سَبِيلِ الله»

ব্যাখ্যা: আলোচ্য হাদীসে স্পষ্টভাবে যোদ্ধাদের নিয়্যাতের ভিন্নতা বর্ণনা করা হয়েছে এবং সত্যিকারার্থে কে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারী? তারও সুস্পষ্ট বর্ণনা এ হাদীসে রয়েছে।

(الرَّجُلُ يُقَاتِلُ لِلذِّكْرِ) এ কথার দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, ঐ ব্যক্তি যে কেবল এই প্রত্যাশায় জিহাদ করে যে, মানুষ তাকে নিয়ে আলোচনা করবে, যার ফলে তার প্রসিদ্ধতা বৃদ্ধি পাবে। এটি মূলত আল্লাহর রাস্তায় জিহাদের অন্তর্ভুক্ত নয়।

(وَالرَّجُلُ يُقَاتِلُ لِيُرَى مَكَانُه) এখানে বলা হয়েছে যে, সে লড়াই করে তার স্থান দেখানোর জন্য। আর অপর বর্ণনায় এসেছে, সে লড়াই করে লোক দেখানোর জন্য। যাই হোক এখানে মূলত উদ্দেশ্য হলো রিয়া তথা লোকদেখানো ‘আমল- যাতে আল্লাহকে খুশী করার কোনো ইচ্ছে নেই। আর ইসলামে এরূপ করা নিন্দনীয়। অন্য বর্ণনায় আছে ‘‘যে ব্যক্তি নিজের জন্য বা নিজের পরিবারের জন্য অথবা গোত্রের জন্য কিংবা সাথীর জন্য যুদ্ধ করে (সেও মূলত আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করে না)। মানসূর-এর বর্ণনায় এসেছে, ‘যে ব্যক্তি নিজের ক্রোধ বা ব্যক্তিগত আক্রোশের কারণে যুদ্ধ করে (সেও প্রকৃত মুজাহিদ নয়)। উল্লেখিত সকল কারণেই জিহাদ করা নিষেধ। (ফাতহুল বারী ৬ষ্ঠ খন্ড, হাঃ ২৮১০)

প্রকৃতপক্ষে কে আল্লাহর রাস্তায় সত্যিকারে জিহাদ করছে? এ প্রশ্নের জবাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন যে, যে ব্যক্তি আল্লাহর তাওহীদের বাণীকে তথা তাঁর একত্ববাদকে পৃথিবীতে সুউচ্চ আসনে আসীন করানোর জন্য যুদ্ধ করবে সেই প্রকৃত মুজাহিদ বা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারী।

(مَنْ قَاتَلَ لِتَكُونَ كَلِمَةُ اللّٰهِ هِيَ الْعُلْيَا فَهُوَ فِي سَبِيلِ اللّٰهِ) এ কথার ভাবার্থ হলো, যে ব্যক্তি আল্লাহর বাণীকে উঁচু করার জন্য যুদ্ধ না করে অন্য উদ্দেশে যুদ্ধ করবে সে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারী বলে গণ্য হবে না। যেমন আবূ দাঊদ ও নাসায়ীতে একটি হাদীস বর্ণিত হয়েছে, এক ব্যক্তি এসে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করল, কোনো ব্যক্তি সুনাম-সুখ্যাতি ও প্রতিদানের আশায় যুদ্ধ করল, তার কি প্রতিদান রয়েছে? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, ‘‘কিছুই না’’। প্রশ্নকারী একই প্রশ্ন তিনবার করলে, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, কিছুই না। এরপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ «إن الله لا يقبل من العمل إلا ما كان خالصا وابتغي به وجهه»

অর্থাৎ- নিশ্চয় আল্লাহ সে ‘আমল গ্রহণ করবেন না, যাতে ইখলাস ও আল্লাহর সন্তুষ্টির প্রত্যাশা করা হয়নি। (ফাতহুল বারী ৬ষ্ঠ খন্ড, হাঃ ২৮১০)

(كَلِمَةُ اللّٰهِ) তথা ‘আল্লাহর কালিমাহ্’ বলতে কালিমাতুত্‌ তাওহীদকে বুঝানো হয়েছে, আর তা হলো لا إله إلا الله তথা ‘আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য মা‘বূদ নেই। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ