লগইন করুন
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ
৩৫৬২-[৮] বুরায়দাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন মা’ইয ইবনু মালিক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে বললেন, হে আল্লাহর রসূল! ’আমাকে পাক-পবিত্র করুন’। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তোমার ওপর আক্ষেপ হয়, ফিরে যাও এবং আল্লাহর নিকট মাফ চাও ও তওবা্ কর। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি চলে গেলেন কিন্তু কিছু দূরে গিয়ে পুনরায় ফিরে এসে বললেন, হে আল্লাহর রসূল! ’আমাকে পাক-পবিত্র করুন’। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবারও তাকে পূর্বের ন্যায় বললেন। এভাবে যখন তিনি চতুর্থবার এসে বললেন, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, আচ্ছা! তোমাকে আমি কি দিয়ে পবিত্র করব? তিনি বললেন, যিনা থেকে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (সাহাবীদের উদ্দেশে) বললেন, সে কি পাগলামী করছে? জানানো হলো, না সে পাগল নয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তবে কি সে মদ্যপায়িত? তখন জনৈক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে তার মুখ শুঁকলেন; কিন্তু মদের গন্ধ পাওয়া গেল না। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তাহলে কি তুমি সত্যিই যিনা করেছ? তিনি বললেন, জি, হ্যাঁ! অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাকে রজম করার নির্দেশ দিলেন। তখন তাকে রজম করা হলো। এ ঘটনার দুই-তিনদিন পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (সাহাবীদের উদ্দেশে) বললেন, তোমরা মা’ইয ইবনু মালিক (রাঃ)-এর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর। অতঃপর তিনি এমনভাবে তওবা্ করেছেন যদি তা সকল উম্মাতের মাঝে বিলিয়ে দেয়া হয়, তাহলে সকলের জন্য যথেষ্ট হবে।
এ ঘটনার পর আয্দ বংশের গামিদী গোষ্ঠীর জনৈক নারী এসে বলল, হে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! ’আমাকে পাক-পবিত্র করুন’। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তোমার ওপর আক্ষেপ হয়, ফিরে যাও! আল্লাহ তা’আলার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর এবং তওবা্ কর। তখন সে বলল, আপনি মা’ইয ইবনু মালিককে যেভাবে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন আমাকেও কি অনুরূপ ফিরিয়ে দিতে চান? অথচ আমি তো সেই নারী যা যিনার দ্বারা অন্তঃসত্ত্বা। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, সত্যি কি তুমি যিনার দ্বারা গর্ভবতী? নারীটি বলল, জি, হ্যাঁ! নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যাও! তোমার পেটের বাচ্চা প্রসব হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকো। তখন এক আনসারী মহিলাটি বাচ্চার প্রসব হওয়া পর্যন্ত তাকে নিজ তত্ত্বাবধানে নিয়ে গেলেন। অতঃপর সন্তান হওয়ার পর ঐ লোকটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে বলল, গামিদী গোষ্ঠীর নারীটি বাচ্চা প্রসব করেছে। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তার শিশু বাচ্চাটি রেখে এখন তাকে রজম করা যাবে না, কেননা বাচ্চাটির দুধ পান করানোর মতো কেউ থাকবে না। তখন আনসারদের থেকে জনৈক লোক দাঁড়িয়ে বলল, হে আল্লাহর নবী! তাকে দুধপান করানোর দায়িত্ব আমার ওপর। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাকে রজম করলেন।
অপর বর্ণনাতে আছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ নারীকে বললেন, তুমি চলে যাও এবং সন্তান প্রসব হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা কর। অতঃপর সন্তান প্রসব করার পর যখন আসলো, তখন বললেন, এবারও চলে যাও এবং দুধ পান করাও। আর দুধ ছাড়ানো পর্যন্ত অপেক্ষা কর। তারপর যখন বাচ্চাটির দুধ ছাড়ানো হয় তখন নারীটি বাচ্চা নিয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট উপস্থিত হলো। তখন বাচ্চার হাতে এক টুকরা রুটি ছিল। এবার নারীটি বলল, হে আল্লাহর নবী! এই যে, আমি তার দুধ ছাড়িয়েছি এবং এখন সে অন্য খাদ্য খায়। এমতাবস্থায় তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বাচ্চাটিকে একজন মুসলিমের তত্ত্বাবধানে দিলেন এবং নারীটির জন্য একটি গর্ত খোঁড়ার নির্দেশ দিলেন, অতঃপর তার বক্ষদেশ পর্যন্ত একটি গর্ত খোঁড়া হলো। তখন লোকেদেরকে পাথর নিক্ষেপের নির্দেশ দিলেন। খালিদ ইবনু ওয়ালীদ সামনে অগ্রসর হয়ে তার মাথার উপর এক খন্ড পাথর নিক্ষেপ করলেন। ফলে রক্ত ছিঁটে খালিদ -এর মুখমণ্ডলে এসে পড়ল। তখন তিনি তাকে ভৎর্সনা করলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে খালিদ! থামো! কসম সেই আল্লাহর! যাঁর হাতে আমার প্রাণ। নিশ্চয় নারীটি এমন তওবা্ করেছে, যদি কোনো বড় যালিমও এ ধরনের তওবা্ করে তাহলে তাকেও ক্ষমা করা হবে। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নির্দেশ দিলে, তার জানাযা আদায় করা হলো এবং দাফনকার্য সম্পন্ন হলো। (মুসলিম)[1]
اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ
وَعَنْ بُرَيْدَةَ قَالَ: جَاءَ مَاعِزُ بْنُ مَالِكٍ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ طَهِّرْنِي فَقَالَ: «وَيْحَكَ ارْجِعْ فَاسْتَغْفر الله وَتب إِلَيْهِ» . فَقَالَ: فَرَجَعَ غَيْرَ بَعِيدٍ ثُمَّ جَاءَ فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ طَهِّرْنِي. فَقَالَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِثْلَ ذَلِكَ حَتَّى إِذَا كَانَتِ الرَّابِعَة قَالَه لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «فِيمَ أُطَهِّرُكَ؟» قَالَ: مِنَ الزِّنَا قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَبِهِ جُنُونٌ؟» فَأُخْبِرَ أَنَّهُ لَيْسَ بِمَجْنُونٍ فَقَالَ: «أَشَرِبَ خَمْرًا؟» فَقَامَ رَجُلٌ فَاسْتَنْكَهَهُ فَلَمْ يَجِدْ مِنْهُ رِيحَ خَمْرٍ فَقَالَ: «أَزَنَيْتَ؟» قَالَ: نَعَمْ فَأَمَرَ بِهِ فَرُجِمَ فَلَبِثُوا يَوْمَيْنِ أَوْ ثَلَاثَةً ثُمَّ جَاءَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: «اسْتَغْفِرُوا لِمَاعِزِ بْنِ مَالِكٍ لَقَدْ تَابَ تَوْبَةً لَوْ قُسِّمَتْ بَيْنَ أُمَّةٍ لَوَسِعَتْهُمْ» ثُمَّ جَاءَتْهُ امْرَأَةٌ مِنْ غَامِدٍ مِنَ الْأَزْدِ فَقَالَتْ: يَا رَسُولَ اللَّهِ طَهِّرْنِي فَقَالَ: «وَيَحَكِ ارْجِعِي فَاسْتَغْفِرِي اللَّهَ وَتُوبِي إِلَيْهِ» فَقَالَتْ: تُرِيدُ أَنْ تَرْدُدَنِي كَمَا رَدَدْتَ مَاعِزَ بْنَ مَالِكٍ: إِنَّهَا حُبْلَى مِنَ الزِّنَا فَقَالَ: «أَنْتِ؟» قَالَتْ: نَعَمْ قَالَ لَهَا: «حَتَّى تَضَعِي مَا فِي بَطْنِكِ» قَالَ: فكَفَلَها رَجُلٌ مِنَ الْأَنْصَارِ حَتَّى وَضَعَتْ فَأَتَى النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: قَدْ وَضَعَتِ الغامديَّةُ فَقَالَ: «إِذاً لَا نرجُمها وندعُ وَلَدَهَا صَغِيرًا لَيْسَ لَهُ مَنْ يُرْضِعُهُ» فَقَامَ رَجُلٌ مِنَ الْأَنْصَارِ فَقَالَ: إِلَيَّ رَضَاعُهُ يَا نَبِيَّ اللَّهِ قَالَ: فَرَجَمَهَا. وَفِي رِوَايَةٍ: أَنَّهُ قَالَ لَهَا: «اذْهَبِي حَتَّى تَلِدِي» فَلَمَّا وَلَدَتْ قَالَ: «اذْهَبِي فَأَرْضِعِيهِ حَتَّى تَفْطِمِيهِ» فَلَمَّا فَطَمَتْهُ أَتَتْهُ بِالصَّبِيِّ فِي يَدِهِ كِسْرَةُ خُبْزٍ فَقَالَتْ: هَذَا يَا نَبِيَّ اللَّهِ قَدْ فَطَمْتُهُ وَقَدْ أَكَلَ الطَّعَامَ فَدَفَعَ الصَّبِيَّ إِلَى رَجُلٍ مِنَ الْمُسْلِمِينَ ثُمَّ أَمَرَ بِهَا فَحُفِرَ لَهَا إِلَى صَدْرِهَا وَأَمَرَ النَّاسَ فَرَجَمُوهَا فَيُقْبِلُ خَالِدُ بْنُ الْوَلِيدِ بِحَجْرٍ فَرَمَى رَأْسَهَا فَتَنَضَّحَ الدَّمُ عَلَى وَجْهِ خَالِدٍ فَسَبَّهَا فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم: «مهلا يَا خَالِد فو الَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَقَدْ تَابَتْ تَوْبَةً لَوْ تَابَهَا صَاحِبُ مَكْسٍ لَغُفِرَ لَهُ» ثُمَّ أَمَرَ بِهَا فصلى عَلَيْهَا ودفنت. رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: যদি প্রশ্ন করা হয়, মা‘ইয এবং গামিদী কেন তারা তাওবায় সন্তুষ্ট হয়নি অথচ তাওবাহ্ দ্বারা তাদের উদ্দেশ্য অর্জিত হতো আর তা গুনাহ মাফ হওয়ার দণ্ডের মাধ্যমে পরিপূর্ণভাবে গুনাহ থেকে মুক্ত হওয়ার দৃঢ় বিশ্বাস অর্জন হয়। তাছাড়াও এটা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নির্দেশ। আর তাওরাতে পাপ থেকে খাঁটিভাবে মুক্ত হওয়ার শংকা রয়েছে। সুতরাং শংকা থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য দৃঢ়-বিশ্বাসভাবে পাপ থেকে পরিচ্ছন্ন হওয়ার জন্য হাদ্দকে বেছে নিয়েছে। আল্লাহই বেশী ভালো জানেন। (শারহে মুসলিম ১১শ খন্ড, ১৬৯৫)
(ثُمَّ جَاءَ فَقَالَ : يَا رَسُوْلَ اللّٰهِ! طَهِّرْنِىْ) অতঃপর আসলো এবং বললো, আমাকে পবিত্র করুন। সম্ভবত সে তাওরাতের মাধ্যমে নিজকে পবিত্র করতে সক্ষম ছিল না।
(اسْتَغْفِرُوْا لِمَاعِزِ بْنِ مَالِكٍ) তোমরা তার জন্য ক্ষমার আধিক্য আর উন্নত মর্যাদা কামনা করো।
(لَوَسِعَتْهُمْ) যথেষ্ট হতো। তিনি বলেন, তার তাওবাহ্ এমন ছিল যা অপরিহার্য করে তোলে ক্ষমা ও রহমাত তা বিশাল সংখ্যক জনগোষ্ঠীর ওপর বণ্টন করা যাবে অনুরূপ গামিদী (মহিলার) তাওবার বিষয়টি প্রমাণ করে।
(لَقَدْ تَابَتْ تَوْبَةً لَوْ تَابَهَا صَاحِبُ مَكْسٍ لَغُفِرَ لَه) মহিলাটি এমন খালেস তাওবাহ্ করেছে, যদি কোনো ট্যাক্স আদায়কারী যালিমও এ ধরনের তাওবাহ্ করে অবশ্যই আল্লাহর তার গুনাহ ক্ষমা করবেন।
(اسْتَغْفِرُوْا لِمَاعِزِ) তোমরা মা‘ইয-এর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করো। এমন বক্তব্যের রহস্য বা উপকার কি? যদি তুমি প্রশ্ন করো আমি ভাষ্যকার জবাবে বলি : অনুরূপ বক্তব্যের রহস্যের মতো।
‘‘আল্লাহর সাহায্য আসবে ও বিজয় আসবে এবং আপনি মানুষকে দলে দলে আল্লাহর দীনে প্রবেশ করতে দেখবেন। তখন আপনি আপনার পালনকর্তার পবিত্রতা বর্ণনা করুন এবং তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন, নিশ্চয় তিনি ক্ষমাকারী।’’ (সূরা আন্ নাস্র ১১০ : ১-৫)
আল্লাহর আরো বক্তব্য : ‘‘নিশ্চয় আমি আপনার জন্য একটা ফায়সালা করে দিয়েছি যা সুস্পষ্ট, যাতে আল্লাহ আপনার অতীত ও ভবিষ্যৎ ত্রুটিসমূহ মার্জনা করে দেন।’’ (সূরা আল ফাতহ ৪৮ : ১-২)
আর তার জন্য ক্ষমা তলব করার মধ্যে তার সম্মান ও মর্যাদা কামনা করো।
ইমাম নববী বলেনঃ শেষ বর্ণনাটি প্রথম বর্ণনার বিপরীত। প্রথম বর্ণনায় বাচ্চা প্রসবের পর রজম করা হয়েছে। দ্বিতীয়টি দুধ ছাড়ানোর পর রজম করা হয়েছে। দ্বিতীয়টিই সঠিক, প্রথম বর্ণনার ব্যাখ্যা দ্বিতীয় বর্ণনা, কেননা একটাই ঘটনা।
কারো মতে সম্ভাবনা, ঘটনা দু’টি দু’ মহিলার ক্ষেত্রে প্রথম বর্ণনার মহিলার ইজদ গোত্রের আর দ্বিতীয় বর্ণনার মহিলা জুহায়নাহ্ গোত্রের। (মিরকাতুল মাফাতীহ)