৩৫৫৩

পরিচ্ছেদঃ ৪. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - মুরতাদ এবং গোলযোগ সৃষ্টিকারীকে হত্যা করা প্রসঙ্গে

৩৫৫৩-[২১] শরীক ইবনু শিহাব (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি তীব্র আকাঙ্ক্ষা পোষণ করছিলাম যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কোনো সাহাবীর সাথে সাক্ষাৎ করে তাঁর নিকট খারিজীদের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করব। পরিশেষে এক ঈদের দিন আবূ বারযাহ্ -এর সাথে তাঁর বন্ধুদের উপস্থিতিতে সাক্ষাৎ করলাম। অতঃপর তাঁর নিকট জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে খারিজীদের ব্যাপারে আলোচনা করতে শুনেছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ, আমি আমার দুই কানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি এবং আমি আমার দুই চোখ দিয়ে দেখেছি। একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট কিছু ধন-সম্পদ আসলে তিনি তা বিলিয়ে দিলেন। যে তাঁর ডানদিকে ছিল তাকে দিলেন এবং তাঁর বামদিকে ছিল তাকেও দিলেন। কিন্তু যে তার পেছনে ছিল তাকে কিছুই দিলেন না।

পরিশেষে তাঁর পেছনে বসা লোকেদের মধ্য থেকে একজন দাঁড়িয়ে বলল, হে মুহাম্মাদ! বণ্টনের ক্ষেত্রে তুমি ইনসাফ কায়িম করনি। সে ব্যক্তি কালো বর্ণের ও মাথা ছিল মুন্ডানো এবং তার গায়ে ছিল দু’টি সাদা চাদর। অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাগস্বরে বললেন, আল্লাহর কসম! আমার পরে তোমরা আর কাউকে আমার চেয়ে বেশি ন্যায়বান ও ইনসাফকারী পাবে না। আরো বললেন, শেষ যুগে একটি দল বের হবে, মনে হয় যেন এ ব্যক্তি তাদেরই মধ্য থেকে একজন। তারা কুরআন পড়বে, কিন্তু তা তাদের গলধঃকরণ হবে না। তারা ইসলাম থেকে এরূপে বেরিয়ে যাবে যেভাবে নিক্ষিপ্ত তীর শিকার ভেদ করে বের হয়ে যায়। তাদের পরিচয়-নমুনা হলো- তাদের মাথা মুন্ডিত থাকবে। তারা সর্বাবস্থায় আবির্ভূত হতে থাকবে। পরিশেষে তাদের সর্বশেষ দলটি বের হবে মাসীহে দাজ্জাল-এর সাথে। সুতরাং তোমরা যেখানেই তাদেরকে দেখবে হত্যা করে ফেলবে। কেননা, তারা (জীবের মধ্যে) নিকৃষ্টতম সৃষ্টি এবং সবচেয়ে মন্দাকৃতির লোক। (নাসায়ী)[1]

وَعَنْ شَرِيكِ بْنِ شِهَابٍ قَالَ: كُنْتُ أَتَمَنَّى أَنْ أَلْقَى رَجُلًا مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَسْأَلُهُ عَنِ الْخَوَارِجِ فَلَقِيْتُ أَبَا بَرْزَةَ فِي يَوْمِ عِيدٍ فِي نَفَرٍ مِنْ أَصْحَابِهِ فَقُلْتُ لَهُ: هَلْ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَذْكُرُ الْخَوَارِجَ؟ قَالَ: نعمْ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِأُذُنَيَّ وَرَأَيْتُهُ بِعَيْنَيَّ: أَتَى رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِمَالٍ فَقَسَمَهُ فَأَعْطَى مَنْ عَنْ يَمِينِهِ وَمَنْ عَنْ شِمَالِهِ وَلَمْ يُعْطِ مَنْ وَرَاءَهُ شَيْئًا. فَقَامَ رَجُلٌ مِنْ وَرَائِهِ فَقَالَ: يَا مُحَمَّدُ مَا عَدَلْتَ فِي الْقِسْمَةِ رَجُلٌ أَسْوَدُ مَطْمُومُ الشَّعْرِ عَلَيْهِ ثَوْبَانِ أَبْيَضَانِ فَغَضِبَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ غَضَبًا شَدِيدًا وَقَالَ: «وَاللَّهِ لَا تَجِدُونَ بَعْدِي رَجُلًا هُوَ أَعْدَلُ مِنِّي» ثُمَّ قَالَ: «يخرُجُ فِي آخرِ الزَّمانِ قومٌ كأنَّ هَذَا مِنْهُم يقرؤون الْقُرْآنَ لَا يُجَاوِزُ تَرَاقِيَهُمْ يَمْرُقُونَ مِنَ الْإِسْلَامِ كَمَا يَمْرُقُ السَّهْمُ مِنَ الرَّمِيَّةِ سِيمَاهُمُ التَّحْلِيقُ لَا يَزَالُونَ يَخْرُجُونَ حَتَّى يَخْرُجَ آخِرُهُمْ مَعَ الْمَسِيحِ الدَّجَّالِ فَإِذَا لَقِيتُمُوهُمْ هُمْ شَرُّ الْخَلْقِ والخليقة» . رَوَاهُ النَّسَائِيّ

ব্যাখ্যা: ‘আল্লামা সূয়ুতী বলেন, কাযী ‘ইয়ায বলেছেনঃ খারিজীদের নামকরণ يخرج من ضئضئ هذا (সে এই হৈ চৈ এর কারণে বের হয়েছে) এই বাক্য থেকে করা হয়েছে।

আবার কেউ বলেন- দল থেকে বের হওয়ার কারণে তাদের খারিজী বলা হয়। কেউ বলেন- দলের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হওয়ার জন্য বের হওয়ার কারণে খারিজীদের খাওয়ারিজ বলা হয়।

সুয়ূত্বী আরো বলেনঃ যে খারিজীদেরকে কাফির হিসেবে গণ্য করা নিয়ে লোকেদের মাঝে মতভেদ রয়েছে। এই মাসআলাটি ধর্মবিদদদের নিকট অন্যান্য সব মাসআলার চেয়ে খুব জটিল ও কঠিন। কেননা কাফিরকের মুসলিম মিল্লাতে দাখিল করা অথবা মুসলিমকে ইসলামী মিল্লাত থেকে বের করা দীনের মধ্যে খুব বড় বিষয়।

ইমাম নববী বলেনঃ মাথা মুন্ডানো হারাম বলে অ্যাখ্যা দিয়ে কোনো কোনো বিদ্বান এই হাদীসকে দলীল হিসেবে পেশ করেছেন। তবে এর কোনো ইঙ্গিত এই হাদীসে নেই। বস্তুত এটা ছিল তাদের আলামত বা লক্ষণ। আর লক্ষণ কখনো হারাম হয় আবার কখনো মুবাহ তথা বৈধ হয়। যেমন রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-

آيَتهمْ رَجُل أَسْوَد إِحْدٰى عَضُدَيْهِ مِثْل ثَدْي الْمَرْأَة অর্থাৎ তাদের নিদর্শন হলো তারা এমন লোক, যাদের এক বাহু মহিলার স্তনের বুটির মতো কালো। এখান থেকে বুঝা গেলো, এটা আলামত হারাম নয়।

বুখারী ও মুসলিমের শর্তে আবূ দাঊদে বর্ণিত হয়েছে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা এক বালককে দেখে অর্ধেক মাথা মুন্ডানো বা নাড়া করা দেখলেন। অতঃপর বললেন- সম্পূর্ণ মাথা মু--য়ে ফেলো অথবা পূর্ণ মাথায় চুল রাখো। এটা মাথা মু-ানের বৈধ হওয়ার স্পষ্ট দলীল। এতে ব্যাখ্যার অবকাশ নেই। আমাদের সাথীগণ বলেন- প্রত্যেক সময় মাথা মুন্ডানো জায়িয। কিন্তু চুল থাকাকালীন সময় মাথা তৈল মাখানো বা চুল পরিপাটি করতে কষ্ট সাধ্য হলে মুন্ডানো করা মুস্তাহাব। আর যদি তা কঠিন না হয় তবে চুল রাখা মুস্তাহাব।

* সিনদী ও উপরোক্ত ইমাম নববীর মতামতকে উল্লেখ করে বলেন- ‘আল্লামা নববীর মূলনীতির দলীল গ্রহণে কখনো বিতর্ক তোলা হয় যে, তাদের নিকট ছোটরা রেশম ও স্বর্ণ পরিধান করার যোগ্য যেটা প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য হারাম। সুতরাং এ ব্যাপারে চিন্তা গবেষণা করা উচিত।

* কুরতুবী বলেনঃ «سِيْمَاهُمْ أَتَّحْلِيْقُ» অর্থাৎ তারা এটাকে দুনিয়া ত্যাগের আলামত বা প্রতীক হিসেবে নির্ধারণ করেছে। যাতে তাদেরকে চেনা যায়। এটা তাদের নিকট অজানা যে, কিসে দুনিয়া ত্যাগ হয় আর কিসে দুনিয়া ত্যাগ হয় না এবং আল্লাহর দীনের মধ্যে কিছু নতুন আবিষ্কার অর্থাৎ বিদ্‘আত।

আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, খুলাফায়ে রাশিদীন ও তাদের অনুসারীগণ ছিলেন এর বিপরীত। (নাসায়ী ৪র্থ খন্ড, হাঃ ৪১১৪; ‘আওনুল মা‘বূদ হাঃ ৩৬৬৩)