লগইন করুন
পরিচ্ছেদঃ ১৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - লি‘আন
৩৩১৯-[১৬] জাবির ইবনু ’আতীক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আত্মমর্যাদাবোধ আল্লাহর নিকট কোনো ক্ষেত্রে পছন্দনীয় হয়, আবার কোনো ক্ষেত্রে নিন্দনীয় হয়। যে আত্মমর্যাদাবোধ আল্লাহ পছন্দ করেন, তা হলো সন্দেহভাজন আত্মমর্যাদা লালন করা। পক্ষান্তরে সন্দেহভাজন নয় এমন ক্ষেত্রে আত্মমর্যাদা লালন করা আল্লাহর নিকট নিন্দনীয়। অনুরূপভাবে গর্ববোধ কোনো ক্ষেত্রে আল্লাহ পছন্দ করেন এবং কোনো ক্ষেত্রে নিন্দনীয়। আর যে গর্বকে আল্লাহ ভালোবাসেন তা হলো, (ইসলামের শত্রুদের সাথে) যুদ্ধক্ষেত্রে ও দান-সদাকাতে গর্ববোধ আল্লাহর নিকট অত্যন্ত পছন্দনীয়। আর যে গর্ববোধ আল্লাহর কাছে নিন্দনীয় তা হলো (বংশ-মর্যাদার) অহংকারের উদ্দেশে গর্ববোধ। অপর বর্ণনায়, অহংকারের পরিবর্তে জুলুম বা অন্যায় শব্দ এসেছে। (আহমাদ, আবূ দাঊদ, নাসায়ী)[1]
وَعَن جابرِ بنِ عتيكٍ أَنَّ نَبِيَّ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مَنْ الْغَيْرَةِ مَا يُحِبُّ اللَّهُ وَمِنْهَا مَا يُبْغِضُ اللَّهُ فَأَمَّا الَّتِي يُحِبُّهَا اللَّهُ فَالْغَيْرَةُ فِي الرِّيبَةِ وَأَمَّا الَّتِي يُبْغِضُهَا اللَّهُ فَالْغَيْرَةُ فِي غَيْرِ رِيبَةٍ وَإِنَّ مِنَ الْخُيَلَاءِ مَا يُبْغِضُ اللَّهُ وَمِنْهَا مَا يُحِبُّ اللَّهُ فَأَمَّا الْخُيَلَاءُ الَّتِي يُحِبُّ اللَّهُ فَاخْتِيَالُ الرَّجُلِ عِنْدَ الْقِتَالِ وَاخْتِيَالُهُ عِنْدَ الصَّدَقَةِ وَأَمَّا الَّتِي يُبْغِضُ اللَّهُ فَاخْتِيَالُهُ فِي الْفَخْرِ» وَفِي رِوَايَةٍ: «فِي الْبَغْيِ» . رَوَاهُ أَحْمَدُ وَأَبُو دَاوُدَ وَالنَّسَائِيُّ
ব্যাখ্যা: (فَالْغَيْرَةُ فِى الرِّيبَةِ) ‘‘গইরত’’ অর্থ আত্মমর্যাদাবোধ। কোনকিছুর দ্বারা আত্মমর্যাদায় আঘাত লাগার নাম গাইরত। এর কোনটা আল্লাহর পছন্দ আবার কোনটা আল্লাহ তা‘আলা অপছন্দ। হাদীসে বলা হচ্ছে, (الريبة) এর স্থানে গাইরত আল্লাহর পছন্দ। ‘রীবাহ্’ অর্থাৎ সন্দেহমূলক স্থান, অপবাদের স্থান। এই আত্মমর্যাদার দুই দিক হতে পারে। একটি হলোঃ আত্মমর্যাদার কারণে নিজে এমন স্থানে পতিত না হওয়া। আত্মমর্যাদা তাকে নিষিদ্ধ অপবাদমূলক জায়গা থেকে তাকে দূরে রাখার কারণে তা আল্লাহর নিকট পছন্দ। আরেকটি হলো, নিজের মাহরাম কারো সাথে অন্য কাউকে হারাম কাজে লিপ্ত দেখে আত্মমর্যাদায় আঘাত লাগা। এ ধরনের গাইরত আল্লাহর নিকট পছন্দনীয়। সহীহ হাদীসে রয়েছেঃ
مَا مِنْ أَحَدٍ أَغْيَرُ مِنْ اللّٰهِ مِنْ أَجْلِ ذٰلِكَ حَرَّمَ الْفَوَاحِشَ
‘‘আল্লাহর চেয়ে অধিক আত্মমর্যাদাশীল কেউ নেই। আর এজন্যই তিনি অশ্লীলতা (যিনা) হারাম করেছেন।’’ (সহীহুল বুখারী- অধ্যায় : নিকাহ, অনুচ্ছেদ : গাইরত, হাঃ ৪৮১৯)
(فَالْغَيْرَةُ فِىْ غَيْرِ رِيبَةٍ) অর্থাৎ সন্দেহযুক্ত স্থান বা অপবাদমূলক স্থান ছাড়া গাইরত। এই গইরত আল্লাহ তা‘আলার নিকট অপছন্দ। অর্থাৎ বাস্তব কোনো সন্দেহ ছাড়া কারো ওপর খারাপ ধারণার ভিত্তিতে নিজের আত্মমর্যাদায় আঘাত লাগা। যেমন কাউকে দরজা দিয়ে বের হতে দেখে বা কাউকে কারো সাথে কথা বলতে দেখেই মন্দ ধারণার ভিত্তিতে আত্মমর্যাদায় আঘাত লাগা। এ ধরনের গইরতে পরস্পরের মাঝে অযথা বিদ্বেষ, ক্রোধ ও ফিতনা সৃষ্টি হয়। এও হতে পারে যে, নিজের মা থাকাবস্থায় পিতা আরেক নারীকে বিয়ে করার কারণে ছেলের আত্মমর্যাদায় আঘাত। এভাবে তার অন্যান্য মাহরামের ক্ষেত্রে। এ ধরনের গাইরতকে আল্লাহ তা‘আলা অপছন্দ করেন। কেননা আল্লাহ তা‘আলা যা হালাল করেছেন তার উপর আমাদের সন্তুষ্ট থাকা ওয়াজিব। আল্লাহ কর্তৃক বৈধ বিষয়ে গইরত দেখানো মানে জাহিলিয়্যাতে তথা অন্ধকার যুগের অহংবোধ আত্মমর্যাদাকে অগ্রাধিকার দেয়া। তাই আল্লাহ এমন গাইরতকে অপছন্দ করেন।
(وَإِنَّ مِنَ الْخُيَلَاءِ مَا يُبْغِضُ اللّٰهُ وَمِنْهَا مَا يُحِبُّ اللّٰهُ) অর্থাৎ অহঙ্কার ও আত্মঅহমিকা কোনটা আল্লাহ অপছন্দ করেন এবং কোনটা আল্লাহ ভালোবাসেন।
অহঙ্কার মূলত হারাম হলেও গইরতের মতই কোনো কোনো ক্ষেত্রে অহঙ্কার আল্লাহ তা‘আলার পছন্দ। হাদীসে আল্লাহর পছনদনীয় অহঙ্কার ও অপছন্দীয় অহঙ্কারের বিবরণ দেয়া হয়েছে। যে অহঙ্কার বা গর্বকে আল্লাহ তা‘আলা ভালোবাসেন তা হলো, জিহাদে কোনো ব্যক্তির অহঙ্কার। অর্থাৎ যুদ্ধের সময় সে দুশমনের সাথে মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে অগ্রে থাকবে; শক্তি, সাহসিকতা ও বীরত্ব প্রকাশ করবে, যুদ্ধের ময়দানে অহঙ্কারী ভঙ্গিতে চলবে এবং দুশমনকে তুচ্ছ মনে করবে। এই গর্ব আল্লাহর নিকট পছন্দ। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিহাদের ময়দানে গর্বস্বরে বলতেন, (أَنَا النَّبِيُّ لَا كَذِبْ أَنَا ابْنُ عَبْدِ الْمُطَّلِبْ) ‘‘আমি নাবী এ কথা মিথ্যা নয়, আমি ইবনুল মুত্ত্বালিব-এর ছেলে।’’ (সহীহুল বুখারী- অধ্যায় : জিহাদ, হাঃ ২৬৫২। উল্লেখ্য, বুখারীর একাধিক অধ্যায় ও অনুচ্ছেদের বিভিন্ন জায়গায় হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে)
জিহাদের ময়দানে গর্বে নিজের শক্তি সাহস ছাড়াও সাথীদের মাঝে শক্তি সাহস জোগায়।
পছন্দনীয় গর্বের আরেকটি স্থান হলো দান। অর্থাৎ আল্লাহর রাস্তায় দান ও সাদাকা করতে গর্বভরে করবে। বেশি দিয়েও কম মনে করবে। অর্থাৎ সে ভাববে আমার মতো ধনীর জন্য আরো দেয়া দরকার। কেউ কেউ বলেন, এখানে অহঙ্কার বলতে সে বলবে, আমি ধনী, অতএব বেশি বেশি দান করব, আল্লাহর ওপর আমার আস্থা রয়েছে। এই গর্ব তাকে এবং অন্যকে অধিক দানে উৎসাহিত করে। তাই তা আল্লাহ তা‘আলার নিকট পছন্দীয়।
(وَأَمَّا الَّتِىْ يُبْغِضُ اللّٰهُ فَاخْتِيَالُه فِى الْفَخْرِ) এখানে এমন অহঙ্কারের কথা বলা হচ্ছে যা আল্লাহ তা‘আলার নিকট অপছন্দ। অর্থাৎ কেবল বড়াইয়ের অহঙ্কার। যেমন কেউ বলে, আমার বংশ অধিক মর্যাদাবান, আমার পিতা অধিক সম্মানিত। অথচ আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘‘নিশ্চয় আল্লাহর কাছে সে-ই সর্বাধিক সম্ভ্রান্ত যে সর্বাধিক পরহেযগার’’- (সূরা আল হুজুরাত ৪৯ : ৩)। অর্থাৎ অন্যকে হেয় করে নিজেকে বড় ভাবার অহঙ্কার আল্লাহর নিকট অপছন্দীয়।
কোনো কোনো বর্ণনায় (فَاخْتِيَالُه في الفخر) এর স্থলে (فَاخْتِيَالُه فِي الْبَغْيِ) বলা হয়েছে। অর্থাৎ অন্যায় কাজের উপর অহঙ্কার। যেমন কেউ গর্ব করে বলে, সে অমুককে হত্যা করেছে, অমুকের মাল ছিনিয়ে নিয়েছে, অথবা অন্যায় কাজ করার সময় গর্ব করে কাজ করে। এ ধরনের অহঙ্কারে আল্লাহ তা‘আলা রাগাম্বিত হন। (সুনানু আবী দাঊদ- অধ্যায় : জিহাদ, অনুচ্ছেদ : যুদ্ধে অহঙ্কার, হাঃ ২২৮৬)