৩২৬৬

পরিচ্ছেদঃ ১০. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - স্ত্রীদের সাথে সদ্ব্যবহার এবং তাদের প্রত্যেকের (স্বামী-স্ত্রীর) পারস্পরিক হক ও অধিকার সংক্রান্ত

৩২৬৬-[২৯] কায়স ইবনু সা’দ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি (ইরাকে অবস্থিত, কূফার সন্নিকটবর্তী) ’হীরা’ শহরে গিয়ে দেখতে পেলাম যে, তারা তাদের নেতাকে সম্মানার্থে সিজদা করছে। এটা দেখে আমি মনে মনে বললাম, নিশ্চয় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-ই সিজদা পাওয়ার সর্বাধিক উপযুক্ত। অতঃপর আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে বললাম, আমি হীরা’র সফরে দেখতে পেলাম যে, সেখানকার অধিবাসীরা তাদের নেতাকে সিজদা করে। আমি স্থির করেছি যে, আপনিই সাজদার অধিক হকদার। এ কথা শুনে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেন, (তবে কি আমার মৃত্যুর পরে) তুমি আমার কবরের সম্মুখ দিয়ে গমনকালে কবরকে সিজদা করবে? উত্তরে আমি বললাম, (নিশ্চয়) না। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, না, (কস্মিনকালেও) করো না। কেননা আমি যদি (আল্লাহ ব্যতিরেকে) অপর কাউকে সিজদা করতে বলতাম তবে স্বামীদের জন্য রমণীদেরকে সিজদা করার নির্দেশ করতাম। (আবূ দাঊদ)[1]

عَنْ قَيْسِ بْنِ سَعْدٍ قَالَ: أَتَيْتُ الْحِيرَةَ فَرَأَيْتُهُمْ يَسْجُدُونَ لِمَرْزُبَانٍ لَهُمْ فَقُلْتُ: لَرَسُولُ اللَّهِ صلى الله عَلَيْهِ وَسلم أَحَق أَن يسْجد لَهُ فَأَتَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقُلْتُ: إِنِّي أَتَيْتُ الْحِيرَةَ فَرَأَيْتُهُمْ يَسْجُدُونَ لِمَرْزُبَانٍ لَهُمْ فَأَنْتَ أَحَقُّ بِأَنْ يُسْجَدَ لَكَ فَقَالَ لِي: «أَرَأَيْتَ لَوْ مَرَرْتَ بِقَبْرِى أَكُنْتَ تَسْجُدُ لَهُ؟» فَقُلْتُ: لَا فَقَالَ: «لَا تَفْعَلُوا لَو كنت آمُر أحد أَنْ يَسْجُدَ لِأَحَدٍ لَأَمَرْتُ النِّسَاءَ أَنْ يَسْجُدْنَ لِأَزْوَاجِهِنَّ لِمَا جَعَلَ اللَّهُ لَهُمْ عَلَيْهِنَّ مِنْ حق» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد

ব্যাখ্যা: হীরাত ইরাকের কুফা নগরীর উপকণ্ঠে একটি প্রাচীন শহর। এখানকার লোকের তাদের সমাজের প্রধান ও বড় বড় বীর বাহাদুরকে সিজদা করে সম্মান প্রদর্শন করতো। হাদীসের বর্ণনাকারী কয়স (রহঃ) এগুলো স্বচক্ষে দর্শন করে মনে মনে ভাবেন আমাদের নেতা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের এই সিজদা পাওয়ার বেশি হকদার; সুতরাং আমরা মদীনাহ্ পৌঁছে তাকেও সিজদা করবো। সফর থেকে ফিরে এসে তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট তার মনের ইচ্ছা ব্যক্ত করে বলেন, হে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমরা কি আপনাকে সিজদা করবো না?

সিজদা যেহেতু কারো সম্মান ও দাসত্ব প্রকাশের জন্য করা হয়ে থাকে। আর এই দাসত্ব একমাত্র আল্লাহর জন্যই স্বীকৃত অন্যের জন্য নয়, সুতরাং (এই দাসত্ব ও সম্মানের) সিজদা ও আল্লাহ ছাড়া অন্যের জন্য স্বীকৃত নয়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, হে কায়স! আমার মৃত্যুর পর তুমি যদি আমার কবরের পাশ দিয়ে যাও তবে কি ঐ কবরকে বা ঐ কবরবাসীকে সিজদা করবে? সাহাবী উত্তরে বললেন, না তা করবো না, সাহাবীর এই না বলার পরও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, না তোমরা তা কখনো করো না; আমার মৃত্যুর পর যেমন আমার কবরকে সিজদা করবে না ঠিক তেমনি আমার জীবদ্দশায়ও আমাকে সিজদা করবে না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ঐ নিষেধাজ্ঞা ঐ সাহাবীর জন্য যেমন ছিল ঠিক তেমনি সর্বকালের সকল উম্মাতের জন্য প্রযোজ্য। আল্লাহ তা‘আলার বাণী : ‘‘তোমরা সূর্যকে সিজদা করো না, চন্দ্রকেও না, আল্লাহকে সিজদা করো, যিনি এগুলো সৃষ্টি করেছেন, যদি একান্ত তার ‘ইবাদাত করো।’’ (সূরা হা-মীম আস্ সিজদা ৪১ : ৩৭)

এ আয়াতে কারীমার ব্যাখ্যায় ‘আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেনঃ ‘‘তোমরা সিজদা করো ঐ সত্বাকে যিনি চিরঞ্জীব, যার মৃত্যু নেই, আর যার রাজত্বের পতন ঘটে না।’’ আজ তোমরা আমার সম্মান ও বড়ত্বের কারণে আমাকে সিজদা দিবে কাল যখন আমি মৃত্যুবরণ করবো এবং কবরে সমাহিত হবো তখন কি করবে? ধ্বংসশীল ও মরণশীল কোনো কিছুকেই সাজদায় দেয়া যাবে না। অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে নারী জাতির ওপর স্বামীর অধিকার বা হাকের কথা উল্লেখ করে বলেন, আল্লাহ ছাড়া কাউকে সিজদা দেয়া যদি বৈধ হতো তাহলে নারী জাতিকে নির্দেশ করতাম যে, তারা যেন তাদের স্বামীদেরকে সিজদা করে। আল্লাহ ছাড়া অন্যকে সিজদা বৈধ নয়, তাই নারীকেও তার স্বামীদের সাজদার হুকুম করা হয়নি। (মিরকাতুল মাফাতীহ)

[পীর বা পীরের কবরে সিজদা দানকারীদের এ হাদীস থেকে শিক্ষাগ্রহণ করা উচিত] (সম্পাদক)


হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
পুনঃনিরীক্ষণঃ