লগইন করুন
পরিচ্ছেদঃ ১৭. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - হাদিয়া (উপহার) ও হিবার (অনুদান) প্রসঙ্গে
৩০২৬-[১১] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মদীনায় আগমন করলেন, মুহাজিরগণ তাঁর নিকট এসে বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আমরা যাদের মধ্যে এসেছি তাঁদের চেয়ে অধিক দানশীল এবং অল্প দ্বারা হলেও সহানুভূতিশীল প্রদানের মতো কোনো সম্প্রদায় আমরা আর দেখিনি। তাঁরা আমাদের দুঃখ-কষ্টের ভাগিদার হয়েছেন এবং কষ্টার্জিত দ্রব্যে আমাদেরকে শরীক করেছেন, যাতে আমরা আশঙ্কা করছি যে, তারাই সকল সাওয়াব নিয়ে যাবেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তা ততক্ষণ পর্যন্ত হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা তাদের জন্য দু’আ ও প্রশংসা করবে। (তিরমিযী; তিনি এটা সহীহ বলেছেন)[1]
وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: لَمَّا قَدِمَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمَدِينَةَ أَتَاهُ الْمُهَاجِرُونَ فَقَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ مَا رَأَيْنَا قَوْمًا أَبْذَلَ مِنْ كَثِيرٍ وَلَا أَحْسَنَ مُوَاسَاةً مِنْ قَلِيلٍ مِنْ قَوْمٍ نَزَلْنَا بَيْنَ أَظْهُرِهِمْ: لَقَدْ كَفَوْنَا المؤونة وَأَشْرَكُونَا فِي الْمَهْنَأِ حَتَّى لَقَدْ خِفْنَا أَنْ يَذْهَبُوا بِالْأَجْرِ كُلِّهِ فَقَالَ: «لَا مَا دَعَوْتُمُ اللَّهَ لَهُمْ وَأَثْنَيْتُمْ عَلَيْهِمْ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَصَحَّحَهُ
ব্যাখ্যা: (لَمَّا قَدِمَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর প্রথম আগমনে যখন মদীনায় আসলেন।
(أَتَاهُ الْمُهَاجِرُونَ) অর্থাৎ- আনসারীরা তাদের সেবায় আঞ্জাম দেয়া এবং তাদের বাড়ী-ঘর ও বাগানসমূহের অর্ধেক তাদেরকে দান করার পর শেষ পর্যন্ত মুহাজিরগণ যেন তাদের স্ত্রীদের বিবাহ করতে পারে সে উদ্দেশে তাদের কেউ তাঁর সর্বাধিক সুন্দরী স্ত্রীদেরকে তালাক দিল। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘‘তাদের পরে যারা ঘর-বাড়ী ও ঈমান লাভ করেছিল তারা তাঁদের কাছে হিজরত করে যাওয়া ব্যক্তিদেরকে ভালোবাসে এবং তাদেরকে যা দেয়া হয়েছে সে কারণে নিজেদের অন্তরে কোনো প্রয়োজন অনুভব করে না, নিজেদের ওপরে তাদেরকে প্রাধান্য দেয়, যদিও তাদের প্রয়োজন থাকে।’’ (সূরা আল হাশর, ৫৯ : ৯)
(مَا رَأَيْنَا قَوْمًا أَبْذَلَ مِنْ كَثِيرٍ وَلَا أَحْسَنَ مُوَاسَاةً مِنْ قَلِيلٍ) অর্থাৎ- অধিক সম্পদ ব্যয়কারী এবং অল্প সম্পদ দিয়ে হলেও এত অধিক উত্তম সহানুভূতি প্রকাশকারী কোনো সম্প্রদায় আমরা দেখিনি।
(مِنْ قَوْمٍ نَزَلْنَا بَيْنَ أَظْهُرِهِمْ) অর্থাৎ- আমরা যাদের কাছে এবং যাদের মাঝে অবস্থান নিয়েছি। এ অবস্থান নেয়াকালে তারা বেশি সম্পদের অধিকারী হোক অথবা কম সম্পদের মালিক হোক উভয় অবস্থায় তারা নিঃসন্দেহে আমাদের প্রতি দয়া করেছে। হাদীসাংশে قوم দ্বারা আনসারগণ উদ্দেশ্য।
(لَقَدْ كَفَوْنَا المَؤُوْنَةَ) অর্থাৎ- তারা ঘর-বাড়ী তৈরি ও খেজুর বাগান আবাদ করে ও অন্যান্য কাজের মাধ্যমে আমাদের সেবা করার কষ্ট বহন করেছ।
(وَأَشْرَكُوْنَا فِى الْمَهْنَأِ) অর্থাৎ- তারা আমাদেরকে ভাইদের মতো করে জীবন শুদ্ধি ও যথার্থতার উপযোগী তাদের কষ্টার্জিত সম্পদে অংশীদার করেছ। একমতে বলা হয়েছে, বিনা কষ্টে যা আসে তাকে الْمَهْنَأِ বলা হয়। ইবনু মালিক বলেন, তারা আমাদেরকে তাদের খেজুর বাগানের ফলে অংশীদার করেছে, খেজুর বৃক্ষক্ষ পানি ও সেগুলো মেরামত করার কষ্টে আমাদের জন্য যথেষ্ট হয়েছে এবং আমাদেরকে তাদের ফলের অর্ধেক দান করেছে। কাযী বলেন, তারা তাদেরকে তাদের যে সকল শস্য ও ফলে অংশীদার করেছে এর মাধ্যমে তারা তাই উদ্দেশ্য করছে।
(حَتّٰى لَقَدْ خِفْنَا أَنْ يَّذْهَبُوْا بِالْأَجْرِ كُلِّه) অর্থাৎ- আমাদের প্রতি আনসারীদের অনুগ্রহের আধিক্যতার কারণে আমাদের সকল ‘ইবাদাতের সাওয়াব এবং মক্কা হতে মদীনায় হিজরত করার সাওয়াব আল্লাহ তাদেরকে দিয়ে দিবেন।
(فَقَالَ النبى ﷺ : لَا) অর্থাৎ- তারা সকল পুণ্য নিয়ে যাবে না, কেননা আল্লাহর দয়া প্রশস্ত। সুতরাং তোমাদের জন্য থাকবে ‘ইবাদাত করার পুণ্য, আর তাদের জন্য থাকবে পরস্পর সহযোগিতা করার সাওয়াব।
(مَا دَعَوْتُمُ اللّٰهَ لَهُمْ وَأَثْنَيْتُمْ عَلَيْهِمْ) অর্থাৎ- যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা তাদের জন্য কল্যাণের দু‘আ করতে থাকবে, কেননা তোমাদের প্রতি তাদের অনুগ্রহ করার কারণে তোমাদের দু‘আ তাদের জন্য যথেষ্ট হবে, আর তোমাদের ভালো কর্মের সাওয়াব তোমাদের দিকে ফিরে আসবে। ত্বীবী (রহঃ) বলেনঃ তারা যখন তাদের নিজেদের ওপর ক্লেশ, ক্লান্তি বহন করেছে এবং সুখে-দুঃখে আমাদেরকে অংশীদার করেছে, তখন নিঃসন্দেহে তারা অনেক প্রতিদান পাওয়ার অধিকার অর্জন করেছে। সুতরাং কীভাবে আমরা তাদের প্রতিদান দিব? অতঃপর আল্লাহর রসূল উত্তর দিলেন না, অর্থাৎ- তোমরা যেরূপ ধারণা করেছ বিষয়টি ঐরূপ নয়, কেননা তোমরা যখন তাদের কর্মের কৃতজ্ঞতা স্বরূপ তাদের ব্যাপারে গুণকীর্তন করলে এবং তাদের জন্য অবিরাম দু‘আ করতে থাকলে তখন তোমরা তাদেরকে প্রতিদান দিয়ে দিলে। (তুহফাতুল আওয়াযী ৬ষ্ঠ খন্ড, হাঃ ২৪৮৭)