পরিচ্ছেদঃ ১৪১. সিজদার সময় হাত রাখার পূর্বে হাঁটু রাখা প্রসঙ্গে
৮৪১। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ কেউ সালাতে উটের বসার ন্যায় বসে থাকে।[1]
সহীহ।
[1] তিরমিযী (অধ্যায়ঃ সালাত, হাঃ ২৬৯), নাসায়ী (অধ্যায়ঃ তাত্ববীক্ব, অনুঃ মানুষ সিজদাকালে সর্বপ্রথম মাটিতে কি মিলাবে, হাঃ ১০৮৯), বায়হাক্বী ‘সুনানুল কুবরা’ (২/১০০) মুহাম্মাদ ইবনু ‘আব্দুল্লাহ ইবনু হাসান সূত্রে।
-
মাসআলাহঃ সিজদার সময় হাঁটু রাখার পূর্বে হাত রাখা প্রসঙ্গে
(১) ওয়ায়িল ইবনু হুজর (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সালাতে সিজদায় যাওয়ার সময় (মাটিতে) হাতের পূর্বে হাঁটু রাখতে দেখেছি। আর তিনি সিজদা থেকে দাঁড়াবার সময় হাঁটুর পূর্বে হাত উঠাতেন।
দুর্বলঃ আবূ দাঊদ (৮৩৮), নাসায়ী (১/১৬৫), তিরমিযী (২/৫৬), ইবনু মাজাহ (৮৮২), অনুরূপ দারিমী (১/৩০৩), ত্বাহাভী (১/১৫০), দারাকুতনী (১৩১-১৩২), হাকিম (১/২২৬), এবং তার থেকে বায়হাক্বী (২/৯৮)।
আল্লামা আলবানী বলেন, এ সনদটি দুর্বল। ইমাম তিরমিযী বলেনঃ ‘হাদীসিটর সনদ গরীব, শারীক সূত্রে এরূপ হাদীস অন্য কেউ বর্ণনা করেছেন বলে আমরা জানি না।’ ইমাম হাকিম বলেনঃ ‘ইমাম মুসলিম শারীক ও আসিম ইবনু কুলাইব দ্বারা দলীল গ্রহণ করেছেন। কিন্তু তারা যেমনটি বললেন বিষয়টি তেমন নয়, যদিও ইমাম যাহাবী তাতে একমত পোষণ করেছেন। কেননা শারীকের দ্বারা ইমাম মুসলিম দলীল গ্রহণ করেননি। তিনি তার বর্ণনা মুতাবা‘আতে এনেছেন মাত্র। যেমন এ বিষয়টি কতিপয় মুহাক্কিক্ব স্পষ্ট করে বলেছেন। যাদের মধ্যে স্বয়ং ইমাম যাহাবীও ‘আল-মিযান’ গ্রন্থে এরূপ বলেছেন। বেশীর ভাগই দেখা যায়, ইমাম হাকিম অতঃপর ইমাম যাহাবী এরূপ সংশয়ে পড়ে থাকেন এবং তারা শারীকের হাদীসসমূহকে মুসলিমের শর্তে সহীহ বলে থাকেন। সেজন্য এ ব্যাপারে সচেতন ও সতর্ক করা হলো। ইমাম দারাকুতনী হাদীসটি বর্ণনার পরপরই বলেছেন, ‘‘এতে শারীক সূত্রে ইয়াযীদ একক হয়ে গেছেন। কেবল শারীকই এটি ইয়াযীদ সূত্রে বর্ণনা করেছেন। আর যে বর্ণনায় শারীক একক হয়ে যান, সেখানে তিনি শক্তিশালী নন।’’
আল্লামা আলবানী বলেন, এটাই সঠিক কথা। ইয়াযীদ ইবনু হারূন বলেছেন, ‘‘শারীক এ হাদীস ছাড়া অন্য কোনো হাদীস ‘আসিম সূত্রে বর্ণনা করেননি।’’ জমহুর ইমামগণের নিকট শারীকের স্মরণশক্তি ভালো না। বরং মন্দ। কতিপয় ইমাম তো স্পষ্ট করে বলেছেন, শারীক সংমিশ্রণ করতেন। সেজন্য তিনি কোনো বর্ণনায় একক হয়ে গেলে তার দ্বারা দলীল গ্রহণ করা যাবে না। সুতরাং তিনি যখন কোনো নির্ভরযোগ্য হাফিযগণের বিপরীত করবেন তখন তার অবস্থা কিরূপ হবে?
হাদীসটি একদল নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারী ‘আসিম থেকে বর্ণনা করেছেন। তাতে তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সালাতের বিবরণ শারীকের বর্ণনার সালাতের বিবরণের চেয়েও বেশী পূর্ণ করে দিয়েছেন। তা সত্ত্বেও সিজদা করা ও সিজদা থেকে উঠার পদ্ধতি ‘আসিম থেকে মোটেই উল্লেখ করেননি। যেমনটি আবূ দাঊদ, নাসায়ী, আহমাদ ও অন্যান্য বিদ্বানগণ যায়িদাহ, ইবনু উয়াইনাহ ও শুজা‘ ইবনুল ওয়ালীদ সূত্রে ‘আসিম থেকে বর্ণনা করেছেন। তাদের সকলে সম্মিলিত বর্ণনা প্রমাণ করেছেন যে, ‘আসিমের হাদীসের সিজদার যে পদ্ধতি শারীকের একক বর্ণনা থেকে এসেছে তা মুনকার।
(২) হাদীসটি শারীক ছাড়াও অন্যজন ‘আসিম থেকে তার পিতা থেকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সূত্রে মুরসালভাবে বর্ণনা করেছেন। সেখানে ওয়ায়িলের কথা উল্লেখ নেই। সেই হাদীসটি বর্ণনা করেছেন আবূ দাঊদ, ত্বাহাভী ও বায়হাক্বী শাকীক আবূ লাইস থেকে। তিনি বলেছেন, আমার নিকট হাদীসটি বর্ণনা করেছেন ‘আসিমা। কিন্তু এ শাকীক মাজহুল। তাকে চেনা যায়নি। যেমনটি বলেছেন ইমাম যাহাবী ও অন্যরা।
(৩) হাদীসটির আর একটি সূত্র রয়েছে। সেটিও দোষযুক্ত। যা বর্ণনা করেছেন আবূ দাঊদ ও বায়হাক্বী ‘আব্দুল জাব্বার ইবনু ওয়ায়িল থেকে তার পিতা সূত্রে। তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সালাতের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সিজদায় যেতেন তখন তাঁর হস্তদ্বয় মাটিতে রাখার পূর্বে হাঁটুদ্বয় মাটিতে স্থিরভাবে রাখতেন।
বর্ণনাকারী শাকীকের সূত্রে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, ‘আসিম ইবনু কুলাইদ তার পিতা থেকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সূত্রে এ সনদের উপরোক্ত হাদীসের অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। বর্ণিত বর্ণনাকারীদ্বয়ের কোনো একজনের বর্ণনায় রয়েছেঃ ‘‘তিনি যখন সিজদার পর দাঁড়াতেন তখন তিনি হাঁটুর উপর ভর করে দাঁড়াতেন।’’
এর দোষ হচ্ছে সনদের ‘আবদুল জাব্বার ইবনু ওয়ায়িল ও তার পিতার মাঝে ইনকিতা (বিচ্ছিন্নতা)। কেননা তিনি তার পিতা থেকে শুনেনি (এবং তার পিতাকে পাননি)। যেমনটি বলেছেন ইবনু মাঈন, ইমাম বুখারী ও অন্যান্য হাফিযগণ। আর দ্বিতীয় সনদে শাকীক মাজহুল ব্যক্তি।
৪। এ বিষয়ে আর একটি হাদীসঃ ‘‘তিনি তাঁর দু’ হাঁটুর উপর ভর করে সিজদায় যেতেন। কোনো ঠেস লাগাতেন না।’’
ইবনু হিব্বান এটি বর্ণনা করেছেন। কিন্তু এর সনদটি দুর্বল। সনদে মাজহুল বর্ণনাকারীদের সমাবেশ ঘটেছে। ইবনুল মাদীনী বলেন, আমরা এর সনদে মুহাম্মাদ ইবনু মু‘আযকে, তার পিতাকে, তার দাদাকে চিনি না। এ সনদটি মাজহুল। হাফিয ইবনু হাজার বলেন, মুহাম্মাদ মাজহুল এবং তার ছেলে মু‘আ মাকবূল। আমি (আলবানী) বলছিঃ ইবনু হিব্বান কর্তৃক তাদেরকে নির্ভরযোগ্য আখ্যা দেয়ার দিকে দৃষ্টি দিয়ে ধোঁকায় পরা যাবে না। কেননা এ বিষয়ে তার মতটি শায। কারণ তিনি তাতে জমহুর মুহাদ্দিসগণের ঐক্যমতে প্রসিদ্ধ মতের উপর চলেননি।
(৫) এ অধ্যায়ে আর একটি হাদীস রয়েছেঃ সেটিও ত্রুটিযুক্ত। যা বর্ণনা করেছেন ‘আলা ইবনু ইসমাঈল... আনাস (রাঃ) থেকে। তিনি বলেন, ‘‘আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তাকবীরের সাথে সাথে ঝুঁকে পড়তে দেখেছি। তাঁর দু’ হাঁটু তাঁর দু’ হাতের চেয়ে অগ্রণী হয়ে যেতো।’’ এটি বর্ণনা করেছেন দারাকুতনী, হাকিম, তাঁর থেকে বায়হাক্বী। ইমাম দারাকুতনী ও বায়হাক্বী বলেন, ‘আলা ইবনু ইসমাঈল হাদীসটি এককভাবে বর্ণনা করেছেন। আমি (আলবানী) বলছিঃ সনদের ‘আলা ইবনু ইসমাঈল মাজহুল। যেমনটি ইবনুল কাইয়্যিম এবং তার পূর্বে বায়হাক্বী বলেছেন। ইবনু আবূ হাতিম তার পিতার সূত্রে বলেন, এ হাদীসটি মুনকার। আর হাকিম ও যাহাবী যে বলেছেন, এটি শায়খাইনের শর্তানুযায়ী সহীহ, এটি তাদের দু’ জন থেকে এ আলার অবস্থা সম্পর্কে বড় ধরণের অবহেলা। তিনি শায়খাইনের বর্ণনাকারীদের অন্তর্ভুক্ত নন!
সিজদাকালে হাত রাখার পূর্বে হাঁটু রাখার হাদীস দুর্বল হওয়ার পাশাপাশি সহীহ হাদীসসমূহেরও পরিপন্থি। তা হচ্ছেঃ
প্রথম হাদীসঃ عن ابن عمر أنه كان يضع يديه قبل ركبتيه وقال كان النبى صلى الله عليه وسلم يفعل ذلك
‘‘ইবনু উমার সূত্রে বর্ণিত। তিনি হাঁটুদ্বয়ের পূর্বে হস্তদ্বয় রাখতেন এবং তিনি বলতেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরূপই করতেন।’’
হাদীসটি বর্ণনা করেছেন ত্বাহাভী ‘শারহু মা‘আনি’, দারাকুতনী (১৩১), হাকিম (১/২২৬), তার থেকে বায়হাক্বী (২/১০০), এবং হাযিমী ‘আল-ই‘তিবার’ (৫৪)- একাধিক সনদে ‘আবদুল আযীয ইবনু মুহাম্মাদ দারাওয়ারদী থেকে, তিনি ‘উবায়দুল্লাহ ইবনু উমার থেকে তিনি নাফী‘ থেকে ইবনু উমার সূত্রে। ইমাম হাকিম বলেছেন, মুসলিমের শর্তে সহীহ। ইমাম যাহাবীও তার সাথে একমত পোষণ করেছেন। (আলবানী বলেন) হাদীসটি সেইরূপ যেমন তারা বলেছেন হাদীসটিকে আরো সহীহ বলেছেন ইবনু খুযাইমাহ যেমন বুলুগুল মারাম গ্রন্থে (১/২৬৩) রয়েছে। আর ইমাম হাকিম বলেছেন, আমার অন্তর তার দিকে আকৃষ্ট। অর্থাৎ ওয়ায়িলের হাদীস থেকে এদিকে। কেননা এ ব্যাপারে সাহাবীগণ ও তাবেঈন সূত্রে বহু বর্ণনা আছে। আর ইমাম বায়হাক্বী বর্ণনাটিকে এমন দোষে দোষী করেছেন যা নিন্দনীয় নয়। তিনি বলেছেনঃ ‘আব্দুল আযীয যেরূপ বলেছেন আমি তাতে কেবল সংশয় দেখছি, অর্থাৎ মারফূ করণে। তিনি বলেনঃ মাহফুয হচ্ছে যা আমরা পছন্দ বা চয়ন করেছি। অতঃপর তিনি বর্ণনা করেন, আইয়্যূব সনদে নাফী‘ থেকে ইবনু উমার সূত্রেঃ তোমাদের কেউ সিজদাকালে যেন হস্তদ্বয় রাখে এবং তা থেকে উঠার সময় যেন হস্তদ্বয় উঠায়। হাফিয বলেছেনঃ কতককে বলা যেতে পারে, এটি মাওকূফ বর্ণনা, মারফূ নয়। কেননা প্রথম বর্ণনাটিতে হাঁটুদ্বয়ের পূর্বে হস্তদ্বয় রাখার কথা রয়েছে। আর দ্বিতীয় বর্ণনায় সংক্ষেপে কেবল হাত রাখা প্রমাণ করছে।’’
আল্লামা আলবানী বলেন, ‘আবদুল আযীয নির্ভরযোগ্য। কেবল আইয়ুবের একক বিরোধীতার দ্বারা তাকে সন্দেহ করা ওয়াজিব হবে না। কেননা তিনি মারফূ বৃদ্ধি করেছেন। আর তার পক্ষ থেকে এ বর্ধিতাংশ গ্রহণযোগ্য। এর প্রমাণ হলো, তিনি তা সংরক্ষণ করেছেন। তিনি একই সাথে মাওকূফ এবং মারফূ উভয়টি বর্ণনা করেছেন। মাওকূফ বর্ণনাতে তার বিপরীত করেছেন ইবনু আবূ লায়লাহ, নাফি‘ থেকে এ শব্দেঃ তিনি যখন সিজদায় যেতেন তখন হস্তদ্বয়ের পূর্বে হাঁটুদ্বয় রাখতেন। আর যখন সিজদা থেকে উঠতেন তখন হাঁটুদ্বয়ের পূর্বে হস্তদ্বয় উঠাতেন।’’ ইবনু আবূ শায়বাহ (১/১০২/২) কিন্তু এ বর্ণনাটি মুনকার। কেননা ইবনু আবূ লায়লাহর নাম হচ্ছে মুহাম্মাদ ইবনু আবদুর রাহমান। তার স্মরণশক্তি মন্দ। কেননা তার মুসনাদে বিরোধীতা করেছেন দারাওয়ারদী ও আইয়ুব সাখতায়ানী। যেমনটি আপনি প্রত্যক্ষ করলেন।
দ্বিতীয় হাদীসঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণীঃ اذا سجد أحدكم فلا يبرك كما يبرك البعير وليضع يديه قبل ركبتيه
‘‘তোমাদের কেউ যখন সিজদা করে তখন সে যেন উটের ন্যায় না বসে, বরং সে যেন হাঁটুদ্বয়ের উপর হস্তদ্বয় রাখে।’’
এটি বর্ণনা করেছেন বুখারী ‘আত-তারীখ’ (১/১/১৩৯), আবূ দাঊদ (৮৪০), তার থেকে ইবনু হাজম (৪/১২৮-১২৯), নাসায়ী (১/১৪৯), দারিমী (১/৩০৩), ত্বাহাভী ‘মুশকিলুল আসার’ (১/৬৫-৬৬), শারহুল মা‘আনী (১/১৪৯), দারাকুতনী (১৩১), বায়হাক্বী (২/৯৯-১০০), এবং আহমাদ (২/৩৮১), প্রত্যেকেই আব্দুল আযীয ইবনু মুহাম্মাদ দারাওয়ারদী সনদে। তিনি বলেছেন, আমাদের নিকট হাদীস বর্ণনা করেছেন মুহাম্মাদ ইবনু আব্দুল্লাহ ইবনুল হাসান, আবুয যিনাদ থেকে, তিনি আ‘রাজ থেকে, তিনি আবূ হুরাইরাহ থেকে মারফূভাবে।
আল্লামা আলবানী বলেন, এ সনদটি সহীহ। সনদের প্রত্যেক ব্যক্তি নির্ভরযোগ্য এবং মুহাম্মাদ ইবনু আব্দুল্লাহ ইবনুল হাসান ব্যতীত সকলেই মুসলিমের রিজাল। মুহাম্মাদ ইবনু আব্দুল্লাহ ইবনুল হাসান একজন নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি। যেমন ইমাম নাসায়ী ও অন্যান্যরা বলেছেন এবং হাফিয তাদের অনুসরণ করেছেন ‘আত-তারীখ’ গ্রন্থে। সেজন্যই ইমাম নাববী ‘আল-মাজমু’ গ্রন্থে এবং আল্লামা যুরকানী ‘শারহু মাওয়াহিব’ (৭/৩২০) বলেছেনঃ এর সনদ ভালো (জাইয়্যিদ)। তাদের কতিপয় সূত্রে আল্লামা মানাবিও অনুরূপ বক্তব্য উদ্ধৃত করেছেন। আল্লামা আব্দুল হাক্ব আল আহকামুল কুবরা গ্রন্থে (ক্বাফ ৫/১) বলেছেনঃ এটি পূর্বের হাদীসের চেয়ে উত্তম সনদ বিশিষ্ট। অর্থাৎ এর বিরোধী ওয়ায়িলের হাদীসের চেয়ে উত্তম সনদ বিশিষ্ট।
কেউ কেউ আলচ্য হাদীসটির তিনটি দোষের কথা বলেছেনঃ ১। মুহাম্মাদ ইবনু আব্দুল্লাহ সূত্রে দারাওয়ারদী এতে একক হয়ে গেছেন। ২। এ মুহাম্মাদ একক হয়ে গেছেন আবূ যিনাদ সূত্রে ৩। বুখারীর বক্তব্যঃ আমি জানি না মুহাম্মাদ ইবনু আব্দুল্লাহ ইবনুল হাসান হাদীসটি আবূ যিনাদ থেকে শুনেছেন কি না।
আসলে এগুলো আদৌ দোষের কিছু নয় এবং তা হাদীসটির বিশুদ্ধতায় বিন্দুমাত্র প্রভাব ফেলবে না। অতএব প্রথম ও দ্বিতীয় আপত্তির জবাব হলো, দারাওয়ারদী এবং তার শায়খ দু’ জনেই নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি। সুতরাং হাদীসে তাদের দু’ জনের একক হয়ে যাওয়াতে কোনো অসুবিধা নেই। যেমন তা গোপন নয় আর তৃতীয়টি মোটেও কোনো দোষ নয় কেবল ইমাম বুখারীর নিকট ছাড়া। তিনি বর্ণনাকারীদের পারস্পরিক বাস্তব সাক্ষাৎ প্রমাণিত হওয়ার শর্ত করেছেন, যা তাঁর পরিচিত নীতিমালা। কিন্তু তা জমহুর মুহাদ্দিসগণের নিকট শর্ত নয়। বরং তাদের নিকট যথেষ্ট হচ্ছে, যিনি যার থেকে বর্ণনা করেছেন তাদের উভয়ে যদি পারস্পরিক সাক্ষাৎ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে এবং তাদের কেউ যদি মুদাল্লিস না হন (তাহলে এরূপ বর্ণনাকারী আন্ আন্ পদ্ধতিতে বর্ণিত হাদীস দলীল হিসেবে গ্রহণ করা জায়িয)। যেমন তা উল্লেখ রয়েছে, ‘মুসত্বালা’ এবং এর শারাহ ইমাম মুসলিমের সহীহ গ্রন্থের মুকাদ্দিমাহয়। আর এরূপ বৈশিষ্ট এখানে বিদ্যমান আছে। কেননা মুহাম্মাদ ইবনু আব্দুল্লাহ মুদাল্লিস বলে জানা যায় না। অতঃপর তিনি আবূ যিনাদের সমসাময়িক বা একই যুগের লোক এবং তিনি তাকে দীর্ঘদিন পেয়েছিলেন। কেননা তিনি মৃত্যুবরণ করেন ১৪৫ সনে, তিনি ৫৩ বৎসর বেঁচে ছিলেন। আর আবূ যিনাদ মৃত্যু বরণ করেন ১৩০ সনে। অতএব হাদীসটি সহীহ নিঃসন্দেহে।
আর উপরোক্ত হাদীস বর্ণনায় দারাওয়ারদী একক হয়ে যাননি। বরং হাদীসের একটি বাক্যের মুতাবা‘আতও রয়েছে- আবূ দাঊদ (৮৪১), নাসায়ী এবং তিরমিযী (২/৫৭৫৮) হাদীস বর্ণনা করেছেন ‘আব্দুল্লাহ ইবনু নাফী‘ সূত্রে মুহাম্মাদ ইবনু আব্দুল্লাহ ইবনু হাসান সংক্ষেপে এ শব্দেঃ يعمد أحدكم فيبرك فى صلاته برك الجمل؟
‘‘তোমাদের মধ্যে কিছু লোক উটের ন্যায় বসে থাকে?’’ সুতরাং এটি একটি শক্তিশালী মুতাবা‘আত। কেননা ইবনু নাফী‘ নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি এবং তিনি দারাওয়ারদীর মতো মুসলিমের রিজালভুক্ত।
তৃতীয় হাদীসঃ আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে অন্য ভাষায় এসেছেঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সিজদা করতেন তখন তাঁর দু’ হাঁটুর পূর্বে দু’ হাত রাখা শুরু করতেন। এটি বর্ণনা করেছেন, ত্বাহাভী ‘শারহুল মা‘আনি (১/১৪৯)।
এ সহীহ হাদীসগুলো পূর্বের হাদীসগুলো যে মুনকার তার প্রমাণ বহন করেছে।
সতর্কীকরণঃ ইবনু আবূ শায়বাহ ‘মুসান্নাফ’ (১/১০২/২), ত্বাহাবী এবং বায়হাক্বী আব্দুল্লাহ ইবনু সাঈদের সনদে তার দাদা থেকে আবূ হুরাইরাহ সূত্রে বর্ণনা করেছেনঃ ‘তোমাদের কেউই সিজদাকালে যেন হস্তদ্বয়ের পূর্বে হাঁটুদ্বয় রাখে এবং যেন উট বসার ন্যায় না বসে।’’ এ হাদীসটি বাতিল। এতে আব্দুল্লাহ ইবনু সাঈদ মাক্ববুরী একক হয়ে গেছেন। তিনি খুবই নিকৃষ্ট। বরং কতিপয় হাদীস বিশারদ ইমাম তাকে মিথ্যা দোষে দোষী করেছেন। সেজন্যই ইমাম বায়হাক্বী এবং তার অনুসরণের হাফিয ‘ফাতহুল বারী’ (২/২৪১) গ্রন্থে বলেছেনঃ ‘‘এর সনদ দুর্বল।’’ এ সন্দেহভাজন বর্ণনাকারীর ব্যাপারে এ উত্তম ধারণা করা যেতে পারে যে, তিনি ইচ্ছা করেছিলেন এ কথা বলতেঃ ‘‘সে যেন হাঁটুদ্বয়ের পূর্বে হস্তদ্বয় রাখে।’’- যেমন সহীহ হাদীসে এসেছে। কিন্তু তার উপর বিষয়টি উলটপালট হয়ে যাওয়ায় তিনি বলে ফেলেছেনঃ ‘‘হস্তদ্বয়ের পূর্বে হাঁটুদ্বয়।’’- যা কি না ভুল।
জেনে রাখুন, উটের হাঁটুর পূর্বে হাত রাখার বিষয়ে ব্যতিক্রম হওয়ার কারণ হচ্ছে এই যে, সর্বপ্রথম হাঁটু রাখে এবং হাঁটু তার হাতে মধ্যে হয়ে থাকে। দেখুন, ‘লিসানুল আরব’ ও অন্যান্য অভিধান গ্রন্থ, ত্বাহাভী ‘মুশকিলুল আসার’ ও শারহু মা‘আনিল আসার’ গ্রন্থে এরূপ কথাই উল্লেখ করেছেন। ইমাম কাসিম সরকসত্বী (রহঃ)-ও ‘গরীবুল হাদীসে’ (২/৭০/১-২) আবূ হুরাইরাহ থেকে সহীহ সনদে বর্ণনা করেছেন যে, আবূ হুরাইরাহ বলেছেনঃ ‘‘তোমাদের কেউ পলাতক উটের ন্যায় যেন অবতরণনা করে।’’ ইমাম কাসিম বলেনঃ এটা সিজদার ব্যাপারে বলা হচ্ছে যে, পূর্ণ ধীরতা ও পর্যায়ক্রমতা বজায় না রেখে বিচলিত উটের ন্যায় নিজেকে নিক্ষেপ না করে এবং ধীরস্থিরতার সাথে করে। প্রথমে হস্তদ্বয় রাখবে অতঃপর হাঁটুদ্বয় রাখবে। এ বিষয়ে ব্যাখ্যা সম্বলিত একটি হাদীসও বর্ণিত হয়েছে। অতঃপর উপরোল্লিখিত হাদীস উল্লেখ করেন। আর ইবনুল কাইয়্যিম অদ্ভুত এক মন্তব্য করে বলেছেনঃ এটা বিবেক সম্মত নয় এবং ভাষাবিদগণও এ ব্যাখ্যার সাথে পরিচিত নন। কিন্তু আমি (আলবানী) যেসব প্রমাণপঞ্জির দিকে ইঙ্গিত করেছি তা এর প্রতিবাদ করে এবং এছাড়াও আরো অনেক প্রমাণপঞ্জি আছে। তাই এগুলো অধ্যয় করা উচিত। আমি (আলবানী) এ বিষয়ে শায়খ তুয়াইজিরীর প্রতিবাদে লিখিত পুস্তিকায় বিস্তারিত আলোচনা করেছি।
আগে হাঁটু রাখার হাদীসগুলোর কোনো কোনোটি দুর্বল হওয়ার প্রমাণ বহন করছে আবূ ক্বিলাবার নিম্নোক্ত হাদীসটিও।
চতুর্থ হাদীসঃ আবূ ক্বিলাবাহ বলেন, মালিক ইবনুল হুওয়াইরিস আমাদের নিকট এসে বলতেন, আমি কি তোমাদেরকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সালাতের বর্ণনা দিবো না...? তিনি যখন প্রথম রাক‘আতের দ্বিতীয় সিজদা থেকে মাথা উঠাতেন তখন সোজা হয়ে বসতেন। অতঃপর যমীনের উপর ভর দিয়ে দাঁড়াতেন। (নাসায়ী, বায়হাক্বী, শায়খাইনের শর্তানুযায়ী সহীহ সনদে, এবং বুখারী আবূ ক্বিলাবাহ থেকে অনুরূপভাবে অন্য সূত্রে)।
পঞ্চম দলীলঃ ইবনুল জাওযী আত-তাহক্বীক্ব গ্রন্থে (১০৮/২), মারওয়াযী স্বীয় মাসায়িল গ্রন্থে (১/১৪৭/১) ইমাম আওযায়ী’ থেকে সহীহ সনদে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেনঃ ‘‘আমি লোকজনকে হাঁটুর পূর্বে হাত রাখার উপর পেয়েছি।’’
ফায়িদাহ (উপকারীতাঃ) উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে প্রমাণিত হলো যে, সহীহ সুন্নাত হচ্ছে সিজদায় যাওয়ার সময় মাটিতে হাঁটুদ্বয় স্থাপনের পূর্বে হস্তদ্বয় রাখা। ইমাম মালিক, ইমাম আওযাঈ এবং হাদীস বিশারদগণের অভিমতও তাই। যেমনর তা নাক্বল করেছেন ইবনুল কাইয়্যিম ‘যাদুল মা‘আদ’ গ্রন্থে, হাফিয ‘ফাতহুল বারী’ গ্রন্থে এবং অন্যান্যরা, এবং ইমাম আহমাদ সূত্রেও এমনটি এসেছে, যেমন রয়েছে ইবনুল জাওযীর ‘আত-তাহক্বীক্ব’ গ্রন্থে (ক্বাফ ১০৮/২)। দেখুন, ইরওয়াউল গালীল, ৩৫৭, সিলসিলাতুল আহাদীসিয যঈফাহ ওয়াল মাওযু‘আহ ৯২৯, এবং সিফাতু সালাতি ন্নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)।
بَابُ كَيْفَ يَضَعُ رُكْبَتَيْهِ قَبْلَ يَدَيْهِ
حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيدٍ، حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ نَافِعٍ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ حَسَنٍ، عَنْ أَبِي الزِّنَادِ، عَنِ الْأَعْرَجِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلي الله عليه وسلم:يَعْمِدُ أَحَدُكُمْ فِي صَلَاتِهِ، فَيَبْرُكُ كَمَا يَبْرُكُ الْجَمَلُ
- صحيح