কোন ভুল থাকলে সেটি রিপোর্ট করার জন্য অনুগ্রহ করে লগইন করুন।
লগইন করুন
লগইন করুন
৫৯
পরিচ্ছেদঃ ৩১. অযু করা ফরয
৫৯। আবুল মালীহ্ (রহঃ) হতে তার পিতা সূত্রে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আল্লাহ আত্মসাৎকৃত মালের দান এবং পবিত্রতা ছাড়া সালাত কবুল করেন না।[1]
সহীহ।
[1] নাসায়ী (অধ্যায়ঃ পবিত্রতাম অনুঃ উযু ফারয, হাঃ ১৩৯ এবং অধ্যায়ঃ যাকাত, অনুঃ হারাম পন্থায় উপার্জিত মালের সাদাকা, হাঃ ২৫২৩), ইবনু মাজাহ (অধ্যায়ঃ পবিত্রতা, অনুঃ আল্লাহ পবিত্রতা ব্যতীত সালাত কবুল করেন না, হাঃ ২৭১) হাফিয ইবনু হাজার ‘ফাতহুল বারী’ (৩/৩২৬) গ্রন্থে বলেন, এর সানাদ সহীহ।
-
হাদীস থেকে শিক্ষাঃ
১। অবৈধ উপায়ে উপার্জিত সম্পদ দান করলে তা কবুল হয় না এবং তাতে নেকীও পাওয়া যায় না।
২। পবিত্রতা ছাড়া সালাত হয় না। এতে প্রমাণিত হয়, জানাযার সালাত, দু’ ঈদের সালাতসহ সমস্ত নাফল সালাত এর অন্তর্ভুক্ত। এতে আরো প্রমাণিত হয়, পবিত্রতা ছাড়া তাওয়াফও যথেষ্ট হবে না। কেননা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একেও সালাত বলেছেন।
উযু সম্পর্কে যা জানা জরূরীঃ
(ক) উযুর সংজ্ঞাঃ উযুর শাব্দিক অর্থ হচ্ছে স্বচ্ছতা। পরিভাষায় আল্লাহর নামে পাক পানি দিয়ে শারঈ পদ্ধতিতে হাত, মুখ, পা ধৌত করা ও মাথা মাসাহ করাকে উযু বলে। উযুর ফারয চারটি। যথাঃ সম্পূর্ণ মুখ ধোয়া, কনুই পর্যন্ত হাত ধোয়া, মাথা মাসাহ্ করা ও টাখনু পর্যন্ত দু পা ধোয়া। এগুলো বাদে উযুর অবশিষ্ট সবই সুন্নাত। যেমন, কব্জি পর্যন্ত হাত ধোয়া, কুলি করা, নাকে পানি দেয়া, কান মাসাহ্ করা।
(খ) উযু ভঙ্গের কারণঃ (১) পেশাব পায়খানার রাস্তা দিয়ে দেহ থেকে কোনো কিছু নির্গত হলে (যেমন পেশাব, পায়খানা, কৃমি, বায়ু, মযী ইত্যাদি), বিভিন্ন সহীহ হাদীসের আলোকে জানা যায় যে, এটাই হচ্ছে উযু ভঙ্গের প্রধান কারণ (২) যে সব কাজ করলে গোসল ফারয হয় তা ঘটলে (৩) হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লে (৪) পর্দাহীন অবস্থায় লজ্জাস্থান স্পর্শ করলে (৫) উটের গোশত খেলে (৬) ইস্তিহাযার রক্ত বের হলে। শায়খ আলবানী বলেন, ইস্তিহাযা ব্যতীত কম হোক বা বেশী হোক অন্য কোনো রক্ত প্রবাহের কারণে উযু ভঙ্গ হওয়ার কোনো সহীহ দলীল নেই। (৭) পেটের গলগোল, ঘুম, যৌন উত্তেজনা ইত্যাদির কারণের প্রেক্ষিতে কেউ উযু ভঙ্গ হওয়ার ব্যাপারে সন্দেহে পতিত হলে পুনরায় উযু করবে। কিন্তু যদি কোনো শব্দ, গন্ধ বা নিদর্শন না পান এবং নিজের উযুর ব্যাপারে নিশ্চিত থাকেন তাহলে পুনরায় উযু করার দরকার নেই। (সহীহুল বুখারী, সহীহ মুসলিম, সুনানু আরবা‘আ, আহমাদ, দারিমী, মুয়াত্তা মালিক, তাহক্বীক মিশকাত-আলবানী ও অন্যান্য)
(গ) এক নজরে উযুর বিভিন্ন মাসআলাহঃ (১) উযুর অঙ্গগুলি এক, দু’ বা তিনবার করে ধোয়া যাবে (সহীহুল বুখারী, সহীহ মুসলিম)। তবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনবার করেই বেশি ধুতেন- (সহীহুল বুখারী, সহীহ মুসলিম) তিনের অধিকবার ধোয়া বাড়াবাড়ি- (নাসায়ী, ইবনু মাজাহ)। ধোয়ার মধ্যে জোড়-বিজোড় করা যাবে- (সহীহ ইবনু খুযাইমাহ)।
(২) উযুর মধ্যে তারতীব বা ধারাবাহিকতা বজায় রাখা জরূরী। (সূরাহ মায়িদাহ ৬, নায়ল ১/২১৪)।
(৩) উযুর অঙ্গগুলির নখ পরিমাণ স্থান শুষ্ক থাকলে পুনরায় উযু করতে হবে- (সহীহ মুসলিম)। দাঁড়ির গোড়ায় পানি পৌঁছানোর চেষ্টা করতে হবে। তবে না পৌঁছলেও উযু সিদ্ধ হবে। (সহীহুল বুখারী, নায়লুল আওত্বার)।
(৪) শীতে হোক বা গ্রীষ্মে হোক পূর্ণভাবে উযু করতে হবে। কিন্তু পানির অপচয় করা যাবে না। আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাধারণতঃ এক ‘মুদ্দ’ বা ৬২৫ গ্রাম পানি দিয়ে উযু করতেন। (সহীহুল বুখারী, সহীহ মুসলিম)
(৫) উযুতে ব্যবহারকৃত পানি বা উযুর শেষে পাত্রে অবশিষ্ট পানি অপবিত্র হয় না। বরং তা দিয়ে পুনরায় উযু বা পবিত্রতা হাসিল করা যায়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবায়ি কিরাম একই উযুর পাত্রে বারবার হাত ডুবিয়ে উযু করেছেন। (সহীহুল বুখারী, সহীহ মুসলিম)।
(৬) উযুর অঙ্গে যখমপট্টি বাঁধা থাকলে এবং তাতে পানি লাগলে রোগ বৃদ্ধির আশংকা থাকলে তার উপর দিয়ে ভিজা হাতে মাসাহ করবে। (সহীহ ইবনু খুযাইমাহ, ইবনু মাজাহ, নায়লুল আওত্বার)।
(৭) পবিত্র জুতা বা যে কোনো ধরণের পাক মোজার উপরে মাসাহ্ করা চলবে- (আহমাদ, তিরমিযী, আবূ দাঊদ, ইবনু মাজাহ)। জুতার নীচে অপবিত্র থাকলে তা ভালভাবে ঐ জুতার উপর মাসাহ্ করা চলবে (আবূ দাঊদ, ইবনু খুযাইমাহ, রওযাতুন নাদিয়্যাহ ১/৯১)।
(৮) উযু শেষে পবিত্র তোয়ালে, গামছা বা অনুরূপ কিছু দ্বারা উযুর অঙ্গ মোছা জায়িয আছে। (ইবনু মাজাহ, সালমান ফারসী (রাঃ) বর্ণিত, হাঃ ৪৬৮, ‘আওনুল মা‘বুদ নায়ল, ও মিরআতুল মাফাতীহ ১/২৮৩-২৮৪)।
(৯) উযু সহ পায়ে মোজা পরা থাকলে নতুন উযুর সময়ে মোজার উপরিভাগে দু’ হাতের ভিজা আঙ্গুল পায়ের পাতা থেকে টাখনু পর্যন্ত টেনে এনে একবার মাসাহ্ করবে। মুক্বীম অবস্থায় একদিন একরাত ও মুসাফির অবস্থায় তিনদিন তিনবার একটানা মোজার উপরে মাসাহ্ করা চলবে। (সহীহুল বুখারী, সহীহ মুসলিম, আবূ দাঊদ, নাসায়ী, তিরমিযী, নায়ল)।
(১০) উযুর অঙ্গগুলি ডান দিক থেকে ধৌত করা সুন্নাত। (সহীহুল বুখারী, সহীহ মুসলিম)।
(১১) উযু থাক বা না থাক, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতি ওয়াক্ত সালাতের পূর্বে উযু করায় অভ্যস্ত ছিলেন। তবে মক্কাহ্ বিজয়ের দিন তিনি এক উযুতে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করেন।
(১২) উযুতে গর্দান মাসাহ্ করার কোনো সহীহ দলীল নেই। ইমাম নাববী (রহঃ) একে বিদ‘আত বলেছেন। (আহমাদ, নায়লুল আওত্বার ১/২৪৫-২৪৭) তথ্যসূত্রঃ সালাতুল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পৃঃ ৩৩-৩৪)।
ইমাম নাববী (রহঃ) বলেন, ঘাড় মাসাহ্ সম্পর্কিত হাদীস জাল। হানাফী ফাক্বীহ ক্বাযী খান বলেন, ঘাড় মাসাহ্ আদবও নয়, সুন্নাতও নয়- (কাবীনী ২৪ পৃঃ)। আল্লামা ইবনুল হুমাম হানাফী (রহঃ) বলেন, কেউ কেউ একে বিদ‘আত বলেছেন- (ফাতহুল ক্বাদীর ১/১৪)। ইমাম মুহাম্মাদ তার আসল কিতাবে ঘাড় মাসাহ্ এর উল্লেখই করেননি- (যাহরাতু রিয়াযিল আবরার, ৫৯ পৃঃ)। অধিকাংশ শাফিঈ বিদ্বান ঘাড় মাসাহের বিপক্ষে। কারণ এর কোনো প্রমাণ নেই। সেজন্য ইমাম শাফিঈ এবং প্রাথমিক যুগের ‘আলিমগণ এর উল্লেখ করেননি- (রওযাতুত ত্বালিবীন ১/৬১)। হাফিয ইবনুল কাইয়্যিম বলেন, ঘাড় মাসাহ্ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে কোনো সহীহ হাদীস নেই- (যাদুল মা‘আদ ১/৪৯)।
(১৩) মুখে উযুর নিয়্যাত পড়ার কোনো দলীল নেই। উযুর নিয়্যাতের নাম করে কোনো একটি হরফ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন কি কোনো সাহাবী থেকেও বর্ণিত হয়নি, সহীহ সনদেও নয় এবং দুর্বল সনদেও নয়। সুতরাং মুখে উযুর নিয়্যাত পড়া বিদ‘আত। যাদুল মা‘আদ (১/৪৯)।
(১৪) উযু করাকালীন সময়ে পৃথক কোনো দু‘আর কথা সঠিকভাবে জানা যায় না। অনুরূপ উযুর প্রত্যেক অঙ্গ ধোয়ার পৃথক পৃথক দু‘আর কথাও ভিত্তিহীন। শায়খ ‘আব্দুল ক্বাদির জিলানী ও ইমাম গাযযালী (রহঃ) উযুর প্রত্যেকটি অঙ্গ যেমন হাত, মুখ, পা প্রভৃতি ধোয়ার সময় একটি করে দু‘আ বিনা বরাতে দিয়েছেন- (দেখুন গুনয়্যাতুত ত্বালিবীন ও ইহউয়াউল উলূম)। ভারতের হানাফী মুহাদ্দিস আল্লামা আলাউদ্দীন মুত্তাকী হিন্দী (রহঃ) দু’আগুলো ইবনু মানদার কিতাবুল উযু, দায়লামী ও মুস্তাগফিরীর দা‘ওয়াত এবং ইবনু নাজ্জারের হাওয়ালা দিয়ে লিখে বলেন, এ হাদীসটি জাল হাদীসের অন্তর্ভুক্ত- (দেখুন, কানযুল ‘উম্মাল ৯/২৭৯) আল্লামা শামী হানাফী (রহঃ) বলেন, হিলয়্যা গ্রন্থে প্রণেতা বলেছেন, এ দু‘আটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত আছে বলে আমি জানতে পারিনি। (দেখুন, শামী ১ম খন্ড)।
(১৫) উযুর শেষে সূরাহ ক্বাদর পাঠ করারও কোনো সহীহ দলীল নেই। দায়লামী ও ফাক্বীহ আবূ লাইসের মুক্বাদ্দামাহর বরাত দিয়ে দূররে মুখতার প্রণেতা ও তাহাভী উযুর শেষে তিনবার সূরাহ ক্বাদর পড়ার কথা বলেছেন। কিন্তু এ সবের কিছুই সহীহ নয়। তাই এ সম্পর্কে অন্যান্য ফাক্বীহগণ বলেন, মাক্বাসিদুল হাসানাহ্ গ্রন্থে রয়েছে, উযুর পরে সূরাহ ক্বাদর পড়ার কোনো প্রমাণ নেই। বরং ফাক্বীহ আবূ লাইসের মুক্বাদ্দামাহয় যা আছে তার শব্দ প্রমাণ করে যে, ঐ হাদীসটি জাল ও বানোয়াট (দেখুন, মাক্বাসিদুল হাসানাহ ৪২৪ পৃঃ, মারাকিল ফালাহ ৪৪ পৃঃ)। আল্লামা শামী হানাফী (রহঃ) বলেন, এ ব্যাপারে আমাদের গুরু হাফিয ইবনু হাজার আসকালানী (রহঃ)-কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, এ সংক্রান্ত কোনো জিনিসই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে তার উক্তি কিংবা ক্রিয়া দ্বারা প্রমাণিত নেই- (শামী ১/১২২) [তথ্যসূত্রঃ আইনী তুহফা]
(১৬) উযুর পাত্রে পাক হাত ডুবাতে হয়। ঘুম থেকে উঠে দু’ হাত কব্জি পর্যন্ত ধুয়ে উযুর পাত্রে হাত ডুবাবে। (সহীহুল বুখারী)।
(১৭) উযুর সময় নাক ঝাড়া উত্তম। কেননা শয়তান নাকের ভিতর রাত কাটায়। (সহীহুল বুখারী)।
(১৮) বিভিন্ন বর্ণনা দ্বারা জানা যায় যে, সর্বদা উযুর হালতে থাকা, উযু থাকতে উযু করা, উযুর হালতে সালামের জবাব দেয়া ও অন্যান্য যিকর আযকার করা, উযু থাকা সত্ত্বেও প্রতি ওয়াক্ত সালাতের জন্য নতুনভাবে উযু করা, কুরআন মাজীদ পড়া ও স্পর্শ করার পূর্বে উযু করা, ঘুমের পূর্বে উযু করা, একবার স্ত্রী সহবাসের পর পুনরায় সহবাস করার ইচ্ছা করলে উযু করা ইত্যাদি উত্তম কাজ। তবে এরূপ না করলেও জায়িয আছে। এতে কোনো গুনাহ নেই।
(১৯) উযুর সময় প্রয়োজনীয় কথাবার্তা বলা নিষেধ নয়।
(২০) উযুর পূর্বে মিসওয়াক করা সুন্নাত। (সহীহুল বুখারী ও সহীহ মুসলিম)।
باب فَرْضِ الْوُضُوءِ
حَدَّثَنَا مُسْلِمُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ، حَدَّثَنَا شُعْبَةُ، عَنْ قَتَادَةَ، عَنْ أَبِي الْمَلِيحِ، عَنْ أَبِيهِ، عَنِ النَّبِيِّ صلي الله عليه وسلم قَالَ " لَا يَقْبَلُ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ صَدَقَةً مِنْ غُلُولٍ وَلَا صَلَاةً بِغَيْرِ طُهُورٍ " . صحيح
Narrated AbulMalih:
The Prophet (ﷺ) said: Allah does not accept charity from goods acquired by embezzlement as He does not accept prayer without purification.