লগইন করুন
পরিচ্ছেদঃ ৮. প্রথম অনুচ্ছেদ - মাথার চুল মুণ্ডন করার প্রসঙ্গে
২৬৪৮-[৩] ’আব্দুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায় হজে বলেছেনঃ হে আল্লাহ! যারা মাথার চুল মুন্ডিয়েছে তাদের ওপর তুমি রহমত করো। সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! মাথা ছেঁটেছে যারা তাদের প্রতিও। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, হে আল্লাহ! যারা মাথার চুল মুন্ডিয়েছে তাদের প্রতি তুমি রহমত বর্ষণ করো। সাহাবীগণ করলেন, হে আল্লাহর রসূল! যারা মাতা ছেঁটেছে তাদের প্রতিও। এবার তৃতীয়বার তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, যারা মাথা ছেঁটেছে তাদের প্রতিও। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ الْحَلْقِ
وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ فِي حَجَّةِ الْوَدَاعِ: «اللَّهُمَّ ارْحَمِ الْمُحَلِّقِينَ» . قَالُوا: وَالْمُقَصِّرِينَ يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ قَالَ: «اللَّهُمَّ ارْحَمِ الْمُحَلِّقِينَ» . قَالُوا: وَالْمُقَصِّرِينَ يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ قَالَ: «وَالْمُقَصِّرِينَ»
ব্যাখ্যা: হাদীসের ভাষ্য হলো রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায় হজ্জে বললেন, হে আল্লাহ! তুমি মাথা মুণ্ডনকারীদের প্রতি করুণা করুন। সাহাবীদের আরযের প্রেক্ষিতে তিনি তৃতীয় বা চতুর্থবার বললেন, মাথার চুল ছোটকারীদের প্রতিও করুণা করুন। কোন সময় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু‘আ করেছেন বিদায় হজ্জে নাকি হুদায়বিয়ায় এ নিয়ে ‘উলামাগণ মতবিরোধ করেছেন। যেহেতু এ বিষয়ে বর্ণিত বর্ণনাগুলোর মাঝে ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়েছে। ইমাম ইবনু ‘আবদুল বার (রহঃ) বলেছেন, এটি হুদায়বিয়ার সময় হয়েছে। ইমাম নাবাবী (রহঃ) বলেছেন, বিশুদ্ধ বহুল প্রচলিত বক্তব্য হলো এটি বিদায় হজ্জে ছিল। কাযী ‘ইয়ায বলেন, এটি খুব দূরবর্তী বক্তব্য নয় যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এটি উভয় স্থানেই বলেছেন। এ মতভেদের কারণ হলো, এক্ষেত্রে যে বর্ণনাগুলো এসেছে তার কিছুতে বিদায় হজ্জের কথা এসেছে আর কিছুতে হুদায়বিয়ার কথা এসেছে।
ইবনু হাজার আসকালানী (রহঃ) বলেন, উভয় স্থানে বলেছেন এ বক্তব্যটি সুনির্দিষ্ট। তবে উভয় স্থানে বলার কারণটি ভিন্ন। হুদায়বিয়ায় এ দু‘আ করেছেন, কারণ কাফিররা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং সাহাবীদের মক্কায় প্রবেশে বাধা দিলে উভয় পক্ষের মাঝে এ মর্মে সন্ধি হয় যে, আগামী বছর তারা ‘উমরা করবে। ফলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদের ইহরাম মুক্ত হওয়ার আদেশ দিলে তারা মনের দুঃখে তা থেকে বিরত থাকে। তখন উম্মু সালামাহ (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তাদের পূর্বে নিজের মাথা মুণ্ডন করার পরামর্শ দিলে তিনি তাই করেন। অতঃপর তারা তার অনুসরণ করে ফলে কেউ মাথা মুণ্ডন করেন আবার কেউ মাথার চুল ছোট করেন। যেহেতু যারা মাথা মুণ্ডন করেছেন তারা তার আদেশ পালনে দ্রুত অগ্রসর হয়েছে, তাই তাদের জন্য বেশি দু‘আ করেছেন আর যারা মাথার চুল ছোট করেছেন তারা একটু দ্বিধা করেছেন, তাই তাদের জন্য একবার হয়েছে।
আর বিদায় হজ্জে মাথা মুণ্ডনকারীদের জন্য বারবার দু‘আ করার কারণ সম্পর্কে ইবনুল আসীর ‘‘আন নিহায়াহ্’’ গ্রন্থে বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে হজ্জ/হজকারী অধিকাংশ সাহাবী সাথে হাদী বা কুরবানীর পশু আনেননি। অতঃপর যখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাদেরকে হজ্জের নিয়্যাত বাতিল করে ইহরাম মুক্ত হয়ে মাথা মুন্ডানোর আদেশ দিলেন তখন তা তাদের উপর কঠিন হয়ে গেল। আর আনুগত্য ভিন্ন অন্য কোন পথ না থাকায় মাথার চুল ছোট করাটাই তাদের মনে অধিক হালকা মনে হল মাথা মুন্ডানোর চেয়ে, তাই অধিকাংশ সাহাবী মাথার চুল ছোট করলেন। আর আদেশ পালনে পরিপূর্ণ হওয়ায় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাথা মুণ্ডনকারীদের কাজকে প্রাধান্য দিলেন।
মাথার চুল মুণ্ডন বা ছোট করার পরিমাণ নিয়ে ‘উলামাগণ মতবিরোধ করেছেন। এ মর্মে ইমামদের বক্তব্যগুলো উল্লেখ করে ‘আল্লামা শানক্বীত্বী (রহঃ) বলেন, আমার নিকট সবচেয়ে শক্তিশালী বক্তব্য হলো মাথার চুল ছোট করার ক্ষেত্রে প্রতিটি চুল বেছে বেছে ছোট করা আবশ্যক নয়। কারণ এতে বড় ধরনের অসুবিধা রয়েছে। মাথার সকল প্রান্তের চুল ছোট করাই যথেষ্ট তবে মাথার একচতুর্থাংশ বা একতৃতীয়াংশ চুল ছোট করা যথেষ্ট নয় যেটি হানাফী ও শাফি‘ঈদের বক্তব্য। কেননা আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, رؤوسكم তিনি বলেননি যে, তোমাদের মাথার কিছু দিকের চুল মুণ্ডন কর।
আয়াতের বাহ্যিক অর্থ সমস্তটুকু মুন্ডানো বা সমস্তটাই ছোট করা। আর আয়াতের বাহ্যিক অর্থ থেকে দলীল ছাড়া অন্য অর্থ নেয়া বৈধ নয়। কেননা, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সন্দেহজনক বিষয় ছেড়ে সন্দেহহীন বিষয়ে ধাবিত হও। হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, মাথা মুণ্ডন না করে চুল ছোট করাও যথেষ্ট বা বৈধ।