লগইন করুন
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ
১৯৬৫-[১০] সালমান আল ফারিসী হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, শা’বান মাসের শেষ দিনে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে উদ্দেশ্য করে ভাষণ দিলেন। তিনি বললেন, হে লোক সকল! একটি মহিমান্বিত মাস তোমাদেরকে ছায়া হয়ে ঘিরে ধরেছে। এ মাস একটি বারাকাতময় মাস। এটি এমন এক মাস, যার মধ্যে একটি রাত রয়েছে, যা হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। আল্লাহ এ মাসের সিয়াম ফরয করেছেন আর নফল করে দিয়েছেন এ মাসে রাতের কিয়ামকে। যে ব্যক্তি এ মাসে একটি নফল কাজ করবে, সে যেন অন্য মাসের একটি ফরয আদায় করল। আর যে ব্যক্তি এ মাসে একটি ফরয আদায় করেন, সে যেন অন্য মাসের সত্তরটি ফরয সম্পাদন করল। এ মাস সবরের (ধৈর্যের) মাস; সবরের সাওয়াব জান্নাত। এ মাস সহমর্মিতার। এ এমন এক মাস যাতে মু’মিনের রিযক বৃদ্ধি করা হয়। যে ব্যক্তি এ মাসে কোন সায়িমকে ইফতার করাবে, এ ইফতার তার গুনাহ মাফের কারণ হবে, হবে জাহান্নামের অগ্নিমুক্তির উপায়। তার সাওয়াব হবে সায়িমের অনুরূপ। অথচ সায়িমের সাওয়াব একটুও কমানো হবে না।
আমরা বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমাদের সকলে তো সায়িমের ইফতারীর আয়োজন করতে সমর্থ নয়। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এ সাওয়াব আল্লাহ তা’আলা ঐ ইফতার পরিবেশনকারীকেও প্রদান করেন, যে একজন সায়িমকে এক চুমুক দুধ, একটি খেজুর অথবা এক চুমুক পানি দিয়ে ইফতার করায়। আর যে ব্যক্তি একজন সায়িমকে পেট ভরে খাইয়ে পরিতৃপ্ত করল, আল্লাহ তা’আলা তাকে আমার হাওযে কাওসার থেকে এভাবে পানি খাইয়ে পরিতৃপ্ত করবেন, যার পর সে জান্নাতে (প্রবেশ করার পূর্বে) আর পিপাসার্ত হবে না। এমনকি সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। এটা এমন এক মাস যার প্রথম অংশে রহমত। মধ্য অংশে মাগফিরাত, শেষাংশে জাহান্নামের আগুন থেকে নাজাত। যে ব্যক্তি এ মাসে তার অধিনস্তদের ভার-বোঝা সহজ করে দেবে, আল্লাহ তাকে ক্ষমা করবেন। তাকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি দেবেন।[1]
اَلْفَصْلُ الثَّالِثُ
وَعَن سلمَان قَالَ: خَطَبَنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي آخِرِ يَوْمٍ مِنْ شَعْبَانَ فَقَالَ: «يَا أَيُّهَا النَّاسُ قَدْ أَظَلَّكُمْ شَهْرٌ عَظِيمٌ مُبَارَكٌ شَهْرٌ فِيهِ لَيْلَةٌ خَيْرٌ مَنْ أَلْفِ شهر جعل الله تَعَالَى صِيَامَهُ فَرِيضَةً وَقِيَامَ لَيْلِهِ تَطَوُّعًا مَنْ تَقَرَّبَ فِيهِ بخصلة من الْخَيْرِ كَانَ كَمَنْ أَدَّى فَرِيضَةً فِيمَا سِوَاهُ وَمَنْ أَدَّى فَرِيضَةً فِيهِ كَانَ كَمَنْ أَدَّى سَبْعِينَ فَرِيضَةً فِيمَا سِوَاهُ وَهُوَ شَهْرُ الصَّبْرِ وَالصَّبْر ثَوَابه الْجنَّة وَشهر الْمُوَاسَاة وَشهر يزْدَاد فِيهِ رِزْقُ الْمُؤْمِنِ مَنْ فَطَّرَ فِيهِ صَائِمًا كَانَ لَهُ مَغْفِرَةً لِذُنُوبِهِ وَعِتْقَ رَقَبَتِهِ مِنَ النَّارِ وَكَانَ لَهُ مِثْلُ أَجْرِهِ مِنْ غَيْرِ أَنْ يَنْقُصَ مِنْ أَجْرِهِ شَيْءٌ» قُلْنَا: يَا رَسُولَ اللَّهِ لَيْسَ كلنا يجد مَا نُفَطِّرُ بِهِ الصَّائِمَ. فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «يُعْطِي اللَّهُ هَذَا الثَّوَابَ مَنْ فَطَّرَ صَائِمًا عَلَى مَذْقَةِ لَبَنٍ أَوْ تَمْرَةٍ أَوْ شَرْبَةٍ مِنْ مَاءٍ وَمَنْ أَشْبَعَ صَائِمًا سَقَاهُ اللَّهُ مِنْ حَوْضِي شَرْبَةً لَا يَظْمَأُ حَتَّى يَدْخُلَ الْجَنَّةَ وَهُوَ شَهْرٌ أَوَّلُهُ رَحْمَةٌ وَأَوْسَطُهُ مَغْفِرَةٌ وَآخِرُهُ عِتْقٌ مِنَ النَّارِ وَمَنْ خَفَّفَ عَنْ مَمْلُوكِهِ فِيهِ غَفَرَ الله لَهُ وَأعْتقهُ من النَّار» . رَوَاهُ الْبَيْهَقِيّ
ব্যাখ্যা: (خَطَبَنَا رَسُوْلُ اللّٰهِ) ‘‘আমাদের উদ্দেশে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুতবা দিলেন’’ এ খুতবা জুমার খুতবা হতে পারে অথবা সাধারণ নাসীহাতের খুতবাহ্ হতে পারে। (قَدْ أَظَلَّكُمْ) ‘‘তোমাদেরকে ছায়া দিয়েছে’’। অর্থাৎ- তোমাদের নিকট আগমন করেছে এবং তোমাদের নিকটবর্তী হয়েছে যেন তা তোমাদের ওপর ছায়া ফেলে। (شَهْرٌ عَظِيمٌ) একটি মহান মাস, অর্থাৎ- তার মর্যাদা মহান। কেননা তা সকল মাসের সরদার তথা সেরা মাস। (وَهُوَ شَهْرُ الصَّبْرِ) ‘‘তা সবরের মাস’’। কেননা এর সিয়াম পালন হয় দিনের বেলায় পানাহার থেকে সবর করার (বিরত থাকার) মাধ্যমে আর এর রাতের কিয়াম করা হয় রাত জাগার সব্রের মাধ্যমে। এজন্যই সওমকে সবর বলা হয়েছে।
(الصَّبْر ثَوَابُهُ الْجنَّةُ) ‘‘সবরের প্রতিদান হল জান্নাত’’ আল্লাহর আদিষ্ট কাজ পালনের এবং নিষিদ্ধ কাজ বর্জনের ধৈর্যের প্রতিদান হল জান্নাত। (شَهْرُ الْمُؤَاسَاةِ) ‘‘সহমর্মিতার মাস’’ অর্থাৎ- জীবিকাতে পরস্পরে অংশ গ্রহণ ও ভাগীদার হওয়ার মাস। এতে সকল মানুষের প্রতি দয়া প্রদর্শনদানের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে বিশেষভাবে দরিদ্র্ ও প্রতিবেশীর প্রতি দয়া প্রদর্শনের জন্য সতর্ক করা হয়েছে।
(مَنْ فَطَّرَ فِيهِ صَائِمًا) ‘‘যে ব্যক্তি এ মাসে সিয়াম পালন কারীকে ইফতার করালো’’ অর্থাৎ- ইফতারের সময় কিছু খাওয়ালো বা পান করালো হালাল উপার্জনের দ্বারা।
(مَذْقَةِ لَبَنٍ) পানি মিশ্রিত দুধ, অর্থাৎ- সাধ্যানুযায়ী কোন কিছু দ্বারা সায়িমকে ইফতার করতে সহযোগিতা করলে সে ব্যক্তি এ সাওয়াব অর্জন করবে। আর তৃপ্ত সহকারে খাওয়ালে ও পান করালে তার জন্য আরো বড় পুরস্কার তথা হাওযে কাওসার থেকে পানিয় পান করার সৌভাগ্য অর্জন করবে।
(مَنْ خَفَّفَ عَنْ مَمْلُوكِه فِيْهِ) যে ব্যক্তি এ মাসে তার দাসের কাজ হালকা করে দিবে, অর্থাৎ- রমাযান (রমজান) মাসে দাসের প্রতি দয়া পরশ হয়ে এবং রমাযানের সিয়াম পালন সহজকরণার্থে দাসের কাজ কমিয়ে দিবে। (غَفَرَ اللهُ لَه) আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিবেন। অর্থাৎ- ইতোপূর্বে সে যে গুনাহ করেছে তা তিনি ক্ষমা করে দিবেন।
(وَأعْتَقَه مِنَ النَّارِ) ‘‘এবং জাহান্নাম থেকে তাকে মুক্তি দিবেন’’ অর্থাৎ- কাজের কঠোরতা থেকে দাসকে মুক্তি দেয়ার প্রতিদান স্বরূপ আল্লাহ তাকে জাহান্নামের কঠিন শাস্তি থেকে মুক্তি দিবেন।