লগইন করুন
পরিচ্ছেদঃ ১০. প্রথম অনুচ্ছেদ - সালাতের নিয়ম-কানুন
صِفَةُ الصَّلَاةِ এর অর্থ সালাতের গুণাগুন, বৈশিষ্ট্য, বিবরণ, বর্ণনা ইত্যাদি। এখানে উদ্দেশ্য হলো সালাতের যাবতীয় বিধি-বিধান। যেমন আরকাম, আহকাম, সুন্নাত, মুসতাহাব, ওয়াজিব ইত্যাদি। ইমাম ইবনু হুমাম এর মতে صِفَةٌ ও وَصْفٌ এর মধ্যে অর্থের কোন ব্যবধান নেই। তবে এখানে وَصْفٌ এর মর্মার্থ হলো সালাতের প্রকৃত কাজ-কর্ম যেমন ক্বিয়াম (কিয়াম), রুকূ’, সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) ইত্যাদি অধ্যায়ে আলোচিত হবে।
৭৯০-[১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করলো। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন মসজিদের এক কোণে বসা ছিলেন। এরপর লোকটি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে তাঁকে সালাম জানালো। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাকে বললেন, ’’ওয়া ’আলায়কাস্ সালা-ম; যাও, আবার সালাত আদায় কর। তোমার সালাত হয়নি।’’ সে আবার গেল ও সালাত আদায় করলো। আবার এসে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সালাম করলো। তিনি উত্তরে বললেন, ’’ওয়া ’আলায়কাস্ সালা-ম; আবার যাও, পুনরায় সালাত আদায় কর। তোমার সালাত হয়নি।’’ এরপর তৃতীয়বার কিংবা এর পরের বার লোকটি বললো, হে আল্লাহর রসূল! আমাকে শিখিয়ে দিন। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তুমি যখন সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করতে ইচ্ছা করবে (প্রথম) ভালোভাবে উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করবে। এরপর ক্বিবলা (কিবলা/কেবলা)র দিকে দাঁড়িয়ে তাকবীর তাহরীমা বলবে। তারপর কুরআন থেকে যা পড়া তোমার পক্ষে সহজ হয় তা পড়বে। তারপর রুকূ’ করবে। রুকূ’তে প্রশান্তির সাথে থাকবে। এরপর মাথা উঠাবে। সোজা হয়ে দাঁড়াবে। অতঃপর সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করবে। সাজদাতে স্থির থাকবে। তারপর মাথা উঠিয়ে স্থির হয়ে থাকবে। এরপর দ্বিতীয় সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করবে। সাজদায় স্থির থাকবে। আবার মাথা উঠিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়াবে। এভাবে তুমি তোমার সব সালাত আদায় করবে। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ صِفَةِ الصَّلَوةِ
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ: أَنَّ رَجُلًا دَخَلَ الْمَسْجِدَ وَرَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ جَالِسٌ فِي نَاحِيَةِ الْمَسْجِدِ فَصَلَّى ثُمَّ جَاءَ فَسَلَّمَ عَلَيْهِ فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم: «وَعَلَيْك السَّلَام ارْجِعْ فَصَلِّ فَإِنَّكَ لَمْ تُصَلِّ» . فَرَجَعَ فَصَلَّى ثُمَّ جَاءَ فَسَلَّمَ فَقَالَ: «وَعَلَيْكَ السَّلَامُ ارْجِعْ فَصَلِّ فَإِنَّكَ لَمْ تُصَلِّ» فَقَالَ فِي الثَّالِثَةِ أَوْ فِي الَّتِي بَعْدَهَا عَلِّمْنِي يَا رَسُولَ اللَّهِ فَقَالَ: «إِذَا قُمْتَ إِلَى الصَّلَاةِ فَأَسْبِغِ الْوُضُوءَ ثُمَّ اسْتَقْبِلِ الْقِبْلَةَ فَكَبِّرْ ثُمَّ اقْرَأْ بِمَا تَيَسَّرَ مَعَكَ مِنَ الْقُرْآنِ ثُمَّ ارْكَعْ حَتَّى تَطْمَئِنَّ رَاكِعًا ثُمَّ ارْفَعْ حَتَّى تَسْتَوِّيَ قَائِمًا ثُمَّ اسْجُدْ حَتَّى تَطْمَئِنَّ سَاجِدًا ثُمَّ ارْفَعْ حَتَّى تَطْمَئِنَّ جَالِسًا ثُمَّ اسْجُدْ حَتَّى تَطْمَئِنَّ سَاجِدًا ثُمَّ ارْفَعْ حَتَّى تَطْمَئِنَّ جَالِسًا» . وَفِي رِوَايَةٍ: «ثُمَّ ارْفَعْ حَتَّى تَسْتَوِيَ قَائِمًا ثمَّ افْعَل ذَلِك فِي صَلَاتك كلهَا»
ব্যাখ্যা: রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যাও সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় কর, কেননা তুমি সালাত আদায় করোনি। অর্থাৎ- প্রশান্তি ও স্থিরতার সাথে সালাত হয়নি। কিংবা সে সালাতের সমস্ত অংশ পূর্ণরূপে আদায় করেনি। এ অর্থও নেয়া যায়। এ হাদীস তার প্রমাণ বহন করে। কেননা বললেন যাও, ‘‘সালাত আদায় করো’’। তাঁর কথায় ‘‘তুমি সালাত আদায় করনি’’ অর্থাৎ- হক আদায় করে সালাত আদায় করা হয়নি।
রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পবিত্র বাণী দ্বারা ‘‘তুমি সালাত আদায় কর। কেননা তোমার সালাত আদায় হয়নি।’’ এ হাদীস স্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছে যে, তা‘দীলে আরকান ছুটে গেলে সালাত ছুটে যাবে। যদি সালাত ছুটে না যেত তাহলে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কথা বলতেন না।
তুমি সালাত আদায় করো, কেননা তোমার সালাত হয়নি। আর এ কথাও এ হাদীস থেকে বুঝা যাচ্ছে যে, খল্লাদ ইবনু রাফি‘ সে প্রসিদ্ধ কোন রুকন পরিত্যাগ করেনি। সে একমাত্র তা‘দীল, ধীরস্থীরতা-কে ছেড়ে দিয়ে ছিলেন। তা‘দীল ও ধীরস্থিরতা ফরয না হলে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দ্বিতীয়বার সালাত আদায়ের নির্দেশ করতেন না। যেমনটি ইবনু আবী শায়বাহ্-এর রিওয়ায়াতে এ ব্যাপারে স্পষ্ট নির্দেশ করছে। তাই প্রতীয়মান হলো যে, রুকনের স্থিরতা, শান্ত হওয়া, দেরী করা পরিত্যাগ করলে সালাত বাতিল হয়ে যাবে। লেখক বলেন, এ দলীল ইমাম আবূ হানীফাহ্ ও মুহাম্মাদ এর মতামতের বিরুদ্ধে স্পষ্ট প্রমাণ। কেননা ইমাম আবূ হানীফাহ্ ও ইমাম মুহাম্মাদ এর প্রসিদ্ধ অভিমত যে, তা‘দীলে আরকান ওয়াজিব ফরয নয়।
এ হাদীসটি দ্বারা প্রমাণিত হচ্ছে যে, রুকূ‘ ও সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) ফরয। আর ক্বওমা ও জলসা সালাতের রুকন। কেননা যদি ক্বওমা, জলসা, রুকন না হতো তাহলে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেটা ত্যাগ করার কারণে সালাত না হওয়ার ঘোষণা দিতেন না।
‘‘সুতরাং যখন তুমি এ রকম করবে তখন তোমার সালাত পূর্ণ হবে। আর যদি এটা হতে কোন কিছু অসম্পূর্ণ থাকে তাহলে তোমার সালাতও অসম্পূর্ণ হবে।’’ এটা তা‘দীলে আরকান ফরয না হওয়ার ইঙ্গিত।
এ হাদীসে প্রমাণ রয়েছে যে, সালাতে ক্বিবলাকে সামনে রাখা ওয়াজিব। এটা সমস্ত মুসলিমের ঐকমত্য সিদ্ধান্ত। তবে যদি ক্বিবলাকে সামনে রাখতে অক্ষম হয় তখন অন্য দিকে ফিরেও সালাত আদায়ের অনুমতি থাকবে বা সংগ্রামের তথা যুদ্ধরত অবস্থায় হামলা আসার আশংকার থাকলে বা নফল সালাতে অন্যদিকে ফিরা বৈধ থাকবে।
তাকবীর তাহরীমা আল্লা-হু আকবার ছাড়া বিশুদ্ধ হবে না। ইমাম আবূ হানীফাহ্ (রহঃ) দ্বিমত পোষণ করেন। তিনি বলেন, যে শব্দে আল্লাহ তা‘আলার মহত্ব বুঝাবে সে শব্দ দিয়ে সালাত শুরুর করা জায়িয হবে। তাই অর্থের দিকে লক্ষ্য করতে হবে। উদ্দেশ্য মহত্ব প্রকাশ করা। যে শব্দ মহত্ব প্রকাশ করবে তা দিয়ে তাকবীর আদায় হয়ে যাবে। ইমাম আহমাদ, মালিক (রহঃ) তাকবীর-এর শব্দ নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে বাস্তব যেটা সেটাই অভিমত ব্যক্ত করেছেন। তাই এ শব্দ ছাড়া অন্য কোন শব্দ দ্বারা সালাত শুরু করা যাবে না।
রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূরাহ্ আল ফাতিহাহ্ পড়ার আদেশ করছেন। এমনিভাবে আর এক বর্ণনায় আছে, ‘‘তুমি সূরাহ্ ফাতিহাহ্ পাঠ কর, অতঃপর তোমার ইচ্ছামত আরেকটি সূরাহ্।’’ এত্থেকে বুঝা যায় সূরাহ্ আল ফাতিহাহ্ পড়ার জন্যে ভিন্ন নির্দেশ এসেছে। مَا تَيَسَّرَ শব্দের مَا শব্দটা ব্যাপক অর্থবোধক, যেটা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উক্তি ‘‘সূরাহ্ ফাতিহাহ্ ছাড়া সালাত হবে না’’ দিয়ে নির্দিষ্ট করা হয়েছে। এটা দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, সূরাহ্ ফাতিহাহ্ ছাড়া সালাত হবে না।
ইমাম আবূ ইউসুফ ও ইমাম শাফি‘ঈ (রহঃ)-এর মতে সালাতে রুকূ‘তে তা‘দীল করা তথা ধীরস্থির অবস্থান করা ফরয। তাদের পক্ষে তারা এ দলীল পেশ করে থাকেন। আর এটা অধিক বিশুদ্ধ।