লগইন করুন
পরিচ্ছেদঃ ৭. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - মাসজিদ ও সালাতের স্থান
৭২৫-[৩৭] ’আবদুর রহমান ইবনু ’আয়িশ (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি আমার ’রবকে’ অতি উত্তম অবস্থায় স্বপ্নে দেখলাম। তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, ’’মালা-উল আ’লা’’ তথা শীর্ষস্থানীয় মালায়িকাহ্ কী ব্যাপারে ঝগড়া করছে? আমি বললাম, তা তো আপনিই ভালো জানেন। তখন আল্লাহ তা’আলা তাঁর হাত আমার দুই কাঁধের মাঝখানে রাখলেন। হাতের শীতলতা আমি আমার বুকের মধ্যে অনুভব করলাম। আমি তখন আসমানসমূহ ও জমিনে যা কিছু আছে সবকিছুই জানতে পারলাম। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এ আয়াত তিলাওয়াত করলেনঃ ’’এভাবে আমি ইব্রহীমকে দেখালাম আকাশমণ্ডলী ও জমিনের রাজ্যসমূহ যাতে সে বিশ্বাসীদের অন্তর্ভুক্ত হয়’’- (সূরাহ্ আল আন্’আমঃ ৭৫)। (দারিমী ও তিরমিযী হাদীসটি মুরসাল হিসেবে বর্ণনা করেছেন)[1]
وَعَن عبد الرَّحْمَن بن عائش قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: رَأَيْتُ رَبِّيَ عَزَّ وَجَلَّ فِي أَحْسَنِ صُورَةٍ قَالَ: فَبِمَ يَخْتَصِمُ الْمَلَأُ الْأَعْلَى؟ قُلْتُ: أَنْتَ أَعْلَمُ قَالَ: فَوَضَعَ كَفَّهُ بَيْنَ كَتِفِيَّ فَوَجَدْتُ بَرْدَهَا بَيْنَ ثَدْيَيَّ فَعَلِمْتُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَتَلَا: (وَكَذَلِكَ نُرِي إِبْرَاهِيمَ مَلَكُوتَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَلِيَكُونَ من الموقنين) رَوَاهُ الدَّارمِيّ مُرْسلا وللترمذي نَحوه عَنهُ
ব্যাখ্যা: এ হাদীস রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দেখা স্বপ্নের বর্ণনা। এ হাদীসের মতো যেসব হাদীসে আল্লাহর গুণাবলী বর্ণিত হয়েছে তা সহীহ হলে সে সব গুণাবলী কোনরূপ ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ ব্যতীতই বিশ্বাস করতে হবে। গুণ এবং তার উদাহরণ বর্ণনা করা থেকে চুপ থাকতে হবে। সাথে সাথে এই দৃঢ় বিশ্বাস রাখতে হবে যে, আল্লাহ তা‘আলার সাদৃশ্যমূলক কোন কিছু নেই। তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা।
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমার রব বলেন, নৈকট্য-প্রাপ্ত মালায়িকাহ্ কোন বিষয়ে বিতর্ক বা বাদানুবাদ করছে? ইমাম ত্বীবী বলেন, এখানে বিতর্ক দ্বারা ঐসব মালায়িকাহ্’র মধ্যে ‘‘কাফফারাহ্’’ এর ‘‘দারাজাত’’ বিষয়ে আলাপ-আলোচনাকে বুঝানো হয়েছে। দুই বিতর্ককারীর মধ্যে যেমন প্রশ্নোত্তর হয় তাদের মধ্যেও তা চলছিল। প্রশ্নের উত্তরে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমার রব তাঁর হাত আমার দুই কাঁধের মাঝে রাখলেন।
কেউ কেউ বলেন, এর দ্বারা রূপকভাবে বিশেষ করে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি অতিরিক্ত অনুগ্রহ এবং রহমাতের প্রাচুর্য পৌঁছানোর কথা বুঝানো হয়েছে। তবে এ ব্যাপারে সালাফগণের মত হলো, কোন তুলনা উপমা, সাদৃশ্য বর্ণনা ব্যতীত এর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে। সৃষ্টির গুণাবলীকে যেভাবে ব্যাখ্যা করা হয় সেভাবে তাঁর গুণাবলীকে ব্যাখ্যা করা যাবে না। গুণাবলীর প্রকৃতির জ্ঞান আল্লাহর দিকেই সোপর্দ হবে।
আকাশসমূহে এবং সাত জমিনের মধ্যে যা কিছু আছে তা জানতে পারলাম। ক্বারী বলেন অর্থাৎ- আকাশসমূহ এবং জমিনের মাঝে অবস্থিত মালাক, গাছ-পালা ইত্যাদির মধ্যে যা আল্লাহ তা‘আলা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জানিয়েছেন। এ কথা দ্বারা আল্লাহ কর্তৃক রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দেয়া জ্ঞানের প্রশস্ততার কথা বুঝানো হয়েছে। তিনি আরো বলেন, আকাশসমূহ দ্বারা উপরের দিকে সবকিছু এবং জমিন দ্বারা নিচের দিকের সবকিছু বুঝানো হয়েছে তবে হাদীসের বাহ্যিক অর্থ দ্বারা সাধারণভাবে সব কিছুর জ্ঞান বুঝা গেলেও তা বুঝানো বিশুদ্ধ নয়। আমরা যেমনটা উল্লেখ করেছি তেমনভাবে এ জ্ঞানকে সীমাবদ্ধ করা আবশ্যক।
এরপর আল্লাহ তা‘আলা ইবরাহীম (আঃ)-কে আকাশসমূহ ও পৃথিবীর সমস্ত সাম্রাজ্য (এতদুভয়ের মধ্যে যা কিছু সৃষ্টি আছে) দেখিয়েছেন এবং তার জন্য তা উন্মোচন করেছেন। তার রিসালাতের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ যতটুকু ততটুকু অদৃশ্যের জ্ঞান তার সামনে খুলে দিয়েছেন। যাতে করে তিনি আমার (আল্লাহর) একত্ব প্রমাণ করতে পারেন এবং নিশ্চিত বিশ্বাসীদের অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন। তাই আমি এরূপ করেছি।
বহু আয়াত ও স্পষ্ট সহীহ হাদীস রয়েছে যেগুলো প্রমাণ করে যে, কিছু জিনিসের বা ব্যাপারে বা কর্মের জ্ঞান রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ছিল না। আর এগুলো এদিকে স্পষ্ট ইঙ্গিত করে যে, হাদীসে ব্যবহৃত ما ‘‘মা’’ শব্দটি সীমাহীনতা বা অপরিসীমতা বুঝাচ্ছে না। আর এটা কবরপূজারীদের দাবীকে বাতিল করে দেয়। কবরপূজারীদের নিকট এসব আয়াত হাদীস পেশ করলে তারা বলে, আয়াত এবং হাদীসসমূহে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট অদৃশ্যের জ্ঞান নেই মর্মে যে বর্ণনা এসেছে তা দ্বারা সত্ত্বাগত জ্ঞান ما না থাকাকে বুঝাচ্ছে। দান থেকে অর্জিত জ্ঞানকে বুঝাচ্ছে না। এগুলো শুধুমাত্র তাদের দাবী। এর পক্ষে কুরআন, সুন্নাহ, ইজমা, ক্বিয়াস বা কোন জ্ঞানসম্মত প্রমাণ নেই। বরং তাদের এ দাবীকে বাতিল করে দেয় আল্লাহ তা‘আলার বাণী। তিনি বলেন, ‘‘তাঁর অনন্ত জ্ঞানের কোন বিষয়ই কেউ আয়ত্ব করতে পারে না’’- (সূরাহ্ আল বাক্বারাহ্ ২ : ২৫৫)। তিনি আরো বলেন, ‘‘তোমার প্রতিপালকের বাহিনী সম্পর্কে একমাত্র তিনিই জানেন’’- (সূরাহ্ আল মুদ্দাস্সির ৭৪ : ৩১)। অতএব হে পাঠক! ব্যাপারটি নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা-গবেষণা করুন, তাড়াহুড়া করবেন না।