লগইন করুন
পরিচ্ছেদঃ ৬. প্রথম অনুচ্ছেদ - বিলম্বে আযান
৬৮০-[১] ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, বিলাল (রাঃ)রাত থাকতে আযান দেয়। তাই তোমরা ইবনু উম্মু মাকতূম (রাঃ)-এর আযান না দেয়া পর্যন্ত খাওয়া-দাওয়া করতে থাকবে। ইবনু ’উমার (রাঃ) বলেন, ইবনু উম্মু মাকতূম (রাঃ)অন্ধ ছিলেন। ’ভোর হয়ে গেছে, ভোর হয়ে গেছে’ তাকে না বলা পর্যন্ত তিনি আযান দিতেন না। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ تَاخِيْرِ الْاَذَانِ
وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم: «إِن بِلَالًا يُؤذن بِلَيْلٍ فَكُلُوا وَاشْرَبُوا حَتَّى يُنَادِيَ ابْنُ أُمِّ مَكْتُوم» ثمَّ قَالَ: وَكَانَ رَجُلًا أَعْمَى لَا يُنَادِي حَتَّى يُقَالَ لَهُ: أَصبَحت أَصبَحت
ব্যাখ্যা: রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে রমাযান মাসে যখন সাহরীর সময় হতো তখন লোকজনকে জাগানোর জন্য বিলাল (রাঃ) আযান দিতেন। এ আযান ফাজরের (ফজরের) আযান ছিল না। এজন্য নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, বিলাল (রাঃ) রাতে আযান দেয়, তাই তোমরা ইবনু উম্মু মাকতূম (রাঃ)-এর আযান না শোনা পর্যন্ত খাওয়া এবং পান করা চালিয়ে যেতে পারো। ‘আবদুল্লাহ ইবনু উম্মু মাকতূম (রাঃ) অন্ধ হওয়ার করণে ফাজরের (ফজরের) সময় কখন হয়েছে তা তিনি বুঝতে পারতেন না। লোকজন যখন তাকে সালাতের সময় হওয়ার কথা বলতো তখনই তিনি আযান দিতেন। এ হাদীস দ্বারা এ বিষয়টিই প্রমাণ পাওয়া যায় যে, সাহরীর সময় মানুষকে জাগানোর জন্য আযান দেয়া যাবে। যদিও সালাতের জন্য যে আযান হয় সেই আযান সালাতের ওয়াক্ত না হওয়া পর্যন্ত দেয়া যায় না। এ হাদীসে খাওয়া এবং পান করা চালিয়ে যাওয়ার যে নির্দেশ দেয়া হয়েছে তা জায়িয এবং এটা সুযোগ দানের জন্য। এর দ্বারা এ কথা বুঝানো হয়নি যে, সাহরীর শেষ সময় পর্যন্ত খেতেই হবে। বরং বুঝানো হয়েছে যে, বিলাল (রাঃ)-এর আযানের পরেও সাহরীর খাওয়ার সময় অবশিষ্ট থাকে। এ হাদীসে আরো ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে আযানই সালাতের সময় হওয়ার পরিচয় বহন করতো। মুসনাদে আহমাদ-এর বর্ণনায় রয়েছে যে, যখন ইবনু উম্মু মাকতূম (রাঃ) আযান দেয় তখন তোমরা খাও এবং পান কর। কিন্তু বিলাল (রাঃ) যখন আযান দেয় তখন তোমরা খাওয়া ও পান করা বন্ধ কর। এ হাদীস দ্বারা যে বিষয়টি জানা যায় তা হলো- সাহরীর আযান কোন কোন দিন বিলাল (রাঃ) দিতেন। আবার কোন কোন সময় ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাকতূম (রাঃ) দিতেন।
অর্থাৎ- যখন ইবনু উম্মু মাকতূম (রাঃ) রাতের আযান দিতেন তখন বিলাল (রাঃ) ফাজরের (ফজরের) আযান দিতেন এবং যখন বিলাল (রাঃ) রাতের আযান দিতেন তখন ইবনু উম্মু মাকতূম (রাঃ) ফাজরের (ফজরের) আযান দিতেন।
কতিপয় মুহাদ্দিসগণ বলেছেন যে, তাদের আযানের মাঝে কোন পালা ছিল না। বরং তাদের উভয়ের দু’টি ভিন্ন অবস্থা ছিল। কেননা সর্বপ্রথম যখন আযানের বিধান আসে তখন বিলাল (রাঃ) একাই ফাজরের (ফজরের) আযান দিতেন। পরবর্তীতে ইবনু উম্মু মাকতূম (রাঃ)-কে রাতে আযান দেয়ার দায়িত্ব দেয়া হয়।
পরিশেষে ইবনু উম্মু মাকতূম-এর দুর্বলতার জন্য ফাজরের (ফজরের) সালাতের দায়িত্ব দেয়া হয় এবং তার সাথে লোক নিয়োগ করা হয়, যারা তার জন্য ফাজর (ফজর) উদিত হওয়া লক্ষ্য করবেন (অন্ধ হওয়ার কারণে) এবং বিলালের আযানকে (রাতের) সাহরীর আযান হিসেবে স্থায়ী করা হয়।
উল্লেখিত হাদীস থেকে সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, ফাজরের (ফজরের) (সুবহে সাদিকের) পূর্বে আযান দেয়া শারী‘আতসিদ্ধ। কেননা আযানকে শারী‘আতসম্মত করা হয়েছে ওয়াক্ত প্রবেশের বিষয়টি জানানোর জন্য এবং শ্রবণকারীগণকে সালাতে উপস্থিত হওয়ার আহবানের জন্য।
‘আল্লামা মুবারাকপূরী (রহঃ) এ মতটি প্রাধান্য দিয়েছেন।
ইমাম মালিক, শাফি‘ঈ, আহমাদ, আবূ ইউসুফ (রহঃ) এ মত পোষণ করেন যে, ফাজর (ফজর) উদিত হওয়ার পূর্বেই ফাজরের (ফজরের) আযান দেয়া জায়িয এবং ঐ আযানটি যথেষ্ট হবে। পুনরায় আযান দেয়া ওয়াজিব নয়। তারা বলেনঃ ফাজরের (ফজরের) সালাতের জন্য দু’টি আযান ছিল। প্রথম আযানটি সাহরী থেকে বাধা প্রদানকারী ছিল না এবং দ্বিতীয় আযানটি ছিল জানানোর পর পুনরায় জানানোর জন্য। শুধুমাত্র ফাজরের (ফজরের) সালাতকে দু’ আযান দ্বারা নির্দিষ্ট করা হয়েছে, অন্যান্য সালাত থেকে। কেননা প্রথম ওয়াক্তে সালাত আদায়ের ব্যাপারে উৎসাহমূলক হাদীস বর্ণিত হয়েছে এবং সকালের সালাতটি অধিকাংশ সময় ঘুমের পরেই আসে।
আবূ হানীফাহ্ ও মুহাম্মাদ (রহঃ) বলেছেনঃ ফাজরের (ফজরের) সালাতের আযান ফাজর (ফজর) (সুবহে সাদিক) উদিত হওয়ার পূর্বে দেয়া জায়িয নয়। যেমন- অন্য সকল সালাতে সময়ের পূর্বে আযান দেয়া জায়িয নয়। যদি ফাজর (ফজর) উদিত হওয়ার পূর্বে আযান দেয়া হয় তাহলে ফাজর (ফজর) উদিত হওয়ার পর পুনরায় আযান দেয়া আবশ্যক। পূর্বের আযান যথেষ্ট হবে না। তারা [আবূ হানীফাহ্ ও মুহাম্মাদ (রহঃ)] বলেনঃ প্রথম আযানটি ফাজরের (ফজরের) সালাতের জন্য ছিল না। বরং অন্য উদ্দেশ্য ছিল। যা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইবনু মাস্‘ঊদ-এর হাদীসে বর্ণনা করেছেন যে, ليرجع قائكم ويوقظ نائمكم
অর্থাৎ- ‘‘যাতে তাহাজ্জুদ আদায়কারীরা ফিরে যায় এবং ঘুমন্ত ব্যক্তিরা জাগ্রত হয়।’’
জেনে রাখুন, ইবনুল ক্বত্ত্বান, ইবনু দাক্বীক্ব আল ‘ঈদ ও মুহাম্মাদ ইবনু হাসান (রহঃ) দাবী করেছেন যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী- (إِنَّ بِلَالًا يُؤَذِّنُ بِلَيْلٍ) ‘‘নিশ্চয়ই বিলাল রাত থাকতে আযান দেয়’’- (সহীহুল বুখারী- হাঃ ৬১৭)।
এটা রমাযানের সাথেই নির্দিষ্ট সারা বছরের ক্ষেত্রে নয়। তাদের এ উক্তির ব্যাপারে গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে। কারণ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী- (كلووَاشْرَبُوا) ‘‘তোমরা খাও এবং পান করো’’।
এটা রমাযান ছাড়াও হতে পারে নফল সিয়াম পালনকারীর জন্য। কেননা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে অধিকাংশ সাহাবী বেশী বেশী নফল সিয়াম পালন করতেন। উক্ত হাদীসে তাদেরকেই বুঝানো হয়েছে। তার দলীল হচ্ছে যা বর্ণনা করেছেন ‘আবদুর রাযযাক্ব ‘‘ইবনুল মুসাইয়্যাব’’ থেকে মুরসাল সানাদে এভাবে- ‘‘নিশ্চয় বিলাল রাতে আযান দেয়’’। সুতরাং যে সিয়ামের ইচ্ছা পোষণ করে তাকে যেন (সাহরী খাওয়া হতে) বিলাল (রাঃ)-এর আযান বাধা না দেয় যতক্ষণ পর্যন্ত ইবনু উম্মু মাকতূম (রাঃ) আযান না দেয়।
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী- (أَصْبَحْتَ أَصْبَحْتَ) ‘‘তুমি সকাল করে ফেলেছ, তুমি সকাল করে ফেলেছ’’- (সহীহুল বুখারী- হাঃ ৬১৭)।
উদ্দেশ্য হচ্ছে ইবনু উম্মু মাকতূম (রাঃ)-এর আযানটি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পানাহার নিষেধ হওয়ার চিহ্ন হিসেবে নির্ধারণ করেছেন।
উক্ত হাদীস দ্বারা এ কথা প্রতীয়মান হয় যে, অন্ধ ব্যক্তির আযান দেয়া জায়িয। যখন তার কাছে এমন ব্যক্তি থাকবে, যে তাকে কোন প্রকার অপছন্দনীয়তা ছাড়া সালাতের ওয়াক্ত প্রবেশের ব্যাপারে সংবাদ দিবে। কেননা সময়টি মূলত শাহাদাতের উপর প্রতিষ্ঠিত হয়।
মোটকথা হলো, সুবহে সাদিক হওয়ার পর যে আযান হবে এরপর আর সাহরী খাওয়া ও কোন কিছু পান করা যাবে না।