পরিচ্ছেদঃ ৬৭/১৩. দাসী গ্রহণ এবং আপন দাসীকে মুক্ত করে বিয়ে করা।
৫০৮৩. আবূ মূসা আশ’আরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে আপন ক্রীতদাসীকে শিক্ষা দেয় এবং উত্তম শিক্ষা দান করে এবং শিষ্টাচার শিক্ষা দেয় এবং উত্তমভাবে শিষ্টাচার শিক্ষা দেয় এরপর তাকে মুক্ত করে বিয়ে করে তার জন্য দ্বিগুণ সওয়াব। [1] ঐ আহলে কিতাব, যে তার নবীর ওপর ঈমান আনে এবং আমার ওপরে ঈমান এনেছে, তার জন্য দ্বিগুণ সওয়াব রয়েছে। আর ঐ গোলাম, যে তার প্রভুর হক আদায় করে এবং আল্লাহরও হাক্ব আদায় করে তার জন্যে দ্বিগুণ সাওয়াব।
হাদীসটি বর্ণনা করার সময় এর অন্যতম বর্ণনাকারী ইমাম শা’বী (রহ.) (স্বীয় ছাত্র সালিহ বিন সালিহ হামদানীর লক্ষ্য করে) বলেন, হাদীসটি গ্রহণ কর বিনা পরিশ্রমে অথচ এমন এক সময় ছিল যখন এর চেয়ে ছোট হাদীস সংগ্রহ করার জন্যে কোন লোক মদিনা পর্যন্ত সফর করতো। .... অন্য বর্ণনায় আছে, ’’মুক্ত করে মাহর নির্ধারণ করে বিয়ে করে’’। [৯৭] (আধুনিক প্রকাশনী- ৪৭১০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭১২)
[1] ইসলামের আবির্ভাবকালে দেশে দেশে দাস প্রথা চালু ছিল। কিন্তু মানুষের সাম্য ও স্বাধীনতার প্রবক্তা মহান ধর্ম ইসলাম দাসপ্রথাকে মোটেই সমর্থন করেনি। বরং এ প্রথা উচ্ছেদের জন্য ইসলাম এমন সব ব্যবস্থা প্রবর্তন করেছে যাতে দাসদাসীরা মানসিক, নৈতিক, সামাজিক ও আর্থিকভাবে প্রকৃতই সাম্য ও স্বাধীনতার সুফল ভোগ করতে পারে। বিশ্বনাবী বলেছেন- তোমাদের দাসরা তোমাদের ভাই, কাজেই তোমাদের মধ্যে যার অধীনে তার কোন ভাই থাকবে সে যেন তার জন্য সেরূপ খাওয়া পরার ব্যবস্থা করে যেরূপ সে নিজের জন্য করবে। যে কাজ করার মত শক্তি তার নেই সে কাজ করার হুকুম যেন তাকে না দেয়। আর যদি এমন কাজের হুকুম দিতেই হয় তাহলে সে নিজে যেন তার সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসে। নাবী ﷺ বলেছেন- তোমাদের কেউ যেন এরূপ না বলে যে, এ আমার দাস ও এ আমার দাসী। তার পরিবর্তে বলতে হবে, এ আমার সেবক, এ আমার সেবিকা। জাহিলী যুগে দাসীদেরকে অবৈধ পন্থায় অর্থ উপার্জনের কাজে নিয়োগ করা হত, ইসলাম এই অবৈধ ও অনৈতিক কাজে দাসীদেরকে নিয়োগ করা নিষিদ্ধ ঘোষণা করল। ইসলামের আবির্ভাবের পর দাসদাসীরা আর বাজারের পণ্য সামগ্রী হয়ে রইল না, তারা স্বাধীন মানুষের মর্যাদা ও অধিকার লাভের সৌভাগ্য অর্জন করল। এ পর্যায়ে ইসলাম এতদূর পর্যন্ত অগ্রসর হয়েছে যে, কোন দাসের চেহারার উপর চড় মারাও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু ইসলাম এতটুকু করেই ক্ষান্ত হয়নি। তাই দাসদাসীদেরকে পুরোপুরি স্বাধীন করে দেয়ার উদ্দেশে দু’টি কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। প্রথমটি হল সরাসরি মুক্তিদান আর দ্বিতীয়টি হল মুক্তির লিখিত চুক্তি (বা মুকাতাবাত)। নাবী ﷺ নিজে তাঁর দাসদের মুক্ত করে দেন এবং সাহাবীবৃন্দও নিজ নিজ দাসদেরকে আযাদ করে দেন। নাবী ﷺ শিখিয়েছেন- কতক গোনাহর কাফফারা হচ্ছে গোলামদেরকে আযাদ করে দেয়া। ফলে অনেক গোলাম আযাদী লাভ করে ধন্য হয়। আল্লাহ তা‘আলা দাসদাসীদের মুক্তির জন্য বায়তুল মালে একটি অংশ নির্দিষ্ট করে দিলেন- (সূরা আত- তাওবাহ ৯ঃ ৬০)। বিশ্বনাবী ﷺ দাসদাসীদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করার জন্য স্বীয় মুক্ত দাস যায়দ ﷺ-এর সঙ্গে মহা সম্ভ্রান্ত কোরেশ কুল নন্দিনী যায়নাব বিনতে জাহাশ (রাঃ)-এর বিয়ে দিয়েছিলেন। যায়দ ও তৎপুত্র উসামা (রাযি.)-কে নেতৃস্থানীয় সাহাবীদের উপর যুদ্ধাভিযানের সিপাহসালার নিযুক্ত করেছিলেন। আলোচ্য হাদীসটিতে একই উদ্দেশ্য সাধনের লক্ষ্যে দাসীদেরকে শিক্ষা ও শিষ্টাচার শিক্ষা দিয়ে বিয়ে করার জন্য দ্বিগুণ সাওয়াব দানের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যেই তাদের আযাদী দাসীকে বিয়ের মাহর হিসেবে গণ্য করা হয়েছে।
আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁর পাক কালামে আদম সন্তানের [স্বাধীন নারী-পুরুষ আর দাস দাসীদের] মাঝে বেশী সম্মানের অধিকারী কে তার মাপকাঠি হিসেবে বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেনঃ {إن أكرمكم عند الله أتقاكم} ‘‘তোমাদের মধ্যে যে বেশী পরহেযগার আল্লাহর নিকট সেই বেশী সম্মানিত।’’ (সূরা হুজরাত ৪৯ঃ ১৩)। আল্লাহ্ তা‘আলা যে তাকওয়া ব্যতীত কাউকে কারো উপর মর্যাদা প্রদান করেননি এ আয়াতটি তারই প্রমাণ বহন করছে। বরং সকল মানুষ সমান, পার্থক্য ঘটবে শুধুমাত্র তাক্বওয়া দ্বারা।
উল্লেখ্য দাস প্রথা ইসলামে রহিত হয়ে যায়নি। কেননা, মুসলিম ও অমুসলিমদের মধ্যে সংঘটিত যুদ্ধে বন্দী নারী-পুরুষ দাস দাসীরূপে ব্যবহার হতে পারে। এবং এদের মধ্যে যারা ঈমান আনবে কেবল তাদেরকেই ইসলাম স্বাধীন করার প্রতি উৎসাহিত করেছে। পক্ষান্তরে যারা ঈমান আনবে না বেদীন অবস্থায় থাকবে, তাদেরকে মুক্ত না করে দাস দাসীরূপেই ব্যবহৃত হবে। এটিই তাদের উপযু্ক্ত প্রাপ্য।
بَاب اتِّخَاذِ السَّرَارِيِّ وَمَنْ أَعْتَقَ جَارِيَتَه“ ثُمَّ تَزَوَّجَهَا
مُوْسٰى بْنُ إِسْمَاعِيلَ حَدَّثَنَا عَبْدُ الْوَاحِدِ حَدَّثَنَا صَالِحُ بْنُ صَالِحٍ الْهَمْدَانِيُّ حَدَّثَنَا الشَّعْبِيُّ قَالَ حَدَّثَنِي أَبُوْ بُرْدَةَ عَنْ أَبِيهِ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم أَيُّمَا رَجُلٍ كَانَتْ عِنْدَه“ وَلِيدَةٌ فَعَلَّمَهَا فَأَحْسَنَ تَعْلِيمَهَا وَأَدَّبَهَا فَأَحْسَنَ تَأْدِيبَهَا ثُمَّ أَعْتَقَهَا وَتَزَوَّجَهَا فَلَه“ أَجْرَانِ وَأَيُّمَا رَجُلٍ مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ آمَنَ بِنَبِيِّه„ وَآمَنَ بِي فَلَه“ أَجْرَانِ وَأَيُّمَا مَمْلُوْكٍ أَدّ‘ى حَقَّ مَوَالِيهِ وَحَقَّ رَبِّه„ فَلَه“ أَجْرَانِ قَالَ الشَّعْبِيُّ خُذْهَا بِغَيْرِ شَيْءٍ قَدْ كَانَ الرَّجُلُ يَرْحَلُ فِيمَا دُوْنَهَا إِلَى الْمَدِينَةِ وَقَالَ أَبُوْ بَكْرٍ عَنْ أَبِي حَصِينٍ عَنْ أَبِي بُرْدَةَ عَنْ أَبِيهِ عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم أَعْتَقَهَا ثُمَّ أَصْدَقَهَا.
Narrated Abu Burda's father:
Allah's Messenger (ﷺ) said, any man who has a slave girl whom he educates properly, teaches good manners, manumits and marries her, will get a double reward And if any man of the people of the Scriptures believes in his own prophet and then believes in me too, he will (also) get a double reward And any slave who fulfills his duty to his master and to his Lord, will (also) get a double reward."