হাদিসটি ইমেইলে পাঠাতে অনুগ্রহ করে নিচের ফর্মটি পুরন করুন
৪৩৯
পরিচ্ছেদঃ ৪৫. নাপাক ব্যক্তি কুরআন স্পর্শ করবে না
৪৩৯(১২)। মুহাম্মাদ ইবনে মাখলাদ (রহঃ) ... সালমান ফারিসী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি উযু নষ্ট হওয়ার পর কুরআন পড়েছেন। সবগুলো হাদীস সহীহ।
টীকাঃ কুরআন মজীদের নির্দেশ হচ্ছেঃ “পবিত্রগণ ছাড়া তা কেউ স্পর্শ করতে পারে না” (সূরা ওয়াকিয়া : ৭৯)।
আলী (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে কুরআন তিলাওয়াত থেকে জানাবাত (সহবাস জনিত অপবিত্রতা) ছাড়া আর কিছুই বিরত রাখতো না” (আবু দাউদ, নাসাঈ, তিরমিযী)। ইবনে উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ “হায়েযগ্রস্ত মহিলা ও সংগমের ফলে অপবিত্র লোক কুরআনের কিছুই পাঠ করবে না” (আবু দাউদ, তিরমিযী)।
এ বিষয়ে সাহাবা ও তাবিঈদের যেসব মত ফিকহের কিতাবসমূহে লিপিবদ্ধ আছে তা নিম্নরূপঃ
সালমান ফারিসী (রাঃ) বিনা উযুতে কুরআন পড়াতে কোনরূপ দোষ মনে করতেন না। কিন্তু তার মতে, এরূপ অবস্থায় কুরআনে হাত লাগানো জায়েয নয়। সা'দ ইবনে আবু ওয়াক্কাস (রাঃ) ও আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ) এর মতও তাই। হাসান বসরী এবং ইবরাহীম নাখাঈও বিনা উযুতে কুরআন গ্রন্থে হাত লাগানো মাকরূহ মনে করতেন (আবু বাকর আল-জাসসাস, আহকামুল কুরআন)। আতা, শাবী এবং কাসিম ইবনে মুহাম্মাদও এই মত পোষণ করেন (ইবনে কুদামা, আল-মুগনী)।
তবে বিনা উযুতে কুরআন স্পর্শ না করে তা দেখে দেখে পড়া কিংবা মুখস্ত পড়া সকলের মতেই জায়েয। জানাবাত (সহবাস জনিত নাপাকি) ও হায়েয-নিফাস অবস্থায় কুরআন পড়া উমার (রাঃ), আলী (রাঃ), হাসান বসরী, ইবরাহীম নাখাঈ ও যুহরীর মতে মাকরূহ (আল-মুগনী ও ইবনে হাযমের আল-মুহাল্লা)।
এ বিষয়ে ফিকহবিদদের অভিমত নিম্নরূপঃ
ইমাম আলাউদ্দীন আল-কাশানী তার “বাদায়ে ওয়াস-সানায়ে” গ্রন্থে হানাফী মাযহারের মত এভাবে উল্লেখ করেছেনঃ বিনা উযুতে নামায পড়া যেভাবে জায়েয নয়, ঠিক সেভাবে কুরআন স্পর্শ করাও জায়েয নয়। তবে তা আবরণের মধ্যে থাকলে তাতে হাত লাগানো যেতে পারে। আবরণের অর্থ কেউ করেছেন বাঁধাই, আর কেউ করেছেন জুযদান। তাফসীর গ্রন্থও বিনা উযুতে স্পর্শ করা উচিৎ নয়। তবে বিনা উযুতে কুরআন পড়া জায়েয। ফতোয়া আলমগিরীতে বলা হয়েছে, বালক-বালিকাদের প্রতি এই বিধিনিষেধ প্রযোজ্য নয়। শিক্ষা লাভের উদ্দেশে ছোটদের হাতে কুরআন দেয়া যেতে পারে, তাদের উযু থাক বা না থাক।
ইমাম নববী (রহঃ) তাঁর ‘আল-মিনহাজ’ গ্রন্থে শাফিঈ মাযহাবের মত এভাবে উল্লেখ করেছেনঃ নামায ও তাওয়াফের ন্যায় কুরআন মজীদ বা তার কোন একটি পৃষ্ঠাও বিনা উযুতে স্পর্শ করা হারাম। কুরআনের উপরের বাধাই ধরাও নিষিদ্ধ। যদি তা গেলাফে অথবা বাসে রক্ষিত থাকে বা শিক্ষাদানের উদ্দেশে তার কোন অংশ কোন কিছুর উপর লিখিত থাকে, তবে তাও বিনা উযুতে স্পর্শ করা জায়েয নয়। তবে অন্য কোন জিনিসের সাহায্যে এর পাতা উল্টানো যেতে পারে। বালক উযুবিহীন অবস্থায় কুরআন স্পর্শ করতে পারে।
‘কিতাবুল-ফিকহ আলাল-মাযাহিবিল আরবাআ' গ্রন্থে মালেকী মাযহাবের অভিমত এভাবে বর্ণিত হয়েছেঃ জমহুর ফিকহবিদদের সাথে মালেকী মাযহাব এ ব্যাপারে একমত যে, হাত দিয়ে কুরআন স্পর্শ করার জন্য উযু একান্তই জরুরী শর্ত। কিন্তু কুরআনের শিক্ষক ও শিক্ষার্থী উভয়ে এই বাধ্যবাধকতা থেকে মুক্ত। বরং হায়েযগ্রস্ত মহিলার পক্ষেও শিক্ষার উদ্দেশে কুরআন স্পর্শ করা জায়েয। আল্লামা ইবনে কুদামা তার আল-মুগনী গ্রন্থে ইমাম। মালেকের এই মত বর্ণনা করেছেন যে, জানাবাত অবস্থায় কুরআন পড়া নিষিদ্ধ , কিন্তু হায়েযগ্রস্ত মহিলার জন্য কুরআন পড়ার অনুমতি আছে। কেননা একটা দীর্ঘ সময় ধরে যদি আমরা তাকে কুরআন পড়া থেকে বিরত রাখি, তবে সে কুরআন ভুলে যাবে।
ইবনে কুদামা (রহঃ) হাম্বলী মাযহাবের মত এভাবে উল্লেখ করেছেনঃ জানাবাত অবস্থায় এবং হায়েয-নিফাস অবস্থায় কুরআন বা তার একটি পূর্ণ আয়াতও পাঠ করা জায়েয নয়। তবে বিসমিল্লাহ, আলহামদু লিল্লাহ প্রভৃতি শব্দ উচ্চারণ করা জায়েয। বিনা উযুতে হাত দিয়ে কুরআন শরীফ স্পর্শ করা কোনক্রমেই জায়েয নয়। কোন জিনিসের মধ্যে কুরআন রক্ষিত থাকলে তা বিনা উযুতে ধরে উঠানো জায়েয। তাফসীরের গ্রন্থাবলী স্পর্শ করার ব্যাপারে উযুর কোন শর্ত নেই। কিতাবুল-ফিকহ আলাল-মাযাহিবিল আরবাআ গ্রন্থে হাম্বলী মাযহাব সম্পর্কে আরো লিখিত আছে যে, শিক্ষার উদ্দেশে বিনা উযুতে কুরআনে হাত লাগানো ছোটদের জন্যও জায়েয নয়। তাদের হাতে কুরআন তুলে দেয়ার পূর্বে তাদেরকে উযু করানো তাদের মুরব্বীদের কর্তব্য।
যাহিরী মাযহাবমতে, কুরআন পড়া ও তা স্পর্শ করা সর্বাবস্থায় জায়েয, বিনা উযুতে ও জানাবাত ও হায়েয অবস্থায়ও। আল্লামা ইবনে হাযম তার আল-মুহাল্লা গ্রন্থে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন এবং এই মতের সত্যতা ও যথার্থতার স্বপক্ষে দলীল-প্রমাণ পেশ করেছেন। তাতে বলা হয়েছে, ফিকহবিদগণ কুরআন পড়া ও তা হাত দিয়ে স্পর্শ করার ব্যাপারে যেসব শর্ত আরোপ করেছেন, তার একটিও কুরআন ও সুন্নাহ থেকে প্রমাণিত নয় (১ম খণ্ড, পৃ. ৭৭-৮৪)।
ছাত্রগণ তাদের মাসিক ঋতু চলাকালে মূল কুরআন স্পর্শ না করে তার তাফসীর, নোটবই, গাইড বই ইত্যাদি স্পর্শ করতে এবং পড়তে পারেন (অনুবাদক)।
بَابٌ فِي نَهْيِ الْمُحْدِثِ عَنْ مَسِّ الْقُرْآنِ
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ مَخْلَدٍ ، نَا مُحَمَّدُ بْنُ إِسْمَاعِيلَ ، نَا وَكِيعٌ ، نَا سُفْيَانُ ، عَنْ أَبِي إِسْحَاقَ ، عَنْ زَيْدِ بْنِ مُعَاوِيَةَ الْعَبْسِيِّ ، عَنْ عَلْقَمَةَ وَالَأَسْوَدِ ، عَنْ سَلْمَانَ : " أَنَّهُ قَرَأَ بَعْدَ الْحَدَثِ " . كُلُّهَا صِحَاحٌ