হাদিসটি ইমেইলে পাঠাতে অনুগ্রহ করে নিচের ফর্মটি পুরন করুন
security code
৪৬৬৯

পরিচ্ছেদঃ ২. প্রথম অনুচ্ছেদ - অনুমতি প্রার্থনা

৪৬৬৯-[৩] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার পিতার গৃহীত ঋণের লেনদেনের ব্যাপারে একদিন আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এলাম এবং দরজায় করাঘাত করলাম। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেনঃ কে? আমি বললামঃ আমি। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ আমি, আমি (তথা পরিচয় কি?)। সম্ভবতঃ তিনি এরূপ বলাকে অপছন্দ করেছেন। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ الْإِسْتِئْذَانِ

وَعَنْ جَابِرٍ قَالَ: أَتَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي دَيْنٍ كَانَ عَلَى أَبِي فَدَقَقْتُ الْبَابَ فَقَالَ: «مَنْ ذَا؟» فَقُلْتُ: أَنَا. فَقَالَ: «أَنَا أَنا» . كَأَنَّهُ كرهها

ব্যাখ্যাঃ মুহাল্লাব (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ انا ‘আমি’ এখানে অপছন্দ হওয়ার কারণ হলো, এতে স্পষ্ট পরিচয় ফুটে উঠে না। তবে যদি অনুমতিদাতা অনুমতি প্রার্থীকে চিনতে পারে এবং অন্য কারো সাথে তালগোল পাকিয়ে না যায় তাহলে ভিন্ন কথা। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে সংশয় সৃষ্টি হয়েই থাকে।

মাওয়ারদী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ এটা অপছন্দ করার কারণ হলো, সে প্রশ্নের দাবী অনুযায়ী জবাব দেয়নি। কারণ যখন সে দরজায় নক করল তখন তো বুঝা গেল যে, এখানে একজন করাঘাতকারী আছে। অতঃপর যখন সে ‘‘আমি’’ বলে জানান দিতে চাইল যে দরজায় নককারী এখানে, এতে কিন্তু দরজায় আওয়াজ করাতে যতটুকু জানা গিয়েছিল তার চাইতে বেশি কিছু জানতে পারা যায়নি। সঙ্গত কারণে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অপছন্দ করেছেন।

খত্ত্বাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ انا আমি কথাটি উপযুক্ত জবাব নয় এবং যে উদ্দেশে এটার ব্যবহার হয়েছে তা অর্জন হয়নি। এভাবে বলা উপযুক্ত জবাব ছিল যে, انا جابر ‘‘আমি জাবির’’। যাতে প্রত্যাশিত দাবী অনুযায়ী স্পষ্ট পরিচয় প্রকাশ পেত। যেমন ইমাম বুখারী ‘‘আদাবুল মুফরাদ’’ বুরয়দাহ্-এর হাদীসে বর্ণনা করেন, একদিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে এসেছেন আর আবূ মূসা (রাঃ) (কুরআন) পড়ছিলেন, তখন আমি আসলাম। অতঃপর তিনি বললেন, এটা কে? আমি বললাম যে, আমি বুরয়দাহ্। অনুরূপ উম্মু হানী একদিন রসূলের দরবারে এসে বললেন, আমি উম্মু হানী। ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ যখন কেউ তার উপনাম ছাড়া পরিচয় বলতে পারে না তখন এভাবে স্বীয় নাম বলা অপছন্দের কিছু নয়। অতএব যখন কারো ‘‘আমি শায়খ অমুক’’ ‘‘আমি অমুক কারী’’ বা ‘‘আমি কাযী অমুক’’ বলা ছাড়া পার্থক্য করতে না পারে তখন এরূপ বলাতে কোন দোষ নেই।

ইবনু জাওযী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ انا ‘আমি’ বলা অপছন্দ হওয়ার কারণ হলো ‘আমি’ বলাতে গর্বের গন্ধ পাওয়া যায়। যেন ‘আমি’ বলা ব্যক্তি বুঝাতে চাচ্ছে যে, আমি এমন ব্যক্তি যার নাম ও বংশ উল্লেখ করার প্রয়োজন নেই। এর বিপরীত মত পোষণ করেন মুগলাত্বয় (مغلطاي)। তিনি বলেন, এ ধরনের মন্তব্য জাবির-এর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না। যদি জাবির  এরূপই হতেন তাহলে তিনি এটা ছেড়ে দেয়ার জন্য শিক্ষা না দিয়ে এতে অভ্যস্ত থাকতেন।

ইবনুল ‘আরাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ জাবির হাদীসে দরজায় করাঘাত করার প্রমাণ রয়েছে। আদাবুল মুফরাদে রয়েছে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দরজায় নখ দ্বারা আঘাত করা হতো। তবে এটা বলা যায় যে, নখ দ্বারা দরজায় আঘাত করা হলো উন্নত আদব। দরজার নিকটে থাকা ব্যক্তির ক্ষেত্রে এরূপ নখ দ্বারা করাঘাত করা ভালো। আর যদি সে দরজা থেকে এমন দূরে অবস্থান করে যে, নখ দ্বারা আওয়াজ দিলে তার কাছে আওয়াজ পৌঁছে না তখন প্রয়োজনমত অন্য কিছু দ্বারা আঘাত করা মুস্তাহাব। সুহায়লী বলেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দরজায় কড়া না থাকায় সাহাবীগণ নখ দ্বারা আঘাত করতেন। তারা এভাবে করাঘাত করতেন তার সম্মান, মর্যাদা ও আদবের প্রেক্ষিতে। (ফাতহুল বারী ১১শ খন্ড, হাঃ ২৬৫০)