পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ
৪৫৩১-[১৮] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নযর লাগা একটি বাস্তব সত্য। যদি কোন জিনিস তাকদীর পরিবর্তন করতে সক্ষম হত, তবে বদনযরই তা করতে পারত। আর যদি তোমাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ধোয়া পানি চাওয়া হয়, তবে অবশ্যই ধুয়ে দেবে। (মুসলিম)[1]
الْفَصْلُ الْأَوَّلُ
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «الْعَيْنُ حَقٌّ فَلَوْ كَانَ شَيْءٌ سَابَقَ الْقَدَرِ سَبَقَتْهُ الْعَيْنُ وَإِذَا اسْتُغْسِلْتُمْ فاغسِلوا» . رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যাঃ (الْعَيْنُ حَقٌّ) অর্থাৎ চোখের প্রভাব সত্য। এখানে চোখের প্রভাব বলতে বদনযর উদ্দেশ্য। বদনযরের মাধ্যমে মানুষের ক্ষতি সাধিত হয়। বিশেষ করে ছোট বাচ্চাদের অনেক ক্ষতি হয়। বদনযর থেকে বাঁচার জন্য রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার দুই নাতি হাসান-হুসায়ন (রাঃ)-কে ছোট বেলায় ঝাড়ফুঁক করতেন। [সম্পাদক]
(سَبَقَتْهُ الْعَيْنُ) অর্থাৎ- ‘‘অবশ্যই বদনযর তাকদীরকে পরিবর্তন করত’’। তবে তাকদীর পরিবর্তন হবে না। কারণ মহান আল্লাহ সৃষ্টির পূর্বেই তাকদীরকে নির্ধারণ করে দিয়েছেন। হাফিয ইবনু হাজার (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ চোখের প্রভাব বুঝানোর জন্য হাদীসটিতে মুবালাগাহ্ বা আধিক্যতা বুঝানো হয়েছে। বদনযর তাকদীরের কোন পরিবর্তন করতে পারবে না। কেননা আল্লাহর জ্ঞানে তাকদীর পূর্ব থেকেই নির্ধারিত, সুতরাং তা পরিবর্তনশীল নয়। মোট কথা যদি কোন জিনিসের ক্ষমতা থাকতো তাকদীরকে পরিবর্তন করতে, তবে অবশ্যই বদনযরের সে ক্ষমতা ছিল। যেহেতু তাকদীর পরিবর্তন হবে না তাহলে কিভাবে বদনযরে তাকে পরিবর্তন করবে?
ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ এ হাদীস থেকে তাকদীরের অস্বিত্বের প্রমাণ হয়। এটা কুরআন সুন্নাহর দলীল এবং আহলুস্ সুন্নাহর ইজমা দ্বারা সত্য প্রমাণিত হয়েছে। এর অর্থ হলো সকল জিনিস মহান আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত তাকদীর দ্বারা হয়ে থাকে। আল্লাহ তা‘আলার নির্ধারণের বাইরে কোন কাজ সংঘটিত হয় না। সুতরাং চোখ বা অন্য কোন কিছুর কোন ধরনের ক্ষতি করতে পারবে না। অতএব চোখ বা অন্য কোন কিছুর কোন ধরনের ক্ষতি বা ভালো-মন্দ তাকদীরের নির্ধারিত বিষয়ের উপর সংঘটিত হয়ে থাকে। অতএব বদনযর থেকে আরোগ্য লাভ করা এবং বদনযরে ক্ষতি হওয়াটাও তাকদীরের নির্ধারিত বিষয় অনুযায়ী হয়ে থাকে। (তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৫ম খন্ড, হাঃ ২০৬২)
(وَإِذَا اسْتُغْسِلْتُمْ فَاغْسِلُوْا) ‘‘আর যদি তোমাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ধোয়ার পানি চাওয়া হয়, তবে অবশ্যই ধুয়ে দিবে’’। ‘আরবদের মধ্যে প্রচলিত ছিল, যে ব্যক্তির বদনযর লাগত, তার হাত, পা এবং দেহের নিচের অঙ্গ ধুয়ে যার উপরে নযর লাগিয়েছে তাকে সেই পানি দিয়ে গোসল করাতো, ফলে সে বদনযর থেকে আরোগ্য লাভ করতো। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কাজটির অনুমোদন দিয়েছেন এবং যার নযর লেগেছে, তাকে নির্দেশ দিয়েছেন সে যেন নিজের অঙ্গ ধুয়ে পানি দেয়াতে সে যেন অস্বীকৃতি না জানায়। এ কাজ করাতে যে বদনযরে আক্রান্ত হয়েছে তার সন্দেহ দূর হয়ে যাবে। আর বাহ্যিকভাবে এ কাজ (অঙ্গ ধূয়ে পানি দেয়া) ওয়াজিব। কারণ এটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আদেশ। (তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৫ম খন্ড, হাঃ ২০৬২; মিরক্বাতুল মাফাতীহ)