পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ
৪৫১৬-[৩] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তিন জিনিসের মধ্যে রোগের নিরাময় রয়েছে, শিঙ্গা লাগানো বা মধু পান করা অথবা তপ্ত লোহা দ্বারা দাগ দেয়া। তবে আমি আমার উম্মাতকে দাগ হতে নিষেধ করেছি। (বুখারী)[1]
الْفَصْلُ الْأَوَّلُ
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: الشِّفَاءُ فِي ثَلَاثٍ: فِي شَرْطَةِ مِحْجَمٍ أَوْ شَرْبَةِ عَسَلٍ أَوْ كَيَّةٍ بِنَارٍ وَأَنَا أَنْهَى أُمَّتِي عَنِ الْكَيِّ . رَوَاهُ البُخَارِيّ
ব্যাখ্যাঃ আলোচ্য হাদীসে যদিও তিনটি পদ্ধতির বর্ণনা দেয়া হয়েছে, কিন্তু এ তিনটি পদ্ধতির মাঝেই চিকিৎসা পদ্ধতি সীমাবদ্ধ নয়। তবে চিকিৎসা পদ্ধতির মৌলিক তিনটি পদ্ধতি সম্পর্কে এখানে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কেননা রোগসমূহ সাধারণত কয়েক প্রকারে সীমাবদ্ধ। রক্ত দূষণ বা রক্ত সমস্যার সমাধানে শিঙ্গা লাগানোর মাধ্যমে এর চিকিৎসার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ‘আরবদের নিকট এই চিকিৎসা পদ্ধতিটি ছিল বহুল প্রচলিত। উষ্ণ অঞ্চলসমূহে এ ধরনের চিকিৎসা কার্যকারিতা অধিক হওয়ার কারণেই তারা এতে সর্বাধিক অভ্যস্ত।
জন্ডিসের চিকিৎসায় যে পথ্যের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, তা হলো : লঘুপাক জাতীয় পানীয়। এক্ষেত্রে মধু সর্বোৎকৃষ্ট পথ্য। বৈজ্ঞানিকভাবেও তা পরীক্ষিত। পরবর্তী অধ্যায়ে এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা আসবে। সর্বশেষে আগুনে সেঁক দেয়ার বিষয়টি সাব্যস্ত করলেও নির্দেশনা দেয়া হয়নি। আগুনে সেঁক দেয়ার বৈধতা বর্ণিত হয়েছে এই শর্তে যে, তা একটি মাধ্যম মাত্র, আল্লাহ তা‘আলার নির্দেশেই রোগের শিফা নির্ধারিত।
শায়খ আবূ মুহাম্মাদ আবূ জামরাহ্-এর মতে, আগুনের সেঁক দেয়ায় উপকার ও ক্ষতি উভয়বিধ সম্ভাবনা রয়েছে। যেহেতু নিষেধাজ্ঞা এসেছে, সেহেতু এতে ক্ষতির আশংকা বিদ্যমান রয়েছে। পবিত্র কুরআনে যেমন মদের ব্যাপারে বলা হয়েছে, এতে উপকারিতা রয়েছে তবে উপকারের চাইতে ক্ষতির ভাগটি বেশী, তাই তা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য যে, সাধারণত শরীরের অভ্যন্তরে দুই ধরনের দুরবস্থা বিরাজমান থাকার কারণে রোগের সূত্রপাত হয়। এক, গরমের তাপমাত্রা বেশী অথবা ঠাণ্ডার পরিমাণ বেশী থাকার জন্যই রোগ-ব্যাধির জন্ম হয়। তাই বিপরীতধর্মী পথ্য ব্যবহারের মাধ্যমে তা দূরীভূত করতে হয়। যেমন হাদীসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জ্বর হচ্ছে জাহান্নামের তাপমাত্রার অংশবিশেষ। অতএব একে পানি দ্বারা নিবৃত্ত কর। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নির্দেশনা মোতাবেক সহাবায়ে কিরাম পানির মাধ্যমেই জ্বরের চিকিৎসা করতেন। উম্মুল মু’মিনীন আসমা বিনতু আবূ বকর (রাঃ)-এর জীবনীতে তাই পাওয়া যায়।
চিকিৎসাশাস্ত্রের আলোকে বুঝা যায় যে, সময়, অবস্থা ও পরিবেশের প্রভাবে অসুস্থতার চিকিৎসা পদ্ধতির পরিবর্তন হতে পারে। তাছাড়া প্রতিটি মানুষের শারীরিক গঠনের তারতম্যের কারণে পথ্যের কার্যকারিতার ভিন্নতাও পরিলক্ষিত হয়। সে কারণেই দেখা যায়, একই ঔষধে অভিন্ন রোগে আক্রান্ত সব রোগী সুস্থ হয় না। এজন্য চিকিৎসাশাস্ত্রে পাণ্ডিত্য ও অভিজ্ঞতা ব্যতীত চিকিৎসা কার্যক্রম পরিচালনা করা উচিত নয়। মুসলিম চিকিৎসা বিজ্ঞানী ইবনু সিনা সহ অন্যান্য পন্ডিতগণও এ অভিমত পেশ করেছেন। (ফাতহুল বারী ১০ম খন্ড, হাঃ ৫৬৮০)