পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ
৩৪৬১-[১৬] আবূ জুহায়ফাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন আমি ’আলী (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, কুরআনে নেই এমন কিছু কি আপনার নিকট আছে? তখন তিনি বললেন, সেই সত্তার কসম! যিনি খাদ্য-শস্য অঙ্কুরিত করে প্রাণের সঞ্চার করেছেন। কুরআনে যা আছে তা ব্যতীত অন্য কোনো কিছু আমাদের কাছে নেই। তবে হ্যাঁ, কিতাব (কুরআন) ও সহীফার (লিখিত হাদীস গ্রন্থের) মধ্যে বুঝার জন্য আল্লাহ তা’আলা মানুষকে যে জ্ঞান দিয়ে থাকেন, তা আমাদের নিকট রয়েছে। আমি বললাম, সহীফার মধ্যে কি লেখা আছে? তিনি বললেন, দিয়াতের (রক্তপণের) বিধান, বন্দীদের মুক্তিপণ এবং এই ফায়সালা যে, কিসাসস্বরূপ কোনো মুসলিমকে কোনো কাফিরের বদলে হত্যার অনুমোদন নেই। (বুখারী)[1]
আর ইবনু মাস্’ঊদ হতে এ প্রসঙ্গে একটি হাদীস বর্ণিত হয়েছে ’’কোনো ব্যক্তিকে জুলুম ও নির্যাতনমূলক হত্যা করা যাবে না’’ যা ’ইলম পর্বে বর্ণিত হয়েছে।
اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ
وَعَن أبي جُحيفةَ قَالَ: سَأَلْتُ عَلِيًّا رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ هَلْ عِنْدَكُمْ شَيْءٌ لَيْسَ فِي الْقُرْآنِ؟ فَقَالَ: وَالَّذِي فَلَقَ الْحَبَّةَ وَبَرَأَ النَّسَمَةَ مَا عِنْدَنَا إِلَّا مَا فِي الْقُرْآنِ إِلَّا فَهْمًا يُعْطَى رَجُلٌ فِي كِتَابِهِ وَمَا فِي الصَّحِيفَةِ قُلْتُ: وَمَا فِي الصَّحِيفَةِ؟ قَالَ: الْعَقْلُ وَفِكَاكُ الْأَسِيرِ وَأَنْ لَا يُقْتَلَ مُسْلِمٌ بِكَافِرٍ. رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ وَذَكَرَ حَدِيثَ ابْنِ مَسْعُودٍ: «لَا تُقْتَلُ نَفْسٌ ظُلْمًا» فِي «كتاب الْعلم»
ব্যাখ্যা: এখানে ‘আলী (রাঃ)-এর কথা বিশেষভাবে বলার কারণ হলো যে, শী‘আ সম্প্রদায়ের লোকেরা ‘আলী -কে জ্ঞানের মূল কেন্দ্র হিসেবে মনে করে থাকে। ‘আলী -এর কথার দ্বারা বুঝা যায় যে, প্রথমদিকে শুধু কুরআন লিখে রাখা হত।
এ হাদীস দ্বারা বুঝা যায়, আল্লাহ তা‘আলা কুরআন মাজীদে সব বিষয় তুলে ধরেছেন। ইবনু ‘আব্বাস বলেনঃ সকল জ্ঞান সম্পর্কে কুরআন মাজীদে বলা হয়েছে তবে কমসংখ্যক লোক তা বুঝতে পারে।
‘আল্লামা কাযী (রহঃ) বলেনঃ শী‘আরা মনে করে যে, ‘ইল্মে ওয়াহী সম্পর্কে ‘আলী সবচেয়ে বেশী অবগত আছেন। আহলে বায়তদের মধ্যে ‘আলী -এর কাছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওয়াহীর জ্ঞান বলে গেছেন যা অন্য কাউকে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেননি। কিন্তু ‘আলী শপথ করে তা অস্বীকার করে বললেন কুরআন ব্যতীত তার কাছে অন্য কিছু নেই। এ হাদীসে ক্বিসাসের বিধান সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, কোনো মুসলিমকে কিসাস স্বরূপ কোনো কাফিরের বদলে হত্যা করা যাবে না।
ইমাম শাফি‘ঈ (রহঃ) এ হাদীসের আলোকে বলেন, কোনো মুসলিমকে কিসাস স্বরূপ কোনো কাফিরের হত্যার বদলে হত্যা করা যাবে না। আর সে কাফিরটা হারবী (অমুসলিম দেশের) হোক বা যিম্মি (মুসলিম দেশের) হোক।
ইমাম আবূ হানীফাহ্ (রহঃ) বলেন, হারবী কাফিরের বদলে মুসলিমকে কিসাস স্বরূপ হত্যা করা যাবে না, কিন্তু যিম্মি কাফিরের বদলে মুসলিমকে হত্যা করা যাবে না।
‘আল্লামা কাযী (রহঃ) বলেনঃ কাফির সে যিম্মি হোক বা হারবী হোক কোনো অবস্থাতেই তার বদলে কোনো মুসলিমকে কিসাস স্বরূপ হত্যা করা যাবে- এই কথা হলো ‘উমার, ‘উসমান, ‘আলী, যায়দ ইবনু সাবিত প্রমুখ সাহাবীগণের এবং জুমহূর ‘উলামাগণের। পক্ষান্তরে ইমাম আবূ হানীফাহ্ ও তার অনুসারীদের মতে যিম্মি কাফিরের বদলে কিসাস স্বরূপ মুসলিমকে হত্যা করা যাবে। দলীল স্বরূপ তারা বলেন যে, ‘‘এক মুসলিম ব্যক্তি এক যিম্মিকে হত্যা করলে বিষয়টি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট উল্লেখ করার পর তিনি বলেন, তার যিম্মাদারী রক্ষার ক্ষেত্রে আমি অধিক হকদার’’ হাদীসটি বায়হাক্বী সুনানে (৮/৩০) এবং দারাকুত্বনী (৩/১৩৫) বর্ণনা করেছেন। কিন্তু এর রাবীগণ অনির্ভরযোগ্য এবং সানাদ মুন্ক্বতি‘। এ হাদীসে আরো বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তিকে জুলুম নির্যাতন করে হত্যা করা যাবে না। (মিরকাতুল মাফাতীহ; ফাতহুল বারী ১২শ খন্ড, হাঃ ৬৯০৩; তুহফাতুল আহওয়াযী ৪র্থ খন্ড, হাঃ ১৪১২)