পরিচ্ছেদঃ ২৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - জামা‘আত ও তার ফযীলত সম্পর্কে
জেনে রাখা দরকার যে, জামা’আতে সালাতের বিধান কখন থেকে শুরু হয়েছে তা নিয়ে ’আলিমদের মতানৈক্য রয়েছে। ইবনু হাজার মাক্কী দৃঢ়তার সাথে বলেছেন যে, জামা’আতে সালাতের বিধান মদীনাতে শুরু হয়েছে।
শায়খ রিয্ওয়ান বলেনঃ জামা’আতে সালাতের বিধান মক্কাতেই শুরু হয়েছে। প্রমাণ স্বরূপ তিনি বলেন যে, মি’রাজের ঘটনার রাতের সকালে তথা ফজরে জিবরীল (আঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এবং সাহাবীগণের নিয়ে জামা’আতে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করেছিলেন এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খাদীজাহ্ (রাঃ) ও ’আলী (রাঃ)-কে নিয়ে মক্কাতে জামা’আতে সালাত আদায় করেছেন। তবে তা প্রকাশ পায়নি এবং নিয়মিতভাবে মদীনাতেই জামা’আতে সালাত আদায় করেছেন, তার আগে নয়। এজন্যই বলা হয় যে, মদীনাতে জামা’আতের বিধান শুরু হয়েছে।
জামা’আতে সালাত আদায় করা ওয়াজিব নাকি সুন্নাত এ নিয়েও ’আলিমদের মাঝে মতানৈক্য রয়েছে।
হাফিয ইবনু হাজার ফাতহুল বারীতে উল্লেখ করেছেন যে, ’আত্বা, আওযা’ঈ, আহমাদ, আবূ সাওর, ইবনু খুযায়মাহ্ এবং ইবনুল মুনযির-এর মতে জামা’আতে সালাত আদায় করা ফারযে ’আইন।
দাঊদ জাহিরী এবং তার অনুসারীদের মতে সালাত বিশুদ্ধ হওয়ার জন্য জামা’আত শর্ত।
ইমাম শাফি’ঈর মতে জামা’আতে সালাত আদায় করা ফারযে কিফায়াহ্। এ মত গ্রহণ করেছেন শাফি’ঈ মাযহাবের পূর্বসুরী ’আলিমগণ এবং অনেক হানাফী ও মালিকী ’আলিমগণ।
অন্যান্য ’আলিমদের মতে জামা’আতে সালাত আদায় করা সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ্।
ইমাম বুখারী জামা’আতে সালাত আদায় করাকে ফারযে আইন হিসেবে গ্রহণ করেছেন। তিনি অত্র অধ্যায়ে আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত ২নং হাদীসের অধ্যায় রচনা করেছেন এভাবে (باب وجوب صلاة الجماعة) ’জামা’আতে সালাত আদায় করা ওয়াজিব হওয়া প্রসঙ্গ’। অতঃপর তিনি হাসান বসরী (রহঃ)-এর বক্তব্য উল্লেখ করেছেন যে, তার মা তাকে করুণার বশবর্তী হয়ে ’ইশার সালাতে জামা’আতে উপস্থিত হতে বারণ করেন, কিন্তু তিনি তার মায়ের আনুগত্য করেননি। এ থেকে বুঝা যায় যে, জামা’আতে সালাত আদায় করা ফারযে আইন।
আমি (মুবারকপূরী) মনে করি যে, জামা’আতে সালাত আদায় করা সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ্ হলেও তা ওয়াজিবের কাছাকাছি। যাতে উভয় প্রকারের হাদীসের মধ্যে সমন্বয় হয়।
১০৫২-[১] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ একা একা সালাত আদায় করার চেয়ে জামা’আতে সালাত আদায় করলে সাতাশ গুণ সাওয়াব বেশি হয়। (বুখারী, মুসলিম)[1]
بَابُ الْجَمَاعَةِ وَفَضْلِهَا
عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «صَلَاةُ الْجَمَاعَةِ تَفْضُلُ صَلَاة الْفَذ بِسبع وَعشْرين دَرَجَة»
ব্যাখ্যা: ইমাম তিরমিযী বলেনঃ অধিকাংশ রাবী নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন জামা‘আতে সালাত আদায় করা একাকী সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করার চেয়ে পঁচিশ গুণ সাওয়াব বেশী। যেমন আবূ সা‘ঈদ আল খুদরী এবং আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) বর্ণিত হাদীস। শুধুমাত্র ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে এর সাওয়াব ২৭ গুণ বেশী। এ দুই বর্ণনার মধ্যে সমন্বয় কিভাবে করা যায় সে ব্যাপারে ‘আলিমদের মাঝে অনেক বক্তব্য রয়েছে।
১. সংখ্যায় কম এর উল্লেখ বেশী সংখ্যার বিরোধী নয়, কেননা কম সংখ্যা তো বেশী সংখ্যার মধ্যে নিহিত রয়েছে।
২. হতে পারে যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথমে কম সংখ্যা অর্থাৎ পঁচিশ গুণের কথা বলেছেন। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা যখন তাকে এর মর্যাদা আরো বেশী বলে অবহিত করেছেন। তখন তিনি বেশী তথা সাতাশ গুণের কথা উল্লেখ করেছেন।
৩. মসজিদের দূরত্বের কারণে ফাযীলাত কম বা বেশী
৪. জামা‘আতের লোক সংখ্যার কম বেশীর কারণে ফাযীলাত কম বা বেশী ইত্যাদি।
হাদীসে শিক্ষা:
- জামা‘আতে সালাত আদায় করা ওয়াজিব নয়।
- সালাত বিশুদ্ধ হওয়ার জন্যও জামা‘আত শর্ত নয়।
কেননা যদি একাকী সালাত আদায় করলে তা যথেষ্ট না হতো তাহলে এটা বলা ঠিক হত না যে, জামা‘আতের সালাত একাকী সালাতের চেয়ে বেশী ফাযীলাতপূর্ণ। অনুরূপ একাকী সালাতের যদি কোন মর্যাদাই না থাকতো তাহলে এটাও বলা ঠিক হতো না যে, জামা‘আতে সালাত আদায় করলে তার মর্যাদা একাকী সালাত আদায় করার চাইতে পঁচিশ গুণ বা সাতাশ গুণ সাওয়াব বেশী।