পরিচ্ছেদঃ ৩১৮. রমাযান মাসের ক্বিয়াম সম্পর্কে
১৩৭১। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমাযান মাসের ক্বিয়ামে খুবই উৎসাহী ছিলেন। তবে তিনি এ ব্যাপারে লোকদের প্রতি কঠোর নির্দেশ দিতেন না। তিনি বলতেনঃ যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সওয়াবের আশায় রমযানের রাতে সালাতে দাঁড়ায়, তার অতীতের গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ইন্তিকাল পর্যন্ত এর বিধান এরূপই থাকলো। অতঃপর আবূ বকর (রাঃ) এর পূর্ণ খিলাফাত ও ’উমার (রাঃ) এর খিলাফাতের প্রথম দিকেও এ নিয়ম চালূ থাকে।[1]
সহীহ : বুখারী ও মুসলিম। কিন্তু বুখারীতে ’’রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ইন্তিকাল পর্যন্ত ...’’ অংশটুকু যুহরীর বক্তব্য হিসেবে এসেছে।
ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, অনুরূপ বর্ণনা করেছেন ’উক্বাইল, ইউনুস ও আবূ উওয়ায়স। তবে তাতে রয়েছে, ’যে ব্যক্তি রমাযানে সওম পালন ও ক্বিয়াম করে’।
হাসান সহীহ।
باب فِي قِيَامِ شَهْرِ رَمَضَانَ
حَدَّثَنَا الْحَسَنُ بْنُ عَلِيٍّ، وَمُحَمَّدُ بْنُ الْمُتَوَكِّلِ، قَالَا حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّزَّاقِ، أَخْبَرَنَا مَعْمَرٌ، - قَالَ الْحَسَنُ فِي حَدِيثِهِ وَمَالِكُ بْنُ أَنَسٍ - عَنِ الزُّهْرِيِّ، عَنْ أَبِي سَلَمَةَ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ : كَانَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم يُرَغِّبُ فِي قِيَامِ رَمَضَانَ مِنْ غَيْرِ أَنْ يَأْمُرَهُمْ بِعَزِيمَةٍ ثُمَّ يَقُولُ " مَنْ قَامَ رَمَضَانَ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ " . فَتُوُفِّيَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَالأَمْرُ عَلَى ذَلِكَ ثُمَّ كَانَ الأَمْرُ عَلَى ذَلِكَ فِي خِلَافَةِ أَبِي بَكْرٍ - رضى الله عنه - وَصَدْرًا مِنْ خِلَافَةِ عُمَرَ رضى الله عنه .
- صحيح : ق، لكن خ جعل قوله : (فَتُوُفِّيَ رَسُولُ اللهِ....) من كلام الزهري
قَالَ أَبُو دَاوُدَ : وَكَذَا رَوَاهُ عُقَيْلٌ وَيُونُسُ وَأَبُو أُوَيْسٍ " مَنْ قَامَ رَمَضَانَ " . وَرَوَى عُقَيْلٌ " مَنْ صَامَ رَمَضَانَ وَقَامَهُ " .
- حسن صحيح
Narrated Abu Hurairah:
The Messenger of Allah (ﷺ) used to commend prayer at night during Ramadan, but did not command it as duty. He would say: If anyone prays during the night in Ramadan because of faith and seeking his reward from Allah, his previous sins will be forgiven for him. When the Messenger of Allah (ﷺ) died, this was the practice, and it continued thus during Abu Bakr's caliphate and early part of 'Umar's.
Abu Dawud said: This tradition has been transmitted by 'Uqail, Yunus, and Abu Uwais in like manner. The version of 'Uqail goes: He who fasts during Ramadan and prays during the night.
পরিচ্ছেদঃ ৩১৮. রমাযান মাসের ক্বিয়াম সম্পর্কে
১৩৭২। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি এ হাদীস নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সূত্রে বর্ণনা করেনঃ যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সওয়াবের আশায় রমাযানে সওম পালন করে তার পূর্বের গুনাহ ক্ষমা করা হয় এবং যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সওয়াবের আশায় ক্বদরের রাতে ক্বিয়াম করে তারও পূর্বের গুনাহ্ ক্ষমা করা হয়।[1]
সহীহ : বুখারী ও মুসলিম।
باب فِي قِيَامِ شَهْرِ رَمَضَانَ
حَدَّثَنَا مَخْلَدُ بْنُ خَالِدٍ، وَابْنُ أَبِي خَلَفٍ، - الْمَعْنَى - قَالَا حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، عَنْ أَبِي سَلَمَةَ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، يَبْلُغُ بِهِ النَّبِيَّ صلي الله عليه وسلم " مَنْ صَامَ رَمَضَانَ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ، وَمَنْ قَامَ لَيْلَةَ الْقَدْرِ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ "
- صحيح : ق
قَالَ أَبُو دَاوُدَ وَكَذَا رَوَاهُ يَحْيَى بْنُ أَبِي كَثِيرٍ عَنْ أَبِي سَلَمَةَ وَمُحَمَّدُ بْنُ عَمْرٍو عَنْ أَبِي سَلَمَةَ
Narrated Abu Hurairah:
The Prophet (ﷺ) as saying: If anyone fasts during Ramadan because of faith and in order to seek his reward from Allah, his previous sins will be forgiven to him. If anyone prays in the night of the power (lailat al-qadr) because of faith and in order to seek his reward from Allah his previous sins will be forgiven for him.
Abu Dawud said: This tradition has been transmitted in a similar manner by Yahya b. Abi Kathir and Muhammad b. 'Amr from Abu Salamah.
পরিচ্ছেদঃ ৩১৮. রমাযান মাসের ক্বিয়াম সম্পর্কে
১৩৭৩। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর স্ত্রী ’আয়িশাহ্ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে (তারাবীহ) সালাত আদায় করলে লোকেরাও তাঁর সাথে সালাত আদায় করলো। পরবর্তী রাতেও তিনি সালাত আদায় করেন এবং তাতে অনেক লোকের সমাগম হয়। অতঃপর পরবর্তী (তৃতীয়) রাতেও লোকজন সমবেত হলো, কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেরিয়ে তাদের কাছে এলেন না। অতঃপর ভোর হলে তিনি বললেনঃ তোমরা কি করেছো আমি তা দেখেছি। তবে তোমাদের উপর ফারয করে দেয়া হতে পারে, এ আশংকায় আমি তোমাদের কাছে আসিনি। এটি রমাযান মাসের ঘটনা।[1]
সহীহ : বুখারী ও মুসলিম।
باب فِي قِيَامِ شَهْرِ رَمَضَانَ
حَدَّثَنَا الْقَعْنَبِيُّ، عَنْ مَالِكِ بْنِ أَنَسٍ، عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، عَنْ عُرْوَةَ بْنِ الزُّبَيْرِ، عَنْ عَائِشَةَ، زَوْجِ النَّبِيِّ صلي الله عليه وسلم أَنَّ النَّبِيَّ صلي الله عليه وسلم صَلَّى فِي الْمَسْجِدِ فَصَلَّى بِصَلَاتِهِ نَاسٌ، ثُمَّ صَلَّى مِنَ الْقَابِلَةِ فَكَثُرَ النَّاسُ ثُمَّ اجْتَمَعُوا مِنَ اللَّيْلَةِ الثَّالِثَةِ فَلَمْ يَخْرُجْ إِلَيْهِمْ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَلَمَّا أَصْبَحَ قَالَ " قَدْ رَأَيْتُ الَّذِي صَنَعْتُمْ فَلَمْ يَمْنَعْنِي مِنَ الْخُرُوجِ إِلَيْكُمْ إِلَا أَنِّي خَشِيتُ أَنْ يُفْرَضَ عَلَيْكُمْ " . وَذَلِكَ فِي رَمَضَانَ .
- صحيح : ق
Narrated 'Aishah, wife of Prophet (ﷺ):
That the Prophet (ﷺ) once offered (tarawih) prayer in the mosque and the people also prayed along with him. He then prayed on the following night, and the people gathered in large numbers. They gathered on the third night too, but the Messenger of Allah (ﷺ) did not come out to them. When the morning came, he said: I witnessed what you did, and nothing prevented me from coming out to you except that I feared that this (prayer) might be prescribed to you. That was in Ramadan.
পরিচ্ছেদঃ ৩১৮. রমাযান মাসের ক্বিয়াম সম্পর্কে
১৩৭৪। ’আয়িশাহ্ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, লোকেরা রমাযান মাসে মসজিদে বিচ্ছিন্নভাবে সালাত আদায় করতো। আমার প্রতি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নির্দেশ মোতাবেক আমি তাঁর জন্য একটা মাদুর বিছিয়ে দিলে তিনি তার উপর সালাত আদায় করলেন। অতঃপর বর্ণনাকারী ঘটনাটি বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে লোক সকল! আল্লাহর শপথ! আল্লাহর প্রশংসা, আমার রাতটি আমি গাফিলভাবে অতিবাহিত করি নাই এবং তোমাদের অবস্থাও আমার নিকট গোপন থাকেনি।[1]
হাসান সহীহ।
باب فِي قِيَامِ شَهْرِ رَمَضَانَ
حَدَّثَنَا هَنَّادُ بْنُ السَّرِيِّ، حَدَّثَنَا عَبْدَةُ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ عَمْرٍو، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ إِبْرَاهِيمَ، عَنْ أَبِي سَلَمَةَ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ : كَانَ النَّاسُ يُصَلُّونَ فِي الْمَسْجِدِ فِي رَمَضَانَ أَوْزَاعًا فَأَمَرَنِي رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَضَرَبْتُ لَهُ حَصِيرًا فَصَلَّى عَلَيْهِ بِهَذِهِ الْقِصَّةِ قَالَتْ فِيهِ قَالَ - تَعْنِي النَّبِيَّ صلي الله عليه وسلم - " أَيُّهَا النَّاسُ أَمَا وَاللهِ مَا بِتُّ لَيْلَتِي هَذِهِ بِحَمْدِ اللهِ غَافِلاً وَلَا خَفِيَ عَلَىَّ مَكَانُكُمْ " .
- حسن صحيح
Narrated 'Aishah:
The people used to pray (tarawih prayer) in the mosque during Ramadan severally. The Messenger of Allah (ﷺ) commanded me (to spread a mat). I spread a mat for him and he prayed upon it. The narrator then transmitted the same story. The Prophet (ﷺ) said: O People, praise be to Allah, I did not pass my night carelessly, nor did your position remain hidden from me.
পরিচ্ছেদঃ ৩১৮. রমাযান মাসের ক্বিয়াম সম্পর্কে
১৩৭৫। আবূ যার (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে রমাযান মাসের সওম পালন করতাম। তিনি এ মাসে (প্রথম দিকের অধিকাংশ দিনই) আমাদেরকে নিয়ে (তারাবীহ) সালাত আদায় করেননি। অতঃপর রমাযানের সাত দিন বাকী থাকতে তিনি আমাদেরকে নিয়ে সালাত আদায় করলেন রাতের এক-তৃতীয়াংশ পর্যন্ত। তিনি পরবর্তী রাতে আমাদেরকে নিয়ে (মসজিদে) সালাত আদায় করলেন না। অতঃপর পঞ্চম রাতে তিনি আমাদেরকে নিয়ে সালাতে দাঁড়িয়ে অর্ধেক রাত অতিবাহিত করেন। আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! যদি আপনি এ পুরো রাতটি আমাদেরকে নিয়ে সালাতে দাঁড়িয়ে থাকতেন।
বর্ণনাকারী বলেন, তিনি বললেনঃ কোন ব্যক্তি ইমামের সাথে (’ইশার) সালাত আদায় করে প্রত্যাবর্তণ করলে তাকে পুরো রাতের সালাত আদায়কারী হিসেবে গণ্য করা হয়। তিনি বলেন, অতঃপর পরবর্তী চতুর্থ রাতে তিনি (মসজিদে) সালাত আদায় করেননি। যখন তৃতীয় রাত এলো তিনি তার পরিবার-পরিজন, স্ত্রী ও অন্য লোকদের একত্র করলেন এবং আমাদেরকে নিয়ে এত দীর্ঘক্ষণ সালাত আদায় করলেন যে, আমরা ’ফালাহ’ ছুটে যাওয়ার আশংকা করলাম। জুবাইর ইবনু নুফাইর বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম, ’ফালাহ’ কি? তিনি বললেন, সাহারী খাওয়া। অতঃপর তিনি এ মাসের অবশিষ্ট রাতে আমাদেরকে নিয়ে সালাত আদায়ের জন্য দাঁড়াননি।[1]
সহীহ।
এক নজরে তারাবীহ সালাতের নিয়মঃ
(১) তারাবীহ সালাতের রাক‘আত সংখ্যা সহীহ সুন্নাহ মোতাবেক বিতর সহ ১১ রাক‘আত। আর দুর্বল হাদীস মোতাবেক ২০ কিংবা তার চাইতে বেশি।
* শায়খ ‘আবদুল হক দেহলবী হানাফী (রহঃ) বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে ২০ রাক‘আতের প্রমাণ নেই। বিশ রাক‘আতের হাদীস দুর্বল সনদে বর্ণিত হয়েছে, যার দুর্বলতার ব্যাপারে সকল হাদীসবিশারদ ইমামগণ একমত।
* শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলবী হানাফী (রহঃ) বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আমল দ্বারা তারাবীহর সালাত বিতর সহ ১১ রাক‘আতই প্রমাণিত। (দেখুন, আল-মুসাফফাহ শরহে মুয়াত্তা)
* মোল্লা আলী ক্বারী হানাফী (রহঃ) বলেনঃ হানাফী শায়খদের কথার দ্বারা ২০ রাক‘আত তারাবীহ বুঝা যায় বটে, কিন্তু দলীল প্রমাণ মতে বিতর সহ ১১ রাক‘আতই সঠিক।
* আল্লামা ইবনুল হুমাম হানাফী (রহঃ) ‘ফাতহুল ক্বাদীর’ গ্রন্থে তারাবীহর রাক‘আত সংখ্যার ব্যাপারে বিশদ আলোচনার উপসংহারে বলেনঃ এ সমস্ত আলোচনা থেকে প্রমাণিত হলো যে, রমাযানের রাতের সালাত জামা‘আতের সাথে বিতর সহ ১১ রাক‘আত পড়া সুন্নাত, যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আদায় করেছেন। (দেখুন, ফাতহুল ক্বাদীর ১/৪০৭)
* আল্লামা রশীদ আহমাদ গাংগুহী হানাফী (রহঃ) বলেনঃ তারাবীহর সালাত বিতর সহ মাত্র ১১ রাক‘আতই প্রমাণিত এবং তা সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ। (রিসালাহ আল-হাক্কুশ শরীফ পৃঃ ২২)
* আবদুল হাই লাক্ষ্ণৌভী হানাফী (রহঃ) বলেনঃ যদি প্রশ্ন করা হয়, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে রাতগুলিতে তারাবীহ পড়েছিলেন তা কত রাক‘আত ছিলো? তাহলে জাবির (রাঃ) কতৃর্ক বর্ণিত হাদীসের আলোকে উত্তর হবে ৮ রাক‘আত। আর যদি প্রশ্ন করা হয়, তিনি কি কখনো ২০ রাক‘আত পড়েছেন? তাহলে উত্তর হবে, এ মর্মে বর্ণিত হাদীস দুর্বল। (তুহফাতুল আখবার পৃঃ ২৮)
* আল্লামা আনোয়ার শাহ কাশমীরী (রহঃ) বলেনঃ ‘নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে সহীহ সনদে ৮ রাক‘আতই প্রমাণিত হয়েছে। আর ২০ রাক‘আতের সানাদ দুর্বল প্রমাণিত হয়েছে, বরং তা সর্বসম্মতিক্রমে যঈফ।’ তিনি আরো বলেনঃ অতীব বাস্তব বিষয়ে আত্নসমার্পন করা ছাড়া উপায় নেই যে, নিশ্চয়ই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর তারাবীহর সালাত ছিল ৮ রাক‘আত। (দেখুন, আল-আরফুশ শাযী শরহে জামি‘ তিরমিযী)
ইমাম যায়লায়ী হানাফী, আহমাদ ‘আলী সাহারানপুরী সহ বহু হানাফী মণীষীগণও একই ধরনের মন্তব্য করেছেন।
* হাফিয ইবনু হাজার আসকালানী (রহঃ) বলেনঃ ২০ রাক‘আতের হাদীস সহীহ হাদীসের বিরোধী হওয়ায় তা বিনা দ্বিধায় বর্জনীয়।
* বিংশ শতাব্দীর যুগশেষ্ঠ মুহাদ্দিস আল্লামা নাসিরুদ্দীন আলবানী (রহঃ) বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিতর সহ ১১ রাক‘আত তারাবীহ সালাত আদায় করেছেন। যে হাদীসে বিশ রাক‘আত তারাবীহর কথা উল্লেখ রয়েছে তা খুবই দুর্বল। (দেখুন, আলবানী প্রণীত সালাতুত তারাবীহ)
সুতরাং মুহাদ্দিসীনে কিরামের মন্তব্যের ভিত্তিতে এ কথা বলা যায় যে, সংশয়পূর্ণ ও দুর্বল সনদে বর্ণিত হাদীসের পরিবর্তে সহীহ সনদে বর্ণিত বিশুদ্ধ হাদীস মোতাবেক আমল করাটাই বুদ্ধিমান ও সচেতন মুমিনের পরিচয় বহন করে।
(২) তারাবীহ সালাতে কুরআন খতম করা শর্ত নয়। কুরআন মাজীদ খতম করা অতি উত্তম এ ব্যাপারে কোন দলীল রয়েছে বলে জানা নেই। বরং গুরুত্ববহ হচ্ছে, সালাতের ক্বিরাআতে খুশুখুযু বা প্রশান্তি সৃষ্টি করার মাধ্যমে মুসল্লীদের উপকৃত করা। যদিও কুরআন খতম না হয়। এমনকি কুরআন মাজীদের ১৫ পারা কিংবা ১০ পারা সর্ম্পূণ করাও যদি না হয়।
(৩) কেউ যদি কোন ক্বারীর সুললিত কন্ঠে কুরআন তিলাওয়াত শুনার উদ্দেশে এলাকার নিকটস্থ মাসজিদ ছেড়ে দূরে অবস্থিত অন্য মসজিদে যায় এবং এতে তার একাগ্রতা, প্রশান্তির প্রত্যাশা থাকে তাহলে দোষের কিছু নেই। বরং নিয়্যাত ভাল হলে তিনি এর বিনিময়ে সওয়াব পাবে। তবে এতে লোক দেখানো উদ্দেশ্য থাকা চলবে না।
(৪) কিছু সংখ্যক ইমাম কতৃর্ক প্রতি রাক‘আতে ও প্রতি রাতে কুরআনের নির্দিষ্ট অংশ নির্ধারণ করে পড়ার নিয়মের ব্যাপারে কোন বর্ণনা আছে বলে আমাদের জানা নেই। বরং বিষয়টি ইমামের ইজতিহাদ ও মানসিকতার উপর নির্ভর করে। যদি ইমামের কাছে ভালো লাগে এবং মুসল্লীগণ কুরআন মাজীদের তিলাওয়াত শুনে পরিতৃপ্ত হন, সেক্ষেত্রে ইমাম বেশি পরিমাণ তিলাওয়াত করতে পারেন। অনুরূপভাবে ইমামের শারীরিক অসুস্থতা বা বিভিন্ন কারণে কুরআন তিলাওয়াত পরিমাণে কমও করতে পারেন। কিন্তু পরিমাণ নির্ধারণ করলে এরূপ ক্ষেত্রে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়।
(৫) তারাবীহ সালাতের জন্য ইমাম কতৃর্ক বেতন নির্ধারণ অনুচিত। সালফে সালিহীন এরূপ কাজকে অপছন্দ করেছেন। মুসল্লীগণ যদি নির্ধারণ ব্যতিরেকে কিছু দিয়ে তাকে সহযোগিতা করেন যেমন, গাড়ি ভাড়া ইত্যাদি তাতে অসুবিধা নেই। আর যদি কোন ইমাম বেতন নির্দিষ্ট করে ইমামতি করেন তবে ইনশাআল্লাহ তার পিছনে সালাত আদায়ে সমস্যা নেই। কেননা প্রয়োজন মানুষকে এরূপ করতে বাধ্য করে। কিন্তু ইমামের উচিত, এমনটি না করা।
(৬) ইমাম যদি হিফযে দুর্বল হন অথবা ভুলে যান কিংবা মুখস্ত না থাকে সে ক্ষেত্রে তিনি কুরআন মাজীদের পান্ডুলিপি নিয়ে সালাত আদায় করতে পারবেন। ইমামের জন্য এরূপ করা বৈধ। কিন্তু ইমামের অনুসরণের অজুহাতে মুসল্লীর জন্য এরূপ করা অনুচিত ও ভিত্তিহীন। বরং তা কয়েকটি কারণে সুন্নাত বিরোধী। যেমনঃ
(ক) এতে ক্বিয়াম অবস্থায় বাম হাতের উপর ডান হাত রাখার বিধানটি ছুটে যাচ্ছে।
(খ) মুসল্লীগণ সালাতে অতিরিক্ত নড়াচড়ায় জড়িয়ে পড়ছেন। যা নিস্প্রয়োজন। যেমন, কুরআন মাজীদ খোলা, পাতা উল্টানো, বন্ধ করা, তা বগলে কিংবা পকেটে রাখা ইত্যাদি।
(গ) সালাতরত অবস্থায় সাজদার দিকে চোখ রাখা সুন্নাত ও অতি উত্তম। কিন্তু ঐরূপ করার কারণে তা ছুটে যাচ্ছে।
(ঘ) যারা এরূপ করেন তারা কখনো ভুলেই যান যে, তারা সালাতরত আছেন। এতে করে সালাতের খুশুখুযু ও একাগ্রতা সৃষ্টি হয় না।
(৭) তারাবীহর সালাত ও দু‘আর সময় উচ্চস্বরে কান্নাকাটি করা মোটেই উচিত নয়। এ কাজ মানুষকে কষ্ট দেয়, মন মানসিকতার উপর চাপ সৃষ্টি করে, মুসল্লীদের সালাতে এবং ক্বারীর ক্বিরাআতে দ্বীধা ও সংশয় সৃষ্টি করে। মুমিনের জন্য উচিত হলো, তার কান্নার আওয়াজ যেন কেউ না শুনতে পারে সেদিকে সজাগ থাকা ও লোক দেখানো ভাব হতে সতর্ক হওয়া। কেননা এরূপ কাজে শয়তান তাকে প্রভাবিত করে লোক দেখানো কাজে ধাবিত করে। অবশ্য অনিচ্ছাকৃতভাবে যদি এমনটি হয়ে যায় তবে তা ক্ষমাযোগ্য।
(দেখুন, ফাতাওয়াহ শায়খ ‘আবদুল ‘আযীয বিন বায এবং ফাতাওয়াহ শায়খ সালিহ আল-উসাইমিন -রহঃ)
(৮) রমাযান মাসে প্রথম রাতে তারাবীহ পড়লে শেষ রাতে তাহাজ্জুদ পড়তে হয় না। অবশ্য কেউ যদি কিছু কিছু করে দুটোকে মিলিয়ে পড়তে চান তবে পড়া যেতে পারে। যেমন, প্রথম রাতে তারাবীহ চার রাক‘আত পড়লো এবং পরে শেষ রাতে চার রাক‘আত তাহাজ্জুদ পড়লো, অতঃপর তিন রাক‘আত বিতর পড়ে নিলো। এতে মোট ১১ রাক‘আত পূর্ণ হলো।
(৯) ১১ রাক‘আত আদায়ের নিয়ম হলোঃ দুই দুই রাক‘আত করে ৮ রাক‘আত। অতঃপর একটানা তিন রাক‘আত বিতর করে শেষে বৈঠক করবে। (সহীহুল বুখারী ও সহীহ মুসলিম)
অথবা দুই দুই করে মোট ১০ রাক‘আত। অতঃপর এক রাক‘আত বিতর।
অথবা একটানা ৮ রাক‘আত সালাত আদায় করে প্রথম বৈঠক এবং নবম রাক‘আতে শেষ বৈঠক। এভাবে বিতর শেষে দু’ রাক‘আত, মোট ১১ রাক‘আত।
(১০) তারাবীহ সালাতের খতম অনুষ্ঠান করা, এজন্য চাঁদা আদায় করা ইত্যাদি শারীআত সম্মত কিনা তাতে চিন্তার বিষয় রয়েছে। কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, সাহাবায়ি কিরাম, তাবেঈ, তাবে তাবেঈন ও নেককার পূর্বসুরীগণের কেউ এমনটি করেননি।
باب فِي قِيَامِ شَهْرِ رَمَضَانَ
حَدَّثَنَا مُسَدَّدٌ، حَدَّثَنَا يَزِيدُ بْنُ زُرَيْعٍ، أَخْبَرَنَا دَاوُدُ بْنُ أَبِي هِنْدٍ، عَنِ الْوَلِيدِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، عَنْ جُبَيْرِ بْنِ نُفَيْرٍ، عَنْ أَبِي ذَرٍّ، قَالَ : صُمْنَا مَعَ رَسُولِ اللهِ صلي الله عليه وسلم رَمَضَانَ فَلَمْ يَقُمْ بِنَا شَيْئًا مِنَ الشَّهْرِ حَتَّى بَقِيَ سَبْعٌ فَقَامَ بِنَا حَتَّى ذَهَبَ ثُلُثُ اللَّيْلِ فَلَمَّا كَانَتِ السَّادِسَةُ لَمْ يَقُمْ بِنَا فَلَمَّا كَانَتِ الْخَامِسَةُ، قَامَ بِنَا حَتَّى ذَهَبَ شَطْرُ اللَّيْلِ، فَقُلْتُ : يَا رَسُولَ اللهِ! لَوْ نَفَّلْتَنَا قِيَامَ هَذِهِ اللَّيْلَةِ . قَالَ فَقَالَ " إِنَّ الرَّجُلَ إِذَا صَلَّى مَعَ الإِمَامِ حَتَّى يَنْصَرِفَ حُسِبَ لَهُ قِيَامُ لَيْلَةٍ " . قَالَ : فَلَمَّا كَانَتِ الرَّابِعَةُ لَمْ يَقُمْ فَلَمَّا كَانَتِ الثَّالِثَةُ جَمَعَ أَهْلَهُ وَنِسَاءَهُ وَالنَّاسَ فَقَامَ بِنَا حَتَّى خَشِينَا أَنْ يَفُوتَنَا الْفَلَاحُ . قَالَ قُلْتُ مَا الْفَلَاحُ قَالَ السُّحُورُ ثُمَّ لَمْ يَقُمْ بِنَا بَقِيَّةَ الشَّهْرِ
- صحيح
Narrated AbuDharr:
We fasted with the Messenger of Allah (ﷺ) during Ramadan, but he did not make us get up at night for prayer at any time during the month till seven nights remained; then he made us get up for prayer till a third of the night had passed. When the sixth remaining night came, he did not make us get up for prayer. When the fifth remaining night came, he made us stand in prayer till a half of the night had gone.
So I said: Messenger of Allah, I wish you had led us in supererogatory prayers during the whole of tonight.
He said: When a man prays with an imam till he goes he is reckoned as having spent a whole night in prayer. On the fourth remaining night he did not make us get up. When the third remaining night came, he gathered his family, his wives, and the people and prayed with us till we were afraid we should miss the falah (success).
I said: What is falah? He said: The meal before daybreak. Then he did not make us get up for prayer during the remainder of the month.
পরিচ্ছেদঃ ৩১৮. রমাযান মাসের ক্বিয়াম সম্পর্কে
১৩৭৬। ’আয়িশাহ্ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। রমাযানের শেষ দশক এলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সারা রাতই জাগ্রত থাকতেন, (’ইবাদাতের উদ্দেশে) শক্তভাবে কোমড় বাঁধতেন এবং পরিবারের লোকদের জাগাতেন।[1]
সহীহ : বুখারী ও মুসলিম।
باب فِي قِيَامِ شَهْرِ رَمَضَانَ
حَدَّثَنَا نَصْرُ بْنُ عَلِيٍّ، وَدَاوُدُ بْنُ أُمَيَّةَ، أَنَّ سُفْيَانَ، أَخْبَرَهُمْ عَنْ أَبِي يَعْفُورٍ، - وَقَالَ دَاوُدُ : عَنِ ابْنِ عُبَيْدِ بْنِ نِسْطَاسٍ، - عَنْ أَبِي الضُّحَى، عَنْ مَسْرُوقٍ، عَنْ عَائِشَةَ، أَنَّ النَّبِيَّ صلي الله عليه وسلم كَانَ إِذَا دَخَلَ الْعَشْرُ أَحْيَا اللَّيْلَ وَشَدَّ الْمِئْزَرَ وَأَيْقَظَ أَهْلَهُ
- صحيح : ق
قَالَ أَبُو دَاوُدَ وَأَبُو يَعْفُورٍ اسْمُهُ عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ عُبَيْدِ بْنِ نِسْطَاسٍ
Narrated 'Aishah:
When the last ten days of Ramadan came, the Prophet (ﷺ) kept vigil and prayed during the whole night, and tied the wrapper tightly, and awakened his family (to pray during the night).
Abu Dawud said: The name of Abu Ya'fur is 'Abd al-Rahman b. 'Ubaid b. Nistas.
পরিচ্ছেদঃ ৩১৮. রমাযান মাসের ক্বিয়াম সম্পর্কে
১৩৭৭। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রমাযান মাসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেরিয়ে দেখলেন যে, মসজিদের এক পাশে কতিপয় লোক সালাত আদায় করছে। তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ এরা কারা? বলা হলো, এরা কুরআন মুখস্ত না জানার কারণে উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ) এর ইমামতিতে (তারাবীহ) সালাত আদায় করছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এরা ঠিকই করছে এবং চমৎকার কাজই করছে![1]
দুর্বল।
ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, এ হাদীস শক্তিশালী নয়। মুসলিম ইবনু খালিদ (রহঃ) দুর্বল বর্ণনাকারী।
باب فِي قِيَامِ شَهْرِ رَمَضَانَ
حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ سَعِيدٍ الْهَمْدَانِيُّ، حَدَّثَنَا عَبْدُ اللهِ بْنُ وَهْبٍ، أَخْبَرَنِي مُسْلِمُ بْنُ خَالِدٍ، عَنِ الْعَلَاءِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ : خَرَجَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَإِذَا أُنَاسٌ فِي رَمَضَانَ يُصَلُّونَ فِي نَاحِيَةِ الْمَسْجِدِ فَقَالَ " مَا هَؤُلَاءِ " . فَقِيلَ هَؤُلَاءِ نَاسٌ لَيْسَ مَعَهُمْ قُرْآنٌ، وَأُبَىُّ بْنُ كَعْبٍ يُصَلِّي وَهُمْ يُصَلُّونَ بِصَلَاتِهِ . فَقَالَ النَّبِيُّ صلي الله عليه وسلم " أَصَابُوا وَنِعْمَ مَا صَنَعُوا " .
- ضعيف
قَالَ أَبُو دَاوُدَ لَيْسَ هَذَا الْحَدِيثُ بِالْقَوِيِّ مُسْلِمُ بْنُ خَالِدٍ ضَعِيفٌ
Narrated Abu Hurairah:
The Messenger of Allah (ﷺ) came out and saw that the people were praying during (the night of) Ramadan in the corner of the mosque. He asked: Who are these people ? It was said to him that those were people who had not learnt Quran. But Ubayy b. Ka'b is praying and they would pray behind him. The Prophet (ﷺ) said: They did right and it is good what they did.
Abu Dawud said: This tradition is not strong, the narrator Muslim b. Khalid is weak.