পরিচ্ছেদঃ ১২০. সালাতরত অবস্থায় বাম হাতের উপর ডান হাত রাখা
৭৫৪। ’আবদুর রহমান সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ইবনুয যুবায়ির (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, সালাতে দুই পা সমান রাখা এবং এক হাতের উপর অপর হাত রাখা সুন্নাত।[1]
দুর্বল।
باب وَضْعِ الْيُمْنَى عَلَى الْيُسْرَى فِي الصَّلَاةِ
حَدَّثَنَا نَصْرُ بْنُ عَلِيٍّ، أَخْبَرَنَا أَبُو أَحْمَدَ، عَنِ الْعَلَاءِ بْنِ صَالِحٍ، عَنْ زُرْعَةَ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، قَالَ سَمِعْتُ ابْنَ الزُّبَيْرِ، يَقُولُ صَفُّ الْقَدَمَيْنِ وَوَضْعُ الْيَدِ عَلَى الْيَدِ مِنَ السُّنَّةِ .
- ضعيف
Zur’ah b. ‘Abd al-Rahman said:
I heard Ibn al-Zubair say: Setting the feet right and placing one hand on the other is a sunnah.
পরিচ্ছেদঃ ১২০. সালাতরত অবস্থায় বাম হাতের উপর ডান হাত রাখা
৭৫৫। ইবনু মাসঊদ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। একদা তিনি ডান হাতের উপর বাম হাত রেখে সালাত আদায় করলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা দেখতে পেয়ে তাঁর বাম হাতের উপর ডান হাতকে রাখেন। [1]
হাসান।
-
মাসআলাহঃ সালাতে বাম হাতের উপর ডান হাত রাখা।
সালাতে বাম হাতের উপর ডান হাত রাখা সম্পর্কে ১৮ জন সাহাবী ও ২জন তাবেঈ থেকে মোট ২০টি হাদীস বর্ণিত হয়েছে। ইবনু ‘আব্দুল বার (রহঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এর বিপরীত কিছু বর্ণিত হয়নি এবং এটাই জমহুর সাহাবা ও তাবেঈনের অনুসৃত পদ্ধতি। (মিরআতুল মাফাতীহ ১/৫৫৭-৫৫৮, তুহফাতুল আহওয়াযি২/৮৯, সালাতুল রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ৪৮পৃঃ)।
শায়খ আলবানী (রহঃ) বলেনঃ ‘‘একটি মাযহাব মতে, মুসল্লী সালাতে দাঁড়ানো অবস্থায় হাত না বেঁধে ছেড়ে রাখবে।’’ কিন্তু কেন? মাযহাবে এভাবে আছে তা-ই। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতের সময় তাঁর ডান হাত দ্বারা বাম হাত অাঁকড়ে ধরতেন না, এ বিষয়ের পক্ষে হাদীসের প্রত্যেক আলিম হাদীস আনয়নের চেষ্টা করেছেন। যদিও অন্তত একটি হাদীস হয় চাই তা যঈফ হোক কিংবা মাওযু। কিন্তু এর কোনই অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। তাহলে এরূপ ‘আমলকে ইসলাম বলা যায় কি? তা সত্ত্বেও মুসলিমদের একটি দল এর উপর ‘আমল করে চলেছে অথচ প্রত্যেক হাদীস গ্রন্থে হাদীসসমূহে দেখা যাচ্ছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাত বাঁধতেন! এখানে তাক্বলীদে আর ইমামগণের কথার বিপরীতে গোড়ামী প্রদর্শন বৈ কিছু নেই। (দেখুন, আত-তাসফিয়্যাহ ওয়াত তারবিয়্যাহ)।
উল্লেখ্য একদা খলীফা মানসুর ইমাম মালিককে মারধর করে তাঁর হাত দুটো অবশ করে দেয়ায় শেষ জীবনে তিনি সালাতে হাত বাঁধতে পারতেন না বিধায় হাত ছেড়ে সালাত আদায় করতেন। সেজন্য মালিকী মাযহাবের কিছু লোক মুয়াত্তা মালিকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাদীস অনুযায়ী বুকে হাত না বেঁধে ইমাম মালিকের অক্ষম অবস্থার অন্ধ অনুসরণে হাত ছেড়ে সালাত আদায় করেন। এটা তাদের মনগড়া ফাতাওয়াহ ও ভিত্তিহীন আমল। কেননা হাত ছেড়ে সালাত আদায়ের কোনো সহীহ হাদীসই পাওয়া যায় না। দু’টি মাওকূফ বর্ণনায় রয়েছেঃ হাসান, মুগীরাহ ও যুবায়র না কি হাত ছেড়ে সালাত আদায় করতেন- (মুসান্নাফ ইবনু আবূ শায়বাহ ১/৩৯১)। কিন্তু বর্ণনা দু’টো অত্যন্ত দুর্বল এবং সহীহ মারফূ হাদীসের বিপরীত হওয়ায় পরিত্যাজ্য ও দলীলের অযোগ্য। জ্ঞাতব্য যে, রাফিযীরা হাত ছেড়ে সালাত আদায় করে- (ফাতহুল ক্বাদীর ১/১১৭)।
باب وَضْعِ الْيُمْنَى عَلَى الْيُسْرَى فِي الصَّلَاةِ
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ بَكَّارِ بْنِ الرَّيَّانِ، عَنْ هُشَيْمِ بْنِ بَشِيرٍ، عَنِ الْحَجَّاجِ بْنِ أَبِي زَيْنَبَ، عَنْ أَبِي عُثْمَانَ النَّهْدِيِّ، عَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ، أَنَّهُ كَانَ يُصَلِّي فَوَضَعَ يَدَهُ الْيُسْرَى عَلَى الْيُمْنَى فَرَآهُ النَّبِيُّ صلي الله عليه وسلم فَوَضَعَ يَدَهُ الْيُمْنَى عَلَى الْيُسْرَى .
- حسن
Narrated Abdullah ibn Mas'ud:
AbuUthman an-Nahdi said: When Ibn Mas'ud prayed he placed his left hand on the right. The Prophet (ﷺ) saw him and placed his right hand on his left one.
পরিচ্ছেদঃ ১২০. সালাতরত অবস্থায় বাম হাতের উপর ডান হাত রাখা
৭৫৬। আবূ জুহাইফাহ্ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। ’আলী (রাঃ) বলেছেন, সালাত আদায়কালে বাম হাতের তালুর উপর ডান হাতের তালু নাভীর নীচে রাখা সুন্নাত।[1]
দুর্বল।
শায়খ আলবানী (রহঃ) বলেন, এ সনদটি দুর্বল। এর ত্রুটি হচ্ছে সনদের ‘আবদুর রাহমান ইবনু ইসহাক্ব আল ওয়াসিত্বী দুর্বল বর্ণনাকারী। সামনে এর আলোচনা আসছে। এছাড়াও সনদের ইজতিরাব (উলটপালট) ঘটেছে। তিনি অনুরূপ হাদীস বর্ণনায় একবার বলেছেনঃ যিয়াদ থেকে তিনি আবূ যুহাইফাহ থেকে ‘আলী সূত্রে। আর এক বার বলেছেনঃ নু‘মান ইবনু সাঈদ থেকে আলী সূত্রে। যা বর্ণনা করেছেন দারাকুতনী এবং বায়হাক্বী। আবার অন্যত্র বলেছেনঃ সাইয়ার আবূল হাকাম থেকে, তিনি আবূ ওয়াইল থেকে, তিনি বলেন, ‘‘আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) বলেছেন।’’ এটি বর্ণনা করেছেন আবূ দাঊদ (৭৫৮), দারাকুতনী। ইমাম আবূ দাঊদ বলেন, আমি আহমাদ ইবনু হাম্বালকে বলতে শুনেছি, ‘আব্দুর রাহমান ইবনু ইসহাক্ব দুর্বল।
শায়খ আলবানী বলেন, এ কারণেই ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বাল এ হাদীসটি দ্বারা দলীল গ্রহণ করেননি। তাই তো তাঁর পুত্র ‘আবদুল্লাহ বলেনঃ ‘‘আমি আমার পিতাকে সালাত আদায়কালে এক হাতকে অপর হাতের উপর নাভীর উপর বাঁধতে দেখেছি।’’
ইমাম নাববী (রহঃ) বলেন, (নাভীর নীচে হাত বাঁধার) এ হাদীসটি দুর্বল হওয়ার ব্যাপারে সকল হাদীস বিশারদ ইমামগণ একমত পোষণ করেছেন। কেননা এ হাদীসটি ‘আবদুর রাহমান ইবনু ইসহাক্বের বর্ণনা। (আয়িম্মায়ে জারাহ্ ওয়াত তা‘দীল) হাদীস শাস্ত্রের দোষগুণ যাচাইকারী ইমামগণের ঐক্যমতে সে দুর্বল বর্ণনাকারী। (দেখুন, আল-মাজমু ৩/৩১৩, শারাহ সহীহ মুসলিম এবং অন্যান্য)।
ইমাম যায়লায়ী হানাফী (রহঃ) বলেন, ‘ইমাম বায়হাক্বী ‘আল-মা‘রিফাহ’ গ্রন্থে বলেছেন, এর সনদ দলীলযোগ্য নয়। সনদে আবদুর রাহমান ইবনু ইসহাক্ব আল ওয়াসিত্বী একক হয়ে গেছেন, তিনি হাদীস বর্ণনায় পরিত্যাজ্য (মাতরূক)।’’
হাফিয ইবনু হাজার আসকালানী (রহঃ) ‘ফাতহুল বারী’ গ্রন্থে (২/১৮৬) বলেন, হাদীসটি দুর্বল।
সনদে আব্দুর রাহমান ইবনু ইসহাক্ব সম্পর্কে ইবনু হাম্বাল ও আবূ হাতিম বলেন, তিনি হাদীসে অস্বীকৃত (মুনকারুল হাদীস) ইবনু মাঈন বলেন, তিনি কিছুই না। ইমাম বুখারী বলেন, তার ব্যাপারে আপত্তি আছে। (তা‘লীকু মুগনী ‘আলা সুনানে দারাকুতনী নায়লুল আওতার)।
শায়খ আলবানী বলেন, হাদীসটি দুর্বল হওয়ার পাশাপাশি আলী (রাঃ)-এর সূত্রে বর্ণিত অপর বর্ণনার বিপরীতও বটে। যে বর্ণনার সনদ এর চেয়ে ভালো। তা হচ্ছে, ইবনু জারীরের হাদীস। তিনি তার পিতার সূত্রে বলেনঃ رأيت علياً رضى الله عنه يمسك شماله بيمينه على الرسخ فوق النسرة ‘‘আমি আলী (রাঃ)-কে দেখেছি, তিনি তাঁর বাম হাতকে ডান হাত দ্বারা কব্জীর উপর নাভীর উপরে অাঁকড়ে ধরতেন।’’
ইমাম বায়হাক্বী (২/১৩০) হাদীসটিকে হাসান আখ্যা দিয়েছেন। ইমাম বুখারী একে তালীকভাবে বর্ণনা করেছেন (১/৩০১) মূলতঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সূত্রে হাত বাঁধার স্থান সম্পর্কে বিশুদ্ধভাবে যা বর্ণিত হয়েছে তা হচ্ছে বুকের উপর হাত বাঁধা। এ সম্পর্কে বহু হাদীস রয়েছে। (দেখুন, ইরওয়াউল গালীল ৩৫৩৯ নং)।
মাসআলাঃ সালাতে হাত বাঁধার সঠিক স্থান
সালাতে কোথায় হাত বাঁধবে এ সম্পর্কে আলিমদের মাঝে তিনটি মত প্রচলিত আছে। ১। নাভীর নীচে। ২। নাভীর উপরে বুকের নীচে। ৩। বুকের উপর।
প্রথম মতঃ নাভীর নীচে হাত বাঁধা সম্পর্কে ৪টি হাদীস রয়েছে।
১. আবূ জুহাইফাহ থেকে ‘আলীর বর্ণনা, যা বর্ণিত আছে আবূ দাঊদ ও আহমাদে।
২. আবূ হুরাইরাহর রিওয়ায়াত, যা বর্ণিত আছে আবূ দাঊদে।
৩. ইবনু আবূ শায়বাহর রিওয়ায়াত তদীয় মুসান্নাফে।
৪. ইবনু হাযমের রিওয়ায়াত মুহাল্লাতে।
১নং ও ২নং হাদীসের সনদে ‘আবদুর রাহমান ইবনু ইসহাক্ব ওয়াসিত্বী নামক একজন বর্ণনাকারী আছেন যাকে ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বাল, ইমাম বুখারী, ইমাম বায়হাক্বী, ইমাম আবূ হাতিম, ইমাম ইবনু মাঈন এবং ইমাম নাববী প্রমূখ সবাই যইফে বলেছেন। (নাসবুর রায়াহ ১/৩১৪)।
* হানাফী মাযহাবের মহাবিদ্বান আল্লামা আইনী (রহঃ) বলেনঃ নাভীর নীচে হাত বাঁধার হাদীসটির সনদ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত বিশুদ্ধ নয়। এটা আলী (রাঃ)-এর উক্তি এবং আলী (রাঃ) থেকে ঐ বর্ণনার মধ্যে গোলমাল আছে। কারণ ওর সনদে ‘আবদুর রাহমান ইবনু ইসহাক্ব কূফী রয়েছে, যার সম্পর্কে ইমাম আহমাদ বলেন, লোকটি একেবারে বাজে এবং মুনকারুল হাদীস। (দেখুন, ‘উমদাহুল ক্বারী শারাহ সহীহুল বুখারী- ৫/২৭৯)।
* হিদায়ার ব্যাখ্যাকার আল্লামা ইবনুল হুমাম হানাফী (রহঃ) বলেনঃ ইমাম নাববী বলেছেন, আবূ দাঊদ ও মুসনাদে আহমাদে বর্ণিত হাদীসটি দুর্বল হবার ব্যাপারে সবাই একমত। (দেখুন, ফাতহুল ক্বাদীর ১/১১৭, কাবীরী পৃঃ ২৯৪)।
* আল্লামা ‘আবদুল হাই লাখনৌভী হানাফী (রহঃ) বলেনঃ নাভীর নীচে হাত বাঁধার হাদীসটি দোষে পরিপূর্ণ। যা যঈফ হওয়ার কারণে ওয়ায়িল ইবনু হুজুর (রাঃ) বর্ণিত (বুকে হাত বাঁধার) হাদীসের মুকাবিলায় প্রত্যাখ্যানযোগ্য। (দেখুন, হিদায়া ১/৮৬, টীকা নং ২৩)।
৩নং হাদীস সম্পর্কে আল্লামা মুহাম্মাদ হায়াত সিন্ধী হানাফী স্বীয় ‘ফাতহুল গাফুর’ পুস্তিকায় লিখেছেন যে, ‘‘তাহতাস সুররাহ্’’ (নাভীর নীচে) শব্দটি ইবনু আবূ শায়বাহর আসল কিতাবে নেই। আল্লামা নায়মুবী হানাফী রাবীদের বিপরীত বর্ণনা। (ই‘লাউস সুনান)।
আর ৪নং রিওয়ায়াতটির সনদ অজ্ঞাত (মাজহুল)।
এছাড়াও এ বিষয়ে দু’ জন তাবেঈর দু’টি বর্ণনা পেশ করা হয়।
দ্বিতীয় মতঃ নাভীর উপরে বুকের নীচে হাত বাঁধা সম্পর্কে আলী (রাঃ)-এর একটি মাওকুফ বর্ণনা রয়েছে। তবে সেটির সনদ তেমন মজবুত নয়। ইতোপূর্বে হাদীসটি উল্লেখ হয়েছে।
তৃতীয় মতঃ বুকের উপর হাত বাঁধা এবং এ সম্পর্কিত বর্ণিত হাদীসসমূহ হচ্ছেঃ
১। বিখ্যাত তাবেঈ তাউস (রহঃ) সূত্রে বর্ণিত হাদীস। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত আদায়কালে স্বীয় ডান হাত বাম হাতের উপর স্থাপন করে তা নিজের বুকের উপর বাঁধতেন। (সুনান আবূ দাঊদ, আলবানী বলেন, এটি মুরসাল হলেও সমস্ত ‘আলিমগণের নিকট এটি দলীলযোগ্য। কেননা মুরসালভাবে এটি বিশুদ্ধ সনদে বর্ণিত। তাছাড়া এটি মাওসুল তথা সংযুক্তভাবেও একাধিক সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। সুতরাং সকলের নিকটই এটি দলীলযোগ্য)।
২। হুলব (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত হাদীস। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সালাত (শেষে) ডান ও বাম দিকে ফিরতে এবং সালাতে বুকের উপর হাত বাঁধতে দেখেছি। (মুসনাদে আহমাদ, হাঃ নং ২১৮৬৪, আহমাদ শাকির বলেন, এর সনদ সহীহ। আল্লামা আবূল হায়াত সিন্ধী হানাফী বলেন, আমি তাহক্বীক্ব কিতাবে ‘‘তিনি তার বুকের উপর হাত রাখলেন’’ কথাটি দেখেছি, আর আমরা বলছি যে, ইবনু আবদুল বার আল ইসতিয়াব গ্রন্থে উক্ত হাদীসগুলো সাহাবী থেকে তার পুত্র কাবীসাহ বর্ণনা করেছেন। এ কথা উল্লেখ করে হাদীসটিকে সহী বলেছেন। আল্লামা শামসুল হাক্ব আযীমাদী (রহঃ) বলেন, আহমাদ ইবনু হাম্বালের সনদ বলিষ্ঠ, তাতে দোষণীয় কোনো কারণ নেই)।
৩। সাহল ইবু সা‘দ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে লোকদের নির্দেশ দেয়া হতো যে, প্রত্যেকেই সালাতে ডান হাত বাম হাতের যিরার উপর রাখবে। আবূ হাযিম বলেন, সাহল এ হাদীসটি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করতেন বলেই আমরা জানি। (সহীহুল বুখারী, হাদীসের আরবী ইবরাতে ذراع (যিরা) শব্দের অর্থ ‘কনুই থেকে আঙ্গুলের মাথা পর্যন্ত’)।
৪। ওয়াইল ইবনু হুজর (রাঃ) বর্ণিত হাদীস। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ডান হাতকে বাম হাতের পিঠ, কব্জি ও বাহুর উপর রাখতেন। (সুনান আবূ দাঊদ, হাঃ- ৭২৭)
বুকে হাত বাঁধা সম্পর্কে আরো কিছু হাদীস।
ওয়াইল ইবনু হুজর (রাঃ) বর্ণিত হাদীস। তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে সালাত আদায় করেছি। তিনি তাঁর ডান হাতকে বাম হাতের উপরে রেখে বুকের উপরে হাত বাঁধতেন।
(ইবনু খুযাইমাহ, মুসনাদে আহমাদ। শায়খ আলবানী (রহঃ) বলেন, এর সনদ দুর্বল। কেননা সনদে মুয়াম্মাল বিন ইসমাঈল রয়েছে। তার স্মরণশক্তি মন্দ। কিন্তু হাদীসটি সহীহ। ভিন্ন সনদে অনুরূপ অর্থের হাদীস রয়েছে। বিশেষ করে ‘বুকের উপর হাত রেখেছেন’ এ অংশের সমর্থনে হাদীসাবলী রয়েছে। দেখুন তাহক্বীক্ব ইবনু খুযাইমাহ, হা- ৪৭৯)
৬ ও ৭। আলী ও ইবনু আব্বাস (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত দু’টি দুর্বল বর্ণনা। (ইবনু আবূ হাতিম, বায়হাক্বী ২/৩১)
উল্লেখ্য, আল্লামা মাযহার জানে জানা মুজাদ্দিদে হানাফী বুকে হাত বাঁধার হাদীসটিকে প্রাধান্য দিতেন এবং তিনি নিজেও বুকে হাত বাঁধতেন। (দেখুন, আইনুল হিদায়া, ১/১১৬)
* (বড় পীর) শায়খ আব্দুল ক্বাদীর জ্বিলানী (রহঃ) সালাতের সুন্নাতসমূহের বর্ণনা করতে গিয়ে বলেনঃ ‘‘ডান হাতকে বাম হাতের উপর নাভীর উপরে রাখা সুন্নাত।’’ (দেখুন, ফাতহুল গফুর, পৃঃ ৩০)।
* দ্বিতীয় আবূ হানীফা নামে খ্যাত আল্লামা ইবনু নুজাইম ও ইবনু আমির হজ হানাফী (রহঃ) বলেনঃ মাযহাবের নির্দেশনার ব্যাপারে বলা যেতে পারে- ‘‘নিশ্চিত কথা এই যে, ডান হাতকে বাম হাতের উপর রাখা হাদীস দ্বারা প্রমাণিত আছে। কিন্তু এমন কোনো (সহীহ) হাদীস নেই যাতে শরীরের কোন স্থানে হাত বাঁধতে হবে তা নির্দিষ্ট করা হয়েছে। তবে ওয়াইল ইবনু হুজরের একটি হাদীস রয়েছে, তাতে বুকে হাত বাঁধার কথা উল্লেখ রয়েছে।’’ (দেখুন, বাহরুল রাইক্ব ১/৩০৩)
* সউদী আরবের বিশ্ববিখ্যাত আলিম শায়খ সাহিল আল-উসাইমিন (রহঃ) বলেন, বিশুদ্ধতম মত হচ্ছে, হাত দু’টি বুকের উপর রাখবে। আর বুকের বাম পার্শ্বে অন্তরের উপর হাত বাঁধা একটি ভিত্তিহীন আমল। নাভীর নীচে হাত বাঁধার ব্যাপারে আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদীসটি দুর্বল। পক্ষান্তরে বুকে হাত বাঁধা সম্পর্কে ওয়াইল ইবনু হুজর (রাঃ) বর্ণিত হাদীসটি অধিক শক্তিশালী। (দেখুন, ফাতাওয়াহ আরকানুল ইসলাম)।
* সউদী আরবের প্রাক্তন গ্রান্ড মুফতী শায়খ ‘আবদুল আযীয বিন বায (রহঃ) বলেন, সহীহ সুন্নাত দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে যে, অতী উত্তম হচ্ছে মুসল্লী কিয়াম অবস্থায় ডান হাতের কব্জি বাম হাতের কব্জির উপর বুকের উপরে রাখবেন। যা ওয়াইল ইবনু হুজর, ক্বাবীসাহ ইবনু হুলব ও সাহল ইবনু সা‘দ (রাঃ)-এর হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। এছাড়া নাভীর নীচে হাত রাখা সম্পর্কে ‘আলী (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত হাদীসটি দুর্বল। আর কিয়াম অবস্থায় উভয় হাত ছেড়ে দেয়া বা দাঁড়িয়ে নীচে হাত রাখা সুন্নাত বিরোধী কাজ। (দেখুন, ফাতাওয়াহ শায়খ বিন বায)
* আল্লামা হায়াত সিন্ধী (রহঃ) ‘‘ফাতহুল গফুর ফী তাহক্বীক্বে ওয়াজয়িল ইদায়ীনে ‘আলাস সুদর’’ নামক একখানা আরবী রিসালাহ লিখেছেন এবং তিনি তাতে প্রমাণ করেছেন যে, সালাতে বুকের উপরই হাত বাঁধতে হবে। আল্লামা হায়াত সিন্ধী হানাফী (রহঃ) উক্ত রিসালাহর উপসংহারে লিখেছেনঃ ‘জেনে রাখুন, ‘নাভীর নীচে হাত রাখা, এ কথা প্রমাণের দিক দিয়ে না ‘ক্বাতয়ী’ (অকাট্য) আর না ‘যন্নী’ (বলিষ্ঠ ধারণামূলক)। বরং তা প্রমাণের দিক দিয়ে কল্পনা প্রসূত (মাওহুম)। আর যা কল্পনা প্রসূত তা দিয়ে শারী‘আতের হুকুম প্রমাণিত হয় না...। কাজেই শুধু শুধু কল্পনার উপর নির্ভর করো নাভীর নীচে হাত রাখার নিয়মকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দিকে সম্পর্কিত করা, জায়িয নয়। আর উপরিউক্ত আলোচনায় তো বুকের উপর হাত বাঁধার কথাই মজবুত দলীল দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে। সুতরাং ঈমানদারদের জন্য এ সুন্নাত অস্বীকার করা সমীচীন নয়। কোনো মুসলিম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক প্রমাণিত এমন বিষয় কিভাবে অস্বীকার করবে? কারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আমি যা নিয়ে আগমন করেছি, যতক্ষণ পর্যন্ত তোমাদের কেউ তার প্রবৃত্তিকে তার অনুগামী না করবে ততক্ষণ পর্যন্ত সে ঈমানদার হতে পারবে না।’ সুতরাং প্রত্যেক মুসলিমের উচিত এ সুন্নাত মুতাবেক ‘আমল করা এবং কখনো কখনো এ দু‘আ- হে আল্লাহ! মতভেদপূর্ণ বিষয়ে আমাদেরকে সত্য পথের সন্ধান দিন, কারণ আপনি যাকে ইচ্ছা সিরাতে মুস্তাকীমের পথ দেখিয়ে থাকেন।’’ (দেখুন, ফাতহুল গফুর ও ইবকারুল মিনান)।
উল্লেখ্য হাত বাঁধায় নারী-পুরুষের কোনো পার্থক্য নেই। সমাজে প্রচলিত পুরুষরা নাভীর নীচে আর মহিলারা বুকে হাত বাঁধবে- এ ধরণের কথা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিংবা সাহাবীদের কোনো হাদীসেই পাওয়া যায় না- (মিরআত ১/৫৫৮)। সেজন্য হানাফী মাযহাবের বিখ্যাত আলিম আল্লামা আব্দুল হাই লাখনৌভী হানাফী (রহঃ) বলেনঃ ‘‘(পুরুষদের বিপরীতে) মহিলাদের বুকে হাত বাঁধা সম্পর্কে কোনো হাদীসই আমার চোখে পড়েনি।’’ (দেখুন, ফাতাওয়াহ আব্দুল হাই, পৃঃ ২০২)। এ কারণেই ফিকহের মাসআলাসমূহের প্রমাণে হাদীস পেশকারী হানাফী মনীষী আল্লামা ইবরাহীম হালাবী ও আল্লামা মোল্লা ‘আলীকারী হানাফী (রহঃ) তাদের গ্রন্থ গুনয়্যাতুল মুস্তামরী ও শারহু নিকায়্যাতে কোনো হাদীসই পেশ করতে পারেননি- (আইনি তুহফাহ সালাতে মুস্তফা)।
باب وَضْعِ الْيُمْنَى عَلَى الْيُسْرَى فِي الصَّلَاةِ
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ مَحْبُوبٍ، حَدَّثَنَا حَفْصُ بْنُ غِيَاثٍ، عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ إِسْحَاقَ، عَنْ زِيَادِ بْنِ زَيْدٍ، عَنْ أَبِي جُحَيْفَةَ، أَنَّ عَلِيًّا، قَالَ السُّنَّةُ وَضْعُ الْكَفِّ عَلَى الْكَفِّ فِي الصَّلَاةِ تَحْتَ السُّرَّةِ .
- ضعيف
Narrated Ali ibn AbuTalib:
AbuJuhayfah said: Ali said that it is a sunnah to place one hand on the other in prayer below the navel.
পরিচ্ছেদঃ ১২০. সালাতরত অবস্থায় বাম হাতের উপর ডান হাত রাখা
৭৫৭। ইবনু জুরাইজ হতে তাঁর পিতার সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ’আলী (রাঃ)-কে সালাত আদায়কালে নাভীর উপরে ডান হাত দ্বারা বাম হাতের কব্জি ধরে রাখতে দেখেছি।[1]
দুর্বল।
ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, সাঈদ ইবনু জুবাইর সূত্রে ’নাভীর উপরে’ কথাটি বর্ণিত আছে। আর আবূ মিজলায বলেছেন, ’নাভীর নীচে’। আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) সূত্রেও অনুরূপ বর্ণিত আছে। কিন্তু সেটি শক্তিশালী নয়।
باب وَضْعِ الْيُمْنَى عَلَى الْيُسْرَى فِي الصَّلَاةِ
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ قُدَامَةَ، - يَعْنِي ابْنَ أَعْيَنَ - عَنْ أَبِي بَدْرٍ، عَنْ أَبِي طَالُوتَ عَبْدِ السَّلَامِ، عَنِ ابْنِ جَرِيرٍ الضَّبِّيِّ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ رَأَيْتُ عَلِيًّا يُمْسِكُ شِمَالَهُ بِيَمِينِهِ عَلَى الرُّسْغِ فَوْقَ السُّرَّةِ .
- ضعيف
قَالَ أَبُو دَاوُدَ وَرُوِيَ عَنْ سَعِيدِ بْنِ جُبَيْرٍ فَوْقَ السُّرَّةِ . وَقَالَ أَبُو مِجْلَزٍ تَحْتَ السُّرَّةِ . وَرُوِيَ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ وَلَيْسَ بِالْقَوِيِّ
Jarir ad-Dabbi reported:
I saw Ali (Allah be pleased with him) catching hold of his left hand) by his right hand on the wrist above the navel.
Abu Dawud said: Sa'id b. Jubair narrated the words: "above the navel". Abu Mijlaz reported the words: "below the navel". This has also been narrated by Abu Hurairah. But that is not strong.
পরিচ্ছেদঃ ১২০. সালাতরত অবস্থায় বাম হাতের উপর ডান হাত রাখা
৭৫৮। আবূ ওয়ায়িল সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) বলেছেনঃ আমি সালাতের সময় (বাম) হাতের উপর (ডান) হাতকে নাভীর নীচে রাখি।[1]
দুর্বল।
ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, আমি শুনেছি, ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বল (রহঃ) সানাদের ’আবদুর রহমান ইবনু ইসহাক আল-কূফীকে দুর্বল বর্ণনাকারী হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
باب وَضْعِ الْيُمْنَى عَلَى الْيُسْرَى فِي الصَّلَاةِ
حَدَّثَنَا مُسَدَّدٌ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الْوَاحِدِ بْنُ زِيَادٍ، عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ إِسْحَاقَ الْكُوفِيِّ، عَنْ سَيَّارٍ أَبِي الْحَكَمِ، عَنْ أَبِي وَائِلٍ، قَالَ قَالَ أَبُو هُرَيْرَةَ أَخْذُ الأَكُفِّ عَلَى الأَكُفِّ فِي الصَّلَاةِ تَحْتَ السُّرَّةِ .
- ضعيف
قَالَ أَبُو دَاوُدَ سَمِعْتُ أَحْمَدَ بْنَ حَنْبَلٍ يُضَعِّفُ عَبْدَ الرَّحْمَنِ بْنَ إِسْحَاقَ الْكُوفِيَّ
Narrated AbuHurayrah:
(The established way of folding hands is) to hold the hands by the hands in prayer below the navel.
Abu Dawud said: I heard Ahmad b. Hanbal say: The narrator 'Abd al-Rahman b. Ishaq al-Kufi is weak (i.e. not reliable).
পরিচ্ছেদঃ ১২০. সালাতরত অবস্থায় বাম হাতের উপর ডান হাত রাখা
৭৫৯। তাউস (রহঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত আদায়কালে স্বীয় ডান হাত বাম হাতের উপর স্থাপন করে তা নিজের বুকের উপর বাধঁতেন।[1]
সহীহ।
باب وَضْعِ الْيُمْنَى عَلَى الْيُسْرَى فِي الصَّلَاةِ
حَدَّثَنَا أَبُو تَوْبَةَ، حَدَّثَنَا الْهَيْثَمُ، - يَعْنِي ابْنَ حُمَيْدٍ - عَنْ ثَوْرٍ، عَنْ سُلَيْمَانَ بْنِ مُوسَى، عَنْ طَاوُسٍ، قَالَ كَانَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَضَعُ يَدَهُ الْيُمْنَى عَلَى يَدِهِ الْيُسْرَى ثُمَّ يَشُدُّ بَيْنَهُمَا عَلَى صَدْرِهِ وَهُوَ فِي الصَّلَاةِ .
- صحيح
Narrated Tawus:
The Messenger of Allah (ﷺ) used to place his right hand on his left hand, then he folded them strictly on his chest in prayer.