পরিচ্ছেদঃ ৪. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - সুদ
২৮২৪-[১৮] উসামাহ্ ইবনু যায়দ হতে (রাঃ) বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কেবলমাত্র বাকিতে লেন-দেনেই (অনেক ক্ষেত্রে) সুদ সাব্যস্ত হয়। অপর এক বর্ণনায় আছে, নগদে আদান প্রদানের ক্ষেত্রে সুদ সাব্যস্ত হয় না। (বুখারী, মুসলিম)[1]
عَنْ أُسَامَةُ بْنُ زَيْدٍ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «الرِّبَا فِي النَّسِيئَةِ» . وَفِي رِوَايَةٍ قَالَ: «لَا رِبًا فِيمَا كَانَ يدا بيد»
ব্যাখ্যা: (الرِّبَا فِى النَّسِيئَةِ) ‘‘বাকী বিক্রয়ের মধ্যেই সুদ’’ অর্থাৎ বাকী বিক্রয় ব্যতীত অন্য কোনো ক্রয়-বিক্রয়ে সুদ নেই। ‘আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেনঃ একজাতীয় বস্তু যদি সমান সমান হয় এবং ভিন্ন জাতীয় বস্তু যদি কমবেশীও হয় তাতে সুদ হয় না যদি তা বাকীতে ক্রয়-বিক্রয় না হয়। অর্থাৎ সুদীয় বস্তু যদি একজাতীয় হয় তাহলে কমবেশী করলে যেমন সুদ হবে অনুরূপ একপক্ষের বস্তু উপস্থিত এবং অন্যপক্ষের অনুপস্থিত বস্তুর সাথে বিনিময় করে তবে তাও সুদে পরিণত হবে। অনুরূপভাবে সুদীয় বস্তু ভিন্ন জাতীয় হলে তাতে একপক্ষের কম ও অন্যপক্ষের বেশী হলে এবং একপক্ষের উপস্থিত অন্যপক্ষের অনুপস্থিত বস্তুর বিনিময় হলেও তাতেও সুদ হবে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ৪. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - সুদ
২৮২৫-[১৯] ’আব্দুল্লাহ ইবনু হানযালাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। যিনি মালায়িকাহ্ (ফেরেশতাগণ) কর্তৃক গোসলপ্রাপ্ত হয়েছেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জেনে শুনে সুদের কেবলমাত্র একটি রোপ্যমুদ্রা খায়, তার গুনাহ ছত্রিশবার যিনার চেয়ে বেশি হয়। (আহমাদ, দারাকুত্বনী)[1]
আর বায়হাক্বী ’’শু’আবুল ঈমান’’-এ হাদীসটি ইবনু ’আব্বাস হতে বর্ণনা করেছেন। এতে অতিরিক্ত এ কথাও আছে যে, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তির শরীরের গোশ্ত/মাংস হারাম রিযক্বে গঠিত তার জন্য জাহান্নামই সর্বোত্তম।
وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ حَنْظَلَةَ غَسِيلِ الْمَلَائِكَةِ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «دِرْهَمُ رِبًا يَأْكُلُهُ الرَّجُلُ وَهُوَ يَعْلَمُ أَشَدُّ مِنْ سِتَّةٍ وَثَلَاثِينَ زِنْيَةً» . رَوَاهُ أَحْمَدُ والدراقطني
وَرَوَى الْبَيْهَقِيُّ فِي شُعَبِ الْإِيمَانِ عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ وَزَادَ: وَقَالَ: «مَنْ نَبَتَ لَحْمُهُ مِنَ السُّحت فَالنَّار أولى بِهِ»
ব্যাখ্যা: (دِرْهَمُ رِبًا يَأْكُلُهُ الرَّجُلُ وَهُوَ يَعْلَمُ أَشَدُّ مِنْ سِتَّةٍ وَثَلَاثِينَ زِنْيَةً) ‘‘জেনে শুনে এক দিরহাম সুদ খাওয়া ছত্রিশবার যিনা করার চাইতেও মারাত্মক অপরাধ’’। মুল্লা ‘আলী কারী বলেনঃ অত্র হাদীস দ্বারা হারাম মাল ভক্ষণে তিরস্কারের আধিক্য বুঝানো এবং হালাল রিযক অন্বেষণের উৎসাহ প্রদান উদ্দেশ্য। কেউ যদি না জেনেও করে, পাপের দিক থেকে সে ব্যক্তি জেনে সুদ ভক্ষণ করার সমান অপরাধী। কেননা এ ধরনের জ্ঞান অর্জন করা ফার্যে আইন তথা বাধ্যতামূলক। অতএব না জানা কোনো উযর নয় অপরাধ থেকে বাঁচার জন্য।
(مَنْ نَبَتَ لَحْمُه) ‘‘যার গোশ্ত/গোশত উৎপন্ন হলো’’ অর্থাৎ শরীরে গোশ্ত/গোশত গঠিত হলো এবং হাড় শক্ত হলো।
(مِنَ السُّحْتِ) ‘‘হারাম মাল দ্বারা’’ যার মধ্যে সুদ এবং ঘুষ অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ যে সকল উপায়ে অন্যায়ভাবে বান্দার হক বিনষ্ট করা হয়, এসবই السحت -এর অন্তর্ভুক্ত।
(فَالنَّارُ أَوْلٰى بِه) ‘‘আগুন তার জন্য অধিক উপযুক্ত’’ অর্থাৎ জাহান্নামের আগুন ঐ শরীরের জন্য অধিক উপযুক্ত। কেননা মানুষের শরীর যখন সুদের মাল দ্বারা গঠিত হয় তখন ঐ শরীর অনেক অপরাধের সাথে জড়িয়ে পরে, ফলে তা জাহান্নামের উপযোগী হয়ে যায়। এমনকি যদি কোনো ব্যক্তি সুদকে হালাল মনে করে, তাহলে সে কাফির হয়ে যায়। আর কাফিরের জন্য জাহান্নাম অবধারিত। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ৪. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - সুদ
২৮২৬-[২০] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সুদের গুনাহের সত্তর ভাগের ক্ষুদ্রতম ভাগ হলো নিজের মায়ের সাথে যিনা করা।[1]
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الرِّبَا سَبْعُونَ جُزْءًا أيسرها أَن الرجل أمه»
ব্যাখ্যা: (الرِّبَا سَبْعُونَ جُزْءًا) ‘‘সুদের মধ্যে সত্তরটি গুনাহ রয়েছে’’ অর্থাৎ সুদের গুনাহের মধ্যে সত্তর প্রকারের গুনাহ আছে।
(أَيْسَرُهَا أَنْ يَّنْكِحَ الرَّجُلُ أُمَّه) ‘‘তন্মধ্যে নিম্নমানের গুনাহ হলো মায়ের সাথে যৌন সঙ্গম করা’’ সুদের গুনাহ যিনার চাইতেও অধিক মারাত্মক কারণ এই যে, এতে অন্যায়ভাবে বান্দার হক বিনষ্ট করা হয়। আর সুদদাতা হয় জুলুমের শিকার। আর যিনার ক্ষেত্রে অধিকাংশ যিনা সংঘটিত হয় মহিলার সম্মতিক্রমে। ফলে তাতে বান্দার হক বিনষ্ট না হয়ে আল্লাহর হক বিনষ্ট হয়। আল্লাহর হক ক্ষমা করা বা না করা তা আল্লাহর ইচ্ছাধীন। পক্ষান্তরে বান্দার হক ক্ষমা বান্দার ইচ্ছাধীন। আর পরকালে বান্দার হক বিনষ্ট করার কারণেই অধিকাংশ মানুষ জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করবে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ৪. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - সুদ
২৮২৭-[২১] ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সুদের মাধ্যমে সম্পদ (বাহ্যত) বেশি হলেও পরিণামে তা স্বল্পই। (ইবনু মাজাহ ও বায়হাক্বী- শু’আবুল ’ঈমানে পূর্বোক্ত হাদীসটিসহ বর্ণনা করেছেন; আর ইমাম আহমাদ শেষের হাদীসটি বর্ণনা করেছেন)[1]
وَعَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِنِ الرِّبَا وَإِنْ كَثُرَ فإِنَّ عاقبتَه تصيرُ إِلى قُلِّ: رَوَاهُمَا ابْنُ مَاجَهْ وَالْبَيْهَقِيُّ فِي شُعَبِ الْإِيمَانِ. وَرَوَى أَحْمد الْأَخير
ব্যাখ্যা: (إِنِ الرِّبَا وَإِنْ كَثُرَ) ‘‘সুদ যদিও সম্পদ বাড়ায়’’ অর্থাৎ সুদের কারবারের মাধ্যমে যদিও দুনিয়াতে সম্পদ বৃদ্ধি পায় এবং তা পরিমাণে বেড়ে যায়।
(فإِنَّ عَاقِبَتَه تَصِيْرُ إِِلٰى قُلِّ) ‘‘কিন্তু তা পরিণতিতে স্বল্প’’।
‘আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেনঃ সুদের পরিণতি অপমান অপদস্ত, কেননা এতে কোনো বরকত নেই। অর্থাৎ দুনিয়াতে সুদের মাধ্যমে অনেক অর্থ উপার্জন করলেও পরকালে এর পরিণতি হবে দারিদ্র্যতা। কেননা সুদের মাধ্যমে বান্দার যে হক নষ্ট করা হয়েছে, পরকালে তা পরিশোধ করতে হবে নেক ‘আমল দিয়ে। আর নেক ‘আমল না থাকলে মাযলূমের গুনাহ কাঁধে তুলে নিতে হবে এবং এ গুনাহ নিয়ে জাহান্নামে যেতে হবে। ফলে সুদের পরিণতি হবে অনন্ত ভয়াবহ। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ৪. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - সুদ
২৮২৮-[২২] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি মি’রাজের রাতে এমন এক শ্রেণীর লোকেদের কাছে গেলাম, যাদের পেট গৃহের ন্যায় প্রশস্ত। এতে অনেক সাপ রয়েছে, এগুলোকে পেটের বাহির হতে দেখা যায়। আমি (আমার সঙ্গী জিবরীল আমীনকে) জিজ্ঞেস করলাম, হে জিবরীল! এরা কারা? জবাবে তিনি বললেন, এরা সুদখোর। (আহমাদ, ইবনু মাজাহ)[1]
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَتَيْتُ لَيْلَةَ أُسْرِيَ بِي عَلَى قَوْمٍ بُطُونُهُمْ كَالْبُيُوتِ فِيهَا الْحَيَّاتُ تُرَى مِنْ خَارِجِ بُطُونِهِمْ فَقُلْتُ: مَنْ هَؤُلَاءِ يَا جِبْرِيلُ؟ قَالَ: هَؤُلَاءِ أَكَلَةُ الرِّبَا . رَوَاهُ أَحْمد وَابْن مَاجَه
ব্যাখ্যা: (بُطُونِهِمْ كَالْبُيُوتِ) ‘‘তাদের পেটগুলো ঘরের ন্যায়’’ তাদের পেটগুলো এত বড় হবে যে, তা দেখতে ঘরের মতো বিরাট আকারের হবে।
(فِيهَا الْحَيَّاتُ) ‘‘তাতে আছে অনেক সাপ’’ সুদের মাধ্যমে অন্যায়ভাবে ভুক্ত সম্পদকে সাপে পরিণত করা হবে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ৪. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - সুদ
২৮২৯-[২৩] ’আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে অভিসম্পাত করতে শুনেছেন- সুদ গ্রহীতার প্রতি, সুদ দাতার প্রতি, সুদের দলীলপত্র লেখকের প্রতি এবং দান-খয়রাতে বাধাদানকারীর প্রতিও। আর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মৃতের জন্য বিলাপ করে কাঁদতে নিষেধ করতেন। (নাসায়ী)[1]
وَعَنْ عَلِيٍّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّهُ سَمِعَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم لعن آكِلَ الرِّبَا وَمُوَكِلَهُ وَكَاتِبَهُ وَمَانِعَ الصَّدَقَةِ وَكَانَ ينْهَى عَن النوح. رَوَاهُ النَّسَائِيّ
ব্যাখ্যা: (مَانِعَ الصَّدَقَةِ) ‘‘সাদাকা অস্বীকারকারী’’ অর্থাৎ যারা অর্জিত সম্পদে নির্ধারিত হারে ধার্যকৃত আবশ্যকীয় যাকাত দিতে অস্বীকার করে তাদের প্রতি আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অভিশম্পাত করেছেন।
(وَكَانَ ينْهٰى عَنِ النُّوْحِ) ‘‘তিনি নিয়াহাহ্ করতে নিষেধ করতেন’’ অর্থাৎ কারো মৃত্যু খবরে শোক প্রকাশ করতে গিয়ে উচ্চৈঃস্বরে ক্রন্দন করতে নিষেধ করতেন। এ হাদীস প্রমাণ করে যে, মৃত ব্যক্তির জন্য শোক প্রকাশার্থে চিৎকার করে ক্রন্দন করা হারাম। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ৪. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - সুদ
২৮৩০-[২৪] ’উমার ইবনুল খত্ত্বাব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, সুদ হারাম হওয়ার আয়াতই (কুরআন মাজীদের) সর্বশেষ আয়াত। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ইন্তেকাল হয়ে গেছে অথচ সুদের পরিপূর্ণ বর্ণনা তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদের কাছে (স্পষ্ট করে) রেখে যাননি। সুতরাং কুরআন সুন্নাহ্’য় বর্ণিত সুদ এবং যে সব ক্ষেত্রে সুদের কোনো প্রকার সন্দেহের সৃষ্টি হয়, তাও বর্জন করবে। (ইবনু মাজাহ, দারামী)[1]
وَعَنْ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ إِنَّ آخِرَ مَا نَزَلَتْ آيَةُ الرِّبَا وَإِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قُبِضَ وَلَمْ يُفَسِّرْهَا لَنَا فَدَعُوا الرِّبَا وَالرِّيبَةَ. رَوَاهُ ابْن مَاجَه والدارمي
ব্যাখ্যা: (إِنَّ اٰخِرَ مَا نَزَلَتْ اٰيَةُ الرِّبَا) ‘‘সর্বশেষ নাযিলকৃত আয়াত হলো সুদ সম্পর্কে নাযিলকৃত আয়াত’’ অর্থাৎ লেনদেন সম্পর্কীয় বিধান সম্বলিত নাযিলকৃত আয়াতের মধ্যে সর্বশেষ নাযিলকৃত আয়াত হলো সুদ সম্পর্কিত আয়াত। কেননা সাধারণভাবে নাযিলকৃত সর্বশেষ আয়াত হলো সূরা আল মায়িদাহ্ ৩ নং আয়াত- الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ
(وَإِنَّ رَسُوْلَ اللّٰهِ ﷺ قُبِضَ وَلَمْ يُفَسِّرْهَا لَنَا) ‘‘সুদ সম্পর্কিত আয়াত নাযিল হওয়ার পর তা আমাদের জন্য তাফসীর না করেই রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৃত্যুবরণ করেছেন।’’ ‘আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেনঃ সুদ সম্পর্কিত সর্বশেষ নাযিলকৃত আয়াতটি হলো সূরা আল বাকারার ২৭৫ হতে ২৭৯ নং আয়াত- الَّذِينَ يَأْكُلُونَ الرِّبَا ..... لَا تَظْلِمُونَ وَلَا تُظْلَمُونَ আয়াতটির অর্থ সুস্পষ্ট এজন্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কোনো ব্যাখ্যা করেননি।
(فَدَعُوا الرِّبَا وَالرِّيبَةَ) ‘‘তোমরা সুদ ও সন্দেহ পরিত্যাগ কর’’ অর্থাৎ সুদ সম্পর্কিত আয়াত অনুসারে তোমরা কর্ম পরিচালনা কর। এতে তোমরা কোনো প্রকার সন্দেহ পোষণ করো না এবং সুদ হালাল করার জন্য কোনো প্রকার বাহানার আশ্রয় গ্রহণ করো না। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ৪. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - সুদ
২৮৩১-[২৫] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে কেউ যদি কাউকে ঋণ দেয়, আর ঋণগ্রহীতা ঋণদাতাকে কোনো হাদিয়া (উপহার) দেয়, তা গ্রহণ করবে না। অথবা ঋণগ্রহীতা যদি তার বাহনে ঋণদাতাকে বসাতে চায়, তবে এর উপর বসবে না। তবে যদি ঋণ লেন-দেন করার পূর্বে তাদের মধ্যে এরূপ সম্পর্ক বিদ্যমান থাকে, সেক্ষেত্রে ভিন্নকথা। (ইবনু মাজাহ, বায়হাক্বী- শু’আবুল ঈমানে)[1]
وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذَا أَقْرَضَ أَحَدُكُمْ قَرْضًا فَأَهْدَي إِلَيْهِ أَوْ حَمَلَهُ عَلَى الدَّابَّةِ فَلَا يَرْكَبْهُ وَلَا يَقْبَلْهَا إِلَّا أَنْ يَكُونَ جَرَى بَيْنَهُ وَبَيْنَهُ قَبْلَ ذَلِكَ» . رَوَاهُ ابْنُ مَاجَهْ وَالْبَيْهَقِيُّ فِي شُعَبِ الْإِيمَانِ
ব্যাখ্যা: (فَأَهْدٰى إِلَيْهِ أَوْ حَمَلَه عَلَى الدَّابَّةِ فَلَا يَرْكَبْهُ وَلَا يَقْبَلْهَا) ‘‘যদি ঋণগ্রহীতা ঋণদাতাকে কোনো উপঢৌকন বা উপহার দেয় তবে ঋণদাতা তার উপঢৌকন গ্রহণ করবে না এবং সে যদি তার বাহনে উঠাতে চায় তবে তার বাহনে উঠবে না।’’ অর্থাৎ ঋণগ্রহীতা ঋণ নেয়ার পরে ঋণদাতাকে কোনো প্রকার উপকার করতে চাইলে দাতা সে উপকার গ্রহণ করবে না। কেননা এ উপকার সুদের সমতুল্য। কেননা ঋণের বিনিময়ে যে লাভ বা উপকার গ্রহণ করা হয় তাই সুদ। অতএব দাতার পক্ষে গ্রহীতা কর্তৃক কোনো প্রকারের উপহার অথবা কোনো প্রকারের সুযোগ সুবিধা গ্রহণ অবৈধ।
(إِلَّا أَنْ يَكُونَ جَرٰى بَيْنَه وَبَيْنَه قَبْلَ ذٰلِكَ) ‘‘তবে ঋণ গ্রহণের পূর্বে যদি তাদের মধ্যে এ ধরনের লেনদেন হয়ে থাকে তবে তা ভিন্ন কথা।’’ অর্থাৎ ঋণগ্রহীতা ও ঋণদাতার মধ্যে ঋণ গ্রহণের আগে থেকেই হৃদ্যতা থাকে এবং তাদের মাঝে উপঢৌকন লেনদেন প্রচলন থেকে থাকে তাহলে ঋণ গ্রহণের পরেও তার কাছ থেকে উপঢৌকন নেয়া যাবে। কারণ এ উপঢৌকন দানের জন্য নয় বরং পূর্বেকার অভ্যাস অনুযায়ী উপহার, ফলে তা গ্রহণ করতে কোনো বাধা নেই। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ৪. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - সুদ
২৮৩২-[২৬] উক্ত রাবী [আনাস (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোনো লোক অপর কোনো লোককে ঋণ দিলে, ঋণদাতা ঋণগ্রহীতার কাছ থেকে কোনো হাদিয়া (উপহার) গ্রহণ করবে না। (বুখারী; এটি তাঁর তারীখে বর্ণনা করেছেন, মুনতাকায়ও এরূপ বর্ণিত আছে)[1]
وَعَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «إِذَا أَقْرَضَ الرَّجُلُ الرَّجُلَ فَلَا يَأْخُذُ هَدِيَّةً» . رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ فِي تَارِيخِهِ هَكَذَا فِي الْمُنْتَقى
ব্যাখ্যা: (هٰكَذَا فِى الْمُنْتَقٰى) মুনতাকাতেও এরূপ বর্ণিত আছে, ‘মুনতাকা’ এমন একটি হাদীস গ্রন্থ যা ফিক্হের মাসআলাহ্ অনুসারে ইমাম আহমাদ-এর কোনো ছাত্র সংকলন করেছেন। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ৪. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - সুদ
২৮৩৩-[২৭] আবূ বুরদাহ্ ইবনু আবূ মূসা (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার আমি মদীনায় এসে ’আব্দুল্লাহ ইবনু সালাম (রাঃ)-এর সাথে সাক্ষাৎ করলাম। আমাকে তিনি বললেন, তুমি এমন এলাকায় বসবাস করছো, যেখানে সুদের প্রচলন অত্যধিক। অতএব কারো কাছে যদি তোমার কোনো পাওনা থাকে, সে যদি তোমাকে হাদিয়া হিসেবে এক বোঝা খড় অথবা এক গাঠুরী যব, অথবা ঘাসের একটি বোঝাও দেয়; তুমি তা গ্রহণ করবে না। কারণ এটা সুদ হিসেবে সাব্যস্ত হবে। (বুখারী)[1]
وَعَنْ أَبِي بُرْدَةَ بْنِ أَبِي مُوسَى قَالَ: قدمت الْمَدِينَة فَلَقِيت عبد الله بن سلا م فَقَالَ: إِنَّك بِأَرْض فِيهَا الرِّبَا فَاش إِذا كَانَ لَكَ عَلَى رَجُلٍ حَقٌّ فَأَهْدَى إِلَيْكَ حِمْلَ تَبْنٍ أَو حِملَ شعيرِ أَو حَبْلَ قَتٍّ فَلَا تَأْخُذْهُ فَإِنَّهُ رِبًا. رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ
ব্যাখ্যা: (إِذا كَانَ لَكَ عَلٰى رَجُلٍ حَقٌّ) ‘‘যখন কারো নিকট তোমার কোনো হক থাকে’’ অর্থাৎ কোনো প্রকার পাওনা থাকে।
(فَأَهْدٰى إِلَيْكَ حِمْلَ تَبْنٍ أَو حِملَ شَعِيْرِ أَو حَبْلَ قَتٍّ) ‘‘আর সেই ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি তোমাকে হাদিয়া স্বরূপ একবোঝা খড় অথবা একবোঝা যব অথবা এক আটি পশুর খাদ্য জাতীয় ঘাস দান করে, অর্থাৎ দানকৃত বস্তু যত স্বল্পমূল্যের অথবা সামান্য বস্তু হোক না কেন।
(فَلَا تَأْخُذْهُ) ‘‘তুমি তা গ্রহণ করবে না’’ (فَإِنَّه رِبًا) কেননা তা সুদ, অর্থাৎ ঋণগ্রহীতা ব্যক্তির নিকট থেকে ঋণ ব্যক্তির কোনো প্রকার সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ সুদের নামান্তর। তাই তা গ্রহণ করা নিষেধ যদিও সে ঐ ধরনের কোনো কিছু শর্ত করে না থাকে। তবে ‘উলামাগণের মতে এ ধরনের সুযোগ গ্রহণ হারাম নয়, বরং তা মাকরূহ। আর যদি ঋণ দেয়ার সময় শর্তারোপ করে, তবে সুদ এবং তা গ্রহণ করা হারাম। (ফাতহুল বারী ৭ম খন্ড, হাঃ ৩৮১৪)