পরিচ্ছেদঃ ১. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - আল্লাহ সুবহানাহূ ওয়াতা‘আলার জিকির ও তাঁর নৈকট্য লাভ

২২৭৮-[১৮] আবূ সা’ঈদ আল খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার আমীরে মু’আবিয়াহ্ (রাঃ) মসজিদে গোল হয়ে বসা এক মাজলিসে পৌঁছলেন এবং মাজলিসের লোকদেরকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনারা কি কাজে এখানে বসে আছেন? জবাবে তারা বললেন, আমরা এখানে আল্লাহর জিকির করছি। তিনি বললেন, আল্লাহর কসম করে বলুন, আপনারা এখানে আর অন্য কোন কাজের জন্য তো বসেননি? তারা বললেন, আল্লাহর শপথ করে বলছি, আমরা এখানে এছাড়া আর অন্য কোন কাজে বসিনি। অতঃপর মু’আবিয়াহ্(রাঃ) বললেন, জেনে রাখুন! আমি আপনাদের কথা অবিশ্বাস করে আপনাদেরকে শপথ করাইনি। আমার মতো মর্যাদাবান সাহাবীগণের মধ্যে আমার মতো এত কম হাদীস রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট হতে বর্ণনা করেননি। (তাহলে শুনুন!) একবার রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘর হতে বের হয়ে তাঁর সাহাবীগণের এক মাজলিসে পৌঁছলেন এবং বললেন, তোমরা এখানে কি কাজে বসে আছো? উত্তরে তাঁরা বললেন, আমরা এখানে আল্লাহর জিকির করতে বসে আছি। তিনি আমাদেরকে ইসলামে হিদায়াত করেছেন এজন্য তাঁর প্রশংসা করছি। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তোমরা আল্লাহর কসম করে বলতে পার কি যে, তোমরা এছাড়া অন্য কোন কাজে এখানে বসনি। তাঁরা বললেন, আমরা শপথ করে বলছি, আমরা এছাড়া অন্য কোন কাজে এখানে বসিনি। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, শোন, তোমাদের কথাকে অবিশ্বাস করে আমি তোমাদেরকে শপথ করাইনি। বরং প্রকৃত ব্যাপার হলো এখন জিবরীল (আঃ) এসে আমাকে খবর দিলেন যে, আল্লাহ তা’আলা তোমাদেরকে নিয়ে তাঁর মালায়িকাহর (ফেরেশতাগণের) কাছে গর্ববোধ করছেন। (মুসলিম)[1]

عَنْ أَبِي سَعِيدٍ قَالَ: خَرَجَ مُعَاوِيَةُ عَلَى حَلْقَةٍ فِي الْمَسْجِدِ فَقَالَ: مَا أَجْلَسَكُمْ؟ قَالُوا: جَلَسْنَا نَذْكُرُ اللَّهَ قَالَ: آللَّهِ مَا أَجْلَسَكُمْ إِلَّا ذَلِكَ؟ قَالُوا: آللَّهِ مَا أَجْلَسَنَا غَيْرُهُ قَالَ: أما إِنِّي لم أستحلفكم تُهْمَة لكم وَمَا كَانَ أَحَدٌ بِمَنْزِلَتِي مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَقَلَّ عَنْهُ حَدِيثًا مِنِّي وَإِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خَرَجَ عَلَى حَلْقَةٍ مِنْ أَصْحَابِهِ فَقَالَ: «مَا أَجْلَسَكُمْ هَاهُنَا» قَالُوا: جَلَسْنَا نَذْكُرُ اللَّهَ وَنَحْمَدُهُ عَلَى مَا هَدَانَا لِلْإِسْلَامِ وَمَنَّ بِهِ علينا قَالَ: آالله مَا أجلسكم إِلَّا ذَلِك؟ قَالُوا: آالله مَا أَجْلَسَنَا إِلَّا ذَلِكَ قَالَ: «أَمَا إِنِّي لَمْ أَسْتَحْلِفْكُمْ تُهْمَةً لَكُمْ وَلَكِنَّهُ أَتَانِي جِبْرِيلُ فَأَخْبَرَنِي أَنَّ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ يُبَاهِي بِكُمُ الْمَلَائِكَة» . رَوَاهُ مُسلم

عن ابي سعيد قال: خرج معاوية على حلقة في المسجد فقال: ما اجلسكم؟ قالوا: جلسنا نذكر الله قال: الله ما اجلسكم الا ذلك؟ قالوا: الله ما اجلسنا غيره قال: اما اني لم استحلفكم تهمة لكم وما كان احد بمنزلتي من رسول الله صلى الله عليه وسلم اقل عنه حديثا مني وان رسول الله صلى الله عليه وسلم خرج على حلقة من اصحابه فقال: «ما اجلسكم هاهنا» قالوا: جلسنا نذكر الله ونحمده على ما هدانا للاسلام ومن به علينا قال: االله ما اجلسكم الا ذلك؟ قالوا: االله ما اجلسنا الا ذلك قال: «اما اني لم استحلفكم تهمة لكم ولكنه اتاني جبريل فاخبرني ان الله عز وجل يباهي بكم الملاىكة» . رواه مسلم

ব্যাখ্যা: ইমাম নাবাবী (রহঃ) বলেন, (أَنَّ اللّٰهَ عَزَّ وَجَلَّ يُبَاهِي بِكُمُ الْمَلَائِكَة) এর অর্থ হলো, মহান আল্লাহ সুবহানাহূ ওয়াতা‘আলার কোন বান্দা যখন কোন নেকীর কর্ম সম্পাদন করে তখন তিনি এর মাধ্যমে মালায়িকাহর মধ্যে তার ফাযীলাত বর্ণনা করেন ও বলেন, ‘ওহে মালায়িকাহ্ (ফেরেশতা)! সে আমার কাছে ফিরে এসেছে। তোমরা না বলেছিলে তারা ফিতনাহ্ ফাসাদ সৃষ্টি করবে? এই তো দেখ তারা আমার গুণকীর্তন করছে।’

আর কেউ কেউ বলেন, উদ্ধৃত অংশটুকুর অর্থ হলো, মহান আল্লাহ মালায়িকাহ্ (ফেরেশতা)-কে লক্ষ্য করে বলতে থাকবেন, হে মালায়িকাহ্! দেখ আমার বান্দারা কিভাবে তাদের প্রবৃত্তির তাড়না ও শয়তানের শত কুমন্ত্রণা ছুঁড়ে ফেলে আমার ‘ইবাদাতে মশগুল আছে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৯: দু‘আ (كتاب الدعوات) 9. Supplications

পরিচ্ছেদঃ ১. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - আল্লাহ সুবহানাহূ ওয়াতা‘আলার জিকির ও তাঁর নৈকট্য লাভ

২২৭৯-[১৯] ’আবদুল্লাহ ইবনু বুসর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন জনৈক ব্যক্তি এসে বলল, হে আল্লাহর রসূল! আমার ওপর ইসলামের (নাফ্‌লী) নির্ধারিত বিধি-বিধান অনেক। তাই আমাকে সংক্ষেপে কিছু বলে দিন যা আমি সব সময় করতে পারি। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তুমি সব সময় তোমার জিহবাকে আল্লাহর জিকিররত রাখবে। (তিরমিযী, ইবনু মাজাহ; ইমাম তিরমিযী বলেন, হাদীসটি হাসান গরীব)[1]

وَعَن عبد الله بن يسر: أَنَّ رَجُلًا قَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّ شَرَائِعَ الْإِسْلَامِ قَدْ كَثُرَتْ عَلَيَّ فَأَخْبِرْنِي بِشَيْءٍ أَتَشَبَّثُ بِهِ قَالَ: لَا يَزَالُ لِسَانُكَ رَطْبًا بِذكر اللَّهِ)
رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَابْنُ مَاجَهْ وَقَالَ التِّرْمِذِيُّ: هَذَا حَدِيث حسن غَرِيب

وعن عبد الله بن يسر: ان رجلا قال: يا رسول الله ان شراىع الاسلام قد كثرت علي فاخبرني بشيء اتشبث به قال: لا يزال لسانك رطبا بذكر الله) رواه الترمذي وابن ماجه وقال الترمذي: هذا حديث حسن غريب

ব্যাখ্যা: (إِنَّ شَرَائِعَ الْإِسْلَامِ) আল্লাম ত্বীবী (রহঃ) বলেন, ‘শারী‘আহ্’ শব্দটির অর্থ হলো প্রবাহমান পানির উপর উটের অবতরণস্থল। কিন্তু এখানে শারী‘আহ্ শব্দটির দ্বারা উদ্দেশ্য হলো আল্লাহ সুবহানাহূ ওয়াতা‘আলা তার বান্দার জন্য যেগুলো কর্মশালা বিধিসম্মত করেছেন যেমনঃ ফরয ও সুন্নাতসমূহ। ‘আল্লামা মুল্লা ‘আলী কারী হানাফী (রহঃ) বলেন, এখানে শারী‘আহ্ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো নফলসমূহ।

(فَأَخْبِرْنِي بِشَىْءٍ) ‘আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেন, আমাকে এমন এক স্বল্প ‘আমলের কথা বলে দিন যার অল্প ‘আমল করেই আমি বেশি নেকী অর্জন করতে সক্ষম হই।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৯: দু‘আ (كتاب الدعوات) 9. Supplications

পরিচ্ছেদঃ ১. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - আল্লাহ সুবহানাহূ ওয়াতা‘আলার জিকির ও তাঁর নৈকট্য লাভ

২২৮০-[২০] আবূ সা’ঈদ আল খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করা হলো, কিয়ামতের দিন আল্লাহর কাছে কে সর্বশ্রেষ্ঠ ও মর্যাদাবান হবে? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আল্লাহর জিকিরকারী পুরুষ ও নারী। আবার তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রসূল! আল্লাহর পথে জিহাদকারীদের চেয়েও কি তারা মর্যাদাবান ও শ্রেষ্ঠ? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, হ্যাঁ, সে যদি নিজের তরবারি দিয়ে কাফির ও মুশরিকদেরকে আঘাত করে, এমনকি তার তরবারি ভেঙে যায়, আর সে নিজেও হয়ে পড়ে রক্তাক্ত, তাহলেও তার থেকে আল্লাহর জিকিরকারী শ্রেষ্ঠ ও মর্যাদাবান। (আহমদ, তিরমিযী; তিরমিযী বলেন, হাদীসটি গরীব)[1]

وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سُئِلَ: أَيُّ الْعِبَادِ أَفْضَلُ وَأَرْفَعُ دَرَجَةً عِنْدَ اللَّهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ؟ قَالَ: «الذَّاكِرُونَ اللَّهَ كَثِيرًا وَالذَّاكِرَاتُ» قِيلَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ وَمِنَ الْغَازِي فِي سَبِيلِ اللَّهِ؟ قَالَ: «لَوْ ضَرَبَ بِسَيْفِهِ فِي الْكُفَّارِ وَالْمُشْرِكِينَ حَتَّى يَنْكَسِرَ وَيَخْتَضِبَ دَمًا فَإِنَّ الذَّاكِرَ لِلَّهِ أَفْضَلُ مِنْهُ دَرَجَة» . رَوَاهُ أَحْمد وَالتِّرْمِذِيّ وَقَالَ التِّرْمِذِيّ: هَذَا حَدِيث حسن غَرِيب

وعن ابي سعيد: ان رسول الله صلى الله عليه وسلم سىل: اي العباد افضل وارفع درجة عند الله يوم القيامة؟ قال: «الذاكرون الله كثيرا والذاكرات» قيل: يا رسول الله ومن الغازي في سبيل الله؟ قال: «لو ضرب بسيفه في الكفار والمشركين حتى ينكسر ويختضب دما فان الذاكر لله افضل منه درجة» . رواه احمد والترمذي وقال الترمذي: هذا حديث حسن غريب

ব্যাখ্যা: (وَالذَّاكِرَاتُ) ইমাম শাওকানী (রহঃ) তার ‘তুহফাতুয্ যা-কিরীন’ কিতাবে উল্লেখ করেছেন যে, এখানে ও অন্যান্য অনেক হাদীসে মহিলাদেরকে পুরুষদের অনুসারিণী করে তাদের উল্লেখ বাদ দেয়া হয়েছে।

(وَأَرْفَعُ) এ অংশটি মুসনাদে আহমাদে এমনকি আত্ তিরমিযীতেও নেই, তবে এটি আছে জামি‘উল উসূল যা ‘আল্লামা আল্ জাযারী (রহঃ)-এর এবং ‘আল্লামা ইবনুল কইয়্যিম (রহঃ)-এর লেখা (الوابل الصيب) ‘‘আল্ ওয়াবিল আস্ সায়ব’’ নাম কিতাবদ্বয়ে আর তারা এ অংশটিকে ইমাম আত্ তিরমিযী’র দিকে সম্পৃক্ত করেছেন।

(الذَّاكِرُونَ اللّٰهَ كَثِيرًا) এর উদ্দেশ্য দু’রকম শ্রেণীর লোক হতে পারে।

১ম- যারা সর্বাবস্থায় আল্লাহর জিকিরে মশগুল থাকেন এবং তার আনুগত্য করেন।

২য়- যারা সহীহ হাদীসে প্রমাণিত দৈনন্দিন জীবনের জিকির-আযকার আদায় করেন।

(وَالذَّاكِرَاتُ) ‘আল্লামা মুল্লা ‘আলী কারী হানাফী (রহঃ) বলেন, ‘‘মিশকাতের কিছু কিছু পাণ্ডুলিপিতে এ অংশটি নেই।

আমি (‘আল্লামা ‘উবায়দুল্লাহ মুবারকপূরী) বলবঃ অংশটি না থাকাই সঠিক, কারণ এটি ইমাম আহমাদের মুসনাদে, ইমাম আত্ তিরমিযী’র সুনান সহ কোন কিতাবেই উল্লেখ করা হয়নি। এমনটি ইমাম নাবাবী তার আল্ আযকার, ইমাম মুনযিরী তার ‘তারগীব’-এ, ইমাম জাযারী তার জামি‘উল উসূল, ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূত্বী তার আল জামি‘উস সগীর, ‘আল্লামা ইবনুল কইয়্যিম তার আল্ ওয়াবিল আস্ সায়ব, ‘আলী আল্ মুত্তাকী তার আল্ কানয-এ, আল্লামা শাওকানী তার ‘তুহফাতুয্ যাকিরীন’-এ উল্লেখ করেননি। মহিলারা অধিকাংশ ক্ষেত্রে পুরুষের সাথে এমনিতেই সংযুক্ত থাকে যার কারণে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-ও তাদের উল্লেখ করেননি।

(قِيلَ: يَا رَسُوْلَ اللّٰهِ) মুসনাদে আহমাদে قِيلَ -এর স্থানে قلت শব্দের ব্যবহার রয়েছে।

وَمِنَ الْغَازِىْ فِىْ سَبِيلِ اللّٰهِ؟ অর্থাৎ- ‘‘আল্লাহর জিকিরকারীরা কি আল্লাহর পথে জিহাদে গাজী ব্যক্তির চেয়েও মর্যাদাসম্পন্ন?’’ এ কথাটি তারা কৌতুহলবশত বলেছেন।


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৯: দু‘আ (كتاب الدعوات) 9. Supplications

পরিচ্ছেদঃ ১. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - আল্লাহ সুবহানাহূ ওয়াতা‘আলার জিকির ও তাঁর নৈকট্য লাভ

২২৮১-[২১] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ শয়তান আদম সন্তানের কলবের বা অন্তরের উপর জেঁকে বসে থাকে। যখন সে আল্লাহর জিকির করে তখন সরে যায় আর যখন গাফিল বা অমনোযোগী হয় তখন শয়তান তার দিলে ওয়াস্ওয়াসা দিতে থাকে। (বুখারী তা’লীক হিসেবে)[1]

وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الشَّيْطَانُ جَاثِمٌ عَلَى قَلْبِ ابْنِ آدَمَ فَإِذَا ذَكَرَ اللَّهَ خَنَسَ وَإِذا غفَلَ وسوس» . رَوَاهُ البُخَارِيّ تَعْلِيقا

وعن ابن عباس قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «الشيطان جاثم على قلب ابن ادم فاذا ذكر الله خنس واذا غفل وسوس» . رواه البخاري تعليقا

ব্যাখ্যা: (الشَّيْطَانُ جَاثِمٌ) جَاثِمٌ শব্দটির অর্থ হলঃ উড়ে এসে বসা, যেমনটি পাখি বা অন্যান্য প্রাণী বসে থাকে। যখন বসা বা স্বস্তি নেয়া আবশ্যক হয়ে পড়ে তখন তারা জমিনে বা গাছের ডালে বসে পড়ে।

(خَنَسَ) শব্দটি باب ضرب অথবা نصر থেকে ব্যবহৃত হতে পারে এর অর্থ হলো (انقبض الشيطان) অর্থাৎ- শয়তান তখন নিজেকে গুটিয়ে নেয় কুমন্ত্রণা দেয়া থেকে বিরত রাখে। এ বিশেষ গুণটি শয়তানের বেশী বেশী থাকার কারণে মহান আল্লাহ সূরা আন্ নাস-এ তাকে الخناس নামে অভিহিত করেছেন। ‘আল্লামা আল্ জাযারী (রহঃ) বলেন, الخناس শব্দের অর্থ হলো التأخر والانقباض তথা সরে পড়া, কেটে পড়া, বিরত থাকা।

(وَسْوَسَ) হাদীসের এ অংশটি থেকে বুঝা যায় অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কুমন্ত্রণা দেয়ার স্থান কিন্তু মস্তিষ্কে আল্লাহর যিকিরের মাধ্যমে ব্যস্ত রাখতে পারলে সেখানে আর শয়তান কুমন্ত্রণা দিতে পারে না।

মুসনাদে আহমাদ ও আত্ তিরমিযীতে হাদীসটির শব্দ ভিন্ন আছে। সেখানে আছে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমি তোমাদেরকে আদেশ করছি আল্লাহর জিকির করতে কারণ আল্লাহর জিকিরকারীর দৃষ্টান্ত ঐ ব্যক্তির ন্যায় যাকে শত্রু ধাওয়া করেছে এক পর্যায়ে সে একটি প্রাচীরের নিকট গিয়ে আশ্রয় গ্রহণ করেছে, ঠিক এ রকমই বান্দা নিজেকে শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে বাঁচাতে পারে না তবে কেবলমাত্র আল্লাহর যিকিরের মাধ্যমে। ‘আল্লামা ইবনুম কইয়্যিম (রহঃ) আরো বলেন, যদি যিকিরের পরেও শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে বাঁচতে না পারে তাহলে কমপক্ষে এ জিকির তার জন্য আলো হিসেবে কাজ করবে যখন সে আল্লাহর সাথে সাক্ষাত করবে এবং যদি সর্বদা আল্লাহর জিকিরে নিজেকে মশগুল রাখে তাহলে এটা তাকে শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে রক্ষা করবে। কারণ শয়তান সর্বদা ওঁৎ পেতে বসে থাকে যখনই বান্দা আল্লাহর জিকির হতে বিমুখ হয় তখন সে বান্দার মনে কুমন্ত্রণা দেয় আর যখন আল্লাহর জিকিরে মশগুল হয় তখন শয়তান ভেগে যায়, কাচুমাচু হয়ে ছোট চড়ুই পাখি অথবা মাছি সদৃশ হয়ে যায়। এজন্যই وسوسة তথা কুমন্ত্রণার অপর নাম الخناس


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৯: দু‘আ (كتاب الدعوات) 9. Supplications

পরিচ্ছেদঃ ১. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - আল্লাহ সুবহানাহূ ওয়াতা‘আলার জিকির ও তাঁর নৈকট্য লাভ

২২৮২-[২২] ইমাম মালিক (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার কাছে বিশ্বস্ততার সাথে সংবাদ এসেছে যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেন, অলস অমনোযোগীদের মধ্যে জিকিরকারী এমন, যেমন যুদ্ধের ময়দান হতে পলায়নকারীদের মধ্যে যুদ্ধকারী। আর গাফিলদের মধ্যে জিকিরকারী এমন, যেমন শুকনো গাছের মধ্যে কাঁচা ডাল।[1]

وَعَنْ مَالِكٍ قَالَ: بَلَغَنِي أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَقُولُ: «ذَاكِرُ اللَّهِ فِي الْغَافِلِينَ كَالْمُقَاتِلِ خَلْفَ الْفَارِّينَ وَذَاكِرُ اللَّهِ فِي الْغَافِلِينَ كَغُصْنٍ أَخْضَرَ فِي شَجَرٍ يَابِس»

وعن مالك قال: بلغني ان رسول الله صلى الله عليه وسلم كان يقول: «ذاكر الله في الغافلين كالمقاتل خلف الفارين وذاكر الله في الغافلين كغصن اخضر في شجر يابس»

হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৯: দু‘আ (كتاب الدعوات) 9. Supplications

পরিচ্ছেদঃ ১. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - আল্লাহ সুবহানাহূ ওয়াতা‘আলার জিকির ও তাঁর নৈকট্য লাভ

২২৮৩-[২৩] অন্য এক বর্ণনায় আছে, শুকনো গাছ-গাছড়ার মধ্যে সতেজ সবুজ গাছ যেমন, তেমনি গাফিলদের মধ্যে জিকিরকারী এমন, যেমন অন্ধকার ঘরে আলো। গাফিলদের মধ্যে জিকিরকারীকে তার জীবদ্দশায়ই তার জান্নাতের স্থান দেখানো হবে এবং গাফিলদের মধ্যে জিকিরকারীর গুনাহ মানুষ ও পশুর সংখ্যা পরিমাণ ক্ষমা করে দেয়া হবে। (রযীন)[1]

وَفِي رِوَايَةٍ: «مَثَلُ الشَّجَرَةِ الْخَضْرَاءِ فِي وَسَطِ الشَّجَرِ وَذَاكِرُ اللَّهِ فِي الْغَافِلِينَ مَثَلُ مِصْبَاحٍ فِي بَيْتٍ مُظْلِمٍ وَذَاكِرُ اللَّهِ فِي الْغَافِلِينَ يُرِيهِ اللَّهُ مَقْعَدَهُ مِنَ الْجَنَّةِ وَهُوَ حَيٌّ وَذَاكِرُ اللَّهِ فِي الْغَافِلِينَ يُغْفَرُ لَهُ بِعَدَدِ كُلِّ فَصِيحٍ وَأَعْجَمٍ» . وَالْفَصِيحُ: بَنُو آدَمَ وَالْأَعْجَمُ: الْبَهَائِم. رَوَاهُ رزين

وفي رواية: «مثل الشجرة الخضراء في وسط الشجر وذاكر الله في الغافلين مثل مصباح في بيت مظلم وذاكر الله في الغافلين يريه الله مقعده من الجنة وهو حي وذاكر الله في الغافلين يغفر له بعدد كل فصيح واعجم» . والفصيح: بنو ادم والاعجم: البهاىم. رواه رزين

ব্যাখ্যা: (وَذَاكِرُ اللّٰهِ فِى الْغَافِلِينَ مَثَلُ مِصْبَاحٍ فِىْ بَيْتٍ مُظْلِمٍ) ‘আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেন, লোক জামা‘আতে এবং গাফিলদের মধ্যে যিনি আল্লাহর জিকির করে থাকেন তাকে ‘মুজাহিদ ফী সাবিলিল্লাহ’র সাথে তুলনা করার স্বরূপ হলো, যে সমস্ত বান্দা আল্লাহর জিকির না করে বসে আছে তারা নেকী থেকে বঞ্চিত আর যিনি আল্লাহর জিকির করছেন তিনি অবারিত নেকী লাভে ধন্য হচ্ছেন।

যেমনিভাবে একটি দল জিহাদে যাওয়ার পর তাদের সবাই যুদ্ধ ক্ষেত্র থেকে পলায়ন করলো আর তাদের একজন যুদ্ধ করেই চলছে। কেননা, সে শয়তানকে নিয়ন্ত্রণ করে চলছে আর অপরদেরকে শয়তান নিয়ন্ত্রণ করছে।


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৯: দু‘আ (كتاب الدعوات) 9. Supplications

পরিচ্ছেদঃ ১. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - আল্লাহ সুবহানাহূ ওয়াতা‘আলার জিকির ও তাঁর নৈকট্য লাভ

২২৮৪-[২৪] মু’আয ইবনু জাবাল (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর যিকিরের চেয়ে আল্লাহর ’আযাব হতে রক্ষা করতে পারার মতো কোন ’আমল আল্লাহর কোন বান্দা করতে পারে না। (মালিক, তিরমিযী, ইবনু মাজাহ)[1]

وَعَنْ مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ قَالَ: مَا عَمِلَ الْعَبْدُ عَمَلًا أَنْجَى لَهُ مِنْ عَذَابِ اللَّهِ مِنْ ذِكْرِ اللَّهِ. رَوَاهُ مَالِكٌ وَالتِّرْمِذِيُّ وَابْنُ مَاجَه

وعن معاذ بن جبل قال: ما عمل العبد عملا انجى له من عذاب الله من ذكر الله. رواه مالك والترمذي وابن ماجه

ব্যাখ্যা: (مِنْ عَذَابِ اللّٰهِ مِنْ ذِكْرِ اللّٰهِ) সর্বপ্রকার সৎ ‘আমলের তা যেভাবেই করা হোক না কেন চাই মুখের মাধ্যমে চাই হাতের মাধ্যমে যে কোন কিছুর মাধ্যমই হোক না কেন তার পিছনে উদ্দেশ্য একটিই আর তা হলো আল্লাহর স্মরণ, তাই আল্লাহর জিকিরটাই মুখ্য উদ্দেশ্য।

আল্লামা ইবনু ‘আবদিল বার (রহঃ) বলেন, যিকিরের ফাযীলাত অনেক যা লিখতে গেলে একটি পূর্ণাঙ্গ কিতাব লেখা সম্ভব। যিকিরের ফাযীলাত বর্ণনার ক্ষেত্রে আল্লাহ তা‘আলার এ কথাটিই যথেষ্ট যেখানে তিনি বলেছেন,

...إِنَّ الصَّلَاةَ تَنْهٰى عَنِ الْفَحْشَآءِ وَالْمُنْكَرِ وَلَذِكْرُ اللهِ أَكْبَرُ وَاللهُ..

‘‘নিশ্চয় সালাত যাবতীয়, গর্হিত কর্মকা- থেকে দূরে রাখে আর আল্লাহর জিকির তাতো আরো বড় উপকারী।’’ (সূরা আল ‘আনকাবূত ২৯ : ৪৫)

ইমাম ত্ববারানী (রহঃ) তার ‘আল কাবীর’ নামক কিতাবে একটু বেশী করে বলেছেন এবং আবূ বাকর ইবনু আবী শায়বাহ্ তার মুসান্নাফ-এ সেখানে আছে, সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রসূল! আল্লাহর জিকির কি আল্লাহর পথে জিহাদ করার চাইতেও উত্তম? উত্তরে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘হ্যাঁ, তবে যদি সে শাহাদাত বরণ করে তাহলে তা ভিন্ন’’- কথাটি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনবার বললেন।

ইমাম মালিক হাদীসটি কিতাবুস্ সালাত-এর (باب ما جاء في ذكر الله) তথা আল্লাহর যিকিরের ফাযীলাত কি? এ অধ্যায়ে উল্লেখ করেছেন।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৯: দু‘আ (كتاب الدعوات) 9. Supplications

পরিচ্ছেদঃ ১. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - আল্লাহ সুবহানাহূ ওয়াতা‘আলার জিকির ও তাঁর নৈকট্য লাভ

২২৮৫-[২৫] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা বলেন, আমার বান্দা যখন আমার জিকির করে আমার জন্যে তার দুই ঠোঁট নড়ে তখন আমি তার কাছে থাকি। (বুখারী)[1]

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِنَّ اللَّهَ تَعَالَى يَقُولُ: أَنَا مَعَ عَبْدِي إِذَا ذَكَرَنِي وتحركت بِي شفتاه . رَوَاهُ البُخَارِيّ

وعن ابي هريرة قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: ان الله تعالى يقول: انا مع عبدي اذا ذكرني وتحركت بي شفتاه . رواه البخاري

ব্যাখ্যা: (إِنَّ اللّٰهَ تَعَالَى يَقُولُ: أَنَا مَعَ عَبْدِي) অর্থাৎ- আল্লাহ তা‘আলা বান্দার সাথে থাকেন যতক্ষণ বান্দা তার জিকির করেন। অর্থাৎ- তিনি তাকে সাহায্য সহযোগিতা করে থাকেন।

ইমাম ইবনুল কইয়্যিম (রহঃ) বলেন, এখানে একটি বিশেষ সহযোগিতার কথা বলা হয়েছে যাকে معية خاصة বা নির্দিষ্ট সহচার্য বলে। অপরদিকে আল্লাহ সুবহানাহূ ওয়াতা‘আলা সারা বিশ্ব তার নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে তিনি সকলের সাহায্য সহযোগিতা করে থাকেন যাকে معية عامة বা ব্যাপক সহচার্য বলা হয়।

প্রথম সাথে থাকা তথা معية خاصة এর কথা মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে অনেকবার বলেছেন,

মহান আল্লাহ বলেন, إِنَّ اللهَ مَعَ الَّذِيْنَ اتَّقَوْا -- وَاللهُ مَعَ الصَّابِرِيْنَ

অর্থাৎ- ‘‘যারা তাকওয়া অবলম্বন করে আর সৎকর্মশীল- তাদের সাথে আল্লাহ আছেন’’- (সূরা আন্ নাহল ১৬ : ১২৮)। ‘‘আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন’’- (সূরা আল বাকারাহ্ ২ : ২৪৯)।

মহান আল্লাহ আরো বলেন, وَإِنَّ اللهَ لَمَعَ الْمُحْسِنِيْنَ

‘‘নিশ্চয়ই আল্লাহ সৎকর্মশীলদের সাথে আছেন।’’ (সূরা আল ‘আনকাবূত ২৯ : ৬৯)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৯: দু‘আ (كتاب الدعوات) 9. Supplications

পরিচ্ছেদঃ ১. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - আল্লাহ সুবহানাহূ ওয়াতা‘আলার জিকির ও তাঁর নৈকট্য লাভ

২২৮৬-[২৬] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রত্যেকটা জিনিসের (পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নের জন্য) একটা ব্রাশ বা মাজন আছে। আর কলব বা মন পরিষ্কার করার জন্য ব্রাশ বা মাজন হলো আল্লাহর জিকির। আল্লাহর ’আযাব হতে মুক্তি দেয়ার জন্য আল্লাহর যিকিরের চেয়ে অধিক কার্যকর আর কোন জিনিসই নেই। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, আল্লাহর পথে জিহাদ করাও কি নয়? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, সে মুজাহিদ আল্লাহর পথে প্রচন্ড বেগে তরবারির আঘাতে তা (যদি) ভেঙেও ফেলে। (বায়হাক্বী- দা’ওয়াতুল কাবীর)[1]

وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ كَانَ يَقُولُ: «لِكُلِّ شَيْءٍ صِقَالَةٌ وَصِقَالَةُ الْقُلُوبِ ذِكْرُ اللَّهِ وَمَا مِنْ شَيْءٍ أَنْجَى مِنْ عَذَابِ اللَّهِ مِنْ ذِكْرِ اللَّهِ» قَالُوا: وَلَا الْجِهَادُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ؟ قَالَ: «وَلَا أَنْ يَضْرِبَ بِسَيْفِهِ حَتَّى يَنْقَطِعَ» . رَوَاهُ الْبَيْهَقِيُّ فِي الدَّعَوَاتِ الْكَبِيرِ

وعن عبد الله بن عمر عن النبي صلى الله عليه وسلم انه كان يقول: «لكل شيء صقالة وصقالة القلوب ذكر الله وما من شيء انجى من عذاب الله من ذكر الله» قالوا: ولا الجهاد في سبيل الله؟ قال: «ولا ان يضرب بسيفه حتى ينقطع» . رواه البيهقي في الدعوات الكبير

ব্যাখ্যা: (لِكُلِّ شَىْءٍ) অর্থাৎ- প্রতিটি বিষয় পরিষ্কারের জন্য একটি ব্যবস্থা থাকে আর অন্তরের জং (মরিচা) পরিষ্কারের একটি মাধ্যম হলো (ذِكْرُ اللّٰهِ) তথা আল্লাহকে স্মরণ করা।

(وَصِقَالَةُ الْقُلُوبِ ذِكْرُ اللّٰهِ) ‘আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেছেন, এ অংশটির অর্থ হলো (صدء القلوب الرين) তথা মরিচীকা পড়া অন্তরের পালিশ। যেমন- কুরআনে কারীমে মহান আল্লাহ বলেন,

‘‘কখনোই নয়, তাদের অন্তরে তাদের কৃতকর্মের জন্যই মরিচীকা পড়েছে।’’ (সূরা আল মুতাফফিফীন ৮৩ : ১৪)

অর্থাৎ- প্রবৃত্তির অনুসরণের কারণে তাদের অন্তরে মরিচীকা পড়েছে। মহান আল্লাহ বলেন,

‘‘আপনি তার দিকে লক্ষ্য করেছেন যে তার প্রবৃত্তিকে ইলাহ বানিয়ে নিয়েছে।’’ (সূরা আল জা-সিয়াহ্ ৪৫ : ২৩)

‘আল্লামা ইবনুল কইয়্যিম (রহঃ) এ হাদীসটিকে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন, সীসা, রূপা ইত্যাদি জিনিসে যেমন মরিচীকা পড়ে তেমনিভাবে অন্তরেও মরিচীকা পড়ে আর এটা দূরীভূত করার একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে জিকির, কেননা এ জিকির অন্তরকে পরিষ্কার করে, পরিষ্কার আয়নার মতো উজ্জল করে তোলে। জিকির ছেড়ে দিলেই অন্তরে মরিচীকা পড়ে আর জিকির করলে মরিচীকা দূরীভূত হয়। আর অন্তরের মরিচীকা দু’ভাবে হয়। যথা- ১. আলস্য, ২. পাপাচার। আর এর থেকে মুক্তির মাধ্যমও দু’টি। যথা- ১. ইসতিগফার (ক্ষমা প্রার্থনা), ২. জিকির।

সুতরাং আলস্য গালিব হয় তার অন্তরে মরিচীকা স্থায়ীভাবে বসে যায়। মরিচীকার পরিমাণ তার অলসতার পরিমাণ অনুপাতে হয়। আর অন্তর যখন মরিচীকা আবৃত্ত হয়ে পড়ে তখন আর তা হাজারো জানা-শুনা থাকার পরও পাপ থেকে বিরত হতে পারে না। সুতরাং ঐ মুহূর্তে সে বাতিলকে হক মনে করে আর হককে বাতিল মনে করে।


হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৯: দু‘আ (كتاب الدعوات) 9. Supplications
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ৯ পর্যন্ত, সর্বমোট ৯ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে