পরিচ্ছেদঃ ৬. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - নাপাক ব্যক্তির সাথে মেলামেশা
৪৫৭-[৭] ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কোন এক স্ত্রী (মায়মূনাহ্) একটি গামলাতে পানি নিয়ে গোসল করলেন। এ গামলার পানি দিয়ে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করতে চাইলে পবিত্রা স্ত্রী বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আমি তো নাপাক ছিলাম (আমি তো এর থেকে পানি উঠিয়ে গোসল করেছি)। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, পানি তো নাপাক হয় না। দারিমীও এরূপই বর্ণনা করেছেন। (তিরমিযী, আবূ দাঊদ, ইবনু মাজাহ্ ও দারিমী)[1]
عَن ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ اغْتَسَلَ بَعْضُ أَزْوَاجِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي جَفْنَةٍ فَأَرَادَ رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم إِن يَتَوَضَّأَ مِنْهُ فَقَالَتْ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنِّي كُنْتُ جُنُبًا فَقَالَ «إِنَّ الْمَاءَ لَا يُجْنِبُ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُدَ وَابْنُ مَاجَهْ. وَرَوَى الدَّارمِيّ نَحوه
ব্যাখ্যা: উপরোক্ত হাদীস মহিলার পবিত্রতা অর্জনের পর অবশিষ্ট পানি দ্বারা পুরুষের পবিত্রতা অর্জন করার বৈধতা প্রমাণ করে। তবে এ অধ্যায়ের তৃতীয় অনুচ্ছেদে হাকাম বিন ‘আমর আল গিফারী ও হুমায়দ আল হুমায়দীর হাদীসে বলা হয়েছে যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মহিলার অবশিষ্ট পানি থেকে পুরুষকে এবং পুরুষের অবশিষ্ট পানি থেকে মহিলাকে উযূ (ওযু/ওজু/অজু) বা গোসল করতে নিষেধ করেছেন। তবে উল্লিখিত হাদীসে মায়মূনাহ্ (রাঃ) নিজেকে অপবিত্র সম্বোধন করে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে উক্ত পানি ব্যবহারে সতর্ক করার দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, নিষেধাজ্ঞার বিধানটি ইসলামের প্রাথমিক যুগে ছিল যা বৈধতার হাদীস দ্বারা রহিত করা হয়েছে এবং বৈধতার হাদীসগুলো নিষেধাজ্ঞার হাদীসগুলোর তুলনায় অধিক এবং সানাদগত দিক দিয়ে সর্বাধিক বিশুদ্ধ।
পরিচ্ছেদঃ ৬. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - নাপাক ব্যক্তির সাথে মেলামেশা
৪৫৮-[৮] আর শারহুস্ সুন্নাহ্-তেও ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) থেকে মায়মূনাহ্ (রাঃ)-এর সূত্রে মাসাবীহ-এর শব্দে বর্ণনা করেছেন।
وَفِي شَرْحِ السُّنَّةِ عَنْهُ عَنْ مَيْمُونَةَ بِلَفْظِ المصابيح
ব্যাখ্যা: এখানে ‘‘শারহুস্ সুন্নাহ্’’ নামক গ্রন্থে ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, তিনি উম্মুল মু’মিনীন মায়মূনাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন, হাদীসটি পুরুষ বা মহিলার অবশিষ্ট পানি থেকে পুরুষ বা মহিলার পবিত্রতা অর্জনের বৈধতা দান করে। মায়মূনাহ্ (রাঃ) বলেন, আমি এবং নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অপবিত্র হলাম এবং পাত্র হতে পানি উঠিয়ে গোসল করলাম এবং পাত্রে অবশিষ্ট পানিও রাখলাম, অতঃপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গোসলের জন্য আসলেন, আর আমি বললাম যে, আমি ঐ পানি থেকে গোসল করেছি। তারপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ওই পানিতেই গোসল করলেন এবং বললেন, নিশ্চয় পানিতে কোন অপবিত্রতা নেই।
পরিচ্ছেদঃ ৬. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - নাপাক ব্যক্তির সাথে মেলামেশা
৪৫৯-[৯] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নাপাকীর পর গোসল করতেন। অতঃপর আমার গোসল করার পূর্বে আমাকে জড়িয়ে ধরে শরীরের গরম অনুভব করতেন। (ইবনু মাজাহ্)[1]
ইমাম তিরমিযীও এরূপই বর্ণনা করেছেন, আর ’শারহুস্ সুন্নাহ্’-তেও মাসাবীহ-এর শব্দে বর্ণনা করা হয়েছে।
وَعَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَغْتَسِلُ مِنَ الْجَنَابَةِ ثُمَّ يَسْتَدْفِئُ بِي قَبْلَ أَنْ أَغْتَسِلَ. رَوَاهُ ابْنُ مَاجَه وروى التِّرْمِذِيّ نَحوه
ব্যাখ্যা: উক্ত হাদীস থেকে প্রতীয়মান হয় যে, অপবিত্রতা নারীর ব্যবহৃত গোসলের পানি পবিত্র। যেমন পুরুষের ব্যবহৃত পানি পবিত্র। ঋতুবতী ও নিফাসওয়ালী মহিলার বিধানও অনুরূপ এবং তাদের ব্যবহৃত পানিও পবিত্র। ব্যবহৃত পানি বলতে পবিত্রতা অর্জনের পর পাত্রের অবশিষ্ট পানি। এ কথা অবশ্যই মানতে হবে যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পবিত্রতা অর্জন করার পর ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর নিকট শয়ন পূর্বক উষ্ণতা গ্রহণ করতেন তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ভিজা দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দ্বারা জননী ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ও কাপড় ভিজে যেত। অতঃপর তার (‘আয়িশাহ্) ভিজা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ও কাপড় দ্বারাও তো নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ভিজতো। কিন্তু উষ্ণতা গ্রহণের পর (হানাফী মাযহাবের মতে) তার ওই সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ধৌত করেছেন যে সকল অঙ্গ প্রত্যঙ্গ ‘আয়িশার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের উপর রেখেছেন- মর্মে মতটি দুর্বল হাদীস দ্বারাও সাব্যস্ত নয়। কাজেই প্রমাণিত হয় যে, অপবিত্রা নারী ঋতুবতী ও নিফাসওয়ালী মহিলার ব্যবহৃত পানি পবিত্র এবং এটাই সালফ সালিহীনদের সিদ্ধান্ত। এ ব্যাপারে কোন মতপার্থক্য নেই।
পরিচ্ছেদঃ ৬. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - নাপাক ব্যক্তির সাথে মেলামেশা
৪৬০-[১০] ’আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পায়খানা হতে বেরিয়ে (উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করার আগে) আমাদেরকে কুরআন মাজীদ পড়াতেন এবং আমাদের সাথে মাংস (মাংস/মাংস/গোসত) খেতেন। নাপাকী ব্যতীত কোন কিছু তাঁকে কুরআন তিলাওয়াত হতে ফিরিয়ে রাখতে পারতো না। (আবূ দাঊদ ও নাসায়ী)[1] ইবনু মাজাহ অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।
وَعَن عَليّ قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَخْرُجُ مِنَ الْخَلَاءِ فَيُقْرِئُنَا الْقُرْآنَ وَيَأْكُلُ مَعَنَا اللَّحْم وَلم يكن يَحْجُبْهُ أَوْ يَحْجُزْهُ عَنِ الْقُرْآنِ شَيْءٌ لَيْسَ الْجَنَابَةَ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَالنَّسَائِيُّ وَرَوَى ابْنُ مَاجَهْ نَحوه
ব্যাখ্যা: উল্লিখিত হাদীস দ্বারা প্রমাণ হয় যে, জুনুবী তথা অপবিত্র অবস্থায় কুরআন তিলাওয়াত করা নিষিদ্ধ। তবে তাদের দলীল গ্রহণের ক্ষেত্রে বলা যায় যে, উল্লিখিত হাদীস দ্বারা শুধুমাত্র নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কর্ম বুঝা যায়, যার উদ্দেশ্য হলো নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অপবিত্র অবস্থায় কুরআন তিলাওয়াত বর্জন করেছেন। লক্ষণীয় বিষয় হলো, শুধুমাত্র নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কর্ম দ্বারা নিষিদ্ধ এবং হারাম হওয়ার দলীল গ্রহণ করা কিভাবে সম্ভব হতে পারে?
এ হাদীসের সমর্থনে ‘আলী (রাঃ)-এর হাদীস দ্বারা অপবিত্র অবস্থায় কুরআন তিলাওয়াত নিষিদ্ধ হতে পারে। ‘আলী (রাঃ) বলেন, আমি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করতে দেখলাম। অতঃপর তিনি কুরআনের কিছু অংশ তিলাওয়াত করলেন এবং বললেন, যে ব্যক্তি অপবিত্র নয় তার জন্য এ বিধান প্রযোজ্য। অপবিত্র ব্যক্তির জন্য এক আয়াত পড়াও সমুচিত নয়।
প্রমাণিত হলো যে, অপবিত্র অবস্থায় কুরআন তিলাওয়াত নিষিদ্ধ তবে পেশাব বা পায়খানা থেকে ফেরার পর উযূ (ওযু/ওজু/অজু) ছাড়াই কুরআন তিলাওয়াত বৈধ।
পরিচ্ছেদঃ ৬. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - নাপাক ব্যক্তির সাথে মেলামেশা
৪৬১-[১১] ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ঋতুবতী স্ত্রীলোক ও নাপাক ব্যক্তি কুরআন মাজীদের কিয়দংশও পড়তে পারবে না। (তিরমিযী)[1]
وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا تَقْرَأُ الْحَائِضُ وَلَا الْجُنُبُ شَيْئًا مِنَ الْقُرْآنِ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ
ব্যাখ্যা: উপরোক্ত হাদীসের ব্যাখ্যা ৪৬০ নং হাদীসে দ্রষ্টব্য।
পরিচ্ছেদঃ ৬. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - নাপাক ব্যক্তির সাথে মেলামেশা
৪৬২-[১২] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ এসব ঘরের দরজা মসজিদে নাবাবীর দিক হতে ফিরিয়ে দাও। আমি মাসজিদকে ঋতুবতী মহিলা ও নাপাক ব্যক্তির জন্য জায়িয মনে করি না। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «وَجِّهُوا هَذِهِ الْبُيُوتَ عَنِ الْمَسْجِدِ فَإِنِّي لَا أُحِلُّ الْمَسْجِدَ لِحَائِضٍ وَلَا جنب» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: উপরোক্ত হাদীস থেকে প্রতীয়মান হয় যে, অপবিত্র ব্যক্তি এবং ঋতুবতী নারীর জন্য মসজিদে অবস্থান বৈধ নয়।
পরিচ্ছেদঃ ৬. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - নাপাক ব্যক্তির সাথে মেলামেশা
৪৬৩-[১৩] ’আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ঘরে কোন ছবি বা কুকুর বা নাপাক ব্যক্তি থাকে সে ঘরে (রহমতের) মালাক (ফেরেশতা) প্রবেশ করেন না। (আবূ দাঊদ ও নাসায়ী)[1]
وَعَنْ عَلِيٍّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم: «لَا تدخل الْمَلَائِكَةُ بَيْتًا فِيهِ صُورَةٌ وَلَا كَلْبٌ وَلَا جنب» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد وَالنَّسَائِيّ
ব্যাখ্যা: এ হাদীস থেকে প্রতীয়মান হয় যে, কোন জীব বা প্রাণীর ছবি বা ভাস্কর্য তা যে কোন অবস্থাতেই থাকুক না কেন, দেয়ালে বা ছাদে লটকানো থাকুক বা কাপড়ে চিত্রায়িত থাকুক তার অর্ধাংশ কেটে বা ছিঁড়ে নষ্ট করতে হবে। তবে দীনার বা দিরহামের চিত্রিত ছবি এবং শিশুর খেলনা পুতুল থাকাতে কোন সমস্যা নেই বলে অনেকেই মতামত ব্যক্ত করেছেন।
পরিচ্ছেদঃ ৬. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - নাপাক ব্যক্তির সাথে মেলামেশা
৪৬৪-[১৪] ’আম্মার ইবনু ইয়াসির (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ এমন তিন ব্যক্তি আছে, মালায়িকাহ্ যাদের ধারে কাছেও যান না- (১) কাফিরের মৃতদেহ (২) খালূক্ব ব্যবহারকারী ও (৩) নাপাক ব্যক্তি, উযূ (ওযু/ওজু/অজু) না করা পর্যন্ত। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنْ عَمَّارِ بْنِ يَاسِرٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «ثَلَاثٌ لَا تَقْرَبُهُمُ الْمَلَائِكَةُ جِيفَةُ الْكَافِرِ وَالْمُتَضَمِّخُ بِالْخَلُوقِ وَالْجُنُبُ إِلَّا أَن يتَوَضَّأ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: কাফিরের মৃতদেহ সম্পর্কে ‘আত্বা আল খুরাসানীর রিওয়ায়াতে রয়েছে যে, নিশ্চয় মালায়িকাহ্ (ফেরেশতাগণ) কাফিরের জানাযায় কল্যাণের সাথে উপস্থিত হন না। আর খালুক্ব বলতে জা‘ফরান কিংবা এ জাতীয় বস্ত্ত মিশ্রিত সুগন্ধিকে বুঝায়। আর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জা‘ফরান ব্যবহার করতে নিষেধ করেছেন।
পরিচ্ছেদঃ ৬. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - নাপাক ব্যক্তির সাথে মেলামেশা
৪৬৫-[১৫] ’আবদুল্লাহ ইবনু আবূ বকর ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু ’আমর ইবনু হাযম (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ’আমর ইবনু হাযম-এর কাছে যে চিঠি লিখেছেন তাতে এ কথাও লেখা ছিল যে, পবিত্র লোক ছাড়া যেন কোন ব্যক্তি কুরআন স্পর্শ না করে। (মালিক ও দারাকুত্বনী)[1]
وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ أَبِي بَكْرِ بْنِ مُحَمَّدِ بْنِ عَمْرِو بْنِ حَزْمٍ: أَنَّ فِي الْكِتَابِ الَّذِي كَتَبَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم لعَمْرو بن حزم: «أَن لَا يَمَسَّ الْقُرْآنَ إِلَّا طَاهِرٌ» . رَوَاهُ مَالِكٌ وَالدَّارَقُطْنِيُّ
ব্যাখ্যা: উপরোক্ত হাদীস থেকে প্রতীয়মান হয় যে, পবিত্রতা ছাড়া কুরআন স্পর্শ করা বৈধ নয়। উল্লেখ্য যে, পবিত্রতা অর্জন দু’ ধরনের হতে পারেঃ
১. বড় ধরনের নাপাকী থেকে পবিত্রতা অর্জন করা। যেমন- ঋতুস্রাব, নিফাস ও সহবাস কিংবা স্বপ্নদোষজনিত অপবিত্র থেকে পবিত্র হওয়া- এ ধরনের অপবিত্র অবস্থায় কুরআন স্পর্শ করা বৈধ নয়।
২. বিনা উযূ থেকে উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করার মাধ্যমে পবিত্র হওয়া। আর এ অবস্থায় (বিনা উযূতে) কুরআন স্পর্শ করা বৈধ।
পরিচ্ছেদঃ ৬. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - নাপাক ব্যক্তির সাথে মেলামেশা
৪৬৬-[১৬] নাফি’ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইবনু ’উমার (রাঃ) কোন কাজে গেলে আমিও তার সাথে গেলাম। তিনি তাঁর কাজ শেষ করলেন। সেদিন তাঁর কথার মধ্যে এ কথাটি ছিল, তিনি বললেন, এক ব্যক্তি কোন একটি গলি দিয়ে যাচ্ছিল। এ সময় রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রস্রাব বা পায়খানা সেরে বের হলেন। ঐ লোকটির সাথে তাঁর দেখা হলে সে সালাম দিল। কিন্তু তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তার সালামের উত্তর দিলেন না। লোকটি যখন অন্য গলির দিকে মোড় নিচ্ছিল, তিনি (তায়াম্মুম করার জন্য) দেওয়ালে দুই হাত মেরে মুখমণ্ডল মাসেহ করলেন। অতঃপর আবার দেওয়ালে হাত মেরে কনুইসহ দু’হাত মাসাহ করলেন (অর্থাৎ- তায়াম্মুম করলেন)। এরপর লোকটির সালামের উত্তর দিলেন এবং বললেন, তোমাকে সালামের উত্তর দিতে পারিনি। কারণ আমি বে-উযূ ছিলাম, এটাই ছিল (তোমার সালামের উত্তর দিতে আমার) বাধা। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنْ نَافِعٍ قَالَ: انْطَلَقْتُ مَعَ ابْنِ عُمَرَ فِي حَاجَة إِلَى ابْن عَبَّاس فَقَضَى ابْنُ عُمَرَ حَاجَتَهُ وَكَانَ مِنْ حَدِيثِهِ يَوْمَئِذٍ أَنْ قَالَ مَرَّ رَجُلٌ فِي سِكَّةٍ مِنَ السِّكَكِ فَلَقِيَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَقَدْ خَرَجَ مِنْ غَائِطٍ أَوْ بَوْلٍ فَسَلَّمَ عَلَيْهِ فَلَمْ يَرُدَّ عَلَيْهِ حَتَّى كَادَ الرَّجُلُ أَنْ يَتَوَارَى فِي السِّكَّةِ ضَرَبَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِيَدَيْهِ عَلَى الْحَائِطِ وَمَسَحَ بِهِمَا وَجْهَهُ ثُمَّ ضَرَبَ ضَرْبَةً أُخْرَى فَمَسَحَ ذِرَاعَيْهِ ثُمَّ رَدَّ عَلَى الرَّجُلِ السَّلَامَ وَقَالَ: «إِنَّهُ لَمْ يَمْنَعْنِي أَنْ أَرُدَّ عَلَيْكَ السَّلَامَ إِلَّا أَنِّي لَمْ أَكُنْ على طهر» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: তায়াম্মুমের বিধানটি পানি না পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। কারণ পানি পাওয়া গেলে পানি ব্যবহারে সক্ষম ব্যক্তির ওপর তায়াম্মুম করা বৈধ নয়। সহীহুল বুখারীর বর্ণনা অনুযায়ী মুক্বীম অবস্থায় পানি না পাওয়ার কারণে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) ছুটে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকলে তায়াম্মুম করা বৈধ।
উল্লেখ্য যে, ইমাম আবূ হানীফাহ্ উক্ত হাদীস থেকে তায়াম্মুমের মাটিতে দু’বার হাত মারার দলীল গ্রহণ করেছেন। প্রথমবার চেহারা মাসাহ করা এবং দ্বিতীয়বারে দু’হাত কনুই পর্যন্ত মাসাহ করা যা সঠিক নয়। কারণ হাদীসটি মুনকার।
পরিচ্ছেদঃ ৬. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - নাপাক ব্যক্তির সাথে মেলামেশা
৪৬৭-[১৭] মুহাজির ইবনু কুনফুয (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এলেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তখন প্রস্রাব করছিলেন। তিনি তাঁকে সালাম দিলেন। কিন্তু তিনি (প্রস্রাবের পর) যে পর্যন্ত না উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করলেন তার সালামের কোন উত্তর দিলেন না। এরপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ওজর পেশ করে বললেন, উযূ না করে আমি আল্লাহর নাম নেয়া পছন্দ করিনি (এ কারণেই তোমার সালামের উত্তর দেইনি)। (আবূ দাঊদ)[1]
ইমাম নাসায়ীও এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন ’’যে পর্যন্ত উযূ না করলেন’’ বাক্য পর্যন্ত। ওযর পেশ করার কথা তিনি বলেননি। তার স্থানে বর্ণনা করেছেন, যখন উযূ করলেন, তার সালামের উত্তর দিলেন।[2]
[2] নাসায়ী ৩৮।
وَعَن المُهَاجر بن قنفذ: أَنَّهُ أَتَى النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ يَبُولُ فَسَلَّمَ عَلَيْهِ فَلَمْ يَرُدَّ عَلَيْهِ حَتَّى تَوَضَّأ ثمَّ اعتذر إِلَيْهِ فَقَالَ: «إِنِّي كرهت أَن أذكر الله عز وَجل إِلَّا على طهر أَو قَالَ على طَهَارَة» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَرَوَى النَّسَائِيُّ إِلَى قَوْلِهِ: حَتَّى تَوَضَّأَ وَقَالَ: فَلَمَّا تَوَضَّأَ رَدَّ عَلَيْهِ
ব্যাখ্যা: উপরোক্ত হাদীস থেকে জানা যায় যে, পেশাব বা পায়খানায় রত ব্যক্তিকে সালাম দেয়া মাকরূহ এবং এ অবস্থায় আল্লাহর যিকর করাও মাকরূহ। এমনকি এ অবস্থায় সালামের উত্তর দেয়া যাবে না। হাঁচির জওয়াব দেয়া যাবে না। হাঁচি দেয়ার পর ‘আলহামদুলিল্লা-হ’ বলা যাবে না। এ বিষয়ে ইবনু মাজাহ্-তে জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। এক ব্যক্তি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পেশাবে রত থাকা অবস্থায় অতিক্রমকালে সালাম দিলে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন যে, যখন আমাকে এ অবস্থায় দেখবে তখন সালাম দিবে না। যদি দাও তবে আমি তার উত্তর দিব না।