পরিচ্ছেদঃ ৭৯/১. সালামের সূচনা
৬২২৭. আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা আদম (আ.)-কে তাঁর যথাযোগ্য গঠনে সৃষ্টি করেছেন, তাঁর উচ্চতা ছিল ষাট হাত। তিনি তাঁকে সৃষ্টি করে বললেনঃ তুমি যাও। উপবিষ্ট ফেরেশতাদের এই দলকে সালাম করো এবং তুমি মনোযোগ সহকারে শোনবে তারা তোমার সালামের কী জবাব দেয়? কারণ এটাই হবে তোমার ও তোমার বংশধরের সম্ভাষণ (তাহিয়্যা)। তাই তিনি গিয়ে বললেনঃ ’আসসালামু ’আলাইকুম’। তাঁরা জবাবে বললেনঃ ’আসসালামু ’আলাইকা ওয়া রহমাতুল্লাহ’। তাঁরা বাড়িয়ে বললেনঃ ’ওয়া রহমাতুল্লাহ’ বাক্যটি। তারপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বললেনঃ যারা জান্নাতে প্রবেশ করবে তারা আদম (আঃ)-এর আকৃতি বিশিষ্ট হবে। তারপর থেকে এ পর্যন্ত মানুষের আকৃতি ক্রমশঃ কমে আসছে। [৩৩২৬] (আধুনিক প্রকাশনী- ৫৭৮৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৮১)
بَاب بَدْءِ السَّلاَم
حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ جَعْفَرٍ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّزَّاقِ، عَنْ مَعْمَرٍ، عَنْ هَمَّامٍ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ " خَلَقَ اللَّهُ آدَمَ عَلَى صُورَتِهِ، طُولُهُ سِتُّونَ ذِرَاعًا، فَلَمَّا خَلَقَهُ قَالَ اذْهَبْ فَسَلِّمْ عَلَى أُولَئِكَ النَّفَرِ مِنَ الْمَلاَئِكَةِ جُلُوسٌ، فَاسْتَمِعْ مَا يُحَيُّونَكَ، فَإِنَّهَا تَحِيَّتُكَ وَتَحِيَّةُ ذُرِّيَّتِكَ. فَقَالَ السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ. فَقَالُوا السَّلاَمُ عَلَيْكَ وَرَحْمَةُ اللَّهِ. فَزَادُوهُ وَرَحْمَةُ اللَّهِ، فَكُلُّ مَنْ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ عَلَى صُورَةِ آدَمَ، فَلَمْ يَزَلِ الْخَلْقُ يَنْقُصُ بَعْدُ حَتَّى الآنَ ".
Narrated Abu Huraira:
The Prophet (ﷺ) said, "Allah created Adam in His picture, sixty cubits (about 30 meters) in height. When He created him, He said (to him), "Go and greet that group of angels sitting there, and listen what they will say in reply to you, for that will be your greeting and the greeting of your offspring." Adam (went and) said, 'As-Salamu alaikum (Peace be upon you).' They replied, 'AsSalamu-'Alaika wa Rahmatullah (Peace and Allah's Mercy be on you) So they increased 'Wa Rahmatullah' The Prophet (ﷺ) added 'So whoever will enter Paradise, will be of the shape and picture of Adam Since then the creation of Adam's (offspring) (i.e. stature of human beings is being diminished continuously) to the present time."
পরিচ্ছেদঃ ৭৯/২. আল্লাহ তা‘আলার বাণীঃ হে ঈমানদারগণ! তোমরা নিজেদের গৃহ ছাড়া অন্যের গৃহে প্রবেশ করো না, অনুমতি প্রার্থনা এবং গৃহবাসীদেরকে সালাম দেয়া ব্যতীত। এটাই তোমাদের জন্য কল্যাণকর যাতে তোমরা উপদেশ লাভ কর।সেখানে যদি তোমরা কাউকে না পাও, তাহলে তাতে প্রবেশ করবে না, যতক্ষণ না তোমাদেরকে অনুমতি দেয়া হয়। আর যদি তোমাদেরকে বলা হয়, ‘ফিরে যাও, তাহলে ফিরে যাবে, এটাই তোমাদের জন্য বেশি পবিত্র’। তোমরা যা কর সে সম্পর্কে আল্লাহ সবচেয়ে বেশি অবগত।সে ঘরে কেউ বাস করে না, তোমাদের মালমাত্তা থাকে, সেখানে প্রবেশ করলে তোমাদের কোন পাপ হবে না, আল্লাহ জানেন তোমরা যা প্রকাশ কর আর যা তোমরা গোপন কর। সূরাহ আন্-নূর ২৪/২৭-২৯)
وَقَالَ سَعِيدُ بْنُ أَبِي الْحَسَنِ لِلْحَسَنِ إِنَّ نِسَاءَ الْعَجَمِ يَكْشِفْنَ صُدُورَهُنَّ وَرُءُوسَهُنَّ قَالَ اصْرِفْ بَصَرَكَ عَنْهُنَّ. قَوْلُ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ: (قُلْ لِلْمُؤْمِنِينَ يَغُضُّوا مِنْ أَبْصَارِهْمَ وَيَحْفَظُوا فُرُوجَهُمْ).
وَقَالَ قَتَادَةُ عَمَّا لاَ يَحِلُّ لَهُمْ: (وَقُلْ لِلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوجَهُنَّ)، (خَائِنَةَ الأَعْيُنِ) مِنَ النَّظَرِ إِلَى مَا نُهِيَ عَنْهُ.
وَقَالَ الزُّهْرِيُّ فِي النَّظَرِ إِلَى الَّتِي لَمْ تَحِضْ مِنَ النِّسَاءِ لاَ يَصْلُحُ النَّظَرُ إِلَى شَيْءٍ مِنْهُنَّ مِمَّنْ يُشْتَهَى النَّظَرُ إِلَيْهِ، وَإِنْ كَانَتْ صَغِيرَةً. وَكَرِهَ عَطَاءٌ النَّظَرَ إِلَى الْجَوَارِي يُبَعْنَ بِمَكَّةَ، إِلاَّ أَنْ يُرِيدَ أَنْ يَشْتَرِيَ.
সা’ঈদ ইবনু ’আবুল হাসান হাসান-কে বললেনঃ অনারব মহিলারা তাদের মস্তক ও বক্ষ খোলা রাখে। তিনি বললেনঃ তোমার চোখ ফিরিয়ে রেখো। আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ ’’মু’মিনদের বল তাদের দৃষ্টি অবনমিত করতে আর তাদের লজ্জাস্থান সংরক্ষণ করতে, এটাই তাদের জন্য বেশি পবিত্র, তারা যা কিছু করে সে সম্পর্কে আল্লাহ খুব ভালভাবেই অবগত।’’সূরাহ আন্-নূর ২৪/৩০) ক্বাতাদাহ বলেন, অর্থাৎ যারা তাদের জন্য হালাল নয়, তাদের থেকে। আর ঈমানদার নারীদেরকে বলে দাও তাদের দৃষ্টি অবনমিত করতে আর তাদের লজ্জাস্থান সংরক্ষণ করতে।’’ (সূরাহ আন্-নূর ২৪/৩১) আর আল্লাহর বাণীঃ ’’অর্থাৎ খিয়ানাতকারী চোখ।’’ সূরাহ গাফির ৪০:১৯) অর্থাৎ নিষিদ্ধ স্থানের দিকে তাকানো সম্পর্কে। আর ঋতুমতী হয়নি, এমন মেয়েদের দিকে তাকানো সম্পর্কে।
ইমাম যুহরী (রহ.) বলেন, অপ্রাপ্ত বয়স্কা হলেও এসব মেয়েদের এমন কিছু অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের দিকে তাকানো নাজায়িয, যা দেখলে লোভ জন্মিতে পারে। ’আত্বা ইবনু রাবাহ (রহ.) ঐসব কুমারীদের দিকে তাকানোও মাকরূহ বলতেন, যাদের মক্কার বাজারে বিক্রির জন্য আনা হতো। তবে কেনার উদ্দেশে হলে তা ভিন্ন ব্যাপার।
৬২২৮. ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার কুরবানীর দিনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফাযল ইবনু ’আব্বাস (রাঃ)-কে আপন সওয়ারীর পিঠে নিজের পেছনে বসালেন। ফাযল একজন সুপুরুষ ছিলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকেদের মাসআলা মাসায়িল বলে দেয়ার জন্য আসলেন। এ সময় খাশ’আম গোত্রের এক সুন্দরী নারী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট একটা মাসআলা জিজ্ঞেস করার জন্য আসল। তখন ফাযল তার দিকে তাকাতে লাগলেন। মহিলাটির সৌন্দর্য তাঁকে আকৃষ্ট করল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফাযল এর দিকে ফিরে দেখলেন যে, ফাযল তার দিকে তাকাচ্ছেন। তিনি নিজের হাত পেছনের দিকে নিয়ে ফাযল এর চিবুক ধরে ঐ নারীর দিকে না তাকানোর জন্য তার মুখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিলেন।[1]
এরপর স্ত্রীলোকটি জিজ্ঞেস করলঃ হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে তাঁর বান্দাদের উপর যে হাজ্জ ফরজ হবার বিধান দেয়া হয়েছে, আমার পিতার উপর তা এমন অবস্থায় এসেছে যে, বৃদ্ধ হবার কারণে সওয়ারীর উপর বসতে তিনি অক্ষম। যদি আমি তার পক্ষ থেকে হাজ্জ আদায় করে নেই, তবে কি তার পক্ষ থেকে তা আদায় হয়ে যাবে? তিনি বললেনঃ হাঁ। [১৫১৩] (আধুনিক প্রকাশনী- ৫৭৮৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৮২)
حَدَّثَنَا أَبُو الْيَمَانِ، أَخْبَرَنَا شُعَيْبٌ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، قَالَ أَخْبَرَنِي سُلَيْمَانُ بْنُ يَسَارٍ، أَخْبَرَنِي عَبْدُ اللَّهِ بْنُ عَبَّاسٍ ـ رضى الله عنهما ـ قَالَ أَرْدَفَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم الْفَضْلَ بْنَ عَبَّاسٍ يَوْمَ النَّحْرِ خَلْفَهُ عَلَى عَجُزِ رَاحِلَتِهِ، وَكَانَ الْفَضْلُ رَجُلاً وَضِيئًا، فَوَقَفَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم لِلنَّاسِ يُفْتِيهِمْ، وَأَقْبَلَتِ امْرَأَةٌ مِنْ خَثْعَمَ وَضِيئَةٌ تَسْتَفْتِي رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَطَفِقَ الْفَضْلُ يَنْظُرُ إِلَيْهَا، وَأَعْجَبَهُ حُسْنُهَا، فَالْتَفَتَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم يَنْظُرُ إِلَيْهَا، فَأَخْلَفَ بِيَدِهِ فَأَخَذَ بِذَقَنِ الْفَضْلِ، فَعَدَلَ وَجْهَهُ عَنِ النَّظَرِ إِلَيْهَا، فَقَالَتْ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّ فَرِيضَةَ اللَّهِ فِي الْحَجِّ عَلَى عِبَادِهِ أَدْرَكَتْ أَبِي شَيْخًا كَبِيرًا، لاَ يَسْتَطِيعُ أَنْ يَسْتَوِيَ عَلَى الرَّاحِلَةِ، فَهَلْ يَقْضِي عَنْهُ أَنْ أَحُجَّ عَنْهُ قَالَ " نَعَمْ ".
জাহিলিয়াতের যুগে এমন হতো যে, কারো ঘরের দুয়ারে গিয়ে আওয়াজ দিয়েই টপ্ করে ঘরের মধ্যে প্রবেশ করত, মেয়েদেরকে সামলে নেবারও কোন সময় দেয়া হত না। ফলে কখনো ঘরের মেয়ে পুরুষকে একই শয্যায় কাপড় মুড়ি দেয়া অবস্থায় দেখতে পেত, মেয়েদেরকে দেখত অসংবৃত বস্ত্রে।
এজন্যে নির্দেশ দেয়া হয়েছেঃ
فَإِنْ لَمْ تَجِدُوا فِيهَا أَحَدًا فَلَا تَدْخُلُوهَا حَتَّىٰ يُؤْذَنَ لَكُمْ ۖ وَإِنْ قِيلَ لَكُمُ ارْجِعُوا فَارْجِعُوا ۖ هُوَ أَزْكَىٰ لَكُمْ ۚ وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ عَلِيمٌ
‘‘সেই ঘরে যদি কোন লোক না পাও তবে তাতে তোমরা প্রবেশ করবে না যতক্ষণ না তোমাদেরকে প্রবেশ করার অনুমতি দেয়া হবে। আর যদি তোমাদেরকে ফিরে যেতে বলা হয়, তাহলে অবশ্যই ফিরে যাবে। এ হচ্ছে তোমাদের জন্য অধিক পবিত্রতর নীতি। তোমরা যা করো সে সম্পর্কে আল্লাহ পূর্ণ মাত্রায় অবহিত রয়েছেন।’’ সূরা নূর আয়াতঃ ২৮)
আনাস থেকে বর্ণিত হয়েছে। নাবী কারীম ﷺ বলেছেনঃ
يَابُنَيَّ اِذَا دَخَلْتَ عَلى اهلِكَ فَسَلِّمْ تَكُوْنَ بَرْكَةً عَلَيْكَ وعَلى اَهْلِ بَيْتِكَ- ترمذي)
‘‘হে প্রিয় পুত্র, তুমি যখন তোমার ঘরের লোকদের সামনে যেতে চাইবে, তখন বাইরে থেকে সালাম কর। এ সালাম করা তোমার ও তোমার ঘরের লোকদের পক্ষে বড়ই বারাকাতের কারণ হবে।
কারো ঘরে প্রবেশ করতে চাইলে প্রথমে সালাম দেবে, না প্রথমে ঘরে প্রবেশের অনুমতি চাইবে, এ নিয়ে দু’রকমের মত পাওয়া যায়। কুরআনে প্রথমে অনুমতি চাওয়ার নির্দেশ হয়েছে বলে কেউ কেউ মনে করেন যে, প্রথমে অনুমতি চাইবে, পরে সালাম দিবে। কিন্তু এ মত বিশুদ্ধ নয়। কুরআনে প্রথমে অনুমতি চাওয়ার কথা বলা হয়েছে বলেই যে প্রথমে তাই করতে হবে এমন কোন কথা নেই। কুরআনে তো কী কী করতে হবে তা এক সঙ্গে বলে দেয়া হয়েছে। এখানে পূর্বাপরের বিশেষ কোন তাৎপর্য নেই। বিশেষত বিশুদ্ধ হাদীসে প্রথমে সালাম করার উপরই গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।’’
বানী ‘আমের গোত্রীয় এক সাহাবী হতে বর্ণিত হয়েছে তিনি বলেনঃ আমি রসূল -এর ঘরে প্রবেশ করার অনুমতি চাইলাম। রসূল তাঁর দাসীকে নির্দেশ দিলেন বেরিয়ে গিয়ে তাকে বলঃ আপনি আস্সালামু আলাইকুম বলে বলুনঃ আমি কি প্রবেশ করব? কারণ সে কীভাবে প্রবেশ করতে হয় ভাল করে তা জানে না ...। [হাদীসটি সহীহ্, দেখুন ‘‘সহীহ্ আবী দাঊদ’’ ৫১৭৭), ‘‘সহীহ্ আদাবিল মুফরাদ’’ ১০৮৪)]।
আতা বলেনঃ আমি আবূ হুরাইরাহ্ -কে বলতে শুনেছিঃ কেউ যদি বলেঃ আমি কি [ঘরে] প্রবেশ করব আর সালাম প্রদান না করে তাহলে তুমি তাকে না বল যে পর্যন্ত সে চাবি না নিয়ে আসে। আমি বললামঃ আস্সালাম। তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। [‘‘সহীহ্ আদাবিল মুফরাদ’’ ১০৮৩)]।
ইবনু আববাস হতে বর্ণিত তিনি বলেনঃ উমার নাবী ﷺ-এর নিকট অনুমতি প্রার্থনা করতে গিয়ে বলেছিলেনঃ আস্সালামু ‘আলা রসূলিল্লাহ্, আস্সালামু আলাইকুম ‘উমার কি প্রবেশ করবে? [‘‘সহীহ্ আদাবিল মুফরাদ’’ ১০৮৫)]।
কালদা ইবনে হাম্বল বলেনঃ আমি রসূলের ঘরে প্রবেশ করার অনুমতি চাইলাম, কিন্তু প্রথমে সালাম করিনি বলে অনুমতিও পাইনি। তখন নাবী (ﷺ) বললেনঃاِرجِعْ فَقُلْ اَلسَّلاَمُ عَلَيْمُمْ ءَاَدْخُلُ- ابو اداؤد،ترمذى)
ফিরে যাও, তারপর এসে বল আসসালামু ‘আলাইকুম, তার পরে প্রবেশের অনুমতি চাও।
জাবের বর্ণিত হাদীসে রাসূলে কারীম (ﷺ) বললেনঃلاَتَأذَنُوْا لِمَنْ لَمْ يُبْداْ بِالسَّلاَمِ- بيهقى)
যে লোক প্রথমে সালাম করেনি, তাকে ঘরে প্রবেশ করার অনুমতি দিও না।
জাবের বর্ণিত অপর এক হাদীসে বলা হয়েছেঃ
السلام قبل الكلام- ترمذى) কথা বলার পূর্বে সালাম দাও।
আবূ মূসা আশ‘আরী ও হুযায়ফা বলেছেনঃ اَسْتاْذَنُ عَلى ذَوَاتِ الْمَحَارِمِ
মাহরাম মেয়েলোকদের কাছে যেতে হলেও প্রথমে অনুমতি চাইতে হবে।
এক ব্যক্তি রসূলে কারীম (ﷺ) কে জিজ্ঞেস করলেনঃ
আমার মায়ের ঘরে যেতে হলেও কি আমি অনুমতি চাইব?
রসূলে কারীম (ﷺ) বললেনঃ অবশ্যই। সে লোকটি বললঃ আমি তো তার সঙ্গে একই ঘরে থাকি-তবুও? রসূল ﷺ বললেনঃ হ্যাঁ, অবশ্যই অনুমতি চাইবে। সেই ব্যক্তি বললঃ আমি তো তার খাদেম।
তখন রসূলে কারীম (ﷺ) বললেনঃ اِسْتاْذَنْ عَلَيْهاَ اَتُحِبُّ اَنْتَرَاهَا عُرْيَانَةً
অবশ্যই পূর্বাহ্ন অনুমতি চাইবে, তুমি কি তোমার মাকে উলঙ্গ অবস্থায় দেখতে পছন্দ কর?
তার মানে, অনুমতি না নিয়ে ঘরে প্রবেশ করলে মাকে উলঙ্গ অবস্থায় দেখতে পাওয়া অসম্ভব কিছু নয়।
ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে প্রথমে সালাম করতে হবে এবং পরে প্রবেশের অনুমতি চাইতে হবে। অনুমতি না পেলে ফিরে যেতে হবে। এ ফিরে যাওয়া অধিক ভাল, সম্মানজনক প্রবেশের জন্য কাতর অনুনয়-বিনয় করার হীনতা থেকে।
ইবনে আব্বাস (রাঃ) হাদীসের ইলম লাভের জন্যে কোন কোন আনসারীর ঘরের দ্বারদেশে গিয়ে বসে থাকতেন, ঘরের মালিক বের হয়ে না আসা পর্যন্ত তিনি প্রবেশের অনুমতি চাইতেন না। এ ছিল উস্তাদের প্রতি ছাত্রের বিশেষ আদব, শালীনতা।
কারো বাড়ির সামনে গিয়ে প্রবেশের অনুমতির জন্যে দাঁড়িয়ে থাকতে হলে দরজার ঠিক সোজাসুজি দাঁড়ানও সমীচীন নয়। দরজার ফাঁক দিয়ে ভিতরে নজর করতেও চেষ্টা করবে না। কারণ, নাবী কারীম ﷺ থেকে এ সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছেঃ আব্দুল্লাহ ইবনে বুসর বলেনঃ
كَانَ رَسُوْلُ ﷺ اِذَا اَتى بَابَ قَوْمٍ لَمْ يَسْتَقْبِلِ اْلبَابَ مِنْ يِلْقَاءِ وَجْهِه وَلكِنْ مِنْ رُكِْنِه الاَيْمَنِ اَوِالاَيْسَرِفَيَقُوْلُ اَلسَّلاَمُ عَلَيْكُمْر ابو داؤد)
নাবী কারীম (ﷺ) যখন কারো বাড়ি বা ঘরের দরজায় এসে দাঁড়াতেন, তখন অবশ্যই দরজার দিকে মুখ করে সোজা হয়ে দাঁড়াতেন না। বরং দরজার ডান কিংবা বাম পাশে সরে দাঁড়াতেন এবং সালাম করতেন।
এক ব্যক্তি রসূলে কারীমের বিশেষ কক্ষপথে মাথা উঁচু করে তাকালে রসূলে কারীম (ﷺ) তখন ভিতরে ছিলেন এবং তাঁর হাতে লৌহ নির্মিত চাকুর মত একটি জিনিস ছিল। তখন তিনি বললেনঃ
لواعلم ان هذا ينظرني لطعنت بالمد رى فى عينه وهل جعل الاستيذان الامن اجل البصر-
এ ব্যক্তি বাইরে থেকে উঁকি মেরে আমাকে দেখবে তা আগে জানতে পারলে আমি আমার হাতের এ জিনিসটি দ্বারা তার চোখ ফুটিয়ে দিতাম। এ কথা তো বোঝা উচিত যে, এ চোখের দৃষ্টি বাঁচানো আর তা থেকে বাঁচবার উদ্দেশ্যেই পূর্বাহ্ন অনুমতি চাওয়ার রীতি করে দেয়া হয়েছে।
এ সম্পর্কে আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে স্পষ্ট, আরো কঠোর হাদীস বর্ণিত হয়েছে। নাবী কারীম (ﷺ) বলেছেনঃ
لَوْ اَنَّ امْرَأً اَطَّلَعَ عَلَيْكَ بِغَيْرِ اِذْنٍ فَخَذَفْتِهُ بِحَصَاةِ فَفَقاْتِ عَيْنَهُ مَاكَانَ عَلَيْكِ ضِلْعٌ-
কেউ যদি তোমার অনুমতি ছাড়াই তোমার ঘরের মধ্যে উঁকি মেরে তাকায়, আর তুমি যদি পাথর মেরে তার চোখ ফুটিয়ে দাও, তাহলে তাতে তোমার কোন দোষ হবে না।
তিনবার অনুমতি চাওয়ার পরও যদি অনুমতি পাওয়া না যায়, তাহলে ফিরে চলে যেগে হবে। আবূ সায়ীদ খুদরী একবার উমার ফারূকের দাওয়াত পেয়ে তাঁর ঘরের দরজায় এসে উপস্থিত হলেন এবং তিনবার সালাম করার পরও কোন জবাব না পাওয়ার কারণে তিনি ফিরে চলে গেলেন। পরে সাক্ষাত হলে উমার ফারূক বললেনঃ
‘তোমাকে দাওয়াত দেয়া সত্ত্বেও তুমি আমার ঘরে আসলে না কেন?’
তিনি বললেনঃ
‘‘আমি তো এসেছিলাম, আপনার দরজায় দাঁড়িয়ে তিনবার সালামও করেছিলাম। কিন্তু কারো কোন সাড়া-শব্দ না পেয়ে আমি ফিরে চলে এসেছি। কেননা নাবী কারীম ﷺ আমাকে বলেছেন, তোমাদের কেউ কারো ঘরে যাওয়ার জন্যে তিনবার অনুমতি চেয়েও না পেলে সে যেন ফিরে যায়।’’ বুখারী, মুসলিম)
ইমাম হাসান বসরী বলেছেনঃ
‘তিনবার সালাম করার মধ্যে প্রথমবার হল তার আগমন সম্পর্কে জানিয়ে দেয়া। দ্বিতীয়বার সালাম প্রবেশের অনুমতি লাভের জন্যে এবং তৃতীয়বার হচ্ছে ফিরে যাওয়ার অনুমতি প্রার্থনা।’
কেননা তৃতীয়বার সালাম দেয়ার পরও ঘরের ভেতর থেকে কারো জবাব না আসা সত্যই প্রমাণ করে যে, ঘরে কেউ নেই, অন্তত ঘরে এমন কোন পুরুষ নেই, যে তার সালামের জবাব দিতে পারে।
আর যদি কেউ ধৈর্য ধরে ঘরের দুয়ারে দাঁড়িয়েই থাকতে চায়, তবে তারও অনুমতি আছে, কিন্তু শর্ত এই যে, দুয়ারে দাঁড়িয়েই অবিশ্রান্তভাবে ডাকা-ডাকি ও চিল্লাচিল্লি করতে থাকতে পারবে না।
একথাই বলা হয়েছে নিম্নোক্ত আয়াতাংশেঃ
‘‘তারা যদি ধৈর্য ধারণ করে অপেক্ষায় থাকত যতক্ষণ না তুমি ঘর থেকে বের হচ্ছ, তাহলে তাদের জন্যে খুবই কল্যাণকর হত।’’ সূরা হুজরাতঃ ৫)
আয়াতটি যদিও বিশেষভাবে রাসূলে কারীম প্রসঙ্গে; কিন্তু এর আবেদন ও প্রয়োগ সাধারণ। কোন কোন কিতাবে এরূপ উল্লেখ পাওয়া যায় যে, ইবনে আববাস যিনি ইসলামের বিষয়ে মস্তবড় মনীষী ও বিশেষজ্ঞ ছিলেন- উবাই ইবনে কা‘ব -এর বাড়িতে কুরআন শেখার উদ্দেশ্যে যাতায়াত করতেন। তিনি দরজার কাছে দাঁড়িয়ে থাকতেন, কাউকে ডাক দিতেন না, দরজায় ধাক্কা দিয়েও ঘরের লোকদের ব্যতিব্যস্ত করে তুলতেন না। যতক্ষণ না উবাই নিজ ইচ্ছেমত ঘর থেকে বের হতেন, ততক্ষণ এমনিই দাঁড়িয়ে থাকতেন।
------------------------
[1]. চোখের দৃষ্টি হচ্ছে এমন একটি তীক্ষ্ম-শানিত তীর যা নারী বা পুরুষের অন্তর ভেদ করতে পারে। প্রেম-ভালবাসা তো এক অদৃশ্য জিনিস, যা কখনো চোখে ধরা পড়ে না, বরং চোখের দৃষ্টিতে ভর করে অপরের মর্মে গিয়ে পৌঁছায়। বস্ত্তত দৃষ্টি হচ্ছে লালসার বহ্নর দখিন হাওয়া। মানুষের মনে দৃষ্টি যেমন লালসাগ্নি উৎক্ষিপ্ত করে, তেমনি তার ইন্ধন যোগায়। দৃষ্টি বিনিময় এক অলিখিত লিপিকার আদান-প্রদান, যাতে লোকদের অগোচরেই অনেক প্রতিশ্রুতি- অনেক মর্মকথা পরস্পরের মনের পৃষ্ঠায় জ্বলন্ত অক্ষরে লিপিবদ্ধ হয়ে যায়।
ইসলামের লক্ষ্য যেহেতু মানব জীবনের সার্বিক পবিত্র ও সর্বাঙ্গীণ উন্নত চরিত্র, সে জন্যে দৃষ্টির এ ছিদ্রপথকেও সে বন্ধ করে দেয়ার ব্যবস্থা করেছে, দৃষ্টিকে সুনিয়ন্ত্রিত করার জন্যে দিয়েছে সুস্পষ্ট নির্দেশ। কুরআন মাজীদ স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছেঃ
‘‘মু’মিন পুরুষদের বলে দাও, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নিয়ন্ত্রিত করে রাখে এবং লজ্জাস্থানের পবিত্রতা রক্ষা করে, এ নীতি তাদের জন্যে অতিশয় পবিত্রতাময়। আর তারা যা কিছু করে, আল্লাহ সে সম্পর্কে পূর্ণ মাত্রায় অবহিত।’’
কেবল পুরুষদেরকেই নয়, এর সঙ্গে সঙ্গে মুসলিম মহিলাদের সম্পর্কেও বলা হয়েছেঃ
‘‘মু’মিন মহিলাদের বল, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের পবিত্রতা রক্ষা করে।’’ (সূরা আন-নূরঃ ৩১)
দু’টো আয়াতে একই কথা বলা হয়েছে- দৃষ্টি নিয়ন্ত্রণ এবং লজ্জাস্থানের পবিত্রতা সংরক্ষণ, কিন্তু এ একই কথা পুরুষদের জন্য আলাদাভাবে এবং মহিলাদের জন্যে তার পরে স্বতন্ত্র একটি আয়াতে বলা হয়েছে। এর মানেই হচ্ছে এই যে, এ কাজটি স্ত্রী-পুরুষ উভয়ের জন্যেই সমানভাবে জরুরী। এ আয়াতদ্বয়ে যেমন রয়েছে আল্লাহর নৈতিক উপদেশ, তেমনি রয়েছে ভীতি প্রদর্শন। উপদেশ হচ্ছে এই যে, ঈমানদার পুরুষই হোক কিংবা স্ত্রীই, তাদের কর্তব্যই হচ্ছে আল্লাহর হুকম পালন করা এবং নিষিদ্ধ কাজ থেকে বিরত থাকা। কাজেই আল্লাহর বিধান মুতাবিক যার প্রতি চোখ তুলে তাকানো নিষিদ্ধ, তার প্রতি যেন কখনো তাকাবার সাহস না করে। আর দ্বিতীয় কথা, দৃষ্টি নিয়ন্ত্রণ ও লজ্জাস্থানের পবিত্রতা রক্ষা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। দৃষ্টি নিয়ন্ত্রণ হলে অবশ্যই লজ্জাস্থানের পবিত্রতা রক্ষা পাবে, কিন্তু দৃষ্টিই যদি নিয়ন্ত্রিত না হয়, তাহলে পরপুরুষ কিংবা পরস্ত্রী দর্শনের ফলে হৃদয় মনের গভীর প্রশস্তি বিঘ্নিত ও চূর্ণ হবে, অন্তরে লালসার উত্তাল উন্মাদনার সৃষ্টি হয়ে লজ্জাস্থানের পবিত্রতাকে পর্যন্ত ভেঙ্গে চুরমার করে দেবে। কাজেই যেখানে দৃষ্টি নিয়ন্ত্রিত নয়, দেখাশোনার ব্যাপারে যেখানে পর, আপন, মাহরাম, গায়র মাহরামের তারতম্য নেই, বাছ-বিচার নেই, সেখানে লজ্জাস্থানের পবিত্রতা রক্ষিত হচ্ছে তা কিছুতেই বলা যায় না। ঠিক এজন্যই ইসলামে দৃষ্টিকে- পরিভাষায় যাকে بريد العشق ‘প্রেমের পয়গাম বাহক’ বলা হয়েছে, নিয়ন্ত্রিত করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। উপদেশের ছলে বলা হয়েছেঃ ذلك أزكى لهم এ-নীতি তাদের জন্যে খুবই পবিত্রতা বিধায়ক অর্থাৎ দৃষ্টি নিয়ন্ত্রিত রাখলে চরিত্রকে পবিত্র রাখা সম্ভব হবে। আর শেষ ভাগে ভীতি প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে বলা হয়েছেঃ
‘‘মু’মিন হওয়া সত্ত্বেও স্ত্রী-পুরুষ যদি এ হুকুম মেনে চলতে রাযী না হয়, তাহলে আল্লাহ রববুল ‘আলামীন নিশ্চয়ই এর শাস্তি প্রদান করবেন। তিনি তাদের কাজ-কর্ম সম্পর্কে পুরোমাত্রায় অবহিত রয়েছেন।’’
এ ভীতি যে কেবল পরকালের জন্যেই, এমন কথা নয়। দৃষ্টি নিয়ন্ত্রণ ও পবিত্রতা রক্ষা না করা হলে এ দুনিয়ায়ও তার অত্যন্ত খারাপ পরিণতি দেখা দিতে পারে। আর তা হচ্ছে স্বামীর দিল অন্য মেয়েলোকের দিকে আকৃষ্ট হওয়া এবং স্ত্রীর মন সমর্পিত হওয়া অন্য পুরুষের কাছে। আর এরই পরিণতি হচ্ছে পারিবারিক ও দাম্পত্য জীবনে আশু বিপর্যয় ও ভাঙ্গণ। দৃষ্টিশক্তির বিশ্বাসঘাতকতা সম্পর্কে স্বয়ং আল্লাহ তা‘আলাও মানুষকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেনঃ
‘‘তিনি দৃষ্টিসমূহের বিশ্বাসঘাতকতামূলক কার্যক্রম সম্পর্কে এবং তারই কারণে মনের পর্দায় যে কামনা-বাসনা গোপনে ও অজ্ঞাতসারে জাগ্রত হয় তা ভালভাবেই জানেন।’’ (সূরা মু’মিনঃ ১৯)
এ আয়াত খন্ডের ব্যাখ্যায় ইমাম বায়যাবী লিখেছেনঃ
‘‘বিশ্বাসঘাতক দৃষ্টি গায়র-মাহরাম মেয়েলোকের প্রতি বারবার দৃষ্টি নিক্ষেপ করার মতই, তার প্রতি চুরি করে তাকানো বা চোরা দৃষ্টি নিক্ষেপ করা অথবা দৃষ্টির কোন বিশ্বাসঘাতকতামূলক আচরণ।’’ (আনওয়ারুত তানযীল ওয়া ইসরারুত তাওয়ীল, দ্বিতীয় খন্ড ২৬৫ পৃষ্ঠা)
ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ বলেছেনঃ‘‘চোখ নিয়ন্ত্রণ ও নীচু করে রাখায় চোখের জ্যোতি বৃদ্ধি পায়।’’ (মাজমু‘আ ফাতাওয়া ১৫শ খন্ড ২৮৫ পৃষ্ঠা)
দৃষ্টি নিয়ন্ত্রণের জন্যে আলাদা আলাদাভাবে পুরুষ ও স্ত্রী উভয়কেই নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তার কারণ এই যে, যৌন উত্তেজনার ব্যাপারে স্বাভাবিকভাবেই স্ত্রী ও পুরুষের প্রায় একই অবস্থা। বরং স্ত্রীলোকের দৃষ্টি পুরুষদের মনে বিরাট আলোড়নের সৃষ্টি করে থাকে। প্রেমের আবেগ উচ্ছাসের ক্ষেত্রে স্ত্রীলোকের প্রকৃতি অত্যন্ত নাজুক ও ঠুনকো। কারো সাথে চোখ বিনিময় হলে স্ত্রীলোক সর্বাগ্রে কাতর এবং কাবু হয়ে পড়ে, যদিও তাদের মুখ ফোটে না। তার স্বাভাবিক দুর্বলতা-বৈশিষ্ট্যও বলা যেতে পারে একে। বাস্তব অভিজ্ঞতায় এর শত শত প্রমাণ পাওয়া যেতে পারে। এ কারণে স্ত্রীলোকদের দৃষ্টি নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন অনস্বীকার্য। এমন হওয়া কিছুমাত্র অস্বাভাবিক নয় যে, কোন সুশ্রী স্বাস্থ্যবান ও সুদর্শন যুবকের প্রতি কোন মেয়ের দৃষ্টি আকৃষ্ট হল, আর অমনি তার সর্বাঙ্গে প্রেমের বিদ্যুৎ তরঙ্গ খেলে গেল, সৃষ্টি হল প্রলয়ঙ্কর ঝড়। ফলে তার বহিরাঙ্গ কলঙ্কমুক্ত থাকতে পারলেও তার অন্তর্লোক পঙ্কিল হয়ে গেল। স্বামীর হৃদয় থেকে তার মন পাকা ফলের বোঁটা থেকে খসে পড়ার মত একেবারেই ছিন্ন হয়ে গেল, তার প্রতি তার মন হল বিমুখ, বিদ্রোহী। পরিণামে দাম্পত্য জীবনে ফাটল দেখা দিল, আর পারিবারিক জীবন হল ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন।
কখনো এমনও হতে পারে যে, স্ত্রীলোক হয়ত বা আত্মরক্ষা করতে পারল, কিন্তু তার অসর্তকতার কারণে কোন পুরুষের মনে প্রেমের আবেগ ও উচ্ছাস উদ্বেলিত হয়ে উঠেছে। তখন সে পুরুষ হয়ে যায় অনমনীয় ক্ষমাহীন। সে নারীকে বশ করবার জন্যে যত উপায় সম্ভব তা অবলম্বন করতে কিছুমাত্র দ্বিধাবোধ করে না। শেষ পর্যন্ত তার শিকারের জাল হতে নিজেকে রক্ষা করা সেই নারীর পক্ষে হয়ত সম্ভবই হয় না। এর ফলেও পারিবারিক জীবনে ভাঙ্গণ অনিবার্য হয়ে ওঠে।
দৃষ্টির এ অশুভ পরিণামের দিকে লক্ষ্য করেই কুরআন মাজীদের উপরোক্ত আয়াত নাযিল করা হয়েছে, আর এরই ব্যাখ্যা করে রাসূলে কারীম (ﷺ) ইরশাদ করেছেন অসংখ্য অমৃত বাণী।
Narrated `Abdullah bin `Abbas:
Al-Fadl bin `Abbas rode behind the Prophet (ﷺ) as his companion rider on the back portion of his she camel on the Day of Nahr (slaughtering of sacrifice, 10th Dhul-Hijja) and Al-Fadl was a handsome man. The Prophet (ﷺ) stopped to give the people verdicts. In the meantime, a beautiful woman From the tribe of Khath'am came, asking the verdict of Allah's Messenger (ﷺ). Al-Fadl started looking at her as her beauty attracted him. The Prophet (ﷺ) looked behind while Al-Fadl was looking at her; so the Prophet (ﷺ) held out his hand backwards and caught the chin of Al-Fadl and turned his face (to the owner sides in order that he should not gaze at her. She said, "O Allah's Messenger (ﷺ)! The obligation of Performing Hajj enjoined by Allah on His worshipers, has become due (compulsory) on my father who is an old man and who cannot sit firmly on the riding animal. Will it be sufficient that I perform Hajj on his behalf?" He said, "Yes."
পরিচ্ছেদঃ ৭৯/২. আল্লাহ তা‘আলার বাণীঃ হে ঈমানদারগণ! তোমরা নিজেদের গৃহ ছাড়া অন্যের গৃহে প্রবেশ করো না, অনুমতি প্রার্থনা এবং গৃহবাসীদেরকে সালাম দেয়া ব্যতীত। এটাই তোমাদের জন্য কল্যাণকর যাতে তোমরা উপদেশ লাভ কর।সেখানে যদি তোমরা কাউকে না পাও, তাহলে তাতে প্রবেশ করবে না, যতক্ষণ না তোমাদেরকে অনুমতি দেয়া হয়। আর যদি তোমাদেরকে বলা হয়, ‘ফিরে যাও, তাহলে ফিরে যাবে, এটাই তোমাদের জন্য বেশি পবিত্র’। তোমরা যা কর সে সম্পর্কে আল্লাহ সবচেয়ে বেশি অবগত।সে ঘরে কেউ বাস করে না, তোমাদের মালমাত্তা থাকে, সেখানে প্রবেশ করলে তোমাদের কোন পাপ হবে না, আল্লাহ জানেন তোমরা যা প্রকাশ কর আর যা তোমরা গোপন কর। সূরাহ আন্-নূর ২৪/২৭-২৯)
৬২২৯. আবূ সা’ঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, একবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরা রাস্তায় বসা থেকে বিরত থাকো। তারা বললঃ হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের রাস্তায় বসা ব্যতীত গত্যন্তর নেই, আমরা সেখানে কথাবার্তা বলি। তখন তিনি বললেন, যদি তোমাদের রাস্তায় মজলিস করা ব্যতীত উপায় না থাকে, তবে তোমরা রাস্তার হক আদায় করবে। তারা বলল, হে আল্লাহর রাসূল! রাস্তার হক কী? তিনি বললেন, তা হলো চক্ষু অবনত রাখা, কাউকে কষ্ট দেয়া থেকে বিরত থাকা। সালামের জবাব দেয়া এবং সৎকাজের নির্দেশ দেয়া আর অসৎকাজ থেকে নিষেধ করা। [২৪৬৫] (আধুনিক প্রকাশনী- ৫৭৮৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৮৩)
حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ مُحَمَّدٍ، أَخْبَرَنَا أَبُو عَامِرٍ، حَدَّثَنَا زُهَيْرٌ، عَنْ زَيْدِ بْنِ أَسْلَمَ، عَنْ عَطَاءِ بْنِ يَسَارٍ، عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ ـ رضى الله عنه أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ " إِيَّاكُمْ وَالْجُلُوسَ بِالطُّرُقَاتِ ". فَقَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ مَا لَنَا مِنْ مَجَالِسِنَا بُدٌّ نَتَحَدَّثُ فِيهَا. فَقَالَ " إِذَا أَبَيْتُمْ إِلاَّ الْمَجْلِسَ فَأَعْطُوا الطَّرِيقَ حَقَّهُ ". قَالُوا وَمَا حَقُّ الطَّرِيقِ يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ " غَضُّ الْبَصَرِ، وَكَفُّ الأَذَى، وَرَدُّ السَّلاَمِ، وَالأَمْرُ بِالْمَعْرُوفِ وَالنَّهْىُ عَنِ الْمُنْكَرِ ".
Narrated Abu Sa`id Al-Khudri:
The Prophet (ﷺ) said, 'Beware! Avoid sitting on the roads." They (the people) said, "O Allah s Apostle! We can't help sitting (on the roads) as these are (our places) here we have talks." The Prophet (ﷺ) said, ' l f you refuse but to sit, then pay the road its right ' They said, "What is the right of the road, O Allah's Apostle?" He said, 'Lowering your gaze, refraining from harming others, returning greeting, and enjoining what is good, and forbidding what is evil."
পরিচ্ছেদঃ ৭৯/৩. আল্লাহ তা‘আলার নামের মধ্যে ‘সালাম’ একটি নাম।
(وَإِذَا حُيِّيتُمْ بِتَحِيَّةٍ فَحَيُّوا بِأَحْسَنَ مِنْهَا أَوْ رُدُّوهَا).
আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ ’’যখন তোমাদেরকে সসম্মানে সালাম প্রদান করা হয়, তখন তোমরা তার চেয়ে উত্তমরূপে জওয়াবী সালাম দাও কিংবা কমপক্ষে) অনুরূপভাবে দাও।’’ (সূরা আন-নিসা ৪ : ৮৬)
৬২৩০. ’আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ যখন আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে সালাত আদায় করছিলাম, তখন আমরা আল্লাহর প্রতি তাঁর বান্দাদের পক্ষ থেকে সালাম, জিবরীল (আ.)-এর প্রতি সালাম, মীকাঈল (আ.)-এর প্রতি সালাম এবং অমুকের প্রতি সালাম দিলাম। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত শেষ করে, আমাদের দিকে তাঁর চেহারা ফিরিয়ে বললেনঃ আল্লাহ তা’আলা নিজেই ’সালাম’। অতএব যখন তোমাদের কেউ সালাতের মধ্যে বসবে, তখন বলবেঃ
التَّحِيَّاتُ لله وَالصَّلَوَاتُ وَالطَّيِّبَاتُ السَّلاَمُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهُ السَّلاَمُ عَلَيْنَا وَعَلٰى عِبَادِ اللهِ الصَّالِحِينَ
মুসল্লী যখন এ কথাটা বলবে, তখনই আসমান যমীনে সব নেক বান্দাদের নিকট এ সালাম পৌঁছে যাবে। তারপর বলবে
أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلٰهَ إِلاَّ اللهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُه” وَرَسُوْلُه”
তারপর সে তার পছন্দমত দু’আ বেছে নেবে। [৮৩১] (আধুনিক প্রকাশনী- ৫৭৮৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৮৪)
بَاب السَّلاَمُ اسْمٌ مِنْ أَسْمَاءِ اللهِ تَعَالٰى
حَدَّثَنَا عُمَرُ بْنُ حَفْصٍ، حَدَّثَنَا أَبِي، حَدَّثَنَا الأَعْمَشُ، قَالَ حَدَّثَنِي شَقِيقٌ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ كُنَّا إِذَا صَلَّيْنَا مَعَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قُلْنَا السَّلاَمُ عَلَى اللَّهِ قَبْلَ عِبَادِهِ، السَّلاَمُ عَلَى جِبْرِيلَ، السَّلاَمُ عَلَى مِيكَائِيلَ، السَّلاَمُ عَلَى فُلاَنٍ، فَلَمَّا انْصَرَفَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم أَقْبَلَ عَلَيْنَا بِوَجْهِهِ فَقَالَ " إِنَّ اللَّهَ هُوَ السَّلاَمُ، فَإِذَا جَلَسَ أَحَدُكُمْ فِي الصَّلاَةِ فَلْيَقُلِ التَّحِيَّاتُ لِلَّهِ، وَالصَّلَوَاتُ وَالطَّيِّبَاتُ السَّلاَمُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ، السَّلاَمُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللَّهِ الصَّالِحِينَ. فَإِنَّهُ إِذَا قَالَ ذَلِكَ أَصَابَ كُلَّ عَبْدٍ صَالِحٍ فِي السَّمَاءِ وَالأَرْضِ، أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ. ثُمَّ يَتَخَيَّرْ بَعْدُ مِنَ الْكَلاَمِ مَا شَاءَ ".
Narrated `Abdullah:
When we prayed with the Prophet (ﷺ) we used to say: As-Salam be on Allah from His worshipers, As- Salam be on Gabriel, As-Salam be on Michael, As-Salam be on so-and-so. When the Prophet (ﷺ) finished his prayer, he faced us and said, "Allah Himself is As-Salam (Peace), so when one sits in the prayer, one should say, 'at-Tahiyatu-li l-lahi Was-Salawatu, Wat-Taiyibatu, As-Salamu 'Alaika aiyuhan- Nabiyyu wa Rah-matul-iahi wa Barakatuhu, As-Salamu 'Alaina wa 'ala 'Ibadillahi assalihin, for if he says so, then it will be for all the pious slave of Allah in the Heavens and the Earth. (Then he should say), 'Ash-hadu an la ilaha illalllahu wa ash-hadu anna Muhammadan `Abduhu wa rasulu-hu,' and then he can choose whatever speech (i.e. invocation) he wishes "
পরিচ্ছেদঃ ৭৯/৪. অল্প সংখ্যক লোক অধিক সংখ্যক লোকেদের সালাম করবে।
৬২৩১. আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বয়োকনিষ্ঠ বয়োজ্যেষ্ঠকে, পদচারী উপবিষ্টকে এবং অল্প সংখ্যক অধিক সংখ্যককে সালাম দিবে। [৬২৩২, ৬২৩৩, ৬২৩৪; মুসলিম ৩৯/১, হাঃ ২১৬০, হাঃ ১০৬২৯] (আধুনিক প্রকাশনী- ৫৭৯০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৮৫)
بَاب تَسْلِيمِ الْقَلِيلِ عَلَى الْكَثِيرِ
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ مُقَاتِلٍ أَبُو الْحَسَنِ، أَخْبَرَنَا عَبْدُ اللَّهِ، أَخْبَرَنَا مَعْمَرٌ، عَنْ هَمَّامِ بْنِ مُنَبِّهٍ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ " يُسَلِّمُ الصَّغِيرُ عَلَى الْكَبِيرِ، وَالْمَارُّ عَلَى الْقَاعِدِ، وَالْقَلِيلُ عَلَى الْكَثِيرِ ".
Narrated Abu Huraira:
The Prophet (ﷺ) said, "The young should greet the old, the passer by should greet the sitting one, and the small group of persons should greet the large group of persons. "
পরিচ্ছেদঃ ৭৯/৫. আরোহী পদচারীকে সালাম করবে।
৬২৩২. আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আরোহী পদচারীকে, পদচারী উপবিষ্টকে এবং অল্প সংখ্যক অধিক সংখ্যককে সালাম দিবে। [৬২৩১] (আধুনিক প্রকাশনী- ৫৭৯১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৮৬)
بَاب تَسْلِيمِ الرَّاكِبِ عَلَى الْمَاشِي
حَدَّثَنَا مُحَمَّدٌ، أَخْبَرَنَا مَخْلَدٌ، أَخْبَرَنَا ابْنُ جُرَيْجٍ، قَالَ أَخْبَرَنِي زِيَادٌ، أَنَّهُ سَمِعَ ثَابِتًا، مَوْلَى عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ زَيْدٍ أَنَّهُ سَمِعَ أَبَا هُرَيْرَةَ، يَقُولُ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " يُسَلِّمُ الرَّاكِبُ عَلَى الْمَاشِي، وَالْمَاشِي عَلَى الْقَاعِدِ، وَالْقَلِيلُ عَلَى الْكَثِيرِ ".
Narrated Abu Huraira:
Allah's Messenger (ﷺ) said, "The riding one should greet the walking one, and the walking one should greet the sitting one, and the small number of persons should greet the large number of persons."
পরিচ্ছেদঃ ৭৯/৬. পদচারী উপবিষ্টকে সালাম দিবে।
৬২৩৩. আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আরোহী পদচারীকে, পদচারী উপবিষ্টকে এবং অল্প সংখ্যক অধিক সংখ্যককে সালাম দিবে। [৬২৩১] (আধুনিক প্রকাশনী- ৫৭৯২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৮৭)
بَاب تَسْلِيمِ الْمَاشِي عَلَى الْقَاعِد
حَدَّثَنَا إِسْحَاقُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ، أَخْبَرَنَا رَوْحُ بْنُ عُبَادَةَ، حَدَّثَنَا ابْنُ جُرَيْجٍ، قَالَ أَخْبَرَنِي زِيَادٌ، أَنَّ ثَابِتًا، أَخْبَرَهُ ـ وَهْوَ، مَوْلَى عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ زَيْدٍ ـ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ـ رضى الله عنه ـ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَنَّهُ قَالَ " يُسَلِّمُ الرَّاكِبُ عَلَى الْمَاشِي وَالْمَاشِي عَلَى الْقَاعِدِ، وَالْقَلِيلُ عَلَى الْكَثِيرِ ".
Narrated Abu Huraira:
Allah's Messenger (ﷺ) said, "The riding person should greet the walking one, and the walking one should greet the sitting one, and the small number of persons should greet the large number of persons."
পরিচ্ছেদঃ ৭৯/৭. বয়োকনিষ্ঠ বয়োজ্যেষ্ঠকে সালাম করবে।
৬২৩৪. আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বয়োকনিষ্ঠ বয়োজ্যেষ্ঠকে, পদচারী উপবিষ্টকে এবং অল্প সংখ্যক অধিক সংখ্যককে সালাম দিবে। [৬২৩১] (আধুনিক প্রকাশনী- অনুচ্ছেদ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- অনুচ্ছেদ)
بَاب تَسْلِيمِ الصَّغِيرِ عَلَى الْكَبِيرِ
وَقَالَ إِبْرَاهِيمُ عَنْ مُوسَى بْنِ عُقْبَةَ، عَنْ صَفْوَانَ بْنِ سُلَيْمٍ، عَنْ عَطَاءِ بْنِ يَسَارٍ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم" يُسَلِّمُ الصَّغِيرُ عَلَى الْكَبِيرِ، وَالْمَارُّ عَلَى الْقَاعِدِ، وَالْقَلِيلُ عَلَى الْكَثِيرِ ".
Narrated Abu Huraira:
Allah's Messenger (ﷺ) said, "The younger person should greet the older one, and the walking person should greet the sitting one, and the small number of persons should greet the large number of persons."
পরিচ্ছেদঃ ৭৯/৮. সালামের বিস্তারণ।
৬২৩৫. বারাআ ইবনু ’আযিব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন সাতটি কাজেরঃ রোগীর খোঁজ-খবর নেয়া, জানাযার সঙ্গে যাওয়া, হাঁচি দাতার জন্য দু’আ করা, দুর্বলকে সাহায্য করা, মাযলূমের সাহায্য করা, সালাম প্রসার করা এবং কসমকারীর কসম পূর্ণ করা। আর নিষেধ করেছেন (সাতটি কাজ থেকে) রূপার পাত্রে পানাহার, স্বর্ণের আংটি পরিধান, রেশমী যিনের উপর সাওয়ার হওয়া, মিহিন রেশমী বস্ত্র পরিধান, পাতলা রেশম বস্ত্র ব্যবহার, রেশম মিশ্রিত কাতান বস্ত্র পরিধান এবং গাঢ় রেশমী বস্ত্র পরিধান করা। [১২৩৯] (আধুনিক প্রকাশনী- ৫৭৯৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৮৮)
بَاب إِفْشَاءِ السَّلاَم
حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ، حَدَّثَنَا جَرِيرٌ، عَنِ الشَّيْبَانِيِّ، عَنْ أَشْعَثَ بْنِ أَبِي الشَّعْثَاءِ، عَنْ مُعَاوِيَةَ بْنِ سُوَيْدِ بْنِ مُقَرِّنٍ، عَنِ الْبَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ ـ رضى الله عنهما ـ قَالَ أَمَرَنَا رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم بِسَبْعٍ بِعِيَادَةِ الْمَرِيضِ، وَاتِّبَاعِ الْجَنَائِزِ، وَتَشْمِيتِ الْعَاطِسِ، وَنَصْرِ الضَّعِيفِ، وَعَوْنِ الْمَظْلُومِ، وَإِفْشَاءِ السَّلاَمِ، وَإِبْرَارِ الْمُقْسِمِ، وَنَهَى عَنِ الشُّرْبِ فِي الْفِضَّةِ، وَنَهَانَا عَنْ تَخَتُّمِ الذَّهَبِ، وَعَنْ رُكُوبِ الْمَيَاثِرِ، وَعَنْ لُبْسِ الْحَرِيرِ، وَالدِّيبَاجِ، وَالْقَسِّيِّ، وَالإِسْتَبْرَقِ.
Narrated Al-Bara' bin 'Azib:
Allah's Messenger (ﷺ) ordered us to do seven (things): to visit the sick, to follow the funeral processions, to say Tashmit to a sneezer, to help the weak, to help the oppressed ones, to propagate As-Salam (greeting), and to help others to fulfill their oaths (if it is not sinful). He forbade us to drink from silver utensils, to wear gold rings, to ride on silken saddles, to wear silk clothes, Dibaj (thick silk cloth), Qassiy and Istabraq (two kinds of silk).
পরিচ্ছেদঃ ৭৯/৯. পরিচিত ও অপরিচিত সকলকে সালাম দেয়া।
৬২৩৬. ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। এক লোক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করলঃ ইসলামের কোন কাজ উত্তম? তিনি বললেনঃ তুমি ক্ষুধার্তকে অন্ন দেবে, আর সালাম দিবে যাকে তুমি চেন আর যাকে চেন না। [১২] (আধুনিক প্রকাশনী- ৫৭৯৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৮৯)
بَاب السَّلاَمِ لِلْمَعْرِفَةِ وَغَيْرِ الْمَعْرِفَةِ
حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ يُوسُفَ، حَدَّثَنَا اللَّيْثُ، قَالَ حَدَّثَنِي يَزِيدُ، عَنْ أَبِي الْخَيْرِ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو، أَنَّ رَجُلاً، سَأَلَ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم أَىُّ الإِسْلاَمِ خَيْرٌ قَالَ " تُطْعِمُ الطَّعَامَ، وَتَقْرَأُ السَّلاَمَ عَلَى مَنْ عَرَفْتَ، وَعَلَى مَنْ لَمْ تَعْرِفْ ".
Narrated 'Abdullah bin 'Amr:
A man asked the Prophet, "What Islamic traits are the best?" The Prophet said, "Feed the people, and greet those whom you know and those whom you do not know."
পরিচ্ছেদঃ ৭৯/৯. পরিচিত ও অপরিচিত সকলকে সালাম দেয়া।
৬২৩৭. আবূ আইউব (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন মুসলিমের পক্ষে তার কোন ভাইয়ের সাথে তিন দিনের অধিক এমনভাবে সম্পর্কচ্ছেদ করে থাকা বৈধ নয় যে, তাদের দু’জনের দেখা সাক্ষাৎ হলেও একজন এদিকে, আরেকজন অন্যদিকে চেহারা ঘুরিয়ে নেয়। তাদের মধ্যে উত্তম ঐ ব্যক্তি যে প্রথম সালাম করবে। আবূ সুফ্ইয়ান বলেন যে, এ হাদীসটি আমি যুহরী (রহ.) থেকে তিনবার শুনেছি। [৬০৭৭] (আধুনিক প্রকাশনী- , ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৯০)
بَاب السَّلاَمِ لِلْمَعْرِفَةِ وَغَيْرِ الْمَعْرِفَةِ
حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ، حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، عَنْ عَطَاءِ بْنِ يَزِيدَ اللَّيْثِيِّ، عَنْ أَبِي أَيُّوبَ ـ رضى الله عنه ـ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ " لاَ يَحِلُّ لِمُسْلِمٍ أَنْ يَهْجُرَ أَخَاهُ فَوْقَ ثَلاَثٍ، يَلْتَقِيَانِ فَيَصُدُّ هَذَا، وَيَصُدُّ هَذَا، وَخَيْرُهُمَا الَّذِي يَبْدَأُ بِالسَّلاَمِ ". وَذَكَرَ سُفْيَانُ أَنَّهُ سَمِعَهُ مِنْهُ ثَلاَثَ مَرَّاتٍ.
Narrated Abu Aiyub:
The Prophet (ﷺ) said, "It is not lawful for a Muslim to desert (not to speak to) his brother Muslim for more than three days while meeting, one turns his face to one side and the other turns his face to the other side. Lo! The better of the two is the one who starts greeting the other."
পরিচ্ছেদঃ ৭৯/১০. পর্দার আয়াত
৬২৩৮. আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মদিনায় আসলেন, তখন তাঁর (বর্ণনাকারীর) বয়স ছিল দশ বছর। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবনের দশটি বছর আমি তাঁর খিদমত করি। আর পর্দার বিধান ব্যাপারে আমি সব চেয়ে অধিক অবগত ছিলাম, যখন তা অবতীর্ণ হয়। উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ) প্রায়ই আমাকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতেন। যাইনাব বিনত জাহশ (রাঃ) এর সঙ্গে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাসরের দিনে প্রথম পর্দার আয়াত অবতীর্ণ হয়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নতুন দুলহা হিসেবে সে দিন লোকেদের দা’ওয়াত করেন এবং এরপর অনেকেই দা’ওয়াত খেয়ে বেরিয়ে যান। কিন্তু কয়েকজন তাঁর কাছে রয়ে যান এবং তাদের অবস্থান দীর্ঘায়িত করেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উঠে দাঁড়িয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যান এবং আমিও তাঁর সঙ্গে যাই, যাতে তারা বের হয়ে যায়।
তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চলেন এবং আমিও তাঁর সঙ্গে চলি। এমনকি তিনি ’আয়িশাহ (রাঃ) এর ঘরের দরজায় এসে পৌঁছেন। এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভাবলেন যে, নিশ্চয়ই তারা বেরিয়ে গেছে। তখন তিনি ফিরে আসেন আর তাঁর সঙ্গে আমিও ফিরে আসি। তিনি যাইনাব (রাঃ) এর ঘরে প্রবেশ করে দেখেন যে, তারা তখনও বসেই আছে, চলে যায়নি। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফিরে গেলেন এবং আমিও তাঁর সঙ্গে ফিরে গেলাম। এমনকি তিনি ’আয়িশাহ (রাঃ) এর দরজার চৌকাঠ পর্যন্ত এসে পৌঁছেন। এরপর তিনি ভাবলেন যে, এখন তারা অবশ্যই বেরিয়ে গেছে। তাই তিনি ফিরে এসে দেখেন যে, তারা বেরিয়ে গেছে। এ সময় পর্দার আয়াত অবতীর্ণ হয় এবং তিনি তাঁর ও আমার মধ্যে পর্দা টেনে দেন। [৪৭৯১] (আধুনিক প্রকাশনী- ৫৭৯৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৯১)
بَاب آيَةِ الْحِجَابِ
حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ سُلَيْمَانَ، حَدَّثَنَا ابْنُ وَهْبٍ، أَخْبَرَنِي يُونُسُ، عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، قَالَ أَخْبَرَنِي أَنَسُ بْنُ مَالِكٍ، أَنَّهُ كَانَ ابْنَ عَشْرِ سِنِينَ مَقْدَمَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم الْمَدِينَةَ، فَخَدَمْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم عَشْرًا حَيَاتَهُ، وَكُنْتُ أَعْلَمَ النَّاسِ بِشَأْنِ الْحِجَابِ حِينَ أُنْزِلَ، وَقَدْ كَانَ أُبَىُّ بْنُ كَعْبٍ يَسْأَلُنِي عَنْهُ، وَكَانَ أَوَّلَ مَا نَزَلَ فِي مُبْتَنَى رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم بِزَيْنَبَ ابْنَةِ جَحْشٍ، أَصْبَحَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم بِهَا عَرُوسًا فَدَعَا الْقَوْمَ، فَأَصَابُوا مِنَ الطَّعَامِ ثُمَّ خَرَجُوا، وَبَقِيَ مِنْهُمْ رَهْطٌ عِنْدَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَأَطَالُوا الْمُكْثَ فَقَامَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَخَرَجَ وَخَرَجْتُ مَعَهُ كَىْ يَخْرُجُوا، فَمَشَى رَسُولُ اللَّهِ وَمَشَيْتُ مَعَهُ حَتَّى جَاءَ عَتَبَةَ حُجْرَةِ عَائِشَةَ، ثُمَّ ظَنَّ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَنَّهُمْ خَرَجُوا فَرَجَعَ وَرَجَعْتُ مَعَهُ، حَتَّى دَخَلَ عَلَى زَيْنَبَ فَإِذَا هُمْ جُلُوسٌ لَمْ يَتَفَرَّقُوا، فَرَجَعَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَرَجَعْتُ مَعَهُ، حَتَّى بَلَغَ عَتَبَةَ حُجْرَةِ عَائِشَةَ، فَظَنَّ أَنْ قَدْ خَرَجُوا، فَرَجَعَ وَرَجَعْتُ مَعَهُ، فَإِذَا هُمْ قَدْ خَرَجُوا، فَأُنْزِلَ آيَةُ الْحِجَابِ، فَضَرَبَ بَيْنِي وَبَيْنَهُ سِتْرًا.
Narrated Anas bin Malik:
that he was a boy of ten at the time when the Prophet (ﷺ) emigrated to Medina. He added: I served Allah's Apostle for ten years (the last part of his life time) and I know more than the people about the occasion whereupon the order of Al-Hijab was revealed (to the Prophet). Ubai b n Ka`b used to ask me about it. It was revealed (for the first time) during the marriage of Allah's Messenger (ﷺ) with Zainab bint Jahsh. In the morning, the Prophet (ﷺ) was a bride-groom of her and he Invited the people, who took their meals and went away, but a group of them remained with Allah's Messenger (ﷺ) and they prolonged their stay. Allah's Messenger (ﷺ) got up and went out, and I too, went out along with him till he came to the lintel of `Aisha's dwelling place. Allah's Messenger (ﷺ) thought that those people had left by then, so he returned, and I too, returned with him till he entered upon Zainab and found that they were still sitting there and had not yet gone. The Prophet (ﷺ) went out again, and so did I with him till he reached the lintel of `Aisha's dwelling place, and then he thought that those people must have left by then, so he returned, and so did I with him, and found those people had gone. At that time the Divine Verse of Al-Hijab was revealed, and the Prophet (ﷺ) set a screen between me and him (his family).
পরিচ্ছেদঃ ৭৯/১০. পর্দার আয়াত
৬২৩৯. আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাইনাব (রাঃ)-কে বিয়ে করলেন, তখন একদল (মেহমান) তাঁর ঘরে এসে খাওয়া-দাওয়া করলেন। এরপর তাঁরা ঘরে বসেই আলাপ-আলোচনা করতে লাগলেন। তিনি দাঁড়ালে কিছু লোক উঠে বেরিয়ে গেলেন। কিন্তু অবশিষ্ট কিছু লোক বসেই থাকলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘরে প্রবেশ করার জন্য ফিরে এসে দেখলেন যে, তারা বসেই আছেন। কিছুক্ষণ পরে তারা উঠে চলে গেলেন। তারপর আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে ওদের চলে যাবার খবর দিলে তিনি এসে প্রবেশ করলেন। তখন আমি ভেতরে যাওয়ার ইচ্ছে করলে তিনি আমার ও তাঁর মাঝখানে পর্দা ঝুলিয়ে দিলেন। এ সময় আল্লাহ তা’আলা এ আয়াত অবতীর্ণ করেনঃ ’’হে ঈমানদারগণ! তোমরা নবীর ঘরগুলোতে প্রবেশ করো না।’’ ...... শেষ পর্যন্ত। (সূরাহ আল-আহযাবঃ ৫৩) [৪৭৯১] (আধুনিক প্রকাশনী- ৫৭৯৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৯২)
بَاب آيَةِ الْحِجَابِ
حَدَّثَنَا أَبُو النُّعْمَانِ، حَدَّثَنَا مُعْتَمِرٌ، قَالَ أَبِي حَدَّثَنَا أَبُو مِجْلَزٍ، عَنْ أَنَسٍ ـ رضى الله عنه ـ قَالَ لَمَّا تَزَوَّجَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم زَيْنَبَ دَخَلَ الْقَوْمُ فَطَعِمُوا، ثُمَّ جَلَسُوا يَتَحَدَّثُونَ فَأَخَذَ كَأَنَّهُ يَتَهَيَّأُ لِلْقِيَامِ فَلَمْ يَقُومُوا، فَلَمَّا رَأَى ذَلِكَ قَامَ، فَلَمَّا قَامَ قَامَ مَنْ قَامَ مِنَ الْقَوْمِ وَقَعَدَ بَقِيَّةُ الْقَوْمِ، وَإِنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم جَاءَ لِيَدْخُلَ، فَإِذَا الْقَوْمُ جُلُوسٌ، ثُمَّ إِنَّهُمْ قَامُوا فَانْطَلَقُوا فَأَخْبَرْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم فَجَاءَ حَتَّى دَخَلَ، فَذَهَبْتُ أَدْخُلُ فَأَلْقَى الْحِجَابَ بَيْنِي وَبَيْنَهُ، وَأَنْزَلَ اللَّهُ تَعَالَى (يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لاَ تَدْخُلُوا بُيُوتَ النَّبِيِّ) الآيَةَ.
قَالَ أَبُو عَبْد اللَّهِ فِيهِ مِنْ الْفِقْهِ أَنَّهُ لَمْ يَسْتَأْذِنْهُمْ حِينَ قَامَ وَخَرَجَ وَفِيهِ أَنَّهُ تَهَيَّأَ لِلْقِيَامِ وَهُوَ يُرِيدُ أَنْ يَقُومُوا
Narrated Anas:
When the Prophet (ﷺ) married Zainab, the people came and were offered a meal, and then they sat down (after finishing their meals) and started chatting. The Prophet (ﷺ) showed as if he wanted to get up, but they did not get up. When he noticed that, he got up, and some of the people also got up and went away, while some others kept on sitting. When the Prophet (ﷺ) returned to enter, he found the people still sitting, but then they got up and left. So I told the Prophet (ﷺ) of their departure and he came and went in. I intended to go in but the Prophet (ﷺ) put a screen between me and him, for Allah revealed:-- 'O you who believe! Enter not the Prophet's houses..' (33.53)
পরিচ্ছেদঃ ৭৯/১০. পর্দার আয়াত
৬২৪০. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর স্ত্রী ’আয়িশাহ হতে বর্ণিত যে, ’উমার ইবনু খাত্তাব নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট প্রায়ই বলতেন যে, আপনি আপনার স্ত্রীদের পর্দা করান। কিন্তু তিনি তা করেননি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর স্ত্রীগণ প্রাকৃতিক প্রয়োজনে রাতে মাঠের দিকে বাইরে যেতেন। একবার সাওদাহ বিন্ত যাম’আহ বেরিয়ে গেলেন। তিনি ছিলেন দীর্ঘাঙ্গী মহিলা। ’উমার মজলিসে উপস্থিত ছিলেন। তাই তিনি পর্দার নির্দেশ অবতীর্ণ হবার আগ্রহে বললেনঃ ওহে সাওদাহ! আমি আপনাকে চিনে ফেলেছি। তখন আল্লাহ তা’আলা পর্দার আয়াত নাযিল করলেন। [১৪৬] আধুনিক প্রকাশনী- ৫৭৯৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৯৩)
بَاب آيَةِ الْحِجَابِ
حَدَّثَنَا إِسْحَاقُ، أَخْبَرَنَا يَعْقُوبُ، حَدَّثَنَا أَبِي، عَنْ صَالِحٍ، عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، قَالَ أَخْبَرَنِي عُرْوَةُ بْنُ الزُّبَيْرِ، أَنَّ عَائِشَةَ ـ رضى الله عنها ـ زَوْجَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَتْ كَانَ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ يَقُولُ لِرَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم احْجُبْ نِسَاءَكَ. قَالَتْ فَلَمْ يَفْعَلْ، وَكَانَ أَزْوَاجُ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم يَخْرُجْنَ لَيْلاً إِلَى لَيْلٍ قِبَلَ الْمَنَاصِعِ، خَرَجَتْ سَوْدَةُ بِنْتُ زَمْعَةَ، وَكَانَتِ امْرَأَةً طَوِيلَةً فَرَآهَا عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ وَهْوَ فِي الْمَجْلِسِ فَقَالَ عَرَفْتُكِ يَا سَوْدَةُ. حِرْصًا عَلَى أَنْ يُنْزَلَ الْحِجَابُ. قَالَتْ فَأَنْزَلَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ آيَةَ الْحِجَابِ.
Narrated `Aisha:
(the wife of the Prophet) `Umar bin Al-Khattab used to say to Allah's Messenger (ﷺ) "Let your wives be veiled" But he did not do so. The wives of the Prophet (ﷺ) used to go out to answer the call of nature at night only at Al-Manasi.' Once Sauda, the daughter of Zam`a went out and she was a tall woman. `Umar bin Al-Khattab saw her while he was in a gathering, and said, "I have recognized you, O Sauda!" He (`Umar) said so as he was anxious for some Divine orders regarding the veil (the veiling of women.) So Allah revealed the Verse of veiling. (Al-Hijab; a complete body cover excluding the eyes).
পরিচ্ছেদঃ ৭৯/১১. তাকানোর অনুমতি গ্রহণ করা।
৬২৪১. সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একবার এক লোক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কোন এক হুজরায় উঁকি দিয়ে তাকালো। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে একটা ’মিদরা’ ছিল, যা দিয়ে তিনি তাঁর মাথা চুলকাচ্ছিলেন। তখন তিনি বললেনঃ যদি আমি জানতাম যে, তুমি উঁকি দিবে, তবে এ দিয়ে তোমার চোখ ফুঁড়ে দিতাম। তাকানোর জন্য অনুমতি গ্রহণের বিধান দেয়া হয়েছে। [৫৯২৪] (আধুনিক প্রকাশনী- ৫৭৯৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৯৪)
بَاب الاسْتِئْذَانُ مِنْ أَجْلِ الْبَصَر
حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ، حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، قَالَ الزُّهْرِيُّ حَفِظْتُهُ كَمَا أَنَّكَ هَا هُنَا عَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ قَالَ اطَّلَعَ رَجُلٌ مِنْ جُحْرٍ فِي حُجَرِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم وَمَعَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم مِدْرًى يَحُكُّ بِهِ رَأْسَهُ فَقَالَ " لَوْ أَعْلَمُ أَنَّكَ تَنْظُرُ لَطَعَنْتُ بِهِ فِي عَيْنِكَ، إِنَّمَا جُعِلَ الاِسْتِئْذَانُ مِنْ أَجْلِ الْبَصَرِ ".
Narrated Sahl bin Sa`d:
A man peeped through a round hole into the dwelling place of the Prophet, while the Prophet (ﷺ) had a Midray (an iron comb) with which he was scratching his head. the Prophet (ﷺ) said, " Had known you were looking (through the hole), I would have pierced your eye with it (i.e., the comb)." Verily! The order of taking permission to enter has been enjoined because of that sight, (that one should not look unlawfully at the state of others).
পরিচ্ছেদঃ ৭৯/১১. তাকানোর অনুমতি গ্রহণ করা।
৬২৪২. আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, একবার জনৈক লোক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর এক কক্ষে উঁকি দিল। তখন তিনি একটা তীর ফলক কিংবা তীর ফলকসমূহ নিয়ে তার দিকে দৌড়ালেন। আনাস (রাঃ) বলেনঃ তা যেন আমি এখনও দেখছি। তিনি ঐ লোকটির চোখ ফুঁড়ে দেয়ার জন্য তাকে খুঁজছিলেন। [৬৮৮৯, ৬৯০০; মুসলিম ৩৮/৯, হাঃ ২১৫৭, আহমাদ ১৩৫০৭] (আধুনিক প্রকাশনী- ৫৮৮০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৯৫)
بَاب الاسْتِئْذَانُ مِنْ أَجْلِ الْبَصَر
حَدَّثَنَا مُسَدَّدٌ، حَدَّثَنَا حَمَّادُ بْنُ زَيْدٍ، عَنْ عُبَيْدِ اللَّهِ بْنِ أَبِي بَكْرٍ، عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، أَنَّ رَجُلاً، اطَّلَعَ مِنْ بَعْضِ حُجَرِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَقَامَ إِلَيْهِ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم بِمِشْقَصٍ ـ أَوْ بِمَشَاقِصَ ـ فَكَأَنِّي أَنْظُرُ إِلَيْهِ يَخْتِلُ الرَّجُلَ لِيَطْعُنَهُ.
Narrated Anas bin Malik:
A man peeped into a room of the Prophet. The Prophet (ﷺ) stood up, holding an arrow head. It is as if I am just looking at him, trying to stab the man.
পরিচ্ছেদঃ ৭৯/১২. যৌনাঙ্গ ব্যতীত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ব্যভিচার।
৬২৪৩. আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা বানী আদমের জন্য যিনার একটা অংশ নির্ধারিত রেখেছেন। সে তাতে অবশ্যই জড়িত হবে। চোখের যিনা হলো দেখা, জিহবার যিনা হলো কথা বলা, কুপ্রবৃত্তি কামনা ও খাহেশ সৃষ্টি করা এবং যৌনাঙ্গ তা সত্য অথবা মিথ্যা প্রমাণ করে।[1] [মুসলিম ৪৬/৫, হাঃ ২৬৫৭, আহমাদ ৮২২২] (আধুনিক প্রকাশনী- ৫৮০১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৯৬)
بَاب زِنَا الْجَوَارِحِ دُونَ الْفَرْجِ
حَدَّثَنَا الْحُمَيْدِيُّ، حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، عَنِ ابْنِ طَاوُسٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ ـ رضى الله عنهما ـ قَالَ لَمْ أَرَ شَيْئًا أَشْبَهَ بِاللَّمَمِ مِنْ قَوْلِ أَبِي هُرَيْرَةَ. حَدَّثَنِي مَحْمُودٌ أَخْبَرَنَا عَبْدُ الرَّزَّاقِ أَخْبَرَنَا مَعْمَرٌ عَنِ ابْنِ طَاوُسٍ عَنْ أَبِيهِ عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ مَا رَأَيْتُ شَيْئًا أَشْبَهَ بِاللَّمَمِ مِمَّا قَالَ أَبُو هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم " إِنَّ اللَّهَ كَتَبَ عَلَى ابْنِ آدَمَ حَظَّهُ مِنَ الزِّنَا، أَدْرَكَ ذَلِكَ لاَ مَحَالَةَ، فَزِنَا الْعَيْنِ النَّظَرُ، وَزِنَا اللِّسَانِ الْمَنْطِقُ، وَالنَّفْسُ تَمَنَّى وَتَشْتَهِي، وَالْفَرْجُ يُصَدِّقُ ذَلِكَ كُلَّهُ وَيُكَذِّبُهُ ".
হাফিয আল্লামা ইবনুল কাইয়্যিম (রহ.) লিখেছেনঃ‘‘দৃষ্টিই হয় যৌন লালসা উদ্বোধক, পয়গাম বাহক। কাজেই এ দৃষ্টির নিয়ন্ত্রণ ও সংরক্ষণ মূলত যৌন অঙ্গেরই সংরক্ষণ। যে ব্যক্তি দৃষ্টিকে অবাধ, উন্মুক্ত ও সর্বগামী করে সে নিজেকে নৈতিক পতন ও ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেয়। মানুষ নৈতিকতার ক্ষেত্রে যত বিপদ ও পদস্খলনেই নিপতিত হয়, দৃষ্টিই হচ্ছে তার সর্ব কিছুর মুল কারণ। কেননা দৃষ্টি প্রথমত আকর্ষণ জাগায়, আকর্ষণ মানুষকে চিন্তা-বিভ্রমে নিমজ্জিত করে, আর এ চিন্তাই মানুষের মধ্যে সৃষ্টি করে লালসার উত্তেজনা। এ যৌন উত্তেজনা ইচ্ছা শক্তিকে উদ্বুদ্ধ করে, আর ইচ্ছা ও প্রবৃত্তি শক্তিশালী হয়ে দৃঢ় সংকল্পে পরিণত হয়। এ দৃঢ় সংকল্প অধিকতর শক্তি অর্জন করে বাস্তবে ঘটনা সংঘটিত করে। বাস্তবে যখন কোন বাধাই থাকে না, তখন এ বাস্তব অবস্থার সম্মুখীন না হয়ে কারো কোন উপায় থাকে না।’’ আল-জাওয়াব আলকাফী, পৃষ্ঠা ২০৪)
অনিয়ন্ত্রিত দৃষ্টি চালনার কুফল সম্পর্কে সতর্ক করতে গিয়ে নাবী কারীম (ﷺ) ইরশাদ করেছেনঃ النظرة سهم مسموم من سهام ابليس
‘‘অনিয়ন্ত্রিত দৃষ্টি ইবলীসের বিষাক্ত বাণ বিশেষ।’’ মুসনাদ আশ-শিহাব ১মখন্ড ১৯৫-১৯৬ পৃষ্ঠা)
আল্লামাহ ইবনে কাসীর (রহ.) এ প্রসঙ্গে লিখেছেনঃ النظرة سهم سم إلى القلب
‘‘দৃষ্টি হচ্ছে এমন একটি তীর, যা মানুষের হৃদয়ে বিষের উদ্রেক করে।’’ (ইবনু কাসীর ৩য় খন্ড ৩৭৬ পৃষ্ঠা)
দৃষ্টি চালনা সম্পর্কে রসূল (ﷺ) এর নির্দেশ
রসূল কারীম (ﷺ) বলেছেনঃ غًضُّوا أَبْصَارَكُمْ وَاحْفَظُوْا فُرُوْجَكُمْ
‘‘তোমাদের দৃষ্টিকে নীচু কর, নিয়ন্ত্রিত কর এবং তোমাদের লজ্জাস্থানের সংরক্ষণ করো।’’
(মু‘জামুল কাবীর, ৮ম খন্ড ২৬২ পৃষ্ঠা, হাঃ ৮০১৮, মাজমূ‘আ ফাতাওয়া ১৫শ খন্ড ৩৯৫ পৃষ্ঠা)
এ দু’টো যেমন আলাদা আলাদা নির্দেশ, তেমনি প্রথমটির অনিবার্য পরিণতি হচ্ছে শেষেরটি অর্থাৎ দৃষ্টি নিয়ন্ত্রিত হলেই লজ্জাস্থানের সংরক্ষণ সম্ভব। অন্যথায় তাকে চরম নৈতিক অধঃপতনে নিমজ্জিত হতে হবে নিঃসন্দেহে।
নাবী কারীম (ﷺ) আলী -কে লক্ষ্য করে বলেছিলেনঃ يا علي! لا تتبع النظرة النظرة فإن لك الأولى وليست لك الآخرة
‘হে ‘আলী, একবার কোন পরস্ত্রীর প্রতি দৃষ্টি পড়লে পুনরায় তার প্রতি চোখ তুলে তাকাবে না। কেননা তোমার জন্যে প্রথম দৃষ্টিই ক্ষমার যোগ্য, দ্বিতীয়বার দেখা নয়।’ (আবূদাউদ ২১৪৯, হাসান, আলবানী)
এর কারণ সু্স্পষ্ট। আকস্মিকভাবে কারো প্রতি চোখ পড়ে যাওয়া আর ইচ্ছাক্রমে কারো প্রতি তাকানো সমান কথা নয়। প্রথমবার যে চোখ কারো উপর পড়ে গেছে, তার মূলে ব্যক্তির ইচ্ছার বিশেষ কোন যোগ থাকে না; কিন্তু পুনর্বার তাকে দেখা ইচ্ছাক্রমেই হওয়া সম্ভব। এ জন্যেই প্রথমবারের দেখায় কোন দোষ হবে না; কিন্তু দ্বিতীয়বার তার দিকে চোখ তুলে তাকানো ক্ষমার অযোগ্য। বিশেষত এ জন্য যে, দ্বিতীয়বারের দৃষ্টির পিছনে মনের কলুষতা ও লালসা পংকিল উত্তেজনা থাকাই স্বাভাবিক। আর এ ধরনের দৃষ্টি দিয়ে পরস্ত্রীকে দেখা স্পষ্ট হারাম।
তার মানে কখনো এ নয় যে, পরস্ত্রীকে একবার বুঝি দেখা জায়েয এবং এখানে তার অনুমতি দেয়া হচ্ছে। আসলে পরস্ত্রীকে দেখা আদতেই জায়েয নয়। এজন্যেই কুরআন ও হাদীসে দৃষ্টি নত করে চলার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
রসূলে কারীম (ﷺ)-কে জিজ্ঞেস করা হলঃ ‘পরস্ত্রীর প্রতি আকস্মিক দৃষ্টি পড়া সম্পর্কে আপনার কী হুকুম? তিনি বললেনঃ اصرف بصرك ‘‘তোমার চোখ অন্যদিকে ফিরিয়ে নাও।’’ আবূ দাউদ ২১৪৮, সহীহ আলবানী)
দৃষ্টি ফেরানো কয়েকভাবে হতে পারে। উদ্দেশ্য হচ্ছে পরস্ত্রীকে দেখার পংকিলতা থেকে নিজেকে পবিত্র রাখা। আকস্মিক নিতান্ত অনিচ্ছা সত্ত্বেও যদি কারো প্রতি দৃষ্টি পড়ে যায়, তবে সঙ্গে সঙ্গেই চোখ নীচু করা, অন্যদিকে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে ঈমানদার ব্যক্তির কাজ।
নাবী কারীম (ﷺ) একবার নিকটে উপস্থিত লোকদের জিজ্ঞেস করলেনঃ ‘‘মেয়েলোকদের জন্য ভাল কী?’’
প্রশ্ন শুনে সকলেই চুপ মেরে থাকলেন, কেউ কোন জবাব দিতে পারলেন না। ‘আলী এখানে উপস্থিত ছিলেন। তিনি বাড়ি এসে ফাতিমা -কে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলেন। তিনি সঙ্গে সঙ্গেই জবাব দিলেনঃ لا يراهن الرجال ভিন্ পুরুষরা তাদের দেখবে না। এটাই তাদের জন্যে ভাল ও কল্যাণকর)।
অপর বর্ণনায় ফাতিমা বললেনঃ لا يرين الرجال ولا يرون هن মেয়েরা পুরুষদের দেখবে না, আর পুরুষরা দেখবে না মেয়েদেরকে। দারকুতনী, বাযযার)
বস্ত্তত ইসলামী সমাজ জীবনের পবিত্রতা রক্ষার্থে পুরুষদের পক্ষে যেমন ভিন্ মেয়েলোক দেখা হারাম, তেমনি হারাম মেয়েদের পক্ষেও ভিন্ পুরুষদের দেখা। কুরআন মাজীদে এ সম্পর্কে যেমন পাশাপাশি দু’টো আয়াতে রয়েছে-পূর্বে উদ্ধৃত হয়েছে- তেমনি হাদীসেও এ দুটো নিষেধ বাণী একই সঙ্গে ও পাশাপাশি উদ্ধৃত রয়েছে। উম্মে সালামা বর্ণিত এক হাদীসের ভিত্তিতে আল্লামা শাওকানী লিখেছেনঃ يحرم على المرأة نظر الرجل كما يحرم على الرجل نظر المرأة
পুরুষদেরকে দেখা মেয়েদের জন্য হারাম, ঠিক যেমন হারাম পুরুষদের জন্য মেয়েদের দেখা। নাইলুল আওত্বর ৬ষ্ঠ খন্ড ১৭৭ পৃষ্ঠা)
এর কারণস্বরূপ তিনি লিখেছেনঃ
ولأن النساء أحد نوعي الآدميين فحرم عليهن النظر إلى النوع الآخر قياسا على الرجال ويحققه أن المعنى المحرم للنظر هو خوف الفتنة وهذا في المرأة أبلغ فإنها اشد شهوة وأقل عقلا فتسارع إليها الفتنة أكثر من الرجل
কেননা মেয়েলোক মানব জাতিরই অন্তর্ভুক্ত প্রজাতি। এজন্য পুরুষের মতই মেয়েদের জন্য তারই মত অপর প্রজাতি পুরুষদের দেখা হারাম করা হয়েছে। এ কথার যথার্থতা বোঝা যায় এ দিক দিয়েও যে, গায়র-মুহাররমের প্রতি তাকানো হারাম হওয়ার মূল কারণ হচ্ছে যৌন বিপর্যয়ের ভয়। আর মেয়েদের ব্যাপারে এ ভয় অনেক বেশী। কেননা যৌন উত্তেজনা যেমন মেয়েদের বেশী, সে পরিমাণে বুদ্ধিমত্তা তাদের কম। আর পুরুষদের তুলনায় মেয়েদের কারণেই অধিক যৌন বিপর্যয় ঘটে থাকে।’’ নাইলুল আওত্বর ৬ষ্ঠ খন্ড ১৭৭ পৃষ্ঠা)
মোটকথা, গায়র মুহাররম স্ত্রী-পুরুষের পারস্পরিক দৃষ্টি বিনিময় কিংবা একজনের অপরজনকে দেখা, লালসার দৃষ্টি নিক্ষেপ ইসলামে নিষিদ্ধ। এতে করে পারিবারিক জীবনে শুধু যে পংকিলতার বিষবাষ্প জমে তাই নয়, তাতে আসতে পারে এক প্রলয়ঙ্কর ভাঙ্গণ ও বিপর্যয়। মনে করা যেতে পারে, একজন পুরুষের দৃষ্টিতে কোন পরস্ত্রী অতিশয় সুন্দরী ও লাস্যময়ী হয়ে দেখা দিল। পুরুষ তার প্রতি দৃষ্টি পথে ঢেলে দিল প্রাণ মাতানো মন ভুলানো প্রেম ও ভালবাসা। স্ত্রীলোকটি তাতে আত্মহারা হয়ে গেল, সেও ঠিক দৃষ্টির মাধ্যমেই আত্মসমর্পণ করল এই পর-পুরুষের কাছে। এখন ভাবুন, এর পরিণাম কী? এর ফলে পুরুষ কি তার ঘরের স্ত্রীর প্রতি বিরাগভাজন হবে না? হবে নাকি এই স্ত্রী লোকটি নিজের স্বামীর প্রতি অনাসক্তা, আনুগত্যহীনা। আর তাই যদি হয়, তাহলে উভয়ের পারিবারিক জীবনের গ্রন্থি প্রথমে কলংকিত ও বিষ-জর্জর এবং পরে সম্পূর্ণরূপে ছিন্ন হতে বাধ্য। এর পরিণামই তো আমরা সমাজে দিনরাতই দেখতে পাচ্ছি।
Narrated Ibn `Abbas:
I have not seen a thing resembling 'lamam' (minor sins) than what Abu Huraira 'narrated from the Prophet who said "Allah has written for Adam's son his share of adultery which he commits inevitably. The adultery of the eyes is the sight (to gaze at a forbidden thing), the adultery of the tongue is the talk, and the inner self wishes and desires and the private parts testify all this or deny it."
পরিচ্ছেদঃ ৭৯/১৩. তিনবার সালাম দেয়া ও অনুমতি চাওয়া।
৬২৪৪. আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাম করতেন, তখন তিনবার সালাম দিতেন এবং যখন কথা বলতেন তখন তিনবার তার পুনরাবৃত্তি করতেন। [৯৪] (আধুনিক প্রকাশনী- ৫৮০২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৯৭)
بَاب التَّسْلِيمِ وَالاِسْتِئْذَانِ ثَلاَثًا.
حَدَّثَنَا إِسْحَاقُ، أَخْبَرَنَا عَبْدُ الصَّمَدِ، حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ الْمُثَنَّى، حَدَّثَنَا ثُمَامَةُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ، عَنْ أَنَسٍ ـ رضى الله عنه أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم كَانَ إِذَا سَلَّمَ سَلَّمَ ثَلاَثًا، وَإِذَا تَكَلَّمَ بِكَلِمَةٍ أَعَادَهَا ثَلاَثًا.
Narrated Anas:
Whenever Allah's Messenger (ﷺ) greeted somebody, he used to greet him three times, and if he spoke a sentence, he used to repeat it thrice.
পরিচ্ছেদঃ ৭৯/১৩. তিনবার সালাম দেয়া ও অনুমতি চাওয়া।
৬২৪৫. আবূ সা’ঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার আমি আনসারদের এক মজলিসে উপস্থিত ছিলাম। এমন সময় হঠাৎ আবূ মূসা ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে এসে বললেনঃ আমি তিনবার ’উমার (রাঃ) এর নিকট অনুমতি চাইলাম, কিন্তু আমাকে অনুমতি দেয়া হলো না। তাই আমি ফিরে এলাম। ’উমার (রাঃ) তাঁকে জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমাকে ভেতরে প্রবেশ করতে কিসে বাধা দিল? আমি বললামঃ আমি প্রবেশের জন্য তিনবার অনুমতি চাইলাম, কিন্তু আমাকে অনুমতি দেয়া হলো না। তাই আমি ফিরে এলাম। (কারণ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যদি তোমাদের কেউ তিনবার প্রবেশের অনুমতি চায়। কিন্তু তাতে অনুমতি দেয়া না হয় তবে সে যেন ফিরে যায়।
তখন ’উমার (রাঃ) বললেনঃ আল্লাহর কসম! তোমাকে এ কথার উপর অবশ্যই প্রমাণ প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। তিনি সবাইকে জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমাদের মাঝে কেউ আছে কি যিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এ হাদীস শুনেছে? তখন উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ) বললেনঃ আল্লাহর কসম! আপনার কাছে প্রমাণ দিতে দলের সর্বকনিষ্ঠ ব্যক্তিই উঠে দাঁড়াবে। আর আমি দলের সর্বকনিষ্ঠ ছিলাম। সুতরাং আমি তাঁর সঙ্গে উঠে দাঁড়িয়ে বললামঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অবশ্যই এ কথা বলেছেন। [২০৬২; মুসলিম ৩৮/৭, হাঃ ২১৫৩, আহমাদ ১৯৬৩০] (আধুনিক প্রকাশনী- ৫৮০৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৯৮)
ইবনু মুবারাক বলেন, আবূ সা’ঈদ (রাঃ) হতে ভিন্ন একটি সূত্রেও অনূরূপ একটি হাদীস বর্ণিত হয়েছে।
بَاب التَّسْلِيمِ وَالاِسْتِئْذَانِ ثَلاَثًا.
حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ، حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، حَدَّثَنَا يَزِيدُ بْنُ خُصَيْفَةَ، عَنْ بُسْرِ بْنِ سَعِيدٍ، عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ، قَالَ كُنْتُ فِي مَجْلِسٍ مِنْ مَجَالِسِ الأَنْصَارِ إِذْ جَاءَ أَبُو مُوسَى كَأَنَّهُ مَذْعُورٌ فَقَالَ اسْتَأْذَنْتُ عَلَى عُمَرَ ثَلاَثًا، فَلَمْ يُؤْذَنْ لِي فَرَجَعْتُ فَقَالَ مَا مَنَعَكَ قُلْتُ اسْتَأْذَنْتُ ثَلاَثًا، فَلَمْ يُؤْذَنْ لِي فَرَجَعْتُ، وَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " إِذَا اسْتَأْذَنَ أَحَدُكُمْ ثَلاَثًا فَلَمْ يُؤْذَنْ لَهُ، فَلْيَرْجِعْ ". فَقَالَ وَاللَّهِ لَتُقِيمَنَّ عَلَيْهِ بِبَيِّنَةٍ. أَمِنْكُمْ أَحَدٌ سَمِعَهُ مِنَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم فَقَالَ أُبَىُّ بْنُ كَعْبٍ وَاللَّهِ لاَ يَقُومُ مَعَكَ إِلاَّ أَصْغَرُ الْقَوْمِ، فَكُنْتُ أَصْغَرَ الْقَوْمِ، فَقُمْتُ مَعَهُ فَأَخْبَرْتُ عُمَرَ أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ذَلِكَ. وَقَالَ ابْنُ الْمُبَارَكِ أَخْبَرَنِي ابْنُ عُيَيْنَةَ حَدَّثَنِي يَزِيدُ عَنْ بُسْرٍ سَمِعْتُ أَبَا سَعِيدٍ بِهَذَا.
Narrated Abu Sa`id Al-Khudri:
While I was present in one of the gatherings of the Ansar, Abu Musa came as if he was scared, and said, "I asked permission to enter upon `Umar three times, but I was not given the permission, so I returned." (When `Umar came to know about it) he said to Abu Musa, "Why did you not enter?'. Abu Musa replied, "I asked permission three times, and I was not given it, so I returned, for Allah's Messenger (ﷺ) said, "If anyone of you asks the permission to enter thrice, and the permission is not given, then he should return.' " `Umar said, "By Allah! We will ask Abu Musa to bring witnesses for it." (Abu Musa went to a gathering of the Ansar and said). "Did anyone of you hear this from the Prophet (ﷺ) ?" Ubai bin Ka`b said, "By Allah, none will go with you but the youngest of the people (as a witness)." (Abu Sa`id) was the youngest of them, so I went with Abu Musa and informed `Umar that the Prophet (ﷺ) had said so.
পরিচ্ছেদঃ ৭৯/১৪. যখন কোন ব্যক্তিকে ডাকা হয় আর সে আসে, সেও কি প্রবেশের অনুমতি নিবে?
قَالَ سَعِيدٌ عَنْ قَتَادَةَ عَنْ أَبِي رَافِعٍ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ هُوَ إِذْنُهُ.
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ এ ডাকাই তার জন্য অনুমতি।
৬২৪৬. আবূ হুরাইরাহ হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একদিন আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে তাঁর ঘরে প্রবেশ করলাম। তিনি ঘরে গিয়ে একটি পেয়ালায় দুধ পেলেন। তিনি আমাকে বললেনঃ হে আবূ হির! তুমি আহলে সুফফার নিকট গিয়ে তাদের আমার নিকট ডেকে আন। তখন আমি তাদের কাছে গিয়ে দা’ওয়াত দিয়ে এলাম। তারপর তারা এসে প্রবেশের অনুমতি চাইলে তাদের অনুমতি দেয়া হলো। তারপর তারা প্রবেশ করল। [৫৩৭৫] (আধুনিক প্রকাশনী- ৫৮০৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৯৯)
بَاب إِذَا دُعِيَ الرَّجُلُ فَجَاءَ هَلْ يَسْتَأْذِنُ
حَدَّثَنَا أَبُو نُعَيْمٍ، حَدَّثَنَا عُمَرُ بْنُ ذَرٍّ،. وَحَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ مُقَاتِلٍ، أَخْبَرَنَا عَبْدُ اللَّهِ، أَخْبَرَنَا عُمَرُ بْنُ ذَرٍّ، أَخْبَرَنَا مُجَاهِدٌ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ـ رضى الله عنه ـ قَالَ دَخَلْتُ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَوَجَدَ لَبَنًا فِي قَدَحٍ فَقَالَ " أَبَا هِرٍّ الْحَقْ أَهْلَ الصُّفَّةِ فَادْعُهُمْ إِلَىَّ ". قَالَ فَأَتَيْتُهُمْ فَدَعَوْتُهُمْ، فَأَقْبَلُوا فَاسْتَأْذَنُوا فَأُذِنَ لَهُمْ، فَدَخَلُوا.
Narrated Abu Huraira:
I entered (the house) along with Allah's Messenger (ﷺ) . There he found milk in a basin. He said, "O Abu Hirr! Go and call the people of Suffa to me." I went to them and invited them. They came and asked permission to enter, and when it was given, they entered.