অতঃপর আমরা আমাদের অভিভাবক আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি তিনি যেন তাঁর অনুগ্রহ ও দয়ায় কিয়ামত দিবসে সৎকর্মশীলদের শাফা‘আত নসীব করেন। চাই সেটা এমন ব্যক্তির জন্য, যে জাহান্নামের উপযোগী হয়ে গেছে (আমরা তা থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাই) অথবা জান্নাতে আমাদের মর্যাদা উচ্চ করার জন্য বা অনুরূপ দান করার জন্য। কেননা কোনো সুপারিশকারীর পক্ষেই আল্লাহর অনুমতি ব্যতীত সুপারিশ করা সম্ভব নয়। যদিও বা তিনি কোনো নৈকট্যশীল ফেরেশতা হন বা প্রেরিত নবী হন, তাহলে ঐসব ব্যক্তির চেয়েও নিম্নস্তরের অন্য মানুষের পক্ষে কীভাবে তা সম্ভব হতে পারে? আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَكَم مِّن مَّلَكٖ فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ لَا تُغۡنِي شَفَٰعَتُهُمۡ شَيًۡٔا إِلَّا مِنۢ بَعۡدِ أَن يَأۡذَنَ ٱللَّهُ لِمَن يَشَآءُ وَيَرۡضَىٰٓ ٢٦﴾ [النجم: ٢٦]
“আর আসমানসমূহে অনেক ফিরিশতা রয়েছে, তাদের সুপারিশ কোনোই কাজে আসবে না। তবে আল্লাহ যাকে ইচ্ছা করেন এবং যার প্রতি তিনি সন্তুষ্ট, তার ব্যাপারে অনুমতি দেওয়ার পর।” [সূরা আন-নাজম, আয়াত: ২৬]
আল্লাহ আরো বলেন,
﴿مَن ذَا ٱلَّذِي يَشۡفَعُ عِندَهُۥٓ إِلَّا بِإِذۡنِهِۦ ٢٥٥﴾ [البقرة: ٢٥٥]
“কে সে যে তার নিকট সুপারিশ করবে তার অনুমতি ছাড়া?” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ২৫৫]
আল্লাহ আরো বলেন,
﴿وَلَا يَشۡفَعُونَ إِلَّا لِمَنِ ٱرۡتَضَىٰ ٢٨﴾ [الانبياء: ٢٨]
“আর তারা শুধু তাদের জন্য সুপারিশ করে যাদের প্রতি তিনি সন্তুষ্ট।” [সূরা আল-আম্বিয়া, আয়াত: ২৮]
উপর্যুক্ত বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে বলা যায় যে, শাফা‘আত দু ধরনের:
প্রথমত ইতিবাচক শাফা‘আত: এটা বিশেষভাবে একনিষ্ঠদের জন্য, আর এটা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো নিকট চাওয়া যাবে না। কেননা একটু আগে এই সম্পর্কিত বর্ণনা শেষ হয়েছে যে, আল্লাহর অনুমতি ও তার সন্তুষ্টি ব্যতীত কেউ কারো জন্য কোনো সুপারিশ করবে না। আর সুপারিশকৃত ব্যক্তির উপরেও তার সন্তুষ্টি থাকতে হবে। অতঃপর যখন সুপারিশকৃত তাওহীদপন্থী হবে, তখন আল্লাহর অনুমতিতে শাফা‘আতকারীগণের শাফা‘আত উপকারে আসবে। চাই তা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অথবা অন্যান্য নবীগণ অথবা সিদ্দীকগণ বা ওলী ও সৎকর্মশীলগণের সুপারিশ হোক।
দ্বিতীয়ত নেতিবাচক শাফা‘আত: এটা এমন শাফা‘আত যা আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নিকট চাওয়া হয়। যেমন, মৃত ব্যক্তির নিকট অথবা অনুপস্থিতের নিকট অথবা জ্বীনের নিকট যা চাওয়া হয়। কেননা সেটা এমন ব্যক্তির নিকট চাওয়া হয় যার অধিকারী তারা নয়। যেমন মৃতব্যক্তি, যার সম্পর্কে কুরআনে এসেছে, যা ইতোপূর্বে বর্ণিত হয়েছে যে, সে নিশ্চয় তারা শুনতে পায় না আর অনুপস্থিত ব্যক্তি গায়েবও জানে না। অনুরূপভাবে ওলী ও সৎকর্মশীল মৃতগণ জানে না যে, কে তাদের কবরের নিকট আসল এবং মুক্তি প্রার্থনা করল অথবা সাহায্য চাইল অথবা তাদের দ্বারা সুপারিশ কামনা করল। এর ওপর ভিত্তি করে বলা যায় যে, কোনো কাফির, মুশরিক ও যে আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে ডাকে অথবা অন্যের নামে যবেহ করে অথবা মান্নত করে তাদের জন্য কোনো সুপারিশ করা হবে না।
আর শাফা‘আত কিয়ামত দিবসে নবীগণ, ওলীগণ ও সৎকর্মশীল ব্যক্তিগণ যাদেরকে আল্লাহ তা‘আলা অনুমতি দিবেন তাদের কাছেই কেবল চাওয়া যাবে, এই ব্যাপারে দলীল হচ্ছে মহান আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
يَوۡمَئِذٖ لَّا تَنفَعُ ٱلشَّفَٰعَةُ إِلَّا مَنۡ أَذِنَ لَهُ ٱلرَّحۡمَٰنُ وَرَضِيَ لَهُۥ قَوۡلٗا
“সে দিন পরম করুণাময় যাকে অনুমতি দিবেন আর যার কথায় তিনি সন্তুষ্ট হবেন তার সুপারিশ ছাড়া কারো সুপারিশ কোনো কাজে আসবে না।” [সূরা ত্বহা, আয়াত: ১০৯]
অন্যদিকে জীবিত ওলীগণ ও নেককার ব্যক্তিবর্গের নিকট দো‘আ চাওয়া যাবে যেমনিভাবে সাহাবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুম বিভিন্ন সাহায্যের প্রয়োজনে ও শত্রুর ওপর বিজয় লাভ এবং অনুরূপ প্রয়োজনে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট সাহায্য কামনা করতেন।
হে বিচক্ষণ পাঠক! মহান আল্লাহ বলেন,
﴿وَٱلَّذِينَ يَدۡعُونَ مِن دُونِ ٱللَّهِ لَا يَخۡلُقُونَ شَيۡٔٗا وَهُمۡ يُخۡلَقُونَ ٢٠ أَمۡوَٰتٌ غَيۡرُ أَحۡيَآءٖۖ وَمَا يَشۡعُرُونَ أَيَّانَ يُبۡعَثُونَ ٢١﴾ [النحل: ٢٠، ٢١]
“আর তারা আল্লাহ ছাড়া যাদেরকে ডাকে, তারা কিছু সৃষ্টি করতে পারে না; বরং তাদেরকেই সৃষ্টি করা হয়। (তারা) মৃত, জীবিত নয় এবং তারা জানে না কখন তাদেরকে পুনরুজ্জীবিত করা হবে।” [সূরা আন-নাহল, আযাত: ২০-২১]
অর্থাৎ ঐ সব ওলী ও সৎকর্মশীল ব্যক্তিবর্গ মৃত, তারা জীবিত নয়। সুতরাং যারা এদের কাছে শাফা‘আত চায় তারা এর দ্বারা মৃত ব্যক্তির কাছে এমন কিছু চাইলো যা দেওয়ার অধিকারী তারা নয়। অন্যদিকে যখন কোনো সৎকর্মশীল ব্যক্তি জীবিত অবস্থায় থাকেন তাহলে তার কাছে চাওয়া জায়েয, যে বিষয়ে সে ক্ষমতা রাখে। যেমন তুমি তাকে বলবে হে শায়খ! তুমি আল্লাহর নিকট আমার জন্য অমুক অমুক প্রার্থনা কর অথবা হে অমুক আমাকে আমার ঋণ পরিশোধে সহযোগিতা কর অথবা সওয়ারীর উপর আমার আসবাব পত্র আরোহণে এবং অনুরূপ অন্যান্য বিষয়ে সাহায্য কর, যাতে সে ক্ষমতা রাখে।