এ ব্যাপারে আমি চিন্তা-গবেষণা করলাম। পরিশেষে দেখলাম, তাওফীক লাভের মূল হলো তুমি একথা ভালোকরে জান যে, সমস্ত নি‘আমত একমাত্র আল্লাহর পক্ষ থেকে, চাই তা আনুগত্য করার নি‘আমত বা স্বাদ ভোগের নি‘আমত। সুতরাং তাঁর কাছেই বিনীতভাবে নি‘আমত চাও, তিনি তোমাকে তাঁর যিকির করার অনুপ্রেরণা দিবেন এবং তাঁর শুকরিয়া আদায়ের তাওফীক দান করবেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿وَمَا بِكُم مِّن نِّعۡمَةٖ فَمِنَ ٱللَّهِۖ ثُمَّ إِذَا مَسَّكُمُ ٱلضُّرُّ فَإِلَيۡهِ تَجَۡٔرُونَ٥٣﴾ [النحل: ٥٣]
“আর তোমাদের কাছ যে সব নি‘আমত আছে, তা আল্লাহর পক্ষ থেকে। অতঃপর দুঃখ-দুর্দশা যখন তোমাদের স্পর্শ করে তখন তোমরা শুধু তার কাছেই ফরিয়াদ কর।” [সূরা আন-নাহাল, আয়াত: ৫৩]
আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿فَٱذۡكُرُوٓاْ ءَالَآءَ ٱللَّهِ لَعَلَّكُمۡ تُفۡلِحُونَ٦٩﴾ [الاعراف: ٦٨]
“সুতরাং তোমরা স্মরণ কর আল্লাহর নিআমতসমূহকে, যাতে তোমরা সফলকাম হও।” [সূরা আল-আ'রাফ, আয়াত: ৬৮]
আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿وَٱشۡكُرُواْ نِعۡمَتَ ٱللَّهِ إِن كُنتُمۡ إِيَّاهُ تَعۡبُدُونَ١١٤﴾ [النحل: ١١٤]
“এবং আল্লাহর নি‘আমতের শুকরিয়া আদায় কর, যদি তোমরা তারই ইবাদত করে থাক।” [সূরা আন-নাহাল, আয়াত: ১১৪]
এসব নি‘আমত যেহেতু একমাত্র তাঁর থেকেই এবং শুধু তাঁর দয়ায়ই, সুতরাং এসব নি‘আমতের যিরিক ও শুকরিয়া তাঁর তাওফীক ব্যতীত অর্জিত হয় না।
আল্লাহর থেকে নিরাশ হওয়া ও বান্দাহকে তাঁর থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়া গুনাহ। তিনি যদি বান্দাহর থেকে তার নিরাশা দূর না করেন তাহলে বান্দা নিজে তা দূর করার ক্ষমতা নেই। তাই বান্দা তার নিরাশা ও এর কারণসমূহ দূর করতে আল্লাহর কাছে বিনীত হতে বাধ্য, যাতে তার থেকে হতাশা ও নিরাশা সংঘটিত না হয়। কিন্তু তাকদীরের ফয়সালায় ও মানবীয় চাহিদায় যদি নিরাশা সংঘটিত হয়ে যায় তাহলেও সেগুলো দূর করতে ও এর শাস্তি থেকে রেহাই পেতে সে আল্লাহর কাছে বিনীত হতে ও তাঁর কাছে দো‘আ করতে বাধ্য। বান্দা এ তিন উসূলের ব্যতীত তার প্রয়োজন মিটাতে পারে না, এ তিনটি উসূল ব্যতীত তার সফলতাও নেই। উসূল তিনটি হলো, আল্লাহর শুকর, তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা এবং খাঁটি তাওবা।
জ্ঞাতব্য যে, নিরাশার কারণ হলো ব্যক্তিকে যে মূলের ওপর সৃষ্টি করা হয়েছে সেভাবে অবশিষ্ট থাকা, একে অবজ্ঞা করা ও সে মূল অবস্থা শূণ্য করা। অতএব, নিরাশার কারণ মূল সৃষ্টিগত অবস্থা থেকেই। আর তাওফীকের কারণ আল্লাহ তাকে নি‘আমত গ্রহণের উপযোগী করেছেন। সুতরাং তাওফীকের কারণ তাঁর থেকেই এবং তাঁর দয়ায়। তিনিই এদুটির স্রষ্টা। যেমনিভাবে তিনিই জমিন সৃষ্টি করেছেন। কিছু জমিন শস্য ও উদ্ভিত জন্মানোর উপযোগী করেছেন, আবার কিছু জমিন শস্য ও উদ্ভিত জন্মানোর অনুপযোগী করেছেন। তিনিই বৃক্ষ-রাজি সৃষ্টি করেছেন। সেসব বৃক্ষের কিছুতে ফল হওয়ার উপযোগী করেছেন আবার কিছু ফল না হওয়ার উপযোগী করেছেন। তিনি খেজুর গাছকে ফলবান হওয়ার উপযোগী করেছেন, এ থেকে তিনি বিভিন্ন ধরণের রস (শরবত) উৎপাদন করেন। অন্যদিকে তিনি মিষ্টি ডুমুরকে রস উৎপাদনের অক্ষম করেছেন। তিনি পবিত্র আত্মাসমূহ সৃষ্টি করেছেন। সেগুলো তাঁর যিকির, শুকর, মহত্ব, শ্রেষ্ঠত্ব, তাওহীদ ও নসীহত গ্রহণের উপযোগী। অন্যদিকে তিনি খবিশ আত্মা সৃষ্টি করেছেন সেগুলো উপরোক্ত নি‘আমতসমূহ গ্রহণ করতে অনুপযোগী; বরং পবিত্র আত্মার বিপরীত। তিনি প্রজ্ঞাময় ও সর্বজ্ঞ।