ফায়েদা: সূরা আত-তাকাসুরে গভীর দৃষ্টিপাত ও চিন্তা-গবেষণা

আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

﴿أَلۡهَىٰكُمُ ٱلتَّكَاثُرُ١ حَتَّىٰ زُرۡتُمُ ٱلۡمَقَابِرَ٢ كَلَّا سَوۡفَ تَعۡلَمُونَ٣ ثُمَّ كَلَّا سَوۡفَ تَعۡلَمُونَ٤ كَلَّا لَوۡ تَعۡلَمُونَ عِلۡمَ ٱلۡيَقِينِ٥ لَتَرَوُنَّ ٱلۡجَحِيمَ٦ ثُمَّ لَتَرَوُنَّهَا عَيۡنَ ٱلۡيَقِينِ٧ ثُمَّ لَتُسۡ‍َٔلُنَّ يَوۡمَئِذٍ عَنِ ٱلنَّعِيمِ٨﴾ [التكاثر: ١، ٩]

“প্রাচুর্যের প্রতিযোগিতা তোমাদেরকে ভুলিয়ে রেখেছে। যতক্ষণ না তোমরা কবরের সাক্ষাৎ করবে। কখনো নয়, শীঘ্রই তোমরা জানবে, তারপর কখনো নয়, তোমরা শীঘ্রই জানতে পারবে। কখনো নয়, তোমরা যদি নিশ্চিত জ্ঞানে জানতে! তোমরা অবশ্যই জাহান্নাম দেখবে; তারপর তোমরা তা নিশ্চিত চাক্ষুষ দেখবে। তারপর সেদিন অবশ্যই তোমরা নি‘আমত সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে।” [সূরা আত-তাকাসুর, আয়াত: ১-৯]

এ সূরা আল্লাহর অঙ্গিকার, ভীতিপ্রদর্শন ও হুমকিপ্রদানের জন্য নির্দিষ্ট করা হয়েছে। জ্ঞানীর জন্য উপদেশ গ্রহণের জন্য এগুলোই যথেষ্ট। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, (أَلۡهَىٰكُمُ) তোমাদেরকে এমনভাবে ব্যস্ত রেখেছে যে সে ব্যাপারে তোমাদের কোনো ওযর গ্রহণ করা হবে না; কেননা (ألهى عن الشيء) এর অর্থ কোনো কিছু থেকে অমনোযোগী থাকা। আর এটি ইচ্ছাকৃত করলে অন্যায় বলে বিবেচিত হবে, কেননা মূল বস্তু থেকে অমনোযোগী না থাকতে আল্লাহর পক্ষ থেকে আদিষ্ট। আর যদি অনিচ্ছাকৃত হয়ে যায় তবে তার ওযর গ্রহণযোগ্য হবে, যেমন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (الخميصة) তথা কারুকার্য খচিত চাদরের ব্যাপারে বলেছিলেন,

«فَإِنَّهَا أَلْهَتْنِي آنِفًا عَنْ صَلاَتِي».

“এটা তো আমাকে সালাত থেকে অমনোযোগী করে দিচ্ছিল।”[1] এটি একধরণের বিস্মৃতি।

অনুরূপ অন্য হাদীসে এসেছে, মুনযির ইবন আবূ উসাইদ জন্মগ্রহণ করলে তাকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে নিয়ে আসলে তাকে তাঁর উরুর ওপর রাখা হয়। তখন নবী রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্য কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।

«فَلَهَا النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِشَيْءٍ بَيْنَ يَدَيْهِ».

“এ সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাচ্চা ব্যতীত তার সামনের কোনো জরুরী কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন।”[2]

অর্থাৎ অমনোযোগী হওয়া। যেমন বলা হয় (لَـهَا بالشيءِ، أي: اشتغلَ به) যখন কোনো নিয়ে ভীষণভাবে ব্যস্ত হয়। আবার বলা হয় (لَـهَا عنه: إذا انصرفَ عنه) যখন কোনো বিষয় মারাত্মকভাবে উপেক্ষা করা হয়।

অন্তরের বিনোদনের জন্য (اللهوُ) ‘লাহও’ ব্যবহার হয় আর অঙ্গ-প্রতঙ্গের বিনোদনের জন্য (اللعب) ‘লা‘ব’ ব্যবহার হয়। এ কারণেই এ দু’টি শব্দ একত্রে ব্যবহার হয়। আর তাই আল্লাহর বাণী, (أَلۡهَىٰكُمُ) এটি (شغلكم) (তোমাদেরকে ব্যস্ত রেখেছে) এ কথার চেয়ে বেশি নিন্দাসূচক; কেননা কাজ সম্পন্নকারী অনেক সময় অঙ্গের দ্বারা কাজ করে; কিন্তু তার অন্তর অমনোযোগী নয়। অতএব, (اللهوُ) হলো অমনোযোগী হওয়া, উপেক্ষা করা। আর (التكاثر) হলো বেশি অধিক। অর্থাৎ পরস্পর প্রাচুর্য লাভের জন্য বেশি বেশি প্রতিযোগিতায় লিপ্ত থাকা।

ধন-সম্পদ, সুনাম-সুখ্যাতি, যশ-ক্ষমতা, নারী, কথা, জ্ঞান ইত্যাদি সব কিছুতেই আধিক্য হতে পারে। বিশেষ করে যখন এগুলোর প্রয়োজন না থাকা সত্ত্বেও বেশি পরিমাণে জমা করা হয়। অধিক বই-পুস্তক, অধিক গ্রন্থ রচনা, অধিক মাস’আলা ও এর শাখা-প্রশাখা বের করা ইত্যাদি সব কিছুতেই আধিক্য হতে পারে।

অন্যের তুলনায় অধিক ধন-সম্পদের প্রত্যাশা করাও (التكاثر)। এ ধরণের করা নিন্দনীয়; তবে কেউ আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের নিয়তে অধিক সম্পদের অধিকারী হওয়াতে দোষ নেই। অতএব, (التكاثر) হলো অধিক ধন-সম্পদ ও কল্যাণের অধিকারী হতে প্রতিযোগিতা করা। সহীহ মুসলিমে আব্দুল্লাহ ইবন শিখখীর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে মারফু‘ সূত্রে বর্ণনা করেন,

﴿أَلۡهَىٰكُمُ ٱلتَّكَاثُرُ١﴾ [التكاثر: ١] «يَقُولُ ابْنُ آدَمَ: مَالِي مَالِي، وَهَلْ لَكَ مِنْ مَالِكَ إِلَّا مَا تَصَدَّقْتَ فَأَمْضَيْتَ، أَوْ أَكَلْتَ فَأَفْنَيْتَ، أَوْ لَبِسْتَ فَأَبْلَيْت».

“প্রাচুর্যের (সম্পদের) আধিক্য মোহ তোমাদেরকে ভুলিয়ে রেখেছে।” [সূরা আত-তাকাসুর, আয়াত: ১] আদম সন্তান বলে, আমার মাল আমার মাল। অথচ তুমি যা সাদকা করে আল্লাহর কাছে জমা করে রাখলে বা খেয়ে শেষ করে দিলে বা পরিধান করে পুরান করে দিলে তাছাড়া তোমার মাল বলতে কিছু আছে কী?”[3]

>
[1] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৭৩; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৫৬।

[2] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬১৯১।

[3] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৯৫৮।