বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
সকল প্রশংসা আল্লাহ তা‘আলার জন্য, যিনি সৃষ্টিকুলের রব, আর সালাত ও সালাম বর্ষিত হোক আমাদের নবী ও রাসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর; যিনি প্রেরিত হয়েছিলেন সকল মানুষের কাছে রহমতস্বরূপ, সকল নবী-রাসূলদের ধারার পরিসমাপ্তি। অনুরূপ তাঁর সকল পরিবার-পরিজন, সঙ্গী-সাথীগণ এবং কিয়ামত পর্যন্ত যারা যথার্থভাবে তাদের অনুসরণ করবে তাদেরও ওপর।
অতঃপর, মুসলিমদের মধ্যে যাদেরকে আল্লাহ তা‘আলা অন্তর্দৃষ্টি দ্বারা আলোকিত করেছেন তাদের কাছে এটা অস্পষ্ট নয় যে, ইয়াহূদী, খ্রিস্টান ও অন্যান্য সকল কাফির অপশক্তি মুসলিমদের বিরুদ্ধে শত্রুতার উদ্দেশ্যে জোটবদ্ধ হয়েছে; তাদেরকে ধর্মচ্যুত করতে এবং নিজ ধর্মের প্রতি সন্দিহান করার উদ্দেশ্যে; অথচ আল্লাহ তা‘আলা এ সত্য দীন ইসলামকে প্রচারের জন্যই সকল নবী রাসূলদের ধারা পরিসমাপ্তকারী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সকল মানুষের নিকট প্রেরণ করেছেন।
জনসাধারণকে ইসলাম থেকে বাধা প্রদান, মুসলিমদেরকে পথভ্রষ্ট ও তাদেরকে সম্পূর্ণভাবে করায়ত্ব করা এবং তাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অনেক অপকৌশল কাফিরদের নিকট রয়েছে। তাদের ধর্মপ্রচার সংস্থাগুলো উক্ত উদ্দেশ্য বাস্তবায়নকল্পে ব্যাপক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে এবং বর্তমানে তাদের অপতৎপরতা মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। তাদের অপকৌশল ও পথভ্রষ্টকারী প্রচার মাধ্যমের অন্যতম হলো, “আহলে কিতাব মিশন দক্ষিণ আফ্রিকা” নামক প্রচার পত্র। তাওরাত, যাবুর ও ইঞ্জিল সংকলিত বিভিন্ন প্রকার শিক্ষা প্রোগ্রাম সম্বলিত এই প্রচার পত্রটি ইসলামের মূলোৎপাটনের লক্ষ্যে আরব ভূখণ্ডে ব্যক্তিগত বা সংস্থা ও সংগঠনের নামে বিনা মূল্যে ডাকযোগে বা বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে বিতরণ করা হয়।
অতএব, বিধর্মীদের এসব সুসংগঠিত কর্মকাণ্ডের নিন্দা ও এগুলোর ব্যাপারে সচেতনতা সৃষ্টি এবং তাদের সমস্ত অপতৎপরতা থেকে সতর্ক করার বিষয়টি মুসলিমদের জন্য আগাম সুসংবাদ হিসেবে বিবেচিত। তাদের এ সব ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে সৌদী আরবের ফাতওয়া বিভাগের স্থায়ী কমিটির নিকট বারবার পত্র ও টেলিফোনে দৃষ্টি আকর্ষণ করাও একটি প্রশংসিত উদ্দোগ হিসেবে গণ্য। যারা এসব চিঠি লিখেছেন তারা এমন কিছু দীনী আত্মমর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তি, যারা চেয়েছেন এর মাধ্যমে উক্ত দীনী গবেষণা ও ফতোয়া বিষয়ক স্থায়ী কমিটি কর্তৃক খ্রিস্টানদের এসব প্রকাশনার ভয়াবহতা ও মারাত্মক কুফুরী দাওয়াতের ব্যাপারে মুসলিমদের সতর্ক করার।
সুতরাং আমরা আল্লাহর সাহায্য কামনা করে বলব, “পৃথিবীর বুকে ইসলামের আলো প্রজ্জ্বলিত হওয়ার উষালগ্ন থেকেই ইসলামের শত্রুরা নিজ নিজ জাতি-ধর্ম ভেদাভেদ ভুলে ইসলামের বিরুদ্ধে দিবা-রাত্রি চক্রান্তে লিপ্ত রয়েছে। সুযোগ পাওয়া মাত্রই তারা ইসলামের অনুসারীদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করে, যাতে তাদেরকে হিদায়াতের আলো থেকে বের করে ভ্রষ্টতার গভীর অন্ধকারে নিয়ে যেতে পারে। চায় ইসলামী রাষ্ট্রগুলোকে উপনিবেশে পরিণত করতে এবং ইসলামী শক্তির প্রভাব মানুষের অন্তরে দুর্বল করে দিতে। তাদের ষড়যন্ত্রের স্বরূপ তুলে ধরে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿مَّا يَوَدُّ ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ مِنۡ أَهۡلِ ٱلۡكِتَٰبِ وَلَا ٱلۡمُشۡرِكِينَ أَن يُنَزَّلَ عَلَيۡكُم مِّنۡ خَيۡرٖ مِّن رَّبِّكُمۡ﴾ [البقرة: ١٠٥]
“আহলে কিতাবদের (ইয়াহূদী ও খ্রিস্টান) মধ্যে যারা কুফুরী করেছে তারা এবং মুশরিকরা এটা চায় না যে, তোমাদের রবের নিকট থেকে তোমাদের প্রতি কোনো কল্যাণ অবতীর্ণ হোক।” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ১০৫]
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
﴿وَدَّ كَثِيرٞ مِّنۡ أَهۡلِ ٱلۡكِتَٰبِ لَوۡ يَرُدُّونَكُم مِّنۢ بَعۡدِ إِيمَٰنِكُمۡ كُفَّارًا حَسَدٗا مِّنۡ عِندِ أَنفُسِهِم مِّنۢ بَعۡدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُمُ ٱلۡحَقُّ﴾ [البقرة: ١٠٩]
“তাদের নিকট সত্য প্রকাশিত হওয়ার পরও আহলে কিতাবদের (ইয়াহূদী-খ্রিস্টান) অনেকেই তোমাদের ঈমান আনার পর ঈর্ষামূলক মনোভাববশতঃ আবার তোমাদেরকে কাফিররূপে ফিরিয়ে পাওয়ার আকাঙ্খা করে।” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ১০৯]
তিনি আরো বলেন,
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ إِن تُطِيعُواْ فَرِيقٗا مِّنَ ٱلَّذِينَ أُوتُواْ ٱلۡكِتَٰبَ يَرُدُّوكُم بَعۡدَ إِيمَٰنِكُمۡ كَٰفِرِينَ ١٠٠﴾ [ال عمران: ١٠٠]
“হো মুমিনগণ! যাদেরকে কিতাব দেওয়া হয়েছে, তোমরা যদি তাদের দল বিশেষের আনুগত্য কর, তবে তারা তোমাদেরকে ঈমান আনার পর আবার কাফির বানিয়ে ছাড়বে।” [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১০০]
ইসলামের প্রধান শত্রুদের মধ্যে অন্যতম হলো মুসলিম বিদ্বেষী খ্রিস্টান জাতি। তারা সারা বিশ্বে ইসলামের প্রচার ও প্রসার প্রতিরোধের জন্য তাদের সমস্ত শক্তি ব্যয় করে চলেছে। বরং তারা মুসলিম দেশে গিয়ে মুসলিমদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে লিপ্ত, বিশেষ করে মুসলিম বিশ্বের বর্তমান দুর্বল অবস্থাসমূহকে পুঁজি করে অগ্রসর হচ্ছে।
এটা সুস্পষ্ট যে, তাদের এ আকস্মিক আক্রমণের উদ্দেশ্য হলো, মুসলিমদের আক্বীদা-বিশ্বাসকে দুর্বল করা এবং দীন ইসলামের প্রতি সন্দেহ জাগিয়ে দেওয়া, এসবের মাধ্যমে তারা মুসলিমদেরকে ইসলাম থেকে বিচ্ছিন্ন করে খ্রিস্টান ধর্মে দীক্ষিত করার দুরভিসন্ধিতে লিপ্ত। তাদের এসব মিশনারী কার্যক্রমকে তারা সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে ‘তাবশীর’ বা সুসংবাদ’ নামকরণ করেছে। বস্তুত তাদের এসব কার্যক্রম তো মূর্তিপূজার প্রতিই আহ্বান, যা বিকৃত খ্রিস্টবাদ। যার ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে কোনো প্রমাণ নেই। আর আল্লাহর নবী ঈসা আলাইহিস সালাম তা থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত।
এ সব খ্রিস্টান তাদের এসব দুঃস্বপ্নকে বাস্তবায়নের লক্ষে অজস্র অর্থ ও শ্রম ব্যয় করে যাচ্ছে; এসব দ্বারা তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে পুরো বিশ্বকে খ্রিস্টান বানানো, বিশেষ করে মুসলিমদেরকে; কিন্তু তাদের অবস্থা তো ঐরূপ যেমন আল্লাহ তা‘আলা বর্ণনা করেন:
﴿إِنَّ ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ يُنفِقُونَ أَمۡوَٰلَهُمۡ لِيَصُدُّواْ عَن سَبِيلِ ٱللَّهِۚ فَسَيُنفِقُونَهَا ثُمَّ تَكُونُ عَلَيۡهِمۡ حَسۡرَةٗ ثُمَّ يُغۡلَبُونَۗ وَٱلَّذِينَ كَفَرُوٓاْ إِلَىٰ جَهَنَّمَ يُحۡشَرُونَ ٣٦ ﴾ [الانفال: ٣٦]
“আল্লাহর পথ থেকে লোকদেরকে বাধা দেওয়ার জন্য কাফিরগণ তাদের ধন-সম্পদ ব্যয় করে, তারা ধন-সম্পদ ব্যয় করতেই থাকবে। অতঃপর তা তাদের পরিতাপের কারণ হবে, এরপর তারা পরাভূত হবে এবং যারা কুফুরী করে তাদেরকে জাহান্নামে একত্র করা হবে।” [সূরা আল-আনফাল, আয়াত: ৩৬]