ফিকহী উত্তরাধিকারের গুরুত্ব:
সমস্ত প্রশংসা একমাত্র মহান আল্লাহর, দুরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক শেষ নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর, যার পরে আর কোনো নবী আসবেন না। অতঃপর....
এ কথা সকলেরই অবগত যে, ইসলামী জ্ঞান-বিজ্ঞানে ইলমে ফিকহের পরিপূর্ণ মর্যাদা ও গুরুত্ব রয়েছে। কেননা এটি এমন একটি মূলনীতি যার দ্বারা মুসলিম তার কাজটি হালাল নাকি হারাম, শুদ্ধ নাকি অশুদ্ধ পরিমাপ করে। সর্বযুগে মুসলিমরা তাদের কাজ-কর্মের হালাল, হারাম, সহীহ, ফাসিদ ইত্যাদি হুকুম জানতে অত্যন্ত তৎপর ছিলেন, চাই তা আল্লাহর হক সম্পর্কিত হোক বা বান্দার হক সম্পর্কিত, হোক তা নিকটাত্মীয়ের হক বা দূরসম্পর্কীয় আত্মীয়ের হক, শত্রু হোক আর মিত্র, শাসক হোক বা শাসিত, মুসলিম হোক বা অমুসলিম। এসব অধিকার ও এর বিধান ফিকহের জ্ঞান ছাড়া জানা সম্ভবপর নয়। আর সেটা হবে এমন ফিকহশাস্ত্র যা বান্দাকে তার কর্মকাণ্ডসমূহের বিধান জানায়, চাই তা কোনো কিছু করা কিংবা না করার চাহিদাজনিত বিষয় হোক, নয়তো কোনো কিছু করা কিংবা না করার সুযোগ সম্বলিত হোক, অথবা কোনো কিছুর কার্যকারণ নির্ধারণ সংক্রান্ত হোক।
যেহেতু অন্যান্য জ্ঞান-বিজ্ঞানের মতোই ফিকহ শাস্ত্রও বাস্তব প্রয়োগের মাধ্যমে প্রসারিত ও বর্ধিত হয়, আর অবমূল্যায়ন ও অপ্রয়োগের কারণে নিস্তেজ ও হারিয়ে যায়; সেহেতু এ শাস্ত্রও যুগের পরিক্রমায় অনেকগুলো ধাপ পেরিয়ে লালিতপালিত ও বর্ধিত হয়েছে এবং জীবনের সর্বক্ষেত্র ব্যাপ্ত করেছে। অতঃপর সময়ের আবর্তনে এ শাস্ত্রটির ওপর দিয়ে এক দুঃসময় বয়ে চলে। এক সময় শাস্ত্রটির বৃদ্ধি ও পথচলা থেমে যায় বা থেমে যাওয়ার উপক্রম হয়। হয়ত এটিকে ইচ্ছাকৃতভাবেই এড়িয়ে যেতো বা জীবনের অনেক ক্ষেত্রে এটিকে অবহেলা করা হতো। কেননা তখন ইসলামী রাষ্ট্রে আকীদা, রীতিনীতি ও প্রথার ক্ষেত্রে মানব রচিত অন্যান্য আইন চর্চা ও প্রয়োগ করা হতো। ফলে তাদের জীবন দুর্বিষহ ও ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে এবং তারা নানা সমস্যায় জর্জরিত হয়ে পরে। যদিও এ মহামূল্যবান জ্ঞানের (ফিকহ শাস্ত্রের) মৌলিক শক্তি ও বুনিয়াদী ভিত্তির কারণে যুগে যুগে স্বীয় মহিমায় উজ্জীবিত ও দৃঢ়প্রতিরোধক ছিল। আল্লাহ তা‘আলা এ উম্মতের অসচেতনতা ও ঘুমের পরে পুনঃজাগরণ ও সচেতন করলেন এবং তাদেরকে ইসলামের আঙ্গিনায় শরী‘আত ও এর বাস্তবায়নে ফিরে আসতে উৎসাহিত ও তাওফিক দান করলেন।
আমরা লক্ষ্য করেছি যে, ইসলামী বিশ্বের অনেকেই আল্লাহর শরী‘আতের দিকে ফিরে আসতে ও মানব রচিত আইনে বলবত না থাকতে আহ্বান করেছেন। তথাপিও কিছু লোক তাদের রচিত জীবন ব্যবস্থায় নিজেদেরকে পরিচালিত করছে এবং তাদের দেওয়া পথে চলছে; কিন্তু আল্লাহ অচিরেই তার এ দীনকে বিজয়ী করবেন, যদিও কাফিররা তা অপছন্দ করে।
তাহলে ফিকহ শাস্ত্র কখন শুরু হয়, এ শাস্ত্র আবির্ভাবের কারণ কী, এর গুণাবলী ও বৈশিষ্ট্য কী, এ শাস্ত্রের প্রতি মুসলিমের দায়িত্ব ও কর্তব্য কী ইত্যাদি সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলো:
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবদ্দশায় থেকেই এবং সাহাবীগণের যুগে ফিকহ শাস্ত্র ধীরে ধীরে শুরু হয়। মানব জীবনের নতুন নতুন ঘটনার বিধি-বিধান জানার প্রয়োজনীয়তা অনুভবই খুব শীঘ্র সাহাবীণেগর মধ্যে এ শাস্ত্র আবির্ভাবের অন্যতম কারণ। মানুষের সামাজিক সম্পর্ক স্থাপনে, একের ওপর অন্যের অধিকার জানতে, নতুন সুযোগ সুবিধার সমাধান অবগত হতে এবং হঠাৎ আপতিত সমস্যার সামাধান বের করতে সর্বযুগেই ফিকহের প্রয়োজনীয়তা বিদ্যমান।