আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে তার ঈমান ও নেকআমল অনুপাতে কল্যাণ দান করেন এবং কুফরী ও মন্দ কর্ম অনুযায়ী শাস্তি দেন। যারা দুনিয়ায় ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে, তারা সৌভাগ্যবান হয়, মৃত্যুর সময় তাদের কল্যাণ বৃদ্ধি পায় একারণে যে, ফেরেশতাদের মাধ্যমে তাদের খুশীর বিষয়ে সুসংবাদ দেয়া হয়। কবরবাসী হওয়ার পর তাদের সুখ আরো বৃদ্ধি পেতে থাকে। কেননা, তিনি কবরকে জান্নাতের একটি বাগান হিসাবে পান। তারপর পুনরুত্থান ও হাশরের দিন তার ভাগ্য আরো বৃদ্ধি পাবে। অবশেষে জান্নাতে প্রবেশের মাধ্যমে তার সুখ আরো বৃদ্ধি পাবে এবং তা পরিপূর্ণতা লাভ করবে।
পক্ষান্তরে, মানুষ যখন কুফরী করে এবং তার আমল খারাপ হয়, তখন সে দুনিয়াতে দুর্ভাগ্যবান হয়। অতঃপর মৃত্যুর সময় তার দুর্ভোগ বেড়ে যায়, তারপর সে কবরে আরো বেশি দুর্ভাগ্যবান হবে এ কারণে যে, সে কবরকে জাহান্নামের একটি গর্ত হিসাবে পাবে। অতঃপর পুনরুত্থান ও হাশরের দিবসে কষ্ট ও যন্ত্রনা আরো বৃদ্ধি পাবে। অতঃপর জাহান্নামে প্রবেশের মাধ্যমে শাস্তি বৃদ্ধি ও পরিপূর্ণতা লাভ করবে।
দুনিয়াতে আল্লাহর সন্তুষ্টিমূলক ও প্রিয় আমল যার বিভিন্নমুখী হবে, বেশী নেক আমলের কারণে জান্নাতে তার স্বাদ আস্বাদনও বিভিন্নমুখী ও ব্যাপক হবে।
পক্ষান্তরে, দুনিয়াতে আল্লাহর অসন্তুষ্টিমূলক ও অপ্রিয় আমল যার বিভিন্নমুখী হবে, বেশী পাপ আমলের কারণে জাহান্নামে তার সাজাও বিভিন্নমুখী ও ব্যাপক হবে।
১। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿قَالَ اهْبِطَا مِنْهَا جَمِيعًا بَعْضُكُمْ لِبَعْضٍ عَدُوٌّ فَإِمَّا يَأْتِيَنَّكُمْ مِنِّي هُدًى فَمَنِ اتَّبَعَ هُدَايَ فَلَا يَضِلُّ وَلَا يَشْقَى (123) وَمَنْ أَعْرَضَ عَنْ ذِكْرِي فَإِنَّ لَهُ مَعِيشَةً ضَنْكًا وَنَحْشُرُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَعْمَى (124) قَالَ رَبِّ لِمَ حَشَرْتَنِي أَعْمَى وَقَدْكُنْتُ بَصِيرًا (125) قَالَ كَذَلِكَ أَتَتْكَ آيَاتُنَا فَنَسِيتَهَا وَكَذَلِكَ الْيَوْمَ تُنْسَى (126) وَكَذَلِكَ نَجْزِي مَنْ أَسْرَفَ وَلَمْ يُؤْمِنْ بِآيَاتِ رَبِّهِ وَلَعَذَابُ الْآخِرَةِ أَشَدُّ وَأَبْقَى (127)) [طه: 123 - 127]
‘তিনি বললেন, ‘তোমরা উভয়েই জান্নাত হতে এক সাথে নেমে যাও। তোমরা একে অপরের শত্রু। অতঃপর যখন তোমাদের কাছে আমার পক্ষ থেকে হেদায়াত আসবে, তখন যে আমার হেদায়াতের অনুসরণ করবে, সে বিপথগামী হবে না এবং দুর্ভাগাও হবে না। আর যে আমার যিকর থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, তার জন্য হবে এক নিশ্চিত সংকুচিত জীবন এবং আমি তাকে কিয়ামত দিবসে উঠাবো অন্ধ অবস্থায়। সে বলবে, হে আমার রব! কেন আপনি আমাকে অন্ধ অবস্থায় উঠালেন? অথচ আমি তো ছিলাম দৃষ্টিশক্তি সম্পন্ন? তিনি বলবেন, এমনিভাবেই তোমার নিকট আমার নিদর্শনাবলি এসেছিল, কিন্তু তুমি তা ভুলে গিয়েছিলে এবং সেভাবেই আজ তোমাকে ভুলে যাওয়া হল। আর এভাবেই আমি প্রতিফল দান করি তাকে, যে বাড়াবাড়ি করে এবং তার রবের নিদর্শনাবলিতে ঈমান আনে না। আর আখেরাতের আযাব তো অবশ্যই কঠোরতর ও অধিকতর স্থায়ী (সূরা ত্বহা: ১২৩-১২৭)।
২। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:
﴿مَنْ عَمِلَ صَالِحًا مِنْ ذَكَرٍ أَوْ أُنْثَى وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَلَنُحْيِيَنَّهُ حَيَاةً طَيِّبَةً وَلَنَجْزِيَنَّهُمْ أَجْرَهُمْ بِأَحْسَنِ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ (97)) [النحل: 97]
‘যে মুমিন অবস্থায় নেক আমল করবে, পুরুষ হোক বা মহিলা,আমি তাকে পবিত্র জীবন দান করব এবং তারা যা করত, তার তুলনায় অবশ্যই আমি তাদেরকে উত্তম প্রতিদান দেব’(সূরা আন-নাহল: ৯৭)।
৩। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:
﴿إِنَّهُ مَنْ يَأْتِ رَبَّهُ مُجْرِمًا فَإِنَّ لَهُ جَهَنَّمَ لَا يَمُوتُ فِيهَا وَلَا يَحْيَى (74) وَمَنْ يَأْتِهِ مُؤْمِنًا قَدْ عَمِلَ الصَّالِحَاتِ فَأُولَئِكَ لَهُمُ الدَّرَجَاتُ الْعُلَى (75) جَنَّاتُ عَدْنٍ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا
الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا وَذَلِكَ جَزَاءُ مَنْ تَزَكَّى (76)) ... [طه: 74 - 76]
‘যে তার রবের নিকট অপরাধী অবস্থায় আসবে, তার জন্য রয়েছে জাহান্নাম। সেখানে সে মরবেও না, বাঁচবেও না। আর যারা তাঁর নিকট আসবে মুমিন অবস্থায়, সৎকর্ম করে, তাদের জন্য-ই রয়েছে সুউচ্চ মর্যাদা। স্থায়ী জান্নাত, যার পাদদেশে নদীসমূহ প্রবাহিত, তারা সেখানে স্থায়ী হবে। আর এটা তাদের পুরষ্কার, যারা পরিশুদ্ধ হয়’ (সূরা ত্বহা: ৭৪-৭৬)।