(১) কবর এক বিঘতের বেশী উঁচু করা, পাকা ও চুনকাম করা, সমাধি সৌধ নির্মাণ করা, গায়ে নাম লেখা, কবরের উপরে বসা, কবরের দিকে ফিরে ছালাত আদায় করা। [106]
(২) ধুয়ে-মুছে সুন্দর করা, কবরে মসজিদ নির্মাণ করা, সেখানে মেলা বসানো, ওরস করা ও কবরকে তীর্থস্থানে পরিণত করা।[107]
(৩) কবরের নিকটে গরু-ছাগল-মোরগ ইত্যাদি যবেহ করা। জাহেলী যুগে দানশীল ও নেককার ব্যক্তিদের কবরের পাশে এগুলি করা হ’ত।[108]
(৪) কবরে ফুল দেওয়া, গেলাফ চড়ানো, শামিয়ানা টাঙ্গানো ইত্যাদি।[109] রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, আল্লাহ আমাদেরকে ইট, পাথর ও মাটি ইত্যাদিকে কাপড় পরিধান করাতে নির্দেশ দেননি’।[110] এগুলি স্পষ্টভাবে কবরপূজার শামিল। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) হযরত আলী (রাঃ)-কে নির্দেশ দিয়ে বলেছিলেন,
عَنْ أَبِى الْهَيَّاجِ الأَسَدِىِّ قَالَ قَالَ لِى عَلِىُّ بْنُ أَبِى طَالِبٍ: أَلاَّ أَبْعَثُكَ عَلَى مَا بَعَثَنِى عَلَيْهِ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: أَنْ لاَ تَدَعَ تِمْثَالاً إِلاَّ طَمَسْتَهُ وَلاَ قَبْرًا مُشْرِفًا إِلاَّ سَوَّيْتَهُ
‘তুমি কোন মূর্তিকে ছেড় না নিশ্চিহ্ন না করা পর্যন্ত এবং কোন উঁচু কবরকে ছেড় না মাটি সমান না করা পর্যন্ত’। [111]
(ক) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) প্রার্থনা করেছেন, اَللَّهُمَّ لاَ تَجْعَلْ قَبْرِي وَثَناً يُّعْبَدُ اشْتَدَّ غَضَبُ اللهِ عَلَى قَوْمٍ اتَّخَذُوا قُبُورَ أَنْبِيَائِهِمْ مَسَاجِدَ ‘হে আল্লাহ! তুমি আমার কবরকে ইবাদতের স্থানে পরিণত করো না। আল্লাহর গযব কঠোরতর হয় ঐ
জাতির উপরে, যারা তাদের নবীর কবরকে সিজদার স্থানে পরিণত করে।[112]
(খ) আজকাল কবরকে ‘মাযার’ বলা হচ্ছে। যার অর্থ: পবিত্র সফরের স্থান। অথচ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলে গেছেন, ‘(নেকী হাছিলের উদ্দেশ্যে) তিনটি স্থান ব্যতীত সফর করা যাবে না, মাসজিদুল হারাম, মাসজিদুল আক্বছা ও আমার এই মসজিদ’।[113] তিনি তাঁর উম্মতের উদ্দেশ্যে বলেন,لاَ تَجْعَلُوْا قَبْرِىْ عِيْدًا ‘তোমরা আমার কবরকে তীর্থস্থানে পরিণত করো না’।[114]
(গ) মৃত্যুর পাঁচদিন পূর্বে তিনি উম্মতকে সাবধান করে বলেন,لاَ تَتَّخِذُوا الْقُبُوْرَ مَسَاجِدَ، إِنِّيْ أَنْهَاكُمْ عَنْ ذَلِكَ- ‘সাবধান! তোমরা কবর সমূহকে সিজদার স্থানে পরিণত করো না। আমি তোমাদেরকে এ ব্যাপারে নিষেধ করে যাচ্ছি’।[115]
(ঘ) কবরে মসজিদ নির্মাণকারী ও সেখানে মৃতব্যক্তির ছবি, মূর্তি ও প্রতিকৃতি স্থাপনকারীদের সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, أُولَئِكَ شِرَارُ الْخَلْقِ عِنْدَ اللهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ‘এরা ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহর নিকটে নিকৃষ্টতম সৃষ্টি হিসাবে গণ্য হবে’। [116]
(ঙ) কবরের বদলে কোন গৃহে বা রাস্তার ধারে বা কোন বিশেষ স্থানে মৃতের পূর্ণদেহী বা আবক্ষ প্রতিকৃতি নির্মাণ করে বা স্মৃতিচিহ্ন স্থাপন করে সেখানে শ্রদ্ধা নিবেদন করা ও নীরবে দাঁড়িয়ে থাকা পরিষ্কারভাবে মূর্তিপূজার শামিল। যা স্পষ্ট শিরক এবং যা থেকে বিরত থাকা অপরিহার্য।
উল্লেখ্য যে, মাথাসহ আবক্ষ ছবি ও মূর্তি পুরা মূর্তির শামিল, যা সর্বদা নিষিদ্ধ।[117]
[107]. মুসলিম, মিশকাত হা/৭১৩; মুওয়াত্ত্বা, মিশকাত হা/৭৫০; নাসাঈ, আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৯২৬; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/২৯৫।
[108]. (لا عقر فى الاسلام) আবুদাঊদ হা/৩২২২; আহমাদ হা/১৩০৫৫, সিলসিলা ছহীহাহ হা/২৪৩৬।
[109]. ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/২৯৫।
[110]. (إن الله لم يأمرنا أن نكسو الحجارة والطين واللبن) মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৪৪৯৪ ‘পোষাক’ অধ্যায়-২২, ‘ছবি সমূহ’ অনুচ্ছেদ-৪; আবুদাঊদ হা/৪১৫৩।
[111]. মুসলিম হা/৯৬৯; ঐ, মিশকাত হা/১৬৯৬ ‘জানায়েয’ অধ্যায়-৫, ‘মৃতের দাফন’ অনুচ্ছেদ-৬; রাবী আবু হাইয়াজ আল-আসাদী খলীফা আলী (রাঃ)-এর পুলিশ প্রধান ছিলেন। তাঁর পূর্বের খলীফা ওছমান (রাঃ)-এর আমলেও এ নির্দেশ জারি ছিল (আলবানী, তাহযীরুস সাজেদ ৯২ পৃঃ)।
[112]. মুওয়াত্ত্বা, মিশকাত হা/৭৫০, ‘ছালাত’ অধ্যায়-৪, ‘মসজিদ ও ছালাতের স্থান সমূহ’
অনুচ্ছেদ-৭ ।
[113]. (لا تشد الرحال إلا إلى ثلاث مساجد المسجد الحرام ومسجدي هذا والمسجد الأقصى) মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৬৯৩, ‘মসজিদ ও ছালাতের স্থান সমূহ’ অনুচ্ছেদ-৭।
[114]. নাসাঈ, আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৯২৬, ‘রাসূল (ছাঃ)-এর উপর দরূদ পাঠ’ অনুচ্ছেদ-১৬।
[115]. মুসলিম হা/১২১৬, মিশকাত হা/৭১৩; মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ, আলবানী, তাহযীরুস সাজেদ পৃঃ ১৫।
[116]. বুখারী হা/১৩৪১; মুসলিম হা/১২০৯।
[117]. আবুদাঊদ হা/৪১৫৮; দ্রঃ লেখক প্রণীত ‘ছবি ও মূর্তি’ বই পৃঃ ২৫-২৬।