কুসংস্কারের উপর নির্ভর করা

১২৩. পাখি উড়ানো (العِيَافَة), ১২৪. দাগ দেয়া (الطَّرْقُ), ১২৫. কুলক্ষণ নির্ধারণ করা (الطِّيَرَة), ১২৬. ভাগ্য গণনা করা (الكَهَانَة), ১২৭. ত্বগূতের নিকট বিচার প্রার্থী হওয়া (التَّحَاكُمُ إلى الطَّاغُوتِ) এবং ১২৮. ঈদের দিন বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া অপছন্দ করা (كَرَاهَة التَّزْوِيجِ بين العيدين)।

........................................

ব্যাখ্যা: পাখি উড়ানো (العِيَافَة): পাখি উড়িয়ে ভাগ্য নির্ণয় করা, অনুরূপভাবে কুলক্ষণ নির্ধারণ করা, কেননা, জাহিলরা পাখির মাধ্যমে অশুভ লক্ষণ নির্ধারণ করতো, তাদের অপছন্দনীয় আকৃতির কোন পাখি উড়ে যেতে দেখলে তারা যে স্থানে সফর করার ইচ্ছা করতো, সেখানে তারা সফর করতো না। আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে কেবল তার উপরই ভরসা করার আদেশ করেন। সফরে মানুষের জন্য কল্যাণ নিহিত আছে। মানুষ কোন বিষয়ে বিপদের সম্মুখীন হলে অথবা সিদ্ধান্ত নিতে না পারলে সে ছ্বলাতুল ইসতেখারাহ (صلاة الاستخارة) আদায় করে ছালাতের পর আল্লাহর নিকট দু‘আ করবে, যাতে তিনি সঠিক সমাধানের পথ দেখিয়ে দেন। অনুরূপভাবে অভিজ্ঞ ও জ্ঞানীদের নিকট সমস্যার সমাধান সম্পর্কে জানবে।

(الطرق): অর্থ দাগ দেয়া, মাটিতে দাগ দেয়া। ভেলকিবাজরা বালুতে দাগ কাটে এবং বলে, অবশ্যই অমুক বিষয়ের ফলাফল অর্জিত হবে এবং তা অচিরেই ঘটবে। এটিই জাহিলী কর্ম। কেননা, এখানে অদৃশ্য বিষয়ে অবগত হওয়ার ব্যাপারে দাবি করা হয়, যা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। এটা আন্দাজ ও অনুমান নির্ভর বিষয়। সংঘটিতব্য বিষয়ে তারা যা বলে, তা ফিতনা ও ধোঁকার অন্তর্ভুক্ত। তাই এসব থেকে বিরত ও দূরে থাকা ওয়াজীব।

ত্বগূতের নিকট বিচার প্রার্থনা করা

ত্বগূত হচ্ছে কুরআন-সুন্নাহ বাদ দিয়ে বিচার ফায়ছালা করা। যেমন- রচিত বিধান, মুনাফা বিধান, বেদুঈন ও পূর্ববর্তী জাতির মুনাফা নীতি অথবা কালাম শাস্ত্র ও যুক্তিবিদ্যা। জাহিলী যুগে লোকেরা ত্বগূতের নিকট বিচার ফায়ছালা কামনা করতো। এখানে (الطاغوت) আত-ত্বগূত শব্দটি (الطغيان) আত-তুগইয়ান ক্রিয়া মূল হতে উদ্ভুত। এর অর্থ হলো সীমালঙ্ঘন করা। যারা আল্লাহর নাযিলকৃত বিধান বাদ দিয়ে বিচার ফায়ছালা করে এখানে ত্বগূত দ্বারা তারাই উদ্দেশ্যে। সুতরাং কুরআন-সুন্নাহর মাধ্যমে বিচার ফায়ছালা করা মুসলিমদের উপর ওয়াজীব। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

(فَإِنْ تَنَازَعْتُمْ فِي شَيْءٍ فَرُدُّوهُ إِلَى اللَّهِ وَالرَّسُولِ إِنْ كُنْتُمْ تُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ) [النساء: 59]

কোন বিষয়ে যদি তোমরা মতবিরোধ কর তাহলে তা আল্লাহ ও রসূলের দিকে প্রত্যার্পণ কর যদি তোমরা আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখ (সূরা আন নিসা ৪:৫৯)।

ঈদের দিন বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়াকে অপছন্দ করা

ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দিনকে নিষিদ্ধ ও অশুভ দিন মনে করা। যা জাহিলদের ধারণায়, এক প্রকার অশুভ লক্ষণ। অথচ আল্লাহ তা‘আলা হাজ্জ ও উমরার ইহরাম এর অবস্থা ছাড়া সর্বদাই বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া শরী‘আত সম্মত করেছেন। বিবাহের সফলতা ও ব্যর্থতায় দিন-ক্ষণের কোন প্রভাব নেই। আল্লাহ তা‘আলার হাতেই সবকিছুর চাবিকাঠি। আল্লাহই অধিক অবগত।


দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক আমাদের নাবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, তার পরিবারবর্গ এবং তার সকল ছাহাবীর উপর।