রসূলগণ যা নিয়ে এসেছেন সে ব্যাপারে প্রকাশ্যে ও গোপনে ষড়যন্ত্র করা। যেমন আল্লাহ তা‘আলার কথা:
(وَمَكَرُوا وَمَكَرَ اللَّهُ) [آل عمران: 54]
আর তারা কুটকৌশল করেছে এবং আল্লাহ কৌশল করেছেন (সূরা আলে-ইমরান ৩:৫৪)। তিনি আরোও বলেন,
(وَقَالَتْ طَائِفَةٌ مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ آمِنُوا بِالَّذِي أُنْزِلَ عَلَى الَّذِينَ آمَنُوا وَجْهَ النَّهَارِ وَاكْفُرُوا آخِرَهُ ... ) [آل عمران: 72]
আর কিতাবীরা একদল বলে, মুমিনদের উপর যা অবতীর্ণ করা হয়েছে, তোমরা তার প্রতি দিনের প্রথম ভাগে ঈমান আন, আর শেষ ভাগে তা কুফরী কর (সূরা আলে-ইমরান ৩:৭২)।
..............................
ব্যাখ্যা: কিতাবধারী ও নিরক্ষর জাহিলদের কর্ম হলো আল্লাহ তা‘আলার শরী‘আত হতে নিষ্কৃতি লাভের জন্য কৌশল করে তা পরিবর্তন করা এবং তাদের কুফরী ও ভ্রষ্টতাকে বাস্তবায়ন করা। কেননা তারা সত্য গ্রহণে অনীহা। তাই শরী‘আত পরিবর্তনে গোপন ষড়যন্ত্রে তারা লিপ্ত হয়। একারণে আল্লাহ তা‘আলা তাদের ব্যাপারে বলেন,
(وَمَكَرُوا وَمَكَرَ اللَّهُ وَاللَّهُ خَيْرُ الْمَاكِرِينَ) [آل عمران: 54]
আর তারা কুটকৌশল করেছে এবং আল্লাহ কৌশল করেছেন। আর আল্লাহ উত্তম কৌশলকারী (সূরা আলে-ইমরান ৩:৫৪)।
আর গোপন কুট-কৌশলের মাধ্যমে অপছন্দনীয় বিষয় পরিচালনা করাকে বলা হয় ষড়যন্ত্র। নাবীগণকে হত্যার অভ্যাস অনুযায়ী ইয়াহুদীরা যখন মরিয়মের পুত্র ঈসা আলাইহিস সালামকে হত্যা করতে চাইলো তখন তাকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে নিয়ে তারা মূর্তি পূজক কাফির রাজার নিকট গেল।
অতঃপর তারা তাকে বললো, যদি আপনি এ লোককে ছেড়ে দেন তাহলে সে আপনার শাসন ব্যবস্থা পরিবর্তন করে ফেলবে। অতঃপর ঈসা মাসিহকে হত্যার উদ্দেশে রাজা একটি দল প্রেরণ করলো এবং তারা ঈসা আলাইহিস সালাম এর ঘরে প্রবেশ করে তাকে হত্যা করতে চাইলো। কিন্তু আল্লাহ তা‘আলা তার নাবীর জন্য কৌশল করলেন। ঈসা আলাইহিস সালাম এর অনুসারীর মধ্যে একজনকে আল্লাহ তা‘আলা ঈসা আলাইহিস সালাম এর চেহারার সাদৃশ্য করে দিলেন। সে নিজেকে তাদের সামনে তুলে ধরে আল্লাহ তা‘আলার নিকট প্রতিদান চাইলো। সে যেন ঈসা মাসিহ রূপেই প্রকাশ পেল। অতঃপর তারা তাকে পাঁকড়াও করে হত্যা করলো এবং তাকে কাষ্ঠ খন্ডে শুলে চড়িয়ে ছিল। তারা ধারণা করেছিল তিনিই মাসিহ। আর আল্লাহ তা‘আলা তাদের মাঝ থেকে ঈসা মাসিহকে তার নিকট তুলে নিলেন, অথচ তারা বুঝতেই পারল না। আর এ কারণে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
(وَمَا قَتَلُوهُ وَمَا صَلَبُوهُ وَلَكِنْ شُبِّهَ لَهُمْ) [النساء: 157]
তারা তাকে হত্যা করেনি এবং তাকে শূলেও চড়ায়নি। বরং তাদেরকে ধাঁধায় ফেলা হয়েছিল (সূরা নিসা ৪:১৫৭)। এটাই আল্লাহ তা‘আলার কথার অর্থ:
(وَمَكَرُوا وَمَكَرَ اللَّهُ) [آل عمران: 54] ،
আর তারা কুটকৌশল করেছে এবং আল্লাহও কৌশল করেছেন (সূরা আলে-ইমরান ৩:৫৪)।
এ কৌশল তাদের সাথে মোকাবেলা ও শাস্তির অন্তর্ভুক্ত বিষয়। আল্লাহ তা‘আলা ঈসা আলাইহিস সালাম এর ব্যাপারে ন্যায়পরায়ণ। সৃষ্টির ষড়যন্ত্র (আল্লাহর কৌশলের) বিপরীত। কেননা, তা যুলুম ও সঠিক নয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
(وَقَالَتْ طَائِفَةٌ مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ آمِنُوا بِالَّذِي أُنْزِلَ عَلَى الَّذِينَ آمَنُوا وَجْهَ النَّهَارِ وَاكْفُرُوا آخِرَهُ) [آل عمران: 72]
আর কিতাবীরা একদল বলে, মুমিনদের উপর যা অবতীর্ণ করা হয়েছে, তোমরা তার প্রতি দিনের প্রথম ভাগে ঈমান আন, আর শেষ ভাগে তা অস্বীকার কর (সূরা আলে-ইমরান ৩:৭২)। এটাও ছিল ইয়াহুদীদের ষড়যন্ত্র।
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনায় হিজরত করলেন, আল্লাহ তা‘আলা বিধান জারী করলেন, আর বদর যুদ্ধে মুশরিকদের বিরদ্ধে মুসলিমদের সাহায্য করলেন, তাতে হক্বপন্থী ও বাতিলপন্থী সুস্পষ্ট হলো। আর মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দীন থেকে মানুষকে বিমুখ করতে ইয়াহুদীরা অক্ষম হলো, ফলে তারা ষড়যন্ত্র ও প্রতারণার আশ্রয় নেয়। তাদের একদল বললো, তোমরা দিনের প্রথম ভাগে ইসলাম গ্রহণ করো। আর দিনের শেষে ইসলাম পরিত্যাগ করো। আর তোমরা বল, মুহাম্মাদের দীনে আমরা কোন উপকারীতা পাইনি। তাহলে মানুষ তোমাদের অনুসরণ করবে, কেননা তোমরা আহলে কিতাব।
আর তারা বলে, যদি ইয়াহুদীরা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দীনের উপকার লাভ করতোই তাহলে তার দীন থেকে তারা বেরিয়ে যেত না। তাই তারা তোমাদের অনুসরণ করবে। আল্লাহ তা‘আলা তাদের কুটকৌশল প্রকাশ করে দেন। তিনি বলেন,
(وَقَالَتْ طَائِفَةٌ مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ آمِنُوا بِالَّذِي أُنْزِلَ عَلَى الَّذِينَ آمَنُوا وَجْهَ النَّهَارِ) [آل عمران: 72]
আর কিতাবীদের একদল বলে, মুমিনদের উপর যা অবতীর্ণ করা হয়েছে, তোমরা তার প্রতি দিনের প্রথম ভাগে ঈমান আন, আর শেষ ভাগে তা অস্বীকার কর (সূরা আলে-ইমরান ৩:৭২)। অর্থাৎ এখানে দিনের প্রথম ভাগ সময় বুঝানো হয়েছে। আর কোন জিনিসের সূচনা বলতে তার শুরুর পর্যায় ও তার প্রারম্ভিকা বুঝায়।
যারাই আল্লাহর শরী‘আত পরিবর্তন ও তার অনুসারীদের ক্ষতি করার জন্য প্রতারণার আশ্রয় নেয়, তারাই জাহিলী রীতির উপর বিদ্যমান। আহলুস সুন্নাহ ও তাওহীদপন্থীদের মধ্যে থেকেও কেউ যদি দুনিয়া লাভের জন্য এরূপ কাজ করে তবে সেটাও জাহিলী পন্থা।