ঘটমান দুর্ঘটনাকে সময় ও যুগের দিকে সম্বন্ধিত করা এবং তাকে গালি দেওয়া

যুগকে গালি দেয়া সম্পর্কে জাহিলদের কথা,

(وَمَا يُهْلِكُنَا إِلَّا الدَّهْرُ) [الجاثية: 24] .

আর কালই কেবল আমাদেরকে ধ্বংস করে (সূরা জাছিয়া ৪৫:২৪)।

..................................

ব্যাখ্যা: নাস্তিকরা(الدهرية) ঘটমান অবস্থাকে যুগের সাথে সম্পৃক্ত করে। জাহিলদের নিকট কোন বিষয় অপছন্দ হলে তারা সেটাকে যুগের দিকে সম্পৃক্ত করে। আর পছন্দ না হওয়ার কারণে যুগকে তিরস্কার করে, অথচ সকল বিষয়-বস্তু মহান স্রষ্টার দিকেই সম্পৃক্ত করা আবশ্যক। আর যুগ হলো সময়, যা মহান আল্লাহর সৃষ্টি সমূহের অন্তর্ভুক্ত। আর যুগের কোন পরিবর্তন নেই। চলমান অবস্থাকে যারা যুগের সাথে সম্পৃক্ত করে আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি বলেন,

(وَقَالُوا مَا هِيَ إِلَّا حَيَاتُنَا الدُّنْيَا نَمُوتُ وَنَحْيَا وَمَا يُهْلِكُنَا إِلَّا الدَّهْرُ)

আর তারা বলে, ‘দুনিয়ার জীবনই আমাদের একমাত্র জীবন। আমরা মরি ও বাঁচি এখানেই। আর কালই কেবল আমাদেরকে ধ্বংস করে (সূরা জাছিয়া ৪৫:২৪)।

আর গালির মাধ্যমে আখেরাত ও পুনরুত্থানকে অস্বীকার হয়। (نَمُوتُ وَنَحْيَا) আমরা মরবো ও জীবিত হবো। অর্থাৎ মানুষ মরে ও জীবিত থাকে। আর জাহিলরা বলে, দয়াকে উঠিয়ে নেয়া হয়েছে আর জমিনকে গ্রাস করা হয়েছে। আর তারা বলে, এটাই জীবনের স্বভাব। (وَمَا يُهْلِكُنَا إِلَّا الدَّهْرُ) যুগই আমাদের ধ্বংস করে দিল। জাহিলরা ধ্বংস হওয়াকে যুগের সাথে সম্পৃক্ত করে তাই দিন-রাত্রির অতিক্রম তাদের নিকট মৃত্যুর কারণ বলে গণ্য হয়। এখানে কোন নির্দিষ্ট কাল এবং নির্দিষ্ট ফেরেশতাও নেই যে, যুগের সময় শেষ হলে প্রাণ হরণ করবে। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুগকে গালি দিতে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেন,

لا تسبوا الدهر، فإن الله هو الدهر

তোমরা যুগকে গালি দিও না। কেননা আল্লাহ তা‘আলাই যুগ।[1]

অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলাই যুগের স্রষ্টা। আর যুগের মাঝে যা কিছু বিরাজমান তা আল্লাহ তা‘আলা কর্তৃক নির্ধারিত। হাদীছে কুদছিতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

يؤذيني ابن آدم، يسب الدهر، وأنا الدهر، بيدي الأمر أقلب الليل والنهار

আদম সন্তান আমাকে কষ্ট দেয়। তারা যুগকে গালি দেয়; অথচ আমিই যুগ। আমার হাতেই সকল ক্ষমতা; রাত ও দিন আমিই পরিবর্তন করি।[2]

আর যুগকে গালি দেয়া হলে মূলতঃ যুগের স্রষ্টা মহান আল্লাহকেই গালি দেয়া হয়। এভাবেই আদম সন্তান পবিত্র মহান রবকে কষ্ট দেয়। কেননা, যুগের তিরস্কার আল্লাহর উপর আরোপিত হয়। কারণ আল্লাহ তা‘আলাই সকল বিষয়ের পরিবর্তনকারী আর সময়, বিপদাপদ এবং সবকিছু নির্ধারণকারী। যুগ মহান আল্লাহ তা‘আলারই সৃষ্টি। গালি ও তিরস্কার থেকে বিরত থাকা মুসলিমদের উপর আবশ্যক। মুসলিমরা কোন বিপদের সম্মুখ হলে তারা নিজেদের ব্যাপারে ভেবে দেখবে আর তাদের পাপকে তারা স্বীকার করে নেবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

(وَمَا أَصَابَكُمْ مِنْ مُصِيبَةٍ فَبِمَا كَسَبَتْ أَيْدِيكُمْ) [الشورى: 30]

আর তোমাদের প্রতি যে মুসীবত আপতিত হয়, তা তোমাদের কৃত কর্মেরই ফল। আর তোমাদের অনেক কিছুই তিনি ক্ষমা করে দেন (সূরা শুরা ৪২:৩০)। মানুষের উচিত নিজেদেরকে তিরস্কার ও ভৎর্সনা করা, যুগকে নয়।

>
[1]. ইমাম বুখারী কিতাবুল আদাবে ছ্বহীহ সূত্রে باب لا تسبوا الدهر নামক পরিচ্ছেদ বর্ণনা করেছেন। ছ্বহীহ মুসলিম হা/২২৪৬।

[2] . ছ্বহীহ বুখারী হা/ ৪৮২৬, ৬১৮১,৭৪৯১ ছ্বহীহ মুসলিম হা/ ২২৪৬।